শুধু সিনেমায় নয়….
মিঠু সুর
Nepotism শব্দটির আঁতুরঘর খুঁজতে গিয়ে দেখি শব্দটির Root Latin শব্দ Nepos, যার অর্থ ‘nephew’ ( বাংলায় ভাইয়ের ছেলে বা ভাইপো ) বাংলা শব্দটির অর্থ হলো স্বজন পোষণ বা স্বজন পোষক। এ শব্দটি বর্তমানে উবে গিয়ে গালভরা ইংরেজি শব্দ Nepotism চলছে। হৈ-হৈ করে চলছে।
তাই আমিও নিলাম।
সিনেমা ও Nepotism :–
সিনেমা– বলিউড এবং টলিউডে এর বৃহত্তর জগৎ বিশেষত বলিউড সম্পর্কে আমার যা জানা তা অত্যন্ত কম। সেখানে Nepo র বার–বাড়ন্ত ছিলো এই নিয়ে সংবাদ পত্রে নানা সময়ে নানা মতামত প্রকাশিত হয়েছে। আর সুশান্ত সিং রাতপুত এর আত্মহত্যার পর থেকে বলিউডে আগুন লেগেছে টলিউডও জ্বলছে। টলিউডে তো কেউ কেউ ধোয়া তুলসী পাতা হয়ে এর-ওর কেচ্ছা নিয়ে বসে পড়লেন। এমন একটা ভাবসাব যেন কোনো কালে এটা ছিলো না শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। আসলে Nepotism বহমান একটা স্রোত।
পরিবার ও Nepotism :—
আমার তো মনে হয় মানব সভ্যতার প্রথম থেকেই এটা ছিলো। ভালো করে বলতে গেলে পরিবার যখন গড়ে উঠলো তখন থেকেই এর সূত্রপাত। আগে একান্নবর্তি পরিবার গুলিতে এর মোক্ষম বাসা ছিলো। বর্তমানে উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত পরিবার গুলিতে বেশির ভাগই একটি করে সন্তান— সেক্ষেত্রে ‘Nepo’র রমরমা বুঝবে না। কিন্তু এখনও যে সব পরিবারে ভাই বোনের সংখ্যা বেশিসেখানে ‘Nepo’ বহাল তবিয়তে বিরাজ করছে। তাছাড়া আমাদের বাঙালি সমাজে এবং ভারতীয় সমাজে ‘স্বজন’ বলতে ছেলেদের বোঝানো হয়—মেয়েদের নয়। মেয়েরা পরের জন্যেই বলিপ্ৰদও। বিবাহের
পর গোত্র পাল্টানো মানেই তুমি ‘ব্রাত্য’। আর ছেলে তুমি সোনার আংটি— বংশের বাতি। ইহকাল পরকাল তোমার হাতে। পরিবারের তুমিই ধারক-বাহক। আর কন্যা তুমি যাই হও না কেন— পুত্র নও। তাই কন্যা-পুত্র উভয়ের মনেই ‘Nepo’ র বীজ তৈরি হয় যায় শৈশবেই যা উর্বর ক্ষেত্র
পেলেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।
স্কুল ও Nepotism :—
এরপর আসি স্কুলের কথায়। এটি Nepotism এর বিষক্ষেএ। কিছু স্কুল বাদ দিয়ে বেশির ভাগ স্কুলই বর্তমানে এই ব্যবস্থার শিকার। নিরপেক্ষ মানসিকতার শিক্ষক- শিক্ষিকা অবশ্যই আছেন, তাদের সংখ্যা ক্রমশই লোপ পাচ্ছে। এখন অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা টিউশন করেন।
আর এই পড়ার সুবাদেই Internal Marks তারা বেশি পাবেই। যে বিষয়টি শিক্ষকের কাছে পড়ে, দেখা যাবে তার tuition group থেকে ক্লাসে তার Subject ই Highest Marks পাচ্ছে। বলি এটা কি Nepotism নয় ? এর শিকার বর্তমানে কম বেশি সব ছাত্র- ছাত্রী। Nepotism -এর বিষবাষ্পে
ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিকতাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হচ্ছে। প্রচলিত সূত্রে শোনা একটি সত্য গল্প বলি— একবার এক ছাত্রের,তার শিক্ষকের কাছে পড়তে ভালো লাগছিলো না। তাই সে টিউশন যাওয়া বন্ধ করে ছিলো কিন্তু শিক্ষক ছাড়বেন কেন off period এ ছাত্রকে কাছে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন পড়তে না যাওয়ার কারণ? ছেলেটি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ চাপ দাঁড়িয়ে ছিলো এবার টিচার বললেন— জাল ছিড়ে পালিয়েছিস কিন্তু পুকুর ছেড়ে তো পালাতে পারবি না বাবা।
এ কথায় টিচার স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন Internal Marks টা কিন্তু তার হাতেই তাই পড়তে না যাওয়া মানে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনা, অগত্যা…..। এই ভাবেই Nepotism এর বিষবাষ্পে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিকতা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে ছাত্ররাও training আয়ত্ত করছে Nepotism এর। কবি শামসুর রহমানের কথাতেই বলি —-
“যখন কিনা আমরা নিজে
অন্ধকরে শুধুই ভিজে
কাদা ছোড়ায় মাতি।”
তবে একটু আশার আলো– বর্তমানে বহু অভিভাবকেরা বুঝছেন, এভাবে অন্তঃসারশূন্য হয়ে নাম্বার পাওয়া যায় ঠিকই কিন্তু জীবনের বড় ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করা যায় না।
অন্যদিকে ব্যাতিক্রম শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন, তারা এর বিরুদ্ধে লড়বার চেষ্টা করেন কিন্তু স্কুলে তারা—কোনঠাসা। কেননা স্কুলের চক্রটি সমাজবিরোধীদের চক্রের মতোই শক্তিশালী। বেশি কিছু করলে স্টুডেন্টদের লেলিয়ে দেওয়া হবে, আপনার ক্লাস
disturb করা হবে- আপনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হবে।
এরপর আছে কলেজে– বিশ্ববিদ্যালয় সেখানেও একই চিত্রের আরো ভয়ঙ্কর প্রতিফলন। আর সেই ময়দানে একটি ছেলের থেকে একটি মেয়ের অবস্থা আরও শোচনীয় এ অবস্থা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
চাকরি ও Nepotism :—-
পরিবার,স্কুল, কলেজ অতিক্রম করে জীবনের আর এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ চাকরি। কবি জয় গোস্বামীর কথায় বলি — “ফুল কি হবেই তাতে ?”এই যে এত পরিশ্রম করে, দিন রাত এক করে লেখা পড়া করে ভালো রেজাল্ট নিয়ে যে প্রবেশ করলো চাকরির আঙিনায় সেখানেও ঘন অন্ধকার বিশেষত সরকারি চাকরিতে যেখানে চরম যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি– আর চরম অযোগ্য ব্যক্তি একই পাতে ভাত খায়। আবার অযোগ্যরা আপনার যোগ্যতা সহ্য করতে পারবে না। ছলে বলে কৌশলে আপনাকে ধরাশায়ী করবেই Nepotism না থাকলে চলবে ? তাহলে অযোগ্যরা চাকরি ক্ষেত্রে প্রবেশের পথ পাবে কোথা থেকে ?
সব শেষে বলি বড় বড় ক্ষেত্রে Nepotism দেখে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যাচ্ছে। মস্ত মস্ত আলোচনা সমালোচনা, মনস্তত্ত্বের কচকচানিতে কান ঝালাপালা। এবার মনে হয় নিজেদেরকে নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে। এর প্রতিবাদ করবার সময় এসে গেছে। না হলে Nepotism এর স্রোত
বহমান– প্রবাহমান। এই স্রোতে আমরা হারাবো সব্বাই। তাই জন্মের দিন থেকে বন্ধ হোক
‘Nepotism’। Stop ‘Nepotism’ from home. Stop ‘Nepotism’ from school.