Shadow

বিহান বেলায় ২

স্বগৃহে প্রবাস – মানবেন্দ্র নাথ সান্যাল

স্বগৃহে প্রবাস – মানবেন্দ্র নাথ সান্যাল

বিহান বেলায় ২
স্বগৃহে প্রবাস মানবেন্দ্র নাথ সান্যাল কোনো কোনো ঘরে গেলে মনে হয়, বহুদিন মন্দিরে যাইনি! আমার ঘরের পাখা এত জোরে দেয় না তো হাওয়া; আমার সুগন্ধি ধূপ এতো গন্ধ ঢালে না কখনো আমার ঘরের বাতি এত আলো দিয়েছে কোনোদিন? এতদিন আমি কি প্রবাসে ছিলাম? স্বগৃহে ফেরার পর প্রথমেই মনে হলো সেটা। নতুন চোখে দেখি আবার পুরনো সব আসবাব, দেওয়াল, পাখা ...এইবার যদি হয় বোধোদয়। **************************** মানবেন্দ্র নাথ সান্যাল পরিচিতি লেখক কৃতি ছাত্র ও ব্রতী পাঠক। স্কুল জীবন থেকেই সাহিত্য ও দর্শনের প্রতি আকর্ষণ। ছাত্র হিসেবে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার পর,একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর কর্মরত থাকা। জনসংযোগ আধিকারিক হিসেবে,দেশের নানা প্রান্তে প্রচার ও প্রসারমূলক কর্মকান্ডে একাত্ম অংশগ্রহণ। কল্লোল যুগের প্রাণপুরুষ শ্রী অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্তের সান্নিধ্য পান,ছাত্রাবস্থায়,সেই যোগাযোগ ছিলো আ...

বিহানবেলায়~২ – সম্পাদকীয়

বিহান বেলায় ২
বিহানবেলায়~২ সম্পাদকীয় কবি তাঁর চিত্রা কাব্যগ্রন্থের নববর্ষে কবিতায় লিখেছেন আজি বাঁধিতেছি বসি সংকল্প নূতন অন্তরে আমার, আজ যে ঘোর অমানিশায় সমাজ সংসার তমসাচ্ছন্ন, তারই মাঝে ক্ষুদ্র সামর্থ্য ও আন্তরিক প্রয়াসে আলো ফোটানো ছিল আমাদের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা। হয়তো রবির কর ছড়িয়ে দিতে পারিনি। হয়তো পারিনি আলোকোজ্জ্বল হাস্য-কল-কাকলি মুখরিত আবহ সৃষ্টি করতে। কিন্তু যা পেরেছি, তার মূল্য নেহাত কম নয়। প্রায় দুই বছর অতিক্রান্ত। সেদিনের সদ্যোজাত আজ টলমল পায়ে হাঁটতে শুরু করেছে। এই কুড়ি মাসে গুটিকয় সৃষ্টিশীল স্বপ্নময় চোখ উপহার দিয়েছে আলোকময় কিছু মুহূর্ত, কিছু গল্প, কিছু কবিতা, কিছু প্রবন্ধ। হাসি ফুটিয়েছে কিশলয় থেকে চিরহরিৎ বৃক্ষরাজি তে। সুরে সুরে ভরিয়ে তুলেছে বৈদ্যুতিন সামাজিক মাধ্যম। হোঁচট খেয়েছে। বহুবার হোঁচট খেয়েছে। আবারও উঠে দাঁড়িয়েছে একে অপরের হাত ধরে। তাঁদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছে, যাঁরা সত্যিই শ্রদ্ধেয়...
হা ঈশ্বর – পল্লব চট্টোপাধ্যায়

হা ঈশ্বর – পল্লব চট্টোপাধ্যায়

বিহান বেলায় ২
হা ঈশ্বর ।। (সব চরিত্র কাল্পনিক) পল্লব চট্টোপাধ্যায় -‘বাবা, দেখেছ আজকের নবজীবন টাইমসে ডাঃ গোডবোলের লেখাটা? লিখেছেন, ‘হে ঈশ্বর, আমার অপরাধ নিয়ো না। যদি তুমি থেকেই থাক কোথাও, আমার এ বিদ্যে-বুদ্ধি, জ্ঞান, বিচার-বিবেচনা সব তোমারই দান। সেই বিদ্যে-বুদ্ধি দিয়ে আমি তোমার অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে পারছি না, সে অক্ষমতার দায় কিন্তু তোমার। একেবারে নতুন ধরনের কথা, তাই না?’ সদ্য জার্নালিজমে দীক্ষিত মেয়ের সঙ্গে ভাল তর্ক করতে পারেন না বরোদার অবধেশ মন্দিরের পুরোহিত প্রধান কৈলাসপতি ত্রিবেদী। তাই তিনি সোজা কথা বলে দিলেন- ‘পিপীলিকা পক্ষ ধরে মরিবার তরে। এই ঔদ্ধত্যের শাস্তি ঈশ্বরই তাকে দেবেন।' -‘বাবা, কথাটা কিন্তু ওরিজিনালি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তাঁর ‘চতুরঙ্গ’ উপন্যাসের নাস্তিক নায়কের উক্তি। তবে একটা কথা, ডাঃ গোডবোলে কিন্তু নাস্তিক নন। তিনি ঈশ্বর মানেন। কিন্তু মানেন না দেবতা, স্বর্গ-নরক, পুনর্জন্ম, পাপ-পুণ্য ব...
বৈশাখী দোর – পাপাই অধিকারী (পদ্মনাভ)

বৈশাখী দোর – পাপাই অধিকারী (পদ্মনাভ)

বিহান বেলায় ২
বৈশাখী দোর পাপাই অধিকারী (পদ্মনাভ) স্বপ্ন চোখে খোকন ঘুমায়- নিঝুম রাতের ঘরে; সত্যি কি আজ বলতে পারিস- আমায় মনে পড়ে! নাহয় থাকুক ইচ্ছা তরী- দিঘির কোলে ধারা; আজ দুপুরে মাছের ঘুমে- দুষ্টু মাতোয়ারা। চাঁপার সুবাস মন ছুঁয়ে যায়- মাছরাঙা সেই ডালে; আজও নতুন দিনের আলো- মাটির কুটির চালে। আলপথেরা হাতছানি দেয়- কৃষক ভাইয়ের ছোটা; বর্ষ শেষে পাতার উপর- রং তুলিতে ফোটা। মন পবনের দাঁড়গুলিতে- ছুটবে নতুন তরী; কৃষ্ণচূড়ার গা ছুঁয়ে যায়- চাঁদের দেশের বুড়ি। পলাশ মাতে আপন ধারায়- মেঠো পথের বাঁকে; উঠোন জুড়ে জবার শোভা- দেয়াল ঘেঁষে থাকে। ব্যস্ত সকাল কিচিরমিচির- দেয় করবী দেখা; খরা জমির উপর প্রলেপ- নতুন বাঁচতে শেখা। কচিকাঁচার দল ছুটে যায়- আম বাগিচার মাঠে; জীবন ছোটে ভোর না হতে- বিকিকিনির হাটে। আধো ঘুমে চোখ বুজে যায়- মাথায় মায়ের হাত; ভালোবাসার নজরুলেতে- অমর রবীন্দ্রনাথ। ...
এক চিলতে রোদ্দুর – ব্রতী ঘোষ

এক চিলতে রোদ্দুর – ব্রতী ঘোষ

বিহান বেলায় ২
এক চিলতে রোদ্দুর ব্রতী ঘোষ ***************************** " কিরে তুই আর একটা রুটি নিবি ?" " কিরে ? " "মোবাইল থেকে মুখটা তুলে একবার হ্যাঁ কি না সেটাও বলতে পারছিস না .?" " না না আমি আর নেবো না ৷" - এ কথাটা বলেই আবার টিকলির চোখ মোবাইলে | " তুমি ? " - কোন উত্তর নেই ৷ " কি হলো ? আর একটা রুটি দেবো ? " " হু " - কোন রকমে মোবাইলের টাচ্ স্ক্রীনে চোখ আটকে বললেন অনিরুদ্ধ ৷ আর একটা রুটি অনিরুদ্ধর থালায় দিয়ে দেয় মনীষা ৷ চুপচাপ খেয়ে অনিরুদ্ধ উঠে শোবার ঘরে চলে যায় ৷ টিকলিও খাওয়া শেষ করে ওর নিজের ঘরে ঢুকে যায় ৷ ডাইনিং টেবিল পরিষ্কার করে খাবার-দাবার ফ্রিজে ঢুকিয়ে মনীষা যখন শোবার ঘরে ঢোকে তখন প্রায় রাত বারোটা ৷ অনিরুদ্ধ বসে আছে ল্যাপটপে চোখ রেখে ৷ "তুমি কি কাল বাজারে যাবে ?" মুখে আঙ্গুল দিয়ে ঈশারা করে মনীষাকে থামিয়ে দেয় অনিরুদ্ধ ৷ বুঝিয়ে দেয় অফিসের মিটিং চলছে ৷ চুপচাপ নিজের বিছানায় শু...
বিষ – কাজরী বসু

বিষ – কাজরী বসু

বিহান বেলায় ২
বিষ কাজরী বসু (এখনকার কথা) (১) "ফ্লাইটে এবার বোর্ডিং হবে তো! ওঠো, ওঠো..চলো..." বিমানবন্দরের নরম সোফায়  বসে বসে কখন যেন চোখটা লেগে এসেছিল রত্নার। পাবলো ডাকতেই ধড়মড় করে উঠলেন। আসলে বিগত অনেকগুলো  দিন নির্ঘুম কেটেছে তাঁর। নানাবিধ  হুমকির চোটে ঘুম আর শান্তির বারোটা বেজে বসেছিল। এখন তাই চোখে রাজ্যের ঘুম... কাঁধে ব্যাগ তুলে নিয়ে এগিয়ে চললেন রত্না পাবলোর পিছু পিছু। পৃথিবী কতভাবে মানুষকে শিক্ষা দেয়... ভাবতে ভাবতে... পূর্বকথা  (১) __তুমি কি জেগে?  জানিও  আমার যাওয়ার ব্যবস্থা কতদূর। আর কতদিন চলবে এই শবরীর প্রতীক্ষা? ঘুম ভেঙে উঠে পাবলো দেখল টফি টেক্সট করে রেখেছে অনেক আগে। প্রতিদিন এমন টেক্সট করে টফি। আর কতদিন পাবলো,আর কতদিন! কতদিন এভাবে একা থাকতে হবে,আর কত মাস... এত অবুঝ মেয়েটা। ছেলেমানুষ একেবারে। ব্রাশ করে কিছু খেয়ে কল করবে ৷ এতক্ষণে ওর অফিসের কাজ শেষ হয়েছে হয়তো। টফিকে যখন বলবে ওর আসার...
স্রোতস্বিনীর দর্পণে এবং আর তাকাবো না – কঙ্কণা সেন

স্রোতস্বিনীর দর্পণে এবং আর তাকাবো না – কঙ্কণা সেন

বিহান বেলায় ২
স্রোতস্বিনীর দর্পণে  কঙ্কণা সেন ইচ্ছে করে নদী হবো-------- বইব আবহমান কালের সিঁড়ি বেয়ে ঘাটে ঘাটে কত কোলাহল মাঝি করে পারাপার দুই পারে দুই গ্রাম কতবার আনাগোনা আদান প্রদান জনে জনে। সকাল বিকেল ছেলের দল করে এপার ওপার কত হুটোপুটি,আনন্দ অপার জলে দিই বুক ঢেলে স্নেহচুম্বন ওরে বাছা,তোরা যে কেউ ন'স অকিঞ্চন। ওই যে ভিড়ল তরী ঘাটের কিনারায় ওঠে ক্রন্দনরোল,কী বা হল গাঁয়? অশ্রুসিক্ত মুখখানি,এ কোন্ বালিকাবধূ দিল পাড়ি নব জীবনের ঠিকানায়। ওই দেখি ধূম্র আকাশ,আগুন কোথা জ্বলে? কেউ বুঝি শেষ শয্যায়?কতো মানুষ কাঁদে! প্রিয় বিয়োগের ব্যথা অন্তহীন সবাই যে বিন্দুসম হইব বিলীন! জীর্ণ শরীর নষ্ট হয়,নব কলেবর লাগি আমি শুধু বয়ে যাই,দেখি চক্ষু ভরি। নূতনের পথে চলেছ আগায়ে, নূতনের হাত ধরো চিরদিনকার বন্ধু যে জন তাঁহারে নিয়ত স্মরো।। ****************************************   আর তাকাবো না কঙ্কণা স...
অন্তঃসলিলা – মধুমিতা মিত্র

অন্তঃসলিলা – মধুমিতা মিত্র

বিহান বেলায় ২
অন্তঃসলিলা  মধুমিতা মিত্র “শ্বশুর বাড়ির এত পাওনা গয়নার মধ্যে শুধু মাত্র এ ক’টিই জুটলো আমার ফুলশয্যার সাজে”? বৌভাতের রাতে ঘরের দরজা বন্ধ করতে করতে নতুন বৌয়ের চাপা স্বগতোক্তিতে স্তব্ধ নিখিলেশ দরজার ছিটকিনি লাগাতেও যেন ভুলে গেল! ভোরের আলো তখনও অস্ফুট,শেষ বৈশাখের ছোট রাত্রি তার শেষ প্রহর কাটাচ্ছে, ভৈরবীতে সানাইয়ের তান ঘুম ভাঙিয়ে দিল নিখিলেশের। ভৈরবীর মোচড় কেমন বুকে এক বেদনার সুর তুললো,তার‌ একলার জীবন জুড়তে চলেছে অন্য আর এক অদেখা জীবনের সঙ্গে। সারা বাড়িও তখন দধিমঙ্গলের আয়োজনে মত্ত। যৌবনের আঙিনায় পদার্পণ করতে না করতেই নিখিলেশের খুব সচেতন বাবা মা বিয়ের ব্যবস্হা সেরে ফেলেছেন এক রকম নিখিলের মতামতের তোয়াক্কা না করেই। লোকমুখে শুনছে নিখিলেশ, বৌ নাকি পরমাসুন্দরী;তপ্ত গৌরী,হরিণ আঁখির এক অপরূপা,আসছে নিখিলের জীবন আলো করতে। ছাদনা তলায় প্রথম দেখা,ভ্রমর চোখের সলাজ চাহনি বুকে দোলা লাগিয়ে দিল...
আবরণ – রমা চ্যাটার্জি

আবরণ – রমা চ্যাটার্জি

বিহান বেলায় ২
আবরণ রমা চ্যাটার্জি          "মনীশদা, দেখো দেখো অঙ্কন প্রতিযোগিতার কাগজপত্রগুলো কর্তৃপক্ষ পাঠিয়ে দিয়েছে।" মনীশের বিরক্তি ভরা উত্তর, "দেখছিস না , ডান্স কম্পিটিশন এর সার্টিফিকেট গুলো গুছিয়ে রাখছি ,আমাকে একটা একটা করে কাজ সারতে দে। আবার দশ দিনের মধ্যে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু হতে চলেছে সুতরাং বুঝতেই পারছিস আমার নাওয়া-খাওয়া সব মাথায় উঠবে!         মনীশ এই পাড়ায় বছর চারেক হল  একটা ওয়ান রুম ফ্ল্যাট কিনে থাকে। চালচলন বেশভূষায় সবই খুব সাধারণ কিন্ত ব্যবহারটা অমায়িক আর সব সময় হাসি ও গান করেই সারাটা দিন কাটিয়ে দেয়। সকলেই মনে করে মনীশের জীবনে কোন দুঃখ সমস্যা কান্না কিছুই নেই ,আছে শুধু প্রাণ-খোলা-হাসি আর গান।সব সময় তার গলায় সুর ওঠে খেলা করে 'এমনি করে যায় যদি দিন যাকনা' । অনেকে তো জিজ্ঞেসই করে বসে" মনীশ, তুমি সব সময় সব বিষয়ে এত কেয়ার ফ্রি থাক কী করে?"মনীশ একটা রহস্যময় হাসি হেসে ...
রোদন ভরা হিয়া – নাজির হোসেন বিশ্বাস

রোদন ভরা হিয়া – নাজির হোসেন বিশ্বাস

বিহান বেলায় ২
রোদন ভরা হিয়া নাজির হোসেন বিশ্বাস  দোতলার ব্যালকনিতে নরম রোদ বিড়াল ছানার মত খেলায় মত্ত। সাদা মার্বেল পাথরের বারান্দাটি ঝকঝক করছে। এককোণে সুন্দর কারুকার্য খচিত রঙিন পাথরের টবে মানিপ্ল্যান্টের লকলকে লতাটি সবুজ পাতার ঢেউ তুলে পাশের রেলিংয়ে ভর দিয়ে  হাওয়ায় দোল খাচ্ছে। নীচের সবুজ লন জুড়ে নানা রকম দেশী বিদেশী ফুলেরা মাথা দুলিয়ে আলাপন জুড়েছে।ভুবন ডাঙ্গার এই দ্বিতল বাড়ির মালিক সুবিমল বোস। এই মুহূর্তে ব্যালকনিতে সকালের সোনারঙা রোদ্দুরটুকু উপভোগ করছেন। ডিসেম্বরের শেষ, ঠাণ্ডা জাঁকিয়ে বসেছে, গাছের পাতায় শিশির বিন্দু রোদের আলোয় হীরকদ্যুতি বিচ্ছুরণ করছে অকৃপণ ভাবে। এমন সময়ে গুটিগুটি পা’য়ে এসে দাদার অদূরে দাঁড়িয়ে, কোন ভণিতা ছাড়াই নির্মল  বলে উঠলো, -“দাদা আমার পক্ষে আর এই বাড়িতে থাকা কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না…আলাদা হতে চাই”। হতভম্ব দাদা কোন কথা না বলে ফ্যালফ্যাল করে ছোট ভাইয়ের মুখের দিকে অপলক চেয়ে রই...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!