শতবর্ষ পেরিয়ে মনোরঞ্জন চৌধুরী
বিস্মৃত এক স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সংগীতসাধক
রাজেশ দত্ত
১৯৪৫ সালের অক্টোবর। পরাধীনতার নাগপাশে ভারতবর্ষ। ব্রিটিশ অত্যাচারে নিপীড়িত দেশবাসীর বুকে দিকে দিকে জ্বলছে বিদ্রোহ ও বিক্ষোভের আগুন। সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনীর মুক্তি সংগ্রাম ব্যর্থ হয়েছে। আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনানীদের বিচারের নামে চলছে নির্দয় প্রহসন। নেতাজীর অন্তর্ধানে দেশবাসী .স্তব্ধবাক অন্যদিকে রচিত হচ্ছে ঐতিহাসিক নৌবিদ্রোহের প্রেক্ষাপট। এই অগ্নিগর্ভ সময়ে বাংলার এক গায়ক উদাত্ত কণ্ঠে গেয়ে উঠলেন এক আশ্চর্য তেজোদীপ্ত ও মর্মভেদী গান — “পৃথিবী আমারে চায়, / রেখো না বেঁধে আমায়, / খুলে দাও প্রিয়া, খুলে দাও বাহুডোর /…শোন না কি ওই আজ দিকে দিকে হায়, / কত বঁধু কাঁদে, কাঁদে কত অসহায়, / পথ ছেড়ে দাও, নয় সাথে চলো, মুছে নাও আঁখিরোল, / খুলে দাও প্রিয়া, খুলে দাও বাহুডোর।” গানটি অভূতপূর্ব সাড়া জাগালো বাংলার আপামর মানুষের মনে। কালজয়ী এই গানটির রচয়িতা মোহিনী চৌধুরী। সুরকার কমল দাশগুপ্ত। আর গায়ক সত্য চৌধুরী৷ এই গানটি তাঁকে বাংলা গানের জগতে চিরস্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত করল। গানটি প্রকাশের ঠিক এক মাস আগে শিল্পীর ভাই ২৪ বছরের বিপ্লবী তরুণ মুক্তি পেয়েছেন কারাগার থেকে। সুভাষচন্দ্র বসুর বৈপ্লবিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পরাধীন দেশে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সবার মনে মুক্তিমন্ত্রের ‘দীপালী জ্বালাতে’ সংসারের মায়ার ‘বাহুডোর’ খুলে ‘পৃথিবী আমারে চায়, রেখো না বেঁধে আমায়’ বলে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে। এক বছর আগে ধরা পড়েছিলেন ব্রিটিশ পুলিশের হাতে। তারপর কারারুদ্ধ। তাঁরও কণ্ঠে ছিল গান। আর অন্তরে ছিল বিপ্লবের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। তাঁর নাম মনোরঞ্জন চৌধুরী, কিংবদন্তী গায়ক সত্য চৌধুরীর মেজোভাই, ইতিহাসে আজ বিস্মৃতির অন্তরালে।
মনোরঞ্জন চৌধুরীর জন্ম ১৯২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কলকাতার ৩৬ নম্বর ল্যান্সডাউন রোডের এক সচ্ছল বনেদি পরিবারে। বাবা যতীন্দ্রমোহন চৌধুরী কলকাতা হাইকোর্টের এক নামী আইনজীবী। মা বিমলা দেবী ছিলেন কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র সুরতাপস দিলীপকুমার রায়ের ভাগ্নি। দ্বিজেন্দ্রলাল আত্মীয়তার সম্পর্কে মায়ের কাকা ছিলেন। মনোরঞ্জন চৌধুরীরা চার ভাই ও চার বোন। ভাইদের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজো। বড়দা স্বর্ণযুগের বাংলা গানের জগতে প্রবাদপ্রতিম সংগীতশিল্পী সত্য চৌধুরী। সেজোভাই নিত্যরঞ্জন সাহিত্যিক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর রচিত বেশ কিছু গানে সুরারোপ করে সত্য চৌধুরী গেয়েছিলেন। ছোটোভাইয়ের নাম বিশ্বরঞ্জন। তাঁদের চার বোন — নমিতা, সবিতা, অতসী ও নিবেদিতা।
পিতৃপুরুষের আদি নিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশের) রাজশাহীর অনতিদূরে মাদারিপুরে। ঠাকুর্দা কিশোরীমোহন চৌধুরী ছিলেন সেই অঞ্চলের প্রখ্যাত জমিদার ও জননেতা। তাঁর বাবা রাজমোহন চৌধুরী। জমিদারির অর্থসম্পদ ও সম্পত্তির প্রাচুর্যে শুধু নয়, কিশোরীমোহন ছিলেন তাঁর অন্তরের অপার ঐশ্বর্যে ধনী। ‘দেশহিতৈষী’ বলে তাঁর বিপুল সুখ্যাতি ছিল। তাঁর দানে গড়ে ওঠা ‘অন্নছত্র’-তে গ্রামের শতাধিক দরিদ্র মানুষের পেট ভরতো প্রতিদিন।
১৯১৮ সালে ওপার বাংলা থেকে যতীন্দ্রমোহন চৌধুরী সপরিবারে এপার বাংলায় এসে উত্তর কলকাতার ৩১ নম্বর গ্রে স্ট্রিটের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পূর্ববঙ্গে থাকাকালীন যতীন্দ্রমোহন ও বিমলা দেবীর এক পুত্রসন্তান জন্মলাভ করেছিল। কিন্তু তাঁদের সেই প্রথম সন্তানটি অকালেই মারা যায়। এরপরে ১৯১৮ সালে কলকাতায় গ্রে স্ট্রিটের বাসায় জন্ম হয় সত্য চৌধুরীর। তাঁর যখন দেড় বছর বয়স, তখন তাঁরা বিমলা দেবীর পিতৃনিবাসের কাছে দক্ষিণ কলকাতার ল্যান্সডাউন রোডের একটি বাড়িতে চলে আসেন। সেখানেই ১৯২১-এ মনোরঞ্জন চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন।
এক সাংগীতিক পরিমণ্ডলে তাঁর বেড়ে ওঠা। পিতৃকুল ও মাতৃকুল — দু’তরফেই গানবাজনার পরম্পরা ছিল। বিমলা দেবীর বাবা উপেন্দ্রনাথ মজুমদার ছিলেন স্বনামধন্য অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল। দাদুর বাড়িতে মায়ের মামা দিলীপকুমার রায় শুধু নন, কবি রজনীকান্ত সেনও আসতেন। মায়ের কণ্ঠে ছিল অসাধারণ সুর আর হৃদয়ে ছিল প্রগাঢ় সংগীত প্রেম। রাজশাহীতে কান্তকবির কাছে গান শিখতেন মা। ‘পাতকী বলিয়া কিগো পায়ে ঠেলা ভালো হয়’ ইত্যাদি ভক্তি রসাশ্রিত গান গাইতে তিনি খুব ভালোবাসতেন। মনোরঞ্জনের মামা ইউ. এল. জে. মজুমদার গায়ক ও নাট্যাভিনেতা ছিলেন। অন্যদিকে ঠাকুর্দা কিশোরীমোহন চৌধুরী উস্তাদের কাছে সেতার বাজানো শিখতেন। এক জ্যাঠামশাইয়ের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব ছিল। রাজশাহীর মাদারিপুরের জমিদার বাড়িতে প্রতি বছর দুর্গাপুজোর সময় কিশোরীমোহন চৌধুরীর আয়োজনে পুজোর চারদিন ধরে নাটমন্দিরের মঞ্চে যাত্রা, থিয়েটার থেকে শুরু করে আলকাপ, কবিগান ইত্যাদি গ্রামীণ লোকসংগীতের জমজমাট অনুষ্ঠান হত। তাঁর সংগীতানুরাগ মনোরঞ্জনের বাবা যতীন্দ্রমোহনকেও গানবাজনার দিকে আকৃষ্ট করে। সুকণ্ঠের অধিকারী ছিলেন তিনি। অবসরে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাওয়া ছিল তাঁর শখ। তাঁরই পরিচয় সূত্রে পাখোয়াজ বাদক ভগবানচন্দ্র সেন আসতেন তাঁদের ল্যান্সডাউনের বাড়িতে। তিনি নিজের মনে যখন পাখোয়াজ বাজাতেন, খুব উপভোগ করতেন যতীন্দ্রমোহন। আর সুর করে ছড়া কেটে বলতেন — ‘ভগবানচন্দ্র সেন/ পাখোয়াজ বাজাচ্ছেন / আপনারা যদি শুনবেন / তো দয়া করে আসবেন । মা বিমলা দেবী শুধু নিজেই গানের চর্চা করতেন না, ছেলেদের মধ্যেও গানের সাথে নিবিড় আত্মিক সখ্যতার সম্পর্ক গড়ে তোলেন। মায়েরই আগ্রহে ও উদ্যোগে বাড়িতে আসে কলের গান। এমনই গানের আবহে বড়দা সত্য চৌধুরীর সংগীত প্রতিভা শৈশব থেকেই বিকশিত হয়। মনোরঞ্জন চৌধুরীও মা ও দাদার প্রেরণায় ছোটোবেলা থেকেই গানকে ভালোবেসে ফেলেন। দাদা ও মায়ের কাছেই তাঁর সংগীত শিক্ষা। প্রথাগতভাবে কোনও সংগীতগুরুর কাছে নাড়া বেঁধে গানের তালিম না নিলেও নিয়মিত রেওয়াজ করতেন গানের। প্রথাগত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও বিশুদ্ধ শাস্ত্রীয় সংগীত ও রাগাশ্রয়ী গান থেকে বাংলা আধুনিক গান, নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসংগীত থেকে দ্বিজেন্দ্রগীতি, কান্তগীতি, ভজন, কীর্তন — সব ধরনের গানই তুলে নিতেন কণ্ঠে। বাল্যকাল থেকেই নিরবচ্ছিন্ন ছিল তাঁর আত্মমগ্ন সংগীত সাধনা। গান ও পড়াশোনার পাশাপাশি ঝোঁক ছিল খেলাধুলো ও শরীর চর্চায়। দৌড় ও মল্লযুদ্ধে তিনি পারদর্শী ছিলেন। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দৌড়ে অংশ নিয়ে তিনি অনেক পুরস্কার জিতেছিলেন। কুস্তিতেও তিনি সেরার শিরোপা পেয়েছেন বেশ কয়েকবার।
খেলার মাঠে, কুস্তির আখড়ায় ও গানের আসরে মন পড়ে থাকলেও পড়াশোনাকে কখনও অবহেলা করেননি তিনি। লেখাপড়াতেও তাঁর গভীর আগ্রহ, নিষ্ঠা ও অধ্যবসায় ছিল। মেধাবী ও কৃতী ছাত্র হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। তখনকার দিনে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় সপ্তম স্থান অধিকার করেছিলেন। ম্যাট্রিক পাশ করেন প্রথম বিভাগ। ক্লাস এইট অবধি পড়েছিলেন পদ্মপুকুর ইনস্টিটিউশনে। তারপর ১৯৩৫ সালে ভর্তি হন ভবানীপুরের ঐতিহ্যমণ্ডিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘মিত্র ইনস্টিটিউশন’-এ। দাদা সত্য চৌধুরীও এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। মনোরঞ্জন যে বছর এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, সেই ১৯৩৫ সালেই এখান থেকে সত্য চৌধুরী ম্যাট্রিক পাশ করেন। নবম ও দশম শ্রেণীতে পড়ার পরে মনোরঞ্জন ১৯৩৭ সালে ‘মিত্র ইনস্টিটিউশন’ থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
এই স্কুলে পড়ার সময়েই দেশের পরাধীনতার শৃংখলমোচনের সংকল্প নিয়ে স্বদেশব্রতের বীজমন্ত্রে দীক্ষিত হন তিনি। জাতীয়তাবাদী চিন্তাচেতনার জাগরণ ঘটে কিশোর মনোরঞ্জনের মনে। পরবর্তীকালে দু’চোখে স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে গভীর আত্মপ্রত্যয়ে ও অদম্য অঙ্গীকারে উজ্জীবিত তাঁর বৈপ্লবিক সংগ্রামী জীবনের ভাবাদর্শের সূচনা হয়েছিল এখান থেকেই। এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মৃত্যুঞ্জয়ী বিপ্লবী বীর যতীন দাসের দেশের স্বাধীনতার জন্যে আত্মবলিদানের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন। সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতিষ্ঠিত ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স পার্টি’র বিপ্লবী কর্মকাণ্ড তাঁর অন্তরে বৈপ্লবিক চিন্তাধারার আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ‘স্কুলের স্মৃতি’ নামে আত্মকথনে তিনি লিখেছেন, “স্কুলে আমার একটা বিশেষ পরিচিতি ছিল প্রসিদ্ধ জননেতা রাজসাহীর কিশোরীমোহন চৌধুরীর নাতি হিসেবে। তখন স্বদেশী যুগ। বেশীরভাগ কিশোর তরুণের সামনেই তখন দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করে তোলার স্বপ্ন। পড়াশুনায় মন লাগে না। মিত্র স্কুলের বহু ছাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। মেজর যতীন দাসের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামী এই স্কুলের ছাত্র। ইনি ১৯২০ সালে এখান থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। লাহোর সেন্ট্রাল জেলে আমরণ অনশন করে ইনি প্রাণত্যাগ করেন। যতীন দাসের আদর্শে আমরা উদ্বুদ্ধ হই। তখন মেজর সত্য গুপ্ত ছিলেন ‘বেংগল ভলেন্টিয়ারস পার্টির’-র সদস্য। পরবর্তী কালে জ্যোতিষচন্দ্র জোয়ারদার এই পার্টির সম্মুখ ভাগে আসেন। এই পার্টির সদস্য হিসাবে আমিও কারাবরণ করি — সে অবশ্য পরের কথা।”
মিত্র ইনস্টিটিউশন’-এ স্বাদেশিকতার ঝোড়ো হাওয়া থাকলেও পড়াশোনার পরিবেশ ছিল অটুট। এ স্কুলে পড়ার সময়ে কবিশেখর কালিদাস রায়, পণ্ডিত জানকীনাথ শাস্ত্রী প্রমুখের মতো সেকালের প্রথিতনামা ব্যক্তিত্বদের তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন। তাঁদের স্মৃতিচারণায় তিনি লিখেছেন — “আমরা শিক্ষক হিসেবে যাঁদের পেয়েছি, তাঁদের অনেকেই এখন প্রবাদপুরুষ। আমাদের বাংলা পড়াতেন এই বিখ্যাত পঙতির রচনাকার ‘ এমনি হরির অপার মহিমা, এমনি প্রেমের জাদু / কয়লা হৃদয় গলি হীরা হয়, তস্করও হয় সাধু… ‘ — অর্থাৎ কবিশেখর কালিদাস রায়। সংস্কৃত পড়াতেন পণ্ডিত জানকীনাথ শাস্ত্রী মহাশয়, আমাদের জ্যেষ্ঠ পণ্ডিতমশাই মাঝে মাঝে বলতেন, ‘ জানিস্ , আশুতোষ মুখুজ্জ্যের চার ছেলেকে আমিই পড়িয়েছি’। স্কুলের নিয়ম শৃঙ্খলা ছিল অত্যন্ত কঠোর। মিত্র স্কুলের পাশেই হরিশ পার্ক। স্কুলের ড্রিল হরিশ পার্কেই। ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে ছোট ছোট দলে ছাত্রদের ভাগ করে বিশেষ কোচিং ক্লাসের ব্যবস্থা করা হত। এ ছাড়া স্কুলের পড়া স্কুলেই তৈরী করে নিতে হত। নাহলে জুটত মাস্টার মহাশয়ের বেদম প্রহার। মিত্র স্কুল থেকে আমি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করি। তারপর আস্তে আস্তে স্কুলের সঙ্গে সম্পর্ক কমতে থাকে।”
‘মিত্র ইনস্টিটিউশন’-এর এই কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলার পাঠ তাঁকে পরবর্তী জীবনে স্বদেশি আন্দোলনের কঠিন লড়াইয়ের দিনগুলিতে বিপ্লবী দলের শৃঙ্খলাপরায়ণতা ও নিয়মানুগত্যকে অবিচলভাবে মেনে চলার সহায়ক হয়েছিল। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন তাঁর আদর্শ। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেছিলেন বিপ্লবী বীরেন মুখোপাধ্যায় ও রাতুল রায়চৌধুরীর সান্নিধ্যে আসার পরে। তাঁদের প্রেরণায় ও আহ্বানে ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স পার্টি’ (বি.ভি)-তে যোগদান করেন। এই পার্টির বিপ্লবী কার্যকলাপে সন্ত্রস্ত হয়ে ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্যদের নির্বিচারে ধরপাকড় করতে শুরু করে। ১৯৪৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সুভাষচন্দ্র বসুর ভাইপো শিশিরকুমার বসুর সাথে মনোরঞ্জন চৌধুরীকেও, পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ইংরেজদের কালা কানুন ‘প্রিভেন্টিভ ডিটেকশন অ্যাক্ট’-এ তাঁদের কারারুদ্ধ করা হয়। ভবানীপুরের অভয় সরকার লেনে তাঁদের তৎকালীন বাসভবন ছাড়াও রাজশাহীর বাড়িতেও পুলিশবাহিনী অতি সক্রিয় হয়ে খানাতল্লাশি চালিয়েছিল। বিচারে এক বছর কারাবাস করতে হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। মিহির বন্দ্যোপাধ্যায় সত্য চৌধুরীকে নিয়ে রচিত একটি নিবন্ধে মনোরঞ্জন চৌধুরী সম্পর্কে লেখেন, “পিতামহ রাজশাহীর জমিদার কিশোরীমোহন চৌধুরীর মতোই অন্যায়ের প্রতিবাদে পৌত্রদের রক্তকণিকাতে বইত প্রতিশোধের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। এবং তাঁরাও নিয়োজিত থাকতেন সেবাব্রতে। সমাজসেবা, দেশের সেবা। সত্য চৌধুরীর পরের ভাই মনোরঞ্জন, ব্রিটিশ কারাগারে অন্তরীন হয়েছিলেন আই.এন.এ কলকাতা শাখার অনুগত ভলান্টিয়ার হওয়ার দরুন।”
কারাবরণ করার আগে মনোরঞ্জন শিক্ষাঙ্গনে ও সংগীতে তাঁর কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৪২ সালে ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে কমার্সের স্নাতক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তার আগে ১৯৪০ সালের এপ্রিলে ‘গভর্নমেন্ট অফ বেঙ্গল এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট’-এর অধীনস্থ ‘গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট’ থেকে বাণিজ্য বিষয়ে দু’বছরের সার্টিফিকেট কোর্সেও সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯৪৪ সাল থেকে ১৯৪৫ সালে জেলবন্দি হওয়ার আগে অবধি তিনি বেতারশিল্পী হিসেবে ‘আকাশবাণী’তে নিয়মিত গান গাইতেন৷
কারাবাসেও অব্যাহত ছিল তাঁর পঠনপাঠন। ১৯৪৫ সালে ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে এম.কম. ডিগ্রি অর্জন করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস-চ্যান্সেলর রাধাবিনোদ পাল তাঁর জন্যে জেল থেকে পরীক্ষা দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা করেছিলেন। জেলে বসেই ‘আইন’ নিয়ে পড়াশোনা করে ‘এল এল বি’-র প্রিলিমিনারি পরীক্ষাতেও সসম্মানে উত্তীর্ণ হন তিনি। পরবর্তী কালে ১৯৪৭ সালে ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকেই তিনি দ্বিতীয় বিভাগে আইনের স্নাতক হন। বাবা যতীন্দ্রমোহন হাইকোর্টের লব্ধপ্রতিষ্ঠ অ্যাডভোকেট ছিলেন বলে তাঁর স্বপ্ন ছিল ছেলেরাও তাঁর মতো আইনজীবী হবে ৷ বড়দা সত্য চৌধুরী বি.এ. পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলা সাহিত্যে এম.এ.পাশ করেন। বাবার ইচ্ছেতেই আইন নিয়েও পড়াশোনা করেছিলেন। বাবার স্বপ্নপূরণের জন্যে মনোরঞ্জনও আইনের ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু বংশ পরম্পরার ধারা বজায় রেখে তাঁরা কেউই ওকালতি করেননি। সত্য চৌধুরী হয়েছিলেন সংগীতশিল্পী, আর মনোরঞ্জন পেশাগত জীবনে যোগ দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাণিজ্যকর বিভাগে।
১৯৪৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে তিনি শরৎচন্দ্র বসু-সহ অন্যান্য রাজবন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে জেল থেকে ছাড়া পান। গান ছিল তাঁর চিরকালের সঙ্গী। কারাবাসের জন্যে গানের সাথে তাঁর বিচ্ছেদ ঘটেছিল। মুক্তির পরে তাই অগ্নিযুগের ‘আগুনপাখি’ এই তরুণ বিপ্লবী গানের পাখি হয়ে আবার ডানা মেললেন সুরের আকাশে। ১৯৪৮ সালের জুন মাসে তাঁর জীবনের প্রথম রেকর্ডটি প্রকাশিত হল। এই রেকর্ডে তিনি গেয়েছিলেন নজরুল ইসলামের কথায় ও সুরে ‘অয়ি চঞ্চল-লীলায়িত-দেহা’ (‘সাহানা-বাহার’ রাগে কবির ‘মদিনা’ গীতিআলেখ্যর গান) এবং গীতিকার ধীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায় ও ধীরেন দাসের সুরে ‘তোমার সাথে আমার মনের জানাজানি’। ‘এইচএমভি’ থেকে প্রকাশিত এই রেকর্ডটির ( রেকর্ড নম্বর এন- ২৭৮৬২) গান দু’খানি শ্রোতাদের কাছে যথেষ্ট সমাদর পেয়েছিল। মনোরঞ্জন চৌধুরীর উদাত্ত, সুমধুর ও দরদি কণ্ঠ, স্বরপ্রয়োগে তাঁর সুচারু দক্ষতা, গানের ভাবপ্রকাশে উজ্জ্বল স্বকীয়তা এবং সর্বোপরি সুরের সূক্ষ্ম কারুকার্যের সাথে মনোমুগ্ধকর স্নিগ্ধ, সুললিত মাধুর্যের অনিন্দ্যসুন্দর মেলবন্ধন বেশ প্রশংসিত হয়েছিল।
১৯৫০ সালের এপ্রিলে ‘এইচএমভি’ থেকেই প্রকাশিত হয় তাঁর আরেকটি রেকর্ড। এই রেকর্ডে (রেকর্ড নম্বর: এন — ৩১১৮৪) তিনি দু’খানি নজরুলগীতি পরিবেশন করেন — বেহাগ রাগাশ্রিত ‘আমি সুন্দর নহি জানি’ এবং পিলু–বারোয়াঁ রাগাশ্রয়ী ‘মেঘ মেদুর গগন কাঁদে’। সে বছরেই তাঁকে সংসারের অর্থ সংস্থানের জন্যে চাকরি নিতে হয়। এর পর কর্মব্যস্ততায় আর তিনি গানের জন্যে সময় দিতে পারেননি। কিন্তু এই স্বল্পকালের সংগীত জীবনেই তিনি তাঁর সহজাত প্রতিভার উদ্ভাস ও নিরলস সাধনায় সিদ্ধ সাংগীতিক কুশলতার অসামান্য ছাপ রেখে গেছেন।
ছেলে পরমানন্দ চৌধুরী পিতৃস্মৃতিচারণে লেখেন, ‘বাবা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী মনোরঞ্জন চৌধুরী। জ্যাঠার মতো না হলেও, তারও গানের গলা কিন্তু মন্দ ছিল না। মাঝে মাঝেই বেশ দরাজ গলায় গেয়ে উঠতে শুনেছি তাঁকে। বলে রাখা ভালো, জেল থেকে বেরনোর পর এইচএমভি থেকে বাবারও দুটো রেকর্ড বেরিয়েছিল। যদিও পারিবারিক কারণে গান নিয়ে আর বেশি দূর এগোনো সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। সংসারের হাল ধরতে গান-বাজনা ছেড়ে দশটা-পাঁচটার চাকরি করতে হয়েছিল তাঁকে ৷ ‘
বাবা যতীন্দ্রমোহন চৌধুরীর অকাল জীবনাবাসনে মা ও ছোটো ভাইবোনেদের দেখভাল এবং সংসারের আর্থিক দায়দায়িত্ব সবটুকু এসে পড়েছিল বড়ো দুই ভাই সত্যরঞ্জন ও মনোরঞ্জনের ওপর। তাই পেশাগতভাবে সংগীত জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ ও অর্থোপার্জনের অনিশ্চয়তা থাকায় বাঁধা মাসমাইনের সরকারি চাকরিই বেছে নিয়েছিলেন মনোরঞ্জন। সংসারের জন্যে ইতি টানলেন গানের জীবনে। মনোরঞ্জন চৌধুরীর সংগীত জীবনের এই অকাল অবসানে প্রণব রায়ের কথায় ও কমল দাশগুপ্তের সুরে সত্য চৌধুরীর সেই জনপ্রিয় গানের শুরুর স্তবক দু’টি মনে পড়ে যায়–
‘যেথা গান থেমে যায়
দীপ নেভে হায়
মিলনের নিশিভোরে
যদি মনে পড়ে
সেথায় খুঁজিও মোরে।
সেই হারানো স্মৃতির দেশে
যদি দাঁড়াও কখনো এসে
ভুল করে শুধু ডাকিও আমায়
ভুলে যাওয়া নাম ধরে
যদি মনে পড়ে
সেথায় খুঁজিও মোরে।’
১৯৫০ সালের ৬ জানুয়ারি বাণিজ্য কর বিভাগের আধিকারিক রূপে তাঁর চাকরি জীবন শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে ‘চার্জ অফিসার’ ও পরবর্তীতে ‘অ্যাডিশনাল চার্জ অফিসার’ হিসেবে তাঁর পদোন্নতি ঘটে। ১৯৭৯ সালের ১৮ জুন থেকে ১৯৮১ সালের ৩১ জানুয়ারি অবসর গ্রহণ অবধি তিনি ‘অ্যাসিস্টান্ট কমিশনার’-এর দায়িত্বভার পালন করেছিলেন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাঁর ইস্পাতদৃঢ় সততা। মহত্তর মূল্যবোধে প্রাণিত এই দৃঢ় চরিত্রের মানুষটি কোনওদিন কোনও অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেননি। বাণিজ্য শুল্ক বিভাগের উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন, তাই বাড়ির লোককে কঠোরভাবে নিষেধ করে দিয়েছিলেন, কোনও স্থানীয় দোকানে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে কোনওভাবে কেউ যেন পরিচয় না দেয়, পাছে কেউ অনভিপ্রেত অন্যরকম সুযোগ-সুবিধা দিতে চায়।
মনোরঞ্জনের চার ভাই মা বিমলা দেবীকে নিয়ে আশ্রমিক পরিবেশে থাকবেন বলে ঠিক করেছিলেন। সেই কারণে সবাই বিয়ে করবেন না বলে মনোস্থির করেন। কিন্তু মায়ের একান্ত অনুরোধে মনোরঞ্জনকে শেষমেশ বিয়ে করতে হয়। বড়দা সত্য চৌধুরী ও বাকি দুই ভাই আজীবন অকৃতদারই থেকে যান। বোনেদের অবশ্য সকলেরই বিয়ে হয়েছিল।
১৯৬৯ সালের ৩০ জুলাই রেখা দেবীর সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি। রেখা দেবীর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দার্জিলিঙে। তিনি পিয়ানো বাজিয়ে খুব সুন্দর গান করতেন। পিয়ানো বাদন শিখেছিলেন প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ লুই ব্যাংকসের কাছে। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখ-শান্তিতে পরিপূর্ণ ছিল তাঁদের দাম্পত্য জীবন।
১৯৭১ সালে ৯ জুন তাঁদের কন্যা পরমেশ্বরীর জন্ম। ১৯৭৬ সালে ১৯ নভেম্বর পুত্র পরমানন্দ চৌধুরীর জন্ম হয়। পরমেশ্বরী ও পরমানন্দ দু’জনেই জ্যাঠামশাই সত্য চৌধুরীর ‘নয়নের মণি’ ছিলেন। জ্যাঠার স্নেহচ্ছায়াতেই তাঁদের বড়ো হয়ে ওঠা। সংগীতশিক্ষার শুরুও জ্যাঠার কাছেই। বর্তমানে পরমেশ্বরী ও তাঁর জীবনসাথী বিশ্বজিৎ হালদার সরকারী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তাঁদের একমাত্র ছেলে মনোরঞ্জন চৌধুরীর নাতি দেবমাল্য খড়গপুর আই.আই.টি-র ছাত্র। পরমানন্দ চাকরি করেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। পুত্রবধূ চৈতিকে কন্যাসম স্নেহ করতেন মনোরঞ্জন। গভীর সখ্যতার মধুর সম্পর্ক ছিল তাঁদের। চৌধুরী পরিবারের সুমহান সাংগীতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার বহন করে পরমেশ্বরী ও পরমানন্দ দু’জনেই প্রতিষ্ঠিত গানের শিল্পী। জ্যাঠামশাই ছাড়াও তাঁরা আরো কয়েকজন সংগীত শিক্ষকের কাছে গানের তালিম নিয়েছেন। পরমেশ্বরী শিখেছেন শাস্ত্রীয় সংগীতের গুরু বঙ্কেশ্বর ভৌমিক, সমরেশ রায়, এখনকার স্বনামধন্য শিল্পী মনোময় ভট্টাচার্য ও ঈপ্সিতা ঘোষের কাছে। পরমানন্দের সংগীত শিক্ষক জিৎ মুখোপাধ্যায় ও ঈপ্সিতা ঘোষ। ভাই-বোন দু’জনেই বেতার ও দূরদর্শনের শিল্পী। এভাবেই তাঁদের বংশের গরিমাদীপ্ত গানের পরম্পরা বহতা নদীর মতোই স্রোতস্বিনী।
স্বল্পকালীন রোগভোগের পর ২০০১ সালের ১ অগাস্ট রেখা দেবীর জীবনাবসান হয়। পত্নীবিয়োগের পরে শোকাহত মনোরঞ্জন চৌধুরী বেশ কিছুটা নিঃসঙ্গ বোধ করেন। ২০০৩ সালে তাঁর ‘স্কুলের স্মৃতি’ শীর্ষক আত্মকথনে লেখেন –“কালের নিয়মে আজ মহাকাল অনেকটাই আমাকে একলা করে দিয়েছে। স্ত্রী বছর দুয়েক আগে প্রয়াত হয়েছেন। পুত্র ও কন্যা নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিয়োজিত। পুত্র চাকুরীজীবী ও কন্যা শিক্ষিকা। তাঁরা তাঁদের পেশা ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তাই আমার দিনের অনেকটা সময় কাটে পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করে। আর কৈশোর ও প্রথম যৌবনের স্মৃতির সিংহভাগ জুড়ে আছে আমার স্কুল — মিত্র ইনস্টিটিউশন।”
জীবনসাথীকে চিরতরে হারানোর পরে নিদারুণ শূণ্যতা ও বেদনার মাঝেও তাঁর জীবনসায়াহ্ন ভরে উঠেছিল পুত্র, পুত্রবধূ, কন্যা, জামাতা ও দৌহিত্রের নিবিড় সাহচর্যের মাধুরীতে। শেষ জীবনে বার্ধক্যজনিত কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়লেও মানসিকভাবে যথেষ্ট সবল ও দৃঢ় ছিলেন।
২০০৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৬ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আজ মনোরঞ্জন চৌধুরীর শতোত্তর দ্বিতীয় জন্মবার্ষিকীতে তাঁর অমর ও অবিনশ্বর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি ও প্রণাম জানাই।
———————————
তথ্যসূত্র:
(১) ‘পৃথিবী আমারে চায়: সত্য চৌধুরী’। সম্পাদনা: বিভাষ রায়চৌধুরী। সংকলন: পরমানন্দ চৌধুরী। প্রকাশক: দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা- ৭৩, প্রথম প্রকাশ: ২০২১ সালের নভেম্বর।
(২) ‘মিত্র ইনস্টিটিউশন’-এর সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে মনোরঞ্জন চৌধুরীর লেখা ‘স্কুলের স্মৃতি’।
(৩) বন্ধুবর পরমানন্দ চৌধুরীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি।
—————————
গানের ইউটিউব লিংক:
(১) মনোরঞ্জন চৌধুরীর কণ্ঠে ‘আমি সুন্দর নহি জানি হে বন্ধু জানি’, ‘অয়ি চঞ্চল-লীলায়িত-দেহা’ এবং ‘তোমার সাথে আমার মনের জানাজানি’ গান তিনটি শুনুন নীচের ইউটিউব লিংকে ক্লিক করে…👇
(২) মনোরঞ্জন চৌধুরীর কণ্ঠে ‘মেঘ মেদুর গগন কাঁদে’ শীর্ষক অনবদ্য নজরুলগীতিটি শুনতে নীচের লিংকে ক্লিক করুন…👇
কৃতজ্ঞতা স্বীকার– মনোরঞ্জন চৌধুরীর জীবনের অনেক তথ্য,পারিবারিক ফোটোগ্রাফ ও দুর্লভ সব গানের প্রাপ্তি শিল্পী-পুত্র আমার ভ্রাতৃপ্রতিম গানের বন্ধু, প্রাণের বন্ধু পরমানন্দ চৌধুরীর সৌজন্যে।
*************************************
রাজেশ দত্ত পরিচিতি
রাজেশ দত্ত একজন প্রাবন্ধিক কবি গীতিকার ও সুরকার সর্বোপরি একজন আপোসহীন যুক্তিবাদী। বর্তমানে চন্দননগরস্থিত বিজ্ঞান ও মানবাধিকার সংস্থা ‘ভারতের মানবতাবাদী সমিতি’র সম্পাদক। ২০০৫ সালের কলকাতা বইমেলায় র্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন প্রকাশনার উদ্যোগে রাজেশের প্রথম গানের সংকলন গ্রন্থ- ‘মানবতার গান’ প্রকাশিত হয়। উৎস মানুষ, অনীক, টপ কোয়ার্ক, আকিঞ্চন, হেতুবাদী সাময়িকী’, ‘বন্দীবার্তা’, ‘প্রসঙ্গ সমকাল’, ‘বিরুদ্ধতা’, ‘অন্যদিগন্ত’, ‘আবাদভূমি’, ‘সাগ্নিক’ ইত্যাদি বেশ কিছু লিটল ম্যাগাজিনে ওনার গানের কথা ও স্বরলিপি প্রকাশিত হয়েছে। স্বরলিপি করেছেন অগ্রজা সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা বইমেলায় সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্ঠে রাজেশের কথায় সুরে প্রথম গানের অডিও সিডি ও ক্যাসেট ‘পাল্টা স্রোতের গান’ বের হয়। অডিও সিডিটি ছিল সম্পূর্ণ যন্ত্রানুষঙ্গ বর্জিত একটি ব্যতিক্রমী প্রয়াস। রাজেশের গানের বিষয়বৈচিত্র্য, উজ্জ্বল স্বাতন্ত্র্য, কথা ও সুরের আশ্চর্য মেলবন্ধন শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে।