Shadow

স্বাধীনতা দিবস – আশিস কুমার সরকার


স্বাধীনতা দিবস

আশিস কুমার সরকার

মাত্র কয়েকদিন আগেই ফিরে এসেছিল আরও একটি ১৫ই আগস্ট, আরও একটি স্বাধীনতা দিবস। না, ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্টের ব্রাহ্ম  মুহূর্তে বা উষালগ্নে পাঁজিপুঁথি ঘেঁটে বৈদিক মতে স্বাধীনতার শুভলগ্ন স্থির হয়নি। ১৪ই আগস্টের মধ্যযামের ঠিক পরেই, ইংরেজি মতে ১৫ইর শুরুতে, রেডিওতে গমগম করে ঘোষিত হয়েছিল স্বাধীনতার বার্তা! বেজে উঠেছিল অসংখ্য মঙ্গল শঙখ, ঘরে ঘরে-বাতায়নে বাতায়নে জ্বলেছিল প্রদীপ। নগরীর পর নগরী সেজে উঠেছিল উজ্জ্বল আলোক সজ্জায়।  তেরঙ্গা ঝাণ্ডা হাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নেমেছিল রাস্তায় রাস্তায়। কিন্তু ক’লকাতা মহানগরীতে উৎসব ছিল কিছুটা স্তিমিত। এর কিছুদিন আগের (এবং তার অব্যবহিত পরেরও) জিন্নার ডাকের “ডাইরেক্ট অ্যাকশন”- এর দাঙ্গার ফলে মহানগরীর রাস্তায় রাস্তায় বয়ে যাওয়া রক্তেস্রোতের বিভীষিকা মানুষজন তখনও ভুলতে পারেন নি! …এলো স্বাধীনতা !!
কিন্তু কি ভাবে এলো, কেমন হ’ল সে স্বাধীনতা?
আর এগোবার আগে সবিনয়ে “কুলায় ফেরা” র পাঠক/পাঠিকাদের জানিয়ে রাখি, যে, আমি লেখকও নই, ঐতিহাসিকও নই এবং আমার কোন রকমের রাজনৈতিক রঙও নেই। কোনরকম প্রস্তুতি ছাড়াই, খুব তাড়াহুড়ায় কিছু লেখার চেষ্টা করছি – নিতান্তই আমার যৎসামান্য পড়াশোনা ও স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে জন্মের পর কয়েক দশকের একান্ত ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে। এ লেখায় তথ্যের ভুল থাকতেই পারে। হয়তো অনেক বিতর্কিত প্রসঙ্গও আসবে।  এসব নিয়ে আগাম মার্জনা চেয়ে রাখছি। … ফিরে আসি।
স্বাধীনতা কি ভাবে এসেছিল তা প্রায় কারুরই অজানা নয়। তাই সংক্ষেপে সারছি। কারুর মতে, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ১৮৫৭ র সিপাহী বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে। সম্ভবত তা নয়। ওই বিদ্রোহে ইংরেজ বিদ্বেষ অবশ্যই ছিল, কিন্তু জাতীয় চেতনার উন্মেষ তখনও সেভাবে হয়নি। এই উন্মেষ এসেছিল বাংলার “রেনেসাঁস” বা নবজাগরণের মধ্য দিয়ে।  আস্তে আস্তে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা ভারতের মানুষের তথা নেতৃবৃন্দের মধ্যেও। সেই সময়েও মুল নেতৃত্ব ছিল বাংলার — যার জন্য মহামতি গোখেল বলেছিলেন, “বাংলা যা আজ ভাবতে পারে, অবশিষ্ট ভারত তা ভাবে তার পরের দিন”। যাই হোক, স্বাধীনতা সংগ্রাম মুলত দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। একদিকে জাতীয় কংগ্রেসের অহিংস আন্দোলন, অন্য দিকে বিপ্লবীদের সশস্ত্র আন্দোলন। তারই সঙ্গে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়, কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়া নেতাজি সুভাষচন্দ্রের, জার্মানি, ইতালি ও জাপানের (অক্ষশক্তির) সাহায্যে, আজাদ হিন্দ ফৌজ দ্বারা যুদ্ধপ্রচেষ্টা। এই সংগ্রামে লক্ষ লক্ষ মানুষ আত্মাহুতি দিয়েছিলেন, দিয়েছিলেন তাঁদের সর্বস্ব। কেউ “গান্ধীবুড়ি” মাতঙ্গিনী হাজরার মত পুলিশের গুলিতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন, কেউ ক্ষুদিরাম বা মাস্টারদা বা দিনেশ গুপ্তের মত আত্মবলি দিয়েছিলেন ফাঁসিকাঠে, আবার বিনয়, বাদল, প্রীতিলতার মত অনেকে “অ্যাকশনের” পর করেছিলেন আত্মহত্যা, কেউ বাঘা যতীন (যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়) ও তাঁর সহযোদ্ধাদের মত বুড়িবালামের তীরে অথবা “মাস্টার দা” সূর্য সেনের সহযোদ্ধাদের মত জলা পাহাড়ে (জলালাবাদ পাহাড়?) অগনিত সশস্ত্র ইংরেজ সৈন্যদের সঙ্গে সন্মুখ সমরে প্রাণ দিয়েছিলেন, কেউ বর্বর ইংরেজের জেলে বছরের পর বছর অমানবিক অবস্থার মধ্যে দিন কাটিয়েছিলেন এবং তার প্রতিবাদে যতীন্দ্রনাথ দাসের মত অনশনে মৃত্যু বরন করেছিলেন, আবার অনেকে কালাপানির ওপারে আন্দামানের সেল্যুলার জেলে অর্ধ – অনাহার, অবর্ননীয় খাটুনি ও অত্যাচারে ক্ষয় রোগে বা সামান্য কারণে ফাঁসিকাঠে ঝুলে প্রাণ দিয়েছিলেন। (সেখানে বিচার টিচার বলে কোন সভ্য প্রথার বালাই ছিল না। মহামান্য ব্রিটিশ সরকারের ইংরেজ প্রতিভূর কথাই ছিল শেষ কথা!) এই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের একমাত্র সম্বল ছিল দু’চোখে এক স্বাধীন, আদর্শ ভারতের স্বপ্ন। কি ফল হয়েছিল তাঁদের এই আত্মত্যাগের? ( সে প্রসঙ্গে পরে আসছি)। … এই লক্ষ লক্ষ “দধীচির হাড়ে” তৈরি বজ্রগুলো যেমন ব্রিটিশের বুকে শেল হেনেছিল, একই সঙ্গে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ব্রিটিশ তথা মিত্র শক্তির জয় হলেও, ব্রিটিশের মেরুদণ্ড কিন্তু নুয়ে পড়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল যে সারা পৃথিবীর এক বৃহৎ অংশে ব্রিটিশ সূর্য কোনদিন অস্তমিত হবেনা, এ স্বপ্ন দেখা আর সম্ভব নয়। বিভিন্ন “কলোনি” গুলিকে আর করায়ত্ত করে রাখা যাবে না। তাই তারা ভারতকে স্বাধীনতা “দান” করাই স্থির করলো। তার আগেই তাদের divide and rule – এর চাতুরীতে জন্ম নিয়েছে মুসলিম লিগ ইত্যাদি। তারই ফলে স্বাধীনতার অব্যবহিত আগে একটি বিরাট হাড়ের স্বত্বাধিকার নিয়ে দুই কুকুরে বাঁধলো ক্ষমতার লড়াই (পাঠক, ভুল বুঝবেন না। এটি নিতান্তই রূপকার্থে ব্যবহৃত)। চতুর ব্রিটিশ দেখলো প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষে এদের উপর প্রভুত্ব যতদিন সম্ভব বজায় রাখার এও একটি সুযোগ। তারা তখন ওই হাড়টিকে দু’টুকরো করে বড়টা একজনের দিকে, আর ছোটটা আর একজনের দিকে ছুঁড়ে দিল। দুজনেই মহাখুশি! আর মহাত্মা গান্ধীজি, যাঁর অহিংস সংগ্রাম নীতি শুধু ভারতে নয়, পরবর্তী কালে সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছিল, কিন্তু যাঁর সব নীতি হয়তো অভ্রান্ত ছিল না, কথায় কথায় যিনি নিজের জেদকে বজায় রাখতে অনশনে বসতেন (যেমন বসেছিলেন নেতাজির জাতীয় কংগ্রেসে ভূমিকার ক্ষেত্রে), এই দেশ ভাগের ব্যাপারে তাঁর ভূমিকা কি ছিল — শুধুই নীরবতা না পরোক্ষ মদতও, তা নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করবোনা। কিন্তু হ’ল দেশভাগ, এলো তথাকথিত স্বাধীনতা !!! দেশ ভাগের ফলে ছিন্নমূল মানুষদের দুর্দশার কাহিনী ইতিহাসে, গল্পে, উপন্যাসে বিস্তৃত ভাবে ছড়ানো রয়েছে। “কুলায় ফেরা”র পাতায়ও প্রাজ্ঞ প্রবীণদের কলমে ইতিমধ্যেই আমরা পেয়েছি তার কিছু বিবরণ। তাই তার মধ্যে আর যাচ্ছিনা।
স্বাধীনতা তো পেলাম। কেমন হ’ল তার চরিত্র?
পূর্ণ স্বাধীনতার আগে, যখন গান্ধীজি ও তার আপোষযুক্ত মানসিকতার দক্ষিনপন্থী কংগ্রেসিরা আংশিক স্বাধীনতা তথা স্বরাজ চেয়ে পেয়েছিলেন (যার তীব্র বিরোধী ছিলেন সুভাষ), তখন বিদ্রোহী কবি নজরুল লিখেছিলেনঃ
“আমরা তো জানি, স্বরাজ আনিতে পোড়া বার্তাকু এনেছি খাস! …… ”
পরের পূর্ণ স্বাধীনতাও পোড়া বেগুনের চেয়ে খুব বেশি সুখাদ্য কিছু হয়েছিল কি? কেন এ প্রশ্ন ?? একটু ছুঁয়ে যাই।
স্বাধীনতা এল ১৯৪৭ এ। ১৯৫০ এর ২৬শে জানুয়ারী ভারত হ’ল প্রজাতান্ত্রিক দেশ, সংবিধান হ’ল প্রচলিত। অর্থাৎ ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া থেকে ভারত হ’ল রিপাব্লিক অফ ইন্ডিয়া। দেশে প্রতিষ্ঠিত হ’ল প্রজাতন্ত্র তথা গনতন্ত্র। সংবিধান দিল প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোট দিয়ে আপন আপন পছন্দের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে পঞ্চায়েত, বিধান সভা বা সংসদ ইত্যাদিতে পাঠাবার অধিকার। কিন্তু, তাই কি? ধরুন, আপনার এলাকায় একজন শিক্ষিত মানুষ আছেন। প্রকৃত অর্থে সমাজসেবী। হয়তো পেশায় শিক্ষক বা চিকিৎসক। হয়তো জনসেবায় আত্মনিবেদন করতে গিয়ে অকৃতদার। সুবক্তা। প্রয়োজনে সাধারণ মানুষের সুখদুঃখের কথা যথাযোগ্য স্থানে জোরালো বক্তব্যের সাথে তুলে ধরতে সক্ষম। কিন্তু –একটা বিরাট কিন্তু –, উনি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নন। আপনারা তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ও করালেন। কিন্তু, তার বিরুদ্ধে দাঁড়ালো শাসক দলের ও প্রধান বিরোধী দলের “উদো” আর “মেধো” — দুই কুখ্যাত সমাজবিরোধী। এবার দেশের বেশির ভাগ মানুষ, ভয়ে অথবা ভক্তিতে, বা, কোন এক পার্টির আদর্শের (?) প্রতি প্রবল আনুগত্যে, সব জেনে বুঝেও উদো-মেধোর একজনকেই বেশি ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি করে পাঠালেন! তাতে সাধারণ মানুষের কি লাভ হ’ল, তা অবান্তর। ভুল বুঝবেন না, আমি সংসদীয় গনতন্ত্রের বিরুদ্ধে নই, এর অপপ্রয়োগের বিপক্ষে !!
এতো গেল একটা দিক। স্বাধীনতার পরে পরেও, রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতার লোভ থাকলেও, সবকিছু লুটেপুটে নেবার প্রবনতা এতটা ছিল না। আস্তে আস্তে শুরু হ’ল অবক্ষয়। চলে গেলেন রাজেন্দ্রপ্রসাদ, সর্দার প্যাটেল, বিধান রায়ের মত নেতারা। ধীরে ধীরে এলো দুর্নীতি। দুর্নীতি ব্রিটিশ আমলেও অল্পবিস্তর ছিল। বিদেশেও উচ্চস্তরে দুর্নীতি নেই তা নয়। কিন্তু আমাদের দেশের মত ট্র্যাফিক পুলিশের পাঁচ টাকা থেকে উপর মহলে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার সর্বব্যাপী দুর্নীতি — আরও কিছু পিছিয়ে পড়া দেশ ছাড়া — পৃথিবীর আর কোথাও বোধহয় নেই। সঙ্গে শুরু হ’ল নতুন নতুন নেতাদের আগমনে রাজনীতির “ক্রিমিনালাইজেশন”। সমাজবিরোধী রাজনীতিবিদ, প্রশাসন আর পুলিশের যোগসাজশ। ক্ষমতায় আসা একান্ত দরকার। আসার জন্য এবং ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য জনতার ভক্তির বা সাহায্যের আর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন  প্রশাসনকে কুক্ষিগত করা, আর প্রয়োজন সাধারণ অপরাধীদের তথা সমাজবিরোধীদের, যাদের দিকে পুলিশ – প্রশাসন ফিরেও তাকাবে না। নেতাদের মদতে যুবশক্তির অনেকাংশই পঞ্চ ‘ম’ কারে ডুবে থেকে মরনকে তুড়ি মেরে স্বল্পায়ু জীবনকে উপভোগ (?) করছে, আর দাবা খেলার বোড়ের মত অবলীলায় খুন করছে আর নিজেরাও খুন হচ্ছে।
এ ছাড়া, আমাদের গনতন্ত্রের (?) আরও একটি দিক হচ্ছে, পারিবারিক সাম্রাজ্য বিস্তার। প্রায় সব দলেই দেখবেন, একজন যদি কোনক্রমে প্রভাবশালী নেতা বা নেত্রী হলেন, তো ব্যাস, তার পত্নী, পুত্র, কন্যা, পুত্রবধূ, জামাতা, ভাই, ভাইপো, ভাইঝি — লাইন করে তারা নেতা-নেত্রী হয়ে বিধান সভা, সংসদ ইত্যাদি আলো করে বসবেন! তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা আছে কি না, সে প্রশ্ন অবান্তর !
ইতিহাসে পড়েছিলাম, দেশে যখন কোন কারণে রাজা না থাকেন, বা থেকেও থাকেন না — হয় নাবালক বা অলস, বিলাস-ব্যসনে মগ্ন — তখন মন্ত্রীদের হাতে আসে দেশচালনার ভার। শুরু হয় “অরাজকতা”। প্রজাদের ওঠে নাভিশ্বাস! আমাদের দেশে কয়েকজন রাজা আছেন বটে — কেন্দ্রে প্রেসিডেন্ট, রাজ্যে রাজ্যে গভর্নার। কিন্তু, তাদের পোষা আর শ্বেতহস্তী পোষা প্রায় একই ব্যাপার, এবং তাঁরা মূলত শুধু মন্ত্রীসভার প্রস্তাবে শিলমোহর লাগাতে পারেন, অক্ষম রাজাদের মত। সেই জন্যেই বোধহয় আমাদের মন্ত্রীশাসিত দেশে চলছে চুড়ান্ত অরাজকতা, জাতীয় সম্পত্তির অবাধ লুন্ঠন !!!
তাড়াহুড়োয় এবং রচনার কলেবর বৃদ্ধির ভয়ে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হ’ল না। সেগুলো হ’ল স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও দারিদ্র্য দূরীকরণ, প্রকৃত  শিক্ষার প্রসার ও সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা! ভবিষ্যতে সুযোগ হ’লে দু’চার কথা বলবো। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল “সংরক্ষন”। আজ গুজরাতের পাতিদার থেকে রাজস্থানের গুজ্জর থেকে, দেশের সর্বত্র আরও, আরও সংরক্ষনের দাবী বেড়েই চলেছে। কিন্তু  কেন? তফশিলিদের বিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত শিক্ষা, দীক্ষা, খাওয়া-পরা সব কিছুর দায়িত্ব সরকার নিয়ে নিক। তার পরে  যদি দেখা যায় তাদের মধ্যে সত্যিকারের মেধা আছে, উচ্চশিক্ষার ভারও সরকার বহন করুন। কিন্তু, তা না করে, মেধার বিচার না করে শুধু “কোটার” ভিত্তিতে তাদের উচ্চশিক্ষায় ভর্তি বা সরকারি চাকরিতে বহাল করলে ক্ষতি ছাড়া কস্য লভ্য! একই ভাবে “সেক্যুলারিজম” এর নাম করে স্রেফ ভোটের জন্য যাদের এতদিন ধরে তোষন করা হয়েছে, তাদের তাতে কতটুকু লাভ হয়েছে। পরিসংখ্যান দেখলে দেখা যাবে, তাদের মধ্যে যারা পিছিয়ে ছিলেন, তারা আজও পিছিয়ে, যেখানে ছিলেন সেখানেই আছেন। … হ্যাঁ, অস্বীকার করবোনা, যে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে, ব্যবসায় ক্ষেত্রে আমরা অনেক এগিয়েছি। কিন্তু, সদিচ্ছা থাকলে, আরও এগোতে পারতাম না কি? আমাদের দেশের বেশির ভাগ মেধাই তো বিদেশে রপ্তানি হয়ে যাচ্ছে। তাতে দেশের কতটা লাভ হচ্ছে, এটাও একটা প্রশ্ন।…
এই তো আমাদের স্বাধীনতা !!!!
এই স্বাধীনতার জন্যই কি লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছিলেন বা তাঁদের সর্বস্ব ত্যাগ করে অর্ধাহারে – অনশণে দিন কাটিয়েছিলেন ????
বড্ড নেতিবাচক লেখা হয়ে গেল, আবারও মার্জনা ভিক্ষা করছি। কিন্তু এ পর্যন্ত যা দেখেছি, শুনেছি তাতে আমি নিরুপায়!
তবে, পাঠক “এ পর্যন্ত” কথাটি খেয়াল করবেন! আমাদের “স্বর্গাদপি গরিয়সী” জন্মভূমির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আরও অনেকের মত আমিও আশাবাদী। আমাদের দেশের ইতিহাস, দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আজকের নয়। হাজার হাজার বছর ধরে বহু “পতন – অভ্যুদয়ের” পথ হেঁটেছি আমরা, ভারতবাসীরা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মহাকালের রথের চাকার অমোঘ ঘুর্ণনে আবার আমাদের নবজাগরণ হবেই! ভবিষ্যৎদ্রষ্টা নই ব’লে, কি ভাবে, কোন পথে হবে আমি জানি না। সেই দিন আমি দেখে যেতে না পারলেও, আমার প্রত্যয় বলছে, “ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে” ! জয় হিন্দ!!!!
***********************************************

আশিস কুমার সরকার পরিচিতিঃ
জন্মঃ ত্রিপুরার  উদয়পুরে।
পড়াশোনাঃ ক’লকাতার হিন্দু স্কুলে এবং মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে খড়্গপুর আই আই টি তে।
কর্মজীবনঃ ৩৬ বছরের মধ্যে – ৩০ বছর মূলত ক’লকাতায়, ৬ বছর বিদেশে। পুরোটাই “সেন্ট্রাল এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেমস”-এর ক্ষেত্রে।
অনুরাগঃ সঙ্গীত, সাহিত্য ও ক্রীড়াজগত। 

6 Comments

  • Sandip Mukherjee

    Truly a very pragmatic writeup.. aro onek relevant bishoye ei rokom interesting aro lekha porar ashai roilam.. 😊🙏🙏❤❤

    • আশিস কুমার সরকার

      ভাললাগাটুকু জানাবার জন্য অজস্র ধন্যবাদ, সন্দীপ!

  • Brati Ghosh

    দেশের অবক্ষয়ের চিত্র খুব পরিস্কার ভাষায় ব‍্যক্ত। খুব ভালো লাগল পড়ে। দেশের বেশিরভাগ মানুষ যখন সব কিছু বুঝে ও তা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকেন সেখানে আপনার লেখাটি অবশ্যই তাঁদের কিছুটা হলেও অন‍্যরকম চিন্তা করতে বাধ্য করবে।

  • আশিস কুমার সরকার

    আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবা, ব্রতী !!!

  • Dhiman Bhattacharjee

    খুব সুন্দর লেখা। আমরা এরকম লেখা মাঝে মাঝে পাওয়ার উৎসুক প্রত্যাশী হয়ে রইলাম। ## ধীমান

    • আশিস কুমার সরকার

      অজস্র ধন্যবাদ, ধীমান ! দেরিতে উত্তরের জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত !!!

Comments are closed.

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!