পলাশ সাথী
নীতা কবি মুখার্জী
দুরন্ত বসন্তের পাতাঝরা দিনে আনমনে বসেছিলাম আগুন রঙের ফুলে ভরা পলাশের তলায়।
তুমি এসে একটা পলাশ ফুল হাতে দিয়ে বললে,”এই,আজ থেকে আমরা পলাশ সাথী হলাম!”
একটু পরে তুমি এসে আমার চোখ টিপে ধরলে,বললে,বলো তো কে?
আমি তোমার গায়ের চেনা গন্ধটা অনুভবে করে বললাম—তুমি—-তুমি….আমার পলাশ সাথী…
হাসতে হাসতে পাশ ঘেঁষে বসে জড়িয়ে ধরলে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে।
ভালোবেসে একটা ছোট্ট চুম্বন এঁকে দিলে আমার অধরে
সেদিন থেকেই ভালোবাসার অনুভূতি জাগ্রত হলো,শরীরে,মননে,চিন্তনে।
কতকগুলো পলাশ ফুল কুড়িয়ে গুঁজে দিলে আমার খোঁপায়।
বললাম,একি করছো?
বললে,বেশ করছি। দেখবে এই পলাশের সুন্দর রঙের মতো রঙিন,অম্লান হবে আমাদের ভালোবাসা।
কি অপূর্ব অবশ করা পরশ ছিল সেই পবিত্র চুম্বনে!
বুকের মাঝে চেপে ধরে সেদিন তুমি বলেছিলে—তুমি আমার—আমার—শুধু আমার…
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত নিজেকে সঁপে দিলাম তোমার বলিষ্ঠ বাহুযুগলের মধ্যে।
নিজেকে মুক্ত করতে পারিনি,হয়তো বা চেষ্টাও করিনি—ইচ্ছে হয়নি সেই মধুর মিলনের স্পর্শ থেকে বেরিয়ে আসতে।
তারপর তুমি বললে,আজ আমি আসি….আমি আবার আসবো, ভালোবাসবো,ঘর বাঁধবো,
ছোট্ট একটা আঙিনা থাকবে,এক কোণে থাকবে হাসনুহানার ফুল ভর্তি ছোট্ট গাছ,আর এক কোণে মাধবীলতা।
আমরা দুজনে জ্যোৎস্না রাতে সেই আঙিনায় বসে চাঁদ দেখবো,ভালোবাসবো,তুমি গান শোনাবে আর আমি
সেই মিষ্টি মধুর গানে বিভোর হয়ে তোমাকে এরকম অনেক অনেক চুম্বনে ভরিয়ে দেবো তোমার সমস্ত শরীর!
দেখবে আমাদের সেই ভালোবাসা হবে সবার থেকে আলাদা,লোকে দেখে হিংসে করবে,শিরি–ফরহাদ,লায়লা–মজনুকেও হার মানাবো আমরা,তুমি দেখো,দেখো………
হায়! আজ!
হায়! —সেদিনের চুম্বনের স্নিগ্ধ পরশ আর সেই ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতির কথা সম্বল করে বসে আছি সেই মোহময়ী চাঁদের দিকে তাকিয়ে…….
ওগো চাঁদ,তুমি তো ছিলে সেদিনের সাক্ষী—সে সব কি ছিলো শুধুই ছলনা? প্রবঞ্চনা? নাকি ক্ষণিক ভোগের লিপ্সা?
সেই পলাশের তলায় বসি আজও,অনুভব করার চেষ্টা করি তোমার গায়ের গন্ধ।
আমি আছি,পলাশ আছে….শুধু তুমি নেই…
******************************
নীতা কবি মুখার্জী পরিচিতি — ‘কবি’ হচ্ছে রাজ টাইটেল। পূর্ব পুরুষগণ রাজ-কবি ছিলেন। আসানসোল তথা জামুড়িয়ার একজন কবি এবং বাচিক শিল্পী। সৃজন কথা পত্রিকার সম্পাদিকা। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত হয়। আসামের বিশ্বমানবধর্ম পত্রিকার পক্ষ থেকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। আসাম,বাংলাদেশ,কলকাতা,বর্ধমান বিভিন্ন দৈনিক সংবাদ পত্রে কবিতা প্রকাশিত হয়। একক কাব্যগ্ৰন্থের নাম –বাগদেবীর আরাধনায়।