Shadow

সোমড়ার দেওয়ানজী বাড়ির জগদ্ধাত্রী মন্দির : ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক – সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়

সোমড়ার দেওয়ানজী বাড়ির জগদ্ধাত্রী মন্দির : ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক

সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়

হুগলি জেলায় গঙ্গার পশ্চিম তীরবর্তী একটি প্রসিদ্ধ প্রাচীন গ্রাম সোমড়া। যদিও খুব বেশি প্রাচীন নয় এই গ্রাম। বড়জোর তিন-চারশো বছরের। গঙ্গার পুরোনো খাতের উপর জঙ্গল হাসিল করে গড়ে উঠেছিল এখানকার জনপদ। গঙ্গার প্রবাহ পরিবর্তনের ফলেই তা সম্ভব হয়। পার্শ্ববর্তী গুপ্তিপাড়ার মতোই সোমড়াও বৈদ্যপ্রধান স্থান। দীনবন্ধু মিত্র রচিত ‘সুরধুনী কাব্য’ গ্রন্থে এইভাবে সোমড়ার বর্ণনা পাওয়া যায় – ”গঙ্গার পশ্চিম তীরে শোভে নানা গ্রাম / সোমড়া শবিড়া বৈদ্য নিকরের ধাম।” তবে সোমড়া যখন গঙ্গার গর্ভোত্থিত চর ও জঙ্গল ছিল বৈদ্যরা তখন এখানকার অধিবাসী ছিলেন না। তখন এখানে মাঝিমাল্লা, মৎস্যজীবী ধীবর প্রভৃতি সম্প্রদায়ের বাস ছিল। অনতিদূরে শ্রীপুর-বলাগড়ে সেই সময়কালেই নৌশিল্পের বিকাশ ঘটে যার খ্যাতি ছড়িয়েছিল বাংলার বাইরেও। আজও সেখানে গঙ্গার পাড়ে গেলেই দেখা যায় শাল-সেগুনের কাঠ চেরাই করে খট খট শব্দ তুলে বিভিন্ন রকমের নৌকা তৈরি হচ্ছে। এখনও এই অঞ্চলের বহু মানুষের প্রধান পেশা নৌকা বাওয়া ও গঙ্গায় মাছ ধরা। এছাড়া গোপদেরও বাস আছে সোমড়ায়। তারাও এখানকার আদি বাসিন্দা। তাই মিষ্টান্ন শিল্পও প্রসিদ্ধি লাভ করেছে সোমড়ায়। সোমড়ার কাঁচাগোল্লা ও মোহনভোগ বিখ্যাত। অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে গুপ্তিপাড়ায় বৃন্দাবনচন্দ্রের মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি’ গ্রন্থে বিনয় ঘোষ লিখেছেন, “সোমড়া গ্রাম প্রধানত গুপ্তিপাড়ার বৃন্দাবনচন্দ্রের মঠের দেবোত্তর সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত। শোনা যায়, রাজা বিশ্বেশ্বর রায় (গুপ্তিপাড়ার) এই দেবোত্তর দান করেন।” ১৯৫৩-৫৪ সালে বিনয়বাবু সোমড়া গ্রামে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে গুপ্তিপাড়ার মঠের বিশাল কাছাড়ি-বাড়ির জীর্ণ ভগ্নাবশেষ দেখেছিলেন। মঠের মোহান্তরা নিয়মিত এই গ্রামে এসে এই কাছাড়ি-বাড়িতে থেকে জমিদারির তদারক করতেন। মঠ প্রতিষ্ঠার কয়েক দশকের মধ্যে বৈদ্য কুলোদ্ভব রামশঙ্কর রায় সোমড়ায় এসে বসবাস শুরু করেন। তিনি মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের দেওয়ান ছিলেন। ‘রায়’ উপাধি তিনি সম্রাটের কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল ও ঢাকায় তাঁর জমিদারি ছিল। সম্ভবত তিনি সেখান থেকেই এসেছিলেন। সোমড়া গ্রামে তাঁর প্রাসাদোপম আবাসবাড়ির ধ্বংসাবশেষ ও তার চারদিকের গড়খাই-ও বিনয়বাবু দেখেছিলেন। তিনি লিখেছেন, “বাড়ির মধ্যে তাঁর প্রতিষ্ঠিত একাধিক মন্দিরের জীর্ণ চিহ্ন এখনও আছে। একটি মন্দির গভীর জঙ্গলে সমাচ্ছন্ন, আর একটি পঞ্চরত্ন মন্দির এখনও মন্দির বলে চেনা যায়। বর্তমানে পরিত্যক্ত একটি ভগ্ন নবরত্ন মন্দিরে জগদ্ধাত্রী মূর্তি প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরের গায়ে এই শ্লোকটি খোদিত আছে। বাজি-দ্বিপ-ধরাধার সুতাশেষসুতাননৈঃ / ভুবা পরিমিতে শাকে মন্দিরাং শঙ্করোহকরোৎ। ১৬৭৭ শকাব্দে বা ১৭৫৫ সালে এই নবরত্ন মন্দিরটি তৈরি হয়। মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত জগদ্ধাত্রীর নিত্যপূজা হয় এখনও।” নদীয়ার কৃষ্ণনগর ও হুগলির চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর উৎসব জগদ্বিখ্যাত।

সোমড়ার দেওয়ানজী বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো

বাংলায়,বিশেষত হুগলি নদীর তীরবর্তী জেলাগুলোতে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়কাল থেকে অনেক গ্রামেই গৃহদেবতা হিসাবে সিংহবাহিনী জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন হয়। কিন্তু এই মন্দিরের আগে নির্মিত কোনো জগদ্ধাত্রী মন্দিরের হদিশ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই সেদিক দিয়ে বিচার করে এটিকে ‘বাংলার প্রথম জগদ্ধাত্রী মন্দির’ বলা যায়। মন্দিরটি দেখার প্রবল আগ্রহ নিয়ে এবং তার ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গত বছর জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমীর দিন (২ নভেম্বর, ২০২২) সকালে সোমড়া যাওয়ার পরিকল্পনা করি। শুধুমাত্র নবমীতেই পুজো হয়। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর পুজো পর পর সারা হয়। কলকাতায় ও অন্যত্র বসবাস করা রামশঙ্কর রায়ের বর্তমান বংশধরেরা পুজো উপলক্ষে নবমীর দিনেই সোমড়ায় আসেন। পুজো শেষে আবার যে যাঁর বাসস্থানে ফিরে যান। 
হাওড়া-কাটোয়া লাইনে সোমড়া বাজার রেলওয়ে স্টেশন। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ট্রেন থেকে নামলাম। স্টেশনেই দু’একজনের কাছে ‘দেওয়ানজী বাড়ি’-র জগদ্ধাত্রী পুজো কোথায় হয় জানতে চাইলাম। তাঁরাই মন্দিরে যাওয়ার পথ বলে দিলেন। মিনিট দশেকের হাঁটাপথ। সে পথে যেতে পড়ল এক বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজোমন্ডপ। দশটার আগেই মন্দিরে পৌঁছে গেলাম। চারপাশে বনজঙ্গলে ঘেরা এক মনোরম পরিবেশ। মন্দিরে ঢোকার মুখে ডানদিকে এক ভগ্নদশাপ্রাপ্ত মন্দির। জানা গেল সেটি বুড়ো শিবের মন্দির। মন্দিরটি বিনয়বাবুর দেখা সেই পঞ্চরত্ন মন্দির কিনা কে জানে! বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে বিনয়বাবু ‘পরিত্যক্ত একটি ভগ্ন নবরত্ন মন্দিরে জগদ্ধাত্রী মূর্তি প্রতিষ্ঠিত’ দেখেছিলেন। বর্তমানে আমূল সংস্কারের ফলে সেই মন্দির নতুন রূপ ধারণ করেছে। মন্দিরের প্রবেশ দরজার উপরের দেওয়ালে সংস্কৃত শ্লোক উৎকীর্ণ। দরজার বাঁদিকের দেওয়ালে শ্বেতপাথরের ফলকে লেখা রয়েছে – ‘বঙ্গের আদি শ্রীশ্রীমহাবিদ্যা নামে খ্যাত শ্রীশ্রীজগদ্ধাত্রী মূর্ত্তি দেওয়ান রায় রামশঙ্কর কর্ত্তৃক সন ১১৭২ সালে স্থাপিত।’ সুতরাং বোঝা গেল ১১৭২ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে এই মন্দিরে জগদ্ধাত্রী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন রামশঙ্কর রায়। এদিকে বিনয়বাবু লিখেছিলেন মন্দির নির্মাণের কাল ১৭৫৫ খ্রিষ্টাব্দ। তাহলে ধরে নিতে হচ্ছে মন্দির তৈরির দশ বছর পর মন্দিরে জগদ্ধাত্রীর পুজো শুরু হয়। 

সোমড়ার দেওয়ানজী বাড়ির জগদ্ধাত্রী মন্দিরের দেওয়ালে শ্বেতপাথরের ফলক

মন্দিরের ছবি তুলতে তুলতে পরিচয় হল ‘দেওয়ানজী বাড়ি’-র মেয়ে ললিতা গুপ্ত’র সাথে। বিয়ের পর তিনি ‘রায়’ থেকে ‘গুপ্ত’ হয়েছেন। ব্যস্ততার সাথে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে তিনি ২৫৭-তম পুজোর তদারকি করছিলেন। মন্দিরে পুরোহিত মশাই ততক্ষণে পুজো আরম্ভ করে দিয়েছেন। মন্দিরের সামনে বাঁশ ও লাল-হলুদ কাপড় দিয়ে তৈরি প্যান্ডেলে বসে পুজো দেখছিলেন কিছু দর্শনার্থী। পুজো দেওয়ার জন্য গর্ভগৃহের সামনেও ভিড় করেছিলেন কয়েকজন। যদিও বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীর সংখ্যা দু-চারজনের বেশি ছিল না। রায় পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় মানুষেরাই মূলত আসা-যাওয়া করছিলেন। গর্ভগৃহে পিতলের তৈরি জগদ্ধাত্রী মূর্তির অনিন্দ্যসুন্দর মুখশ্রী দেখে শিল্পীকে মনে মনে বাহবা দিলাম। যদিও ললিতাদি জানালেন এই মূর্তি রামশঙ্কর রায়ের প্রতিষ্ঠিত মূর্তি নয়। তাঁর প্রতিষ্ঠিত জগদ্ধাত্রী মূর্তি ছিল অষ্টধাতুর। সেই মূর্তি চুরি হয়ে যায়। জগদ্ধাত্রীর ডানদিকে পঞ্চানন ও বাঁ দিকে বুড়ো শিবের মূর্তি অবশ্য সেই সময়েরই। বুড়ো শিবের মূর্তি বেশ অভিনব। দেখে রীতিমতো তাক লেগে গেল। শিবের মুখে নুর দাড়ি। মনে প্রশ্ন জাগল। মুসলমান শাসনকালে মূর্তির এমন নির্মাণে কি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি রক্ষার প্রয়াস ছিল? এছাড়াও দেখলাম শিবের কোলে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ। মা কাছে থাকতেও বাবা সন্তানদের সামলাচ্ছে, এটা দেখিয়ে তখনকার পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে একটু ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নও মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকল।
ললিতাদি পরিচয় করালেন তাঁর কাকা রীতেন্দ্র নারায়ণ রায়-এর সাথে। তিনি অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। বর্তমানে লেখালেখি নিয়ে থাকেন। তাঁর লেখা কিছু ছড়া ও কবিতার বই-ও প্রকাশিত হয়েছে। দেওয়ান রামশঙ্কর রায় কেন এখানে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করলেন সে প্রসঙ্গে তিনি একদম বৈঠকী ভঙ্গিতে এক প্রচলিত গল্পকথা শোনালেন। বললেন, “তখন মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ পর্যায়। চতুর্দিকে বিদ্রোহ হচ্ছিল। সাম্রাজ্য ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছিল। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম সেই সময় কয়েকজন বিদ্রোহীকে ধরে আনার জন্য রামশঙ্কর-কে আদেশ দেন। শুনে তো দুশ্চিন্তায় রামশঙ্করের ঘুম চলে যাওয়ার যোগাড়। কীভাবে তিনি এই অসাধ্য সাধন করবেন ভেবে ভেবেও কোনো কুলকিনারা পেলেন না। এই পরিস্থিতিতে রাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন সিংহের পিঠে বসা এক অপূর্ব সুন্দরী কন্যা তাঁর দিকে চেয়ে বলছে, ‘আমি এখানে মাটিতে পড়ে আছি। তুই আমাকে তুলে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করলেই তোর সব সমস্যা মিটে যাবে।’ তারপর এখানেই সেই কন্যার নির্দেশিত জায়গা থেকে অষ্টধাতুর জগদ্ধাত্রী মূর্তি পাওয়া যায়। মূর্তিটি মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করার পর রামশঙ্কর বিদ্রোহীদের ধরতে সমর্থ হন।” রামশঙ্কর দ্বিতীয় শাহ আলমের খুব প্রিয়পাত্র ছিলেন বলে জানালেন রীতেন্দ্র নারায়ণ রায়। তাঁদের বাড়িতে এখনও দ্বিতীয় শাহ আলমের আমলের ‘পাঞ্জা’ আছে। সম্রাটের করতলের ছাপযুক্ত সেই ফরমান বা আদেশপত্রে লেখা বিষয়ের সারমর্ম এরূপ – তুলারাম দুবে নামে জনৈক কৃষক তাঁর জমি সংক্রান্ত নানারকম সমস্যার জন্য সুবিচারের আশায় সম্রাটের দরবারে আবেদন জানিয়েছিলেন। সেখানে দ্বিতীয় শাহ আলম বলেছিলেন এই বিচার তাঁর দরবারে হবে না। রামশঙ্কর রায় এটার বিচার করবেন। 

সোমড়ার দেওয়ানজী বাড়ির জগদ্ধাত্রী মন্দিরের দেওয়ালে সংস্কৃত শ্লোক

বিনয়বাবু রামশঙ্কর রায়ের আবাসবাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখেছিলেন। আজ তার চিহ্নটুকুও নেই। যদিও গড়খাই এখনও আছে। গল্পকথা যাই থাক, ভাবছিলাম এমনও তো হতে পারে জ্ঞাতি রামচন্দ্র সেন-কে দুর্গাপুজো শুরু করতে দেখে রামশঙ্কর-ও মনের সাধে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেছিলেন। ১৭৪২-‘৪৩ সালে সোমড়ায় আসার পর ১৭৬০ সালে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ান ‘রায় রায়ান রাজা’ রামচন্দ্র সেন সেখানেই তাঁর প্রাসাদতুল্য বাসভবনে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। মুর্শিদাবাদের ধনকুবের জগৎ শেঠ পরিবারের চন্ডীমন্ডপের অনুকরণে তিনি কারুকার্যময় কাঠের দুর্গামন্ডপ তৈরি করিয়েছিলেন। এখন তারও আর কোনো চিহ্ন নেই। তার বদলে ইটের তৈরি একটি সুরম্য দুর্গাদালান আছে। আজও প্রতি বছর সেখানেই তাঁর পরিবারের লোকেরা সাড়ম্বরে দুর্গাপুজো করেন। ‘সেন বাড়ি’-র দুর্গাপ্রতিমার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, দশভুজা দুর্গার দশটি হাতের মধ্যে তিনটি হাত মাত্র সামনে প্রকট থাকে। বাকি হাতগুলো পেছনে এমনভাবে থাকে যাতে কারো দৃষ্টিগোচর না হয়। এই প্রতিমা ও পুজো দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে। 
তথ্যাদি প্রদানের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় চাইতেই ললিতাদি ও রীতেন্দ্রবাবু একরকম জোর করেই নিয়ে গেলেন মন্দিরের পাশে বাঁধা ছোটো এক প্যান্ডেলে। সারা দিনের খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হচ্ছিল সেখানেই। লুচি ও আলুর তরকারি দিয়ে সকালের জলযোগ সারা হল। চলে আসার আগে রীতেন্দ্রবাবুর কাছে আমার শেষ প্রশ্ন ছিল – দেওয়ান রামশঙ্কর রায়-এর নাম বা তাঁর প্রতিষ্ঠিত জগদ্ধাত্রী মন্দিরের কথা আজও অনেকের অজানা কেন? উত্তরে তিনি বললেন, “মুঘল সাম্রাজ্য ভেঙে গেল। ইংরেজরা আস্তে আস্তে দখল করল সব কিছু। ছোটো ছোটো সামন্ত রাজ্যগুলোকে তারা কুক্ষিগত করল। তখন কে কোনদিকে ছিল বলা মুস্কিল। কোনো কোনো জমিদার ইংরেজদের ভজনা করে পরবর্তীকালে খ্যাতিমান হয়েছেন। প্রচুর অর্থ ও সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। বিপরীতে ইংরেজদের বিরোধিতা যাঁরা করেছেন, তাঁদেরকে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। রামশঙ্কর রায় ইংরেজদের বিরোধী ছিলেন। ইংরেজদের সাথে কোনোরকম সমঝোতা তিনি করতে চান নি।  ফলে প্রচারের আলোকবৃত্তের বাইরেই থেকে গেছে তাঁর জীবন।”                                                
সহায়ক গ্রন্থঃ        
(১) পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি (দ্বিতীয় খন্ড) – বিনয় ঘোষ
তথ্য প্রদানের জন্য বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সোমড়ার দেওয়ানজী বাড়ির ললিতা গুপ্ত ও রীতেন্দ্র নারায়ণ রায়-এর কাছে।  
ছবি : সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়
************************************

সুতপা  বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচিতিঃ
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘দর্শন’-এ স্নাতকোত্তর সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম আগ্রহের বিষয় লেখালেখি। ‘কালান্তর’, ‘সুস্বাস্থ্য’, ‘উৎস মানুষ’, ‘টপ কোয়ার্ক’, ‘যুক্তিবাদী’, ‘এখন বিসংবাদ’, ‘মানব জমিন’, ‘আবাদভূমি’, ‘সাহিত্য সমাজ’, ‘অভিক্ষেপ’ ইত্যাদি বেশ কিছু পত্রিকা ও সংবাদপত্রে তাঁর লেখা গল্প, কবিতা, নিবন্ধ, প্রবন্ধ ও চিঠিপত্র প্রকাশিত। তাঁর সম্পাদনায় ‘র‍্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন’ প্রকাশন থেকে ড. পবিত্র সরকারের ভূমিকা সহ প্রকাশিত ‘ছোটোদের কুসংস্কার বিরোধী গল্প’-র দুটি খন্ড। তাঁর লেখা ‘ইতিহাসের আলোকে মরণোত্তর দেহদান – আন্দোলন ও উত্তরণ’ বইটি বিশেষভাবে প্রশংসিত। একটি ‘ফেসবুক পেজ’-এ চলচ্চিত্রাভিনেত্রী ও সংগীতশিল্পী কানন দেবীর জীবনভিত্তিক তাঁর একটি গবেষণামূলক কাজ-ও পাঠকমহলে সমাদৃত। লেখার জগতের বাইরে সংগীতশিল্পী এবং বিজ্ঞান ও মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী হিসাবে তিনি সমধিক পরিচিত।

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!