সম্পাদকীয়
কুলায়ফেরার পঞ্চম বর্ষপূর্তি
পাঁচটা বছর কম সময় নয়। তুর্কী কবি নাজিম হিকমতের কবিতার লাইন ধার করে বলা যায়,এই সময়ে পাঁচবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে পৃথিবী। আমাদের দেশে নির্বাচিত আইন প্রণেতা ও আইনসভার মেয়াদ পাঁচ বছর। রাষ্ট্রের উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হয় পাঁচ বছরের জন্য, যার পরিচিতি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নামে। আজ,বহু পথ পেরিয়ে,বহু বাধাবিঘ্ন,প্রতিকূলতাকে জয় করে,শুধু আমাদের নিরলস পরিশ্রম ও আপনাদের ভালোবাসায়,আপনাদের অতিপ্রিয় ও আপন,আন্তর্জাতিক ও আন্তর্জালিক পত্রিকা “কুলায় ফেরা” পাঁচ বছরে পদার্পণ করলো। সেদিনের সেই পরিকল্পনার বীজ থেকে যা আজ শাখা প্রশাখায় বিস্তৃত। চলুন,আজ একটু পিছিয়ে দেখা যাক।
সে সময়টা বিশ্ব এক অতিমারীর আতঙ্কে আক্রান্ত। এক নতুন শব্দ ‘লকডাউন’। তাতে জীবন যেন থমকে গেলো। যানবাহন, বাজারঘাট,সব বন্ধ। রেল স্টেশনে তালা। দিন দুপুরে ধর্মতলার রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে শালিকের ঝাঁক! মুখোশে ঢাকা মানুষ গৃহবন্দী। কেবল পশুপাখিরা নিরাপদে,নিরুপদ্রবে গাছের ডালে,রাস্তায়। এটা অবশ্য একমাত্র ভালো দিক। এক সময় মিন্টো পার্ক স্ট্রিট এলাকায়,বেলভিউ নার্সিং হোমের পাশে,হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিটে,পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অতিথি শালায় বেশ কয়েকবার থাকতে হয়েছিলো। খুব পরিচ্ছন্ন আর নিরাপদ আস্তানা। বিস্তৃত এলাকাজুড়ে এই সার্কিট হাউস। গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যা নেই। প্রচুর নিরাপত্তা। খেয়াল আছে,সেখানে অনেকটা জায়গা জুড়ে খাবার জায়গায় প্রচুর গাছপালা,আর তাতে প্রচুর কাঠবিড়ালি ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে,খেলছে। কি কারণে যেন পরবর্তী সময়ে এদের আর দেখা যেত না। লক্ষ্য করেছি,কার্জন পার্কেও ঠিক সেরকমই! লকডাউনে জীবন যাত্রা, সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে এরা আবার ফিরে এসেছে। বাড়িঘরের জানালায় উঁকি মারছে শালিক,শোনা যাচ্ছে নানান অচেনা পাখির ডাক।
এবার মূল স্রোতে ফিরি। আমার আবাস দীর্ঘ দিন ধরে হংকং এ। লকডাউন এখানেও শুরু হয়েছিল একই ভাবে। ভাবনায় ছিলো,কিছু একটা করতে হবে। কাকতালীয় ভাবে ঠিক ঐ সময়েই আমার প্রিয় ভ্রাতাসম শ্রীমান মলয় মুখার্জি আমাকে online web magazine নিয়ে কাজ করার প্রস্তাব দেয় | আমার একমাত্র ভগিনী দেবলীনা,থাকে বিশাখাপত্তনমে। রুচিশীলা ভগিনীটি নানান প্রতিভার অধিকারী এবং সময় সচেতন দায়িত্ব বোধ সম্পন্না। রাগসঙ্গীতে দক্ষ। কলমেও শক্তিশালী। উন্নত চিন্তাধারার। ওর সঙ্গে কথায় কথায় স্থির করলাম,মলয়ের প্রস্তাব কার্যকরী করে ওয়েবজিন প্রকাশ করব। আমাদের পরিচিত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বন্ধু বান্ধব, সাহিত্য প্রেমী শুভানুধ্যায়ীরা এগিয়ে এলো। চললো পরিকল্পনা। স্থির হলো,পত্রিকাটি হবে আন্তর্জালিক। আমার ইঞ্জিনিয়ার ভগ্নীপতি, শ্রীমান বিশ্বজিৎ সরকার,ধীর স্থির ও কম্পিউটারে অন লাইন কাজে দক্ষ। স্থির হলো,অন লাইন কাজের যাবতীয় যা-কিছু ওইই দেখবে। দেবলীনার বন্ধু সিঞ্চন চ্যাটার্জী ওয়েব জিনের ক্যাচলাইন লিখলো,”উপার্জনে নয়,অর্জনে”,যা আমাদের প্রয়াত শিক্ষক পিতার আদর্শ। এগিয়ে এলো বন্ধু প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্ত রকম মৌলিক সৃজনশীল চিন্তা ভাবনা নিয়ে | বন্ধু শ্রীমতী কঙ্কণা সেন, শ্রীমতী মধুমিতা মিত্র এগিয়ে এসে সমৃদ্ধ করল আমাদের | যোগ দিল শ্রীমান অরূপ আচার্য্য | এরপর ধাপে ধাপে নানান আলোচনার পর বিভিন্ন বিভাগ ও তার নাম ঠিক হলো। কিছুদিন পরে যোগ দিল শ্রীমতী ব্রতী ঘোষ,বীমা কোম্পানির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও সময় বের করে আমাদের সঙ্গে পথ চলা শুরু করল। বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃসম। পত্রিকার নাম ভাবনা চিন্তা করে রেখেছিলাম আমি,”কুলায় ফেরা”। কুলায় ফেরা হলো,ঘরে ফেরা,মায়ের কাছে ফেরা অথবা শিকড়ের টানে ফেরা। পত্রিকা প্রকাশের সময় থেকে যাঁরা আমাদের সঙ্গে ছিলেন,তাঁদের অনেকে এখনও আছেন,আবার অনেকে ছেড়ে চলে গেছেন ব্যক্তিগত কারণে | এই সম্পাদকীয় লিখতে গিয়ে অনেক শব্দ খরচ হয়ে গেল নিজেদের কথা বলতে গিয়ে,যা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তবুও এমনই কয়েকটা কথা না বললে পুরো ঘটনাক্রম বিশ্বাস যোগ্য হতো না।
পাঁচ বছরের এই ম্যারাথন দৌড়,যা আজও চলছে,মোটেও সেটা কুসুমাস্তীর্ণ নয়। বরং কন্টকিত পথে পাথর ছড়ানো। প্রচুর প্রতিকূলতা আছে। তবুও বাধাবিঘ্নকে সরিয়ে কুলায়ফেরার দৌড় অব্যাহত। শুরুর দিকে প্রচন্ড উত্তেজনা,পরিশ্রম আর দুশ্চিন্তায় কেটেছে সময়মত পত্রিকার প্রকাশ নিয়ে। এত সব পরিশ্রমের পর ২৬/৭/২০২০ তারিখ আমাদের কুলায় ফেরার প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়। এরপর আর থামা নেই,যা সম্ভব হয়েছে আপনাদের ভালোবাসা,শুভেচ্ছা আর আশীর্বাদের জোরে। এরপর বিভিন্ন উদ্ভাবন। যেমন সাহিত্য প্রতিযোগিতা। যা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায়। কুলায়ফেরা এর মধ্যে বহুবার অন্তর্জালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে। ভার্চুয়াল জগৎ থেকে বাস্তবভূমিতে নেমে এসেছে জনতার মাঝে,দর্শকের কাছে। নিজস্ব সাঙ্গীতিক সংস্থা সঙ্গীতাঞ্জলির সৃষ্টি হয়েছে। এবারে আরেকটি নতুন সংযোজন। গত পাঁচবছরে কুলায় ফেরায় প্রকাশিত লেখক লেখিকাদের একটি করে সৃষ্টি নিয়ে পঞ্চম বর্ষপূর্তি সংখ্যাটি প্রকাশ করা হলো।
শীঘ্রই প্রকাশিত হতে চলেছে আমাদের পূজা সংখ্যা ‘কাশবন’ আপনাদের ভালোবাসা, সহযোগিতাকে পাথেয় করে |
নমস্কারান্তে ,
দেবদত্ত বিশ্বাস
সম্পাদক, কুলায়ফেরা
২৬ এ জুলাই ২০২৫