বাস স্ট্যান্ড
মণি ফকির
তুই কোথায় দাঁড়াবি?
রুবি মোড় ছাড়িয়ে সামান্য এগোলেই বাঁ হাতে দেখবি একটা বাস স্ট্যান্ড। মানে কয়েকটা জং ধরা লোহার কাঠামো আরকি। হয়তো কখনো তার বাস স্ট্যান্ড হয়ে ওঠার কথা ছিল হয়নি।
যথা সময়ে পৌঁছে গিয়ে দাঁড়ালাম। ওরা তখনো এসে পৌঁছয়নি। কতবার এই জায়গাটা পেরিয়ে গিয়েছি। অথচ খেয়াল করিনি। বেশ কিছু বাঁকানো লোহার কাঠামো। মরচে পড়া। উৎসুক ভাবে মুখ বাড়িয়ে। একটা স্টপেজ হতে পারত। হয়নি। দুরন্ত গতিতে সদর্পে ছুটে চলা বাস থামাতে পারেনি। মানুষের অধীর আগ্রহের শরীক হতেই পারত। খুব রোদে কিংবা ঝমঝমে বৃষ্টি তে আশ্রয় হবার কথা তো। কিন্তু হলনা।
ওরা কিছুক্ষণ এর মধ্যেই এসে পড়ল। আমার ইচ্ছে ছিল ওখানে আরো কিছু সময় দাঁড়িয়ে যাই। ঐ মরচে পড়া লোহা গুলোর একাকীত্ব মোচন করে ওদের একটা স্টপেজ উপহার দি। এটুকু তো করতেই পারি। তাই না?
আমি আরেকদিন আসব এখানে। হয়ত আরো অনেক বার। আমি অসময়ের বাস,অনির্দিষ্ট স্টপে থামাতে পারিনি। কিন্তু এই খানে ঠিক পারব। কোনো এক সাধারণ মুহূর্তে অপরিকল্পিত এসে গলা ছেড়ে বলব:
উড়ে যাও,দূরে যাও
পুড়ে যাও মন।
আমার ললাটে
জমাট বেঁধেছে,
স্বেচ্ছা নির্বাসন।
অকাতরে পাও,
সহজে হারাও,
নিভন্ত আঁচে,
অভিশাপে বাঁচ।
চোখের তারায়
আগলে দাঁড়াও,
ভাঙা কাঁচ,ভাঙা ঢেউ।
খুব ভালোবেসে,
মুক্তির দায়ে,
শাস্তি পেয়েছে কেউ।
অলিতে গলিতে,
কারফিউ ভেঙ্গে,
বেয়নেট পাও।
ফেরারি উজানে,
বুকের পলিতে,
থিতু হয়ে যাও।
দহন না পাওয়া,
সিগারেট গুলো,
অলীক কফিনে বন্দী।
চেনা সিগনালে,
কাঁচের আড়ালে,
আমিও কফি তে মন দি।
……….………………………………….
কিরে ব্যস্ত নাকি?
না না বল।
ভাই,তুই আমায় একটা অদ্ভুত ভাল গল্প দিয়ে দিলি। আমি আমার খেই হারানো সময়ের বাস স্টপ টা পেয়ে গেছি। আসিস একদিন। ওখানেই দেখা হবে।
হা হা। তাই নাকি? আসলে কি জানিস তো। জমাট বেঁধেও জমে না ওঠা কথা গুলো,এরকম একেকটা পরিত্যক্ত অসম্পূর্ণ বাস স্টপ হয়ে যায়।
************************************
মণি ফকিরের জন্ম শিল্পনগরী বার্ণপুরে। সাহিত্য চর্চার অভ্যাস ছাত্র জীবন থেকেই। অনুপ্রেরণা মা ও মামার কাছ থেকে। প্রথম কবিতার বই *মণি ফকিরের পদাবলী* প্রকাশিত হয় ২০১৮ পূজোয়। গল্পকারের মূল বৈশিষ্ট্য তার গল্প বোনার ও বলার সাবলীল ধরন। গল্পের শেষে কিছু না বলা কথার প্রচ্ছন্ন ঈঙ্গিত মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে।।