আজ যে সূর্যম্পশ্যা
অর্চনা মহান্তি
সূর্যের দিকে মুখ করে হাঁটিনি কখনো;
এক আঁজলা আধুনিক–আলোও মাখা হয়নি এখনো আমার পূর্ণ অধিকারে
সামাজিক বিধানের ভারে।
সনাতনী সংস্কারে—আজন্মের অসূর্যম্পশ্যা আমি;
বড় সাধারণ,পরিচিতি হীনা সস্তা–অনামী।
বরাবর সূর্যকে আড়ালে রেখে হেঁটে চলেছি নিজের সমাধি ক্ষেত্রের নির্জন নিস্তব্ধতায়,
বিষণ্ন মমতায়।
কখনো আবার গেছি ভগ্ন কোন উপাসনা মন্দিরের পাথরের দেবতার প্রসন্নতায় কৃতার্থ হতে,
একমুঠো প্রসাদী খই আশীর্বাদ পেতে।
যে মন্দিরে আজ দেবতাই নেই আদৌ,বা ছিলনা কোনদিন,কোনকালে;
আমিই দেবদাসী সেজে নেচে গেছি তালে–বেতালে।
অপদেবতা খেয়ে গেছে ভোগের আলোচাল,দুধ–কলা–মধু,
পড়ে আছে শুকনো ফুল,মালা,বেলপাতা শুধু।
দেবতাকে উৎসর্গীকৃত স্বল্প ভোগে মেটেনি তার দানবীয় খিদের তাড়না
বুভুক্ষু অনন্ত খিদের বাসনা ।
প্রচণ্ড উষ্মায় বিখন্ডিত করেছে আমাকে বিদ্বেষের ধারালো কুঠারে;
নিষ্ঠুর–নির্মম প্রহারে।
বহু টুকরো হয়ে গেছি আজ,বহু সত্ত্বায় বিবিধ হয়েছি,
চরাচরে বিক্ষিপ্ত হয়েছি।
তারই এক টুকরো আজ প্রতিবাদী;
সূর্যের মুখ দেখে সে হয়েছে আবাদী।
প্রশান্ত সকালে মেখে নেয় অরুণ আবেগ;
তাই হৃদয়ও সবেগ;
উজ্জ্বল রোদে সমৃদ্ধ নানা–যাত্রাপথ,
আলোক উজ্জ্বল স্বর্ণ–রথ।
শেষের গন্তব্য তার শেষ অস্তরাগে,
অপূর্ব প্রেমের অনুরাগে।
রাত্রিকে সে ছোঁয়না কখনো,নেই তার পূজার ঝঞ্ঝাট,মন্দিরের রুদ্ধ কপাট।
এ তার একান্ত নিজস্ব হৃদয়ের পবিত্র সূর্যস্নান;
নিজস্ব নিয়মে,নিজের মুক্তির ধ্যান |
***************************
অর্চনা মহান্তি পরিচিতি: বাঁকুড়া জেলার হিড়বাঁধ গ্রামে জন্ম। বাবা শ্রী ফণীভূষণ মহান্তি,মা শ্রীমতী সরোজিনী মহান্তি। পারিবারিক ভাবে সাহিত্য পাঠের সুন্দর পরিবেশে বড় হওয়ায় খুব ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য অনুরাগী। কলেজ জীবনে লেখায় হাতেখড়ি।
তিন বছর আগে অসুস্থতার অবসাদ কাটাতে আবার কলম হাতে তুলে নেওয়া। ছন্দ,গদ্যকবিতা ও ছড়ায় সাবলীল ভাবে লেখা তিন বছরের ফসল এক হাজারেরও বেশি কবিতা,কয়েকটি গল্প ও রম্য রচনা। তারই কিছু বহু প্রশংসিত কবিতা দিয়ে বই ‘উত্তরণ’ প্রথম প্রয়াস।