Shadow

আলোর আশায় – দেবদত্ত বিশ্বাস

আলোর আশায়

দেবদত্ত বিশ্বাস

“স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে কে বাঁচিতে চায়” – গত শতকের প্রথমার্ধে উচ্চারিত এই কথা গুলোর অর্থ খুঁজতে গেলে আজ হয়রান হয়ে যেতে হয়। ‘স্বরাজ আমাদের জন্মগত অধিকার’ – মানুষের যখন কথাবার্তায়, চালচলনে, জীবনযাত্রায়, খাদ্যাভ্যাসে, বা কোনো কিছুতেই অধিকার থাকেনা, তখনই একমাত্র অন্তর থেকে এই আর্তনাদ উচ্চারিত হতে পারে। জলের ভিতরে থেকে মাছ কি করে জলের অভাব বুঝবে? এপ্রিল মাস থেকে সরকার বাহাদুর বলেছেন বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। এই আদেশ শুনেই পরের দিন ততধিক মানুষ বাইরে বেরিয়ে পড়েছেন। এরপর থেকে আজ পনেরই আগস্ট অবধি যতো দিন এগিয়েছে , এক অদৃশ্য পরাধীনতার সাঁড়াশি যেন আমাদের সকলের গলা চেপে ধরেছে। তিয়াত্তর বছরের স্বাধীন দেশে এটুকু পরাধীনতা (নিজেদের স্বার্থে)র স্বাদও আমাদের তিক্ত লাগছে । আসলে সাতচল্লিশে প্রায় দুশো বছরের পরাধীনতা থেকে স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার পর থেকেই স্বাধীনতাকে আমরা ‘গ্রান্টেড’ ধরে নিয়েছি। জেনে গেছি – পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গনতান্ত্রিক দেশে আমরা যা ইচ্ছা তাই বলতে বা করতে পারি। অতি নগন্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সাতখুন মাপ। রক্তমাংসের মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদরা, হয় আজ ফটো ফ্রেমে টাঙানো দেবতা , কিম্বা সমালোচনার তীরে স্বাধীনতা আন্দোলনের আমলের ‘টেররিস্ট’, অথবা ব্যালট বক্সে যদি প্রত্যক্ষ কোনো প্রভাব না পড়ে, তবে ‘যাস্ট ইগনোর দেম’, অথবা ‘ইউস্ দেম ফর ওউন ফেভার’। সহজ হিসেব। এ প্রজন্ম পরাধীনতা বা স্বাধীনতার মানে অভিধান থেকে শিখেছে। শেখানো হয়নি বা বোঝানো হয়নি। দেশপ্রেম? হ্যাঁ, ওই তো সকাল সকাল উঠে ডজন খানেক ‘হ্যাপি ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে’ পাঠানো, অপেক্ষায় বসে থাকা, কবে পাক, চীনের সাথে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা হবে, তবে দেখানো যাবে আমরা সব এক। যেনো ঝুনো নারকেল, ভিতরটা খটখটে শুকনো। না জানলাম দেশ, না জানলাম দেশপ্রেম, না জানলাম সেই সকল বীর শহীদদের, যাঁদের আত্মবলিদানে আজ আমরা এই স্বাধীনতার আস্বাদ পেয়েছি। তবু আজ চারিদিকে এতো হতাশার মধ্যেও এই শুভ দিনে দেশ মাতৃকার চরণে প্রণাম জানাই, আর সেই সকল জানা অজানা মৃত্যুঞ্জয়ী বীর শহীদদের চরণ চুম্বন করে নত মস্তকে শ্রদ্ধা জানাই। আশা করি পৃথিবী জুড়ে সাম্প্রতিক এই অতিমারীর পরাধীনতার কবল থেকে সমগ্র মানবজাতি শীঘ্রই মুক্তি পাবে। একটা নিটোল কমলা সূর্যের উদয় হবে, একটা ফিঙে এদিক ওদিক চেয়ে উড়ে গিয়ে ঐ সবেদা গাছটায় বসবে, সুদীপ্ত হেঁকে ডেকে রঞ্জিৎকে বাড়ি থেকে বের করে হাতে এক মুঠো ভেজা ছোলা দিয়ে বলবে – চল, নদী পারে ‘মর্নিং ওয়াকটা সেরে আসি’। একদিন সূর্যের ভোর আসবেই।
বন্দে মাতরম্ । 
জয় হিন্দ্।। 
******************************************

দেবদত্ত বিশ্বাস পরিচিতিঃ
ইংরাজী সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা, কিন্তু কোনোদিনই গতানুগতিক ভাবে জীবনকে দেখার চেষ্ঠা করেননি। ভারতীয় যোগবিদ্যা ও শরীরচর্চা বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে গত দশকের শুরুতে বিদেশ পাড়ি ও প্রতিষ্ঠা প্রাপ্তি। সেই থেকেই হংকং দ্বিতীয় ঘর, কিন্তু অর্ধ গোলার্ধের স্বাদ ইতিমধ্যে নেওয়া হয়ে গেছে। সাহিত্যচর্চা, খেলাধুলা, সঙ্গীত, চিত্রাঙ্কন, স্হাপত্য, ভ্রমণ, আলোকচিত্র প্রভৃতি বিবিধ বিষয়ে আগ্রহ আছে।

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!