Shadow

জাতীয় পতাকার বিবর্তনের ইতিহাস – বিজিত কুমার রায়

                                            ছবি সংগৃহীত

জাতীয় পতাকার বিবর্তনের ইতিহাস
বিজিত কুমার রায়

ভারতের জাতীয় পতাকার প্রবর্তন হয়েছিল ১৮৮৩ সালে। সেই সময়ের পতাকাটি ছিল সাদা বর্গাকার, মাঝে ছিল একটি রক্তিম লাল সূর্য্য। শিরীষ চন্দ্র বসু মহাশয় এই পতাকার প্রস্তাব করেন।
অনুশীলন সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্র, যিনি ১৯০৫ সালের ৭ই আগস্ট জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন করেছিলেন। পতাকার রং ছিল ত্রিবর্ণ। উপরে লাল, মাঝে হলুদ, নীচে সবুজ। লালের উপর আঁকা অষ্টবৃন্তের আটটি কুসুম। হলুদের ওপর লেখা সংস্কৃতে বন্দে মাতরম। সবুজের ওপর সূর্য ও অর্ধ চন্দ্র। এরপর ওই সময়েই চার বিভিন্ন পতাকার প্রস্তাব হয় মেদিনীপুরের স্বদেশী আন্দোলনকারিদের থেকে।
১৯০৬ সালে বিপ্লবী সংগঠন, যুগান্তর সমিতি পার্টি কংগ্রেসে একটি পতাকার প্রস্তাব করেছিলেন। পতাকাটি ছিল লাল রঙের এবং তলোয়ার ও ত্রিশূল গুনিতক আকারে অবস্থান করছে। উপরে চাঁদ ও নীচে চক্র। ঋষি অরবিন্দের ভাই বারিন্দ্র ও স্বামী বিবেকানন্দের ভাই ভূপেন্দ্রনাথের প্রস্তাবিত ছিল পতাকাটি।
১৯০৭ সালের ২২শে আগস্ট ম্যাডাম কামা জার্মানি স্টুটগার্টে সমাজবাদী সম্মেলনে একটি ত্রিবর্ণ সপ্তর্ষি নামক পতাকা ওড়ান। উপরে গেরুয়া মাঝে হলুদ আর নীচে সবুজ। উপরে গেরুয়ার উপর আঁকা একটি কুসুমের সঙ্গে সাতটি তারা। মাঝে বন্দেমাতরম আর নিচে সবুজের উপর সূর্য ও চন্দ্র।
১৯০৯ সালে ভগিনী নিবেদিতা একটি পতাকার প্রস্তাব করেন। পতাকাটি ছিল লাল রঙের। পতাকার মাঝে ছিলো বজ্র, কুসুম ও দণ্ড। লেখা বন্দে মাতরম। যেহেতু দধিচির হাড় দিয়ে বজ্র তৈরি হয়েছিল তাই বজ্রকে ত্যাগের প্রতীক বলে রাখা আর ভারতবর্ষের মানুষের মন কুসুমের মতো।
১৯১৬ সালে হোমরুল আন্দোলনের সময় গঙ্গাধর তিলক ও আনী বেশান্তের নেতৃত্বে একটি পতাকা তৈরি হয়। পতাকাটি ছিল পাঁচটা লাল আর চারটে সবুজ স্ট্রাইপের। বাম দিকের কোনে উনিয়ন জ্যাক। উপরের ডোরায় সাদা অর্ধচন্দ্র ও তারা। সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রতীক রূপে সাতটি সাদা তারা। এটি ছিল পঞ্চকোনি পতাকা।
১৯২২ সালে বিজয়ওয়াডা তে কংগ্রেস অধিবেশনে একটি পতাকার প্রস্তাব হয়। উপরে লাল নীচে সবুজ আর মাঝে চরকা। ১৯২৩ সালে লাল ও সবুজকে উল্টে দেওয়া হয় ও ওপরে সাদা আনা হয়।
১৯৩১ সালের দোসরা এপ্রিল কংগ্রেস অধিবেশনে ওই পতাকা নিয়ে নানা তর্কের ফলে অন্ধ্রপ্রদেশের ভাটলাপেনামারু গ্রামের পিঙ্গালী ভেঙ্কাইয়া একটি ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা তৈরি করেন। উপরে গেরুয়া মাঝে সাদা নীচে সবুজ মাঝে চরকা।
১৯৪৭ সালের ২২শে জুন একটি কমিটি আলোচনার পর ২২শে জুলাই ভেঙ্কাইয়াজির পতাকাটিকে ভারতের জাতীয় পতাকা হিসাবে মেনে নেন। এই কমিটিতে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, সরোজিনী নাইডু, রাজাগোপালাচারী, কে এম মুন্সী ও বি আর আম্বেদকর প্রমুখ ছিলেন ।
স্বাধীনতার পরে ১৯৪৭ সালের ২২শে আগস্ট চরকার পরিবর্তে ২৪টি স্পোক যুক্ত সারনাথের অশোক চক্র পতাকার মাঝে আঁকা হয়। অহিংসার প্রতীক হিসেবে অশোক চক্রকে স্থান দেওয়া হয়।
এই হলো আমাদের দেশের জাতীয় পতাকার ছোট্ট ইতিহাস।
এই ইতিহাসের মূল গবেষণাটি করেছেন বহু কষ্ট স্বীকার করে স্বর্গত কালি শংকর ভট্টাচার্য মহাশয়। 

এই লেখাটির উপাদান নেওয়া হয়েছে এবেলা ডট ইন, ইনাডু ইন্ডিয়া আর আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে।
*********************************************

বিজিত কুমার রায় পরিচিতিঃ
জন্ম স্কুল কলেজ সবই কলকাতা। কর্মক্ষেত্র অবশ্য সারা দেশ জুড়ে। ভেল (BHEL) কোম্পানীর তিরুচিরাপল্লী, কলকাতা, দিল্লী, ভূপাল ও ভারতবর্ষের সমস্ত প্রদেশের পাওয়ার প্ল্যান্টে।দেশ বিদেশের বহু স্থানে একলা ও সস্ত্রীক ভ্রমণের সৌভাগ্য আছে। রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দীক্ষাপ্রাপ্ত ও রামকৃষ্ণ সারদা বিবেকানন্দ দর্শনের দিকে উৎসাহিত হয়ে মিশনের নানা জনকল্যানকারী কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত।

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!