Shadow

ভরা থাক স্মৃতি সুধায় – সুরজিত সরখেল

ছবিঃসুরজিৎ সরখেল

“ভরা থাক,স্মৃতি সুধায়”

সুরজিত সরখেল


“আগে মত যাও দিদি,গ্লেসিয়ার গিরনে কা আওয়াজ শুনাই নাহি দে রাহা হ্যায় কেয়া!” সুখনলালের স্নেহ মিশ্রিত ঈষৎ ধমকের সুরে বলা কথাগুলো জয়ন্তী যেন শুনতেই পেলনা! ততক্ষণে ওর মন চলে গেছে সুদূর অতীতে!
     প্রায় বছর কুড়ি আগে স্বরূপ আর  তার বন্ধুদের সাথে এসেছিল এই পিন্ডারি গ্লেসিয়ার ট্রেকিং করতে।সেটাই ছিল জয়ন্তীর জীবনের প্রথম ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা।ইউনিয়ন ব্যাংকের কর্মচারি স্বরূপের প্রচন্ড নেশা ছিল পাহাড় আরোহণ বা মাউন্টেনিয়ারিং। ভীষণ ঝুঁকিবহুল ও বিপদসংকুল এই নেশার জন্যই জয়ন্তীর মা,বাবা প্রথমে এই বিয়েতে রাজি হচ্ছিলেন না। তাদের একমাত্র আদরের মেয়ের সাংসারিক জীবনে কোন অভিশাপ নেমে আসুক,তারা মনে প্রাণে চাইতেন না।
এটাই স্বাভাবিক! কিন্তু জীবনের প্রথম প্রেমের মানুষটাকে কিছুতেই হাতছাড়া করতে রাজি ছিল না জয়ন্তী | গড়িয়াহাটের বাসন্তী দেবী কলেজের ফাইনাল ইয়ারের এক্সকার্শন টুর  এ বন্ধুদের সঙ্গে কৌশানি এসেছিল।এটাই ছিল ওর মা বাবা ছাড়া প্রথম স্বাধীনভাবে ভ্রমণ।এমনিতেই পাহাড়ের প্রতি ওর নিজেরও একটা তীব্র আকর্ষণ বরাবরই ছিল।কৌশানির কে এম ভি এন এর বাংলোয় ওরা ছিল।কৌশানির একটু আউট স্কার্টে বাংলোটা।অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চারিদিকে।ঘন পাইন আর দেবদারু গাছের আড়ালে একটা বাঁকের মুখে বাংলোটা,যার পেছনে দৃশ্যমান তুষার শুভ্র পর্বত শ্রেণী। সময়টা ছিল ঠিক দুর্গাপুজোর পরের সপ্তাহ।শেষ বিকেলে অস্তমান সূর্যের অপ্রাকৃত আলোর ছটা দূরে পর্বত চূড়ায় যখন আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে,তখন ওরা বাংলোর ছাদে জ্যাকেট, শাল, স্কার্ফ সারা শরীরে জড়িয়ে সেই শোভা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে প্রচন্ড ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা সহ্য করছে। এদিকে ওদের ইনচার্জ হিসাবে যিনি এসেছিলেন, সেই অসীমা ম্যাডাম ওদের নিচে আসার জন্য মোবাইলে ডেকেই চলেছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ওদের ১৫ জনের মেয়েদের গ্রুপের সবাই তখন যে যার  ক্যামেরায় সেই অপার্থিব দৃশ্যবন্দী করতে ব্যস্ত। ছবি তোলার পর শুরু হল গান।
           চন্দ্রা ধরল ” শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন,লাগল নাচন আমলকির এই ডালে ডালে ! “অন্যরাও গলা মেলালো ওর সাথে।এরপরে প্রচন্ড ঠান্ডায় ওরা নিচে এসে গরম কফি, পকোড়া,মোমো খেয়ে আবার এক প্রস্থ গান,আর আড্ডা সেরে,একেবারে ডিনার পর্ব শেষ করে যে যার জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। এভাবেই প্রথম দিন শেষ হলো।
          কে এম ভি এন এর বাংলোটা বিশাল বড়। অনেকগুলো ঘর। ডাইনিং হল টাও বেশ বড়। ওখানেই সবাই খেতে আসে। এই সময়টায় শুধুমাত্র ওরা ছাড়া আর অন্য কোন ট্যুরিস্ট নেই। পরেরদিন সকালে ওরা সাইটসিয়িং এর জন্য বেরিয়ে গেল। সারাদিনের জন্য ঘুরে সন্ধ্যেবেলায় যখন ওরা বাংলোয় ঢুকলো, তখন দেখতে পেল একটা কালো রংয়ের কোয়ালিস দাঁড়িয়ে আছে। সারাদিন ঘুরে বেড়িয়ে আসার পর প্রত্যেকেই ভীষণ ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত ছিল। অসীমাদি সবাইকে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং হলে যেতে বলে দিয়ে নিজেও তৈরি হতে গেলেন। ঠিক আধঘন্টা পরে ডাইনিং হলে এসে জয়ন্তিরা দেখল যে সেখানে চারজন ট্যুরিস্ট রাতের আহার নিয়ে বসেছেন। তাদের মধ্যে সবথেকে যিনি সিনিয়র দেখলেই বোঝা যায়, সেই পাকা চুলের বলিষ্ঠ মানুষটি কাউকে মোবাইলে জানাচ্ছেন যে আজ তারা কুমায়ুনের মাইকতোলি শৃঙ্গ জয় করে কে এম ভি এন বাংলোয় উঠেছেন। আগামী পরশু তারা কলকাতায় রওনা দেবেন। ফোনটা শেষ হতে না হতেই পরক্ষণেই আবার ফোন। কথাবার্তা শুনে যা বোঝা যাচ্ছিল তা হল তাদের এই দলে আরো ছ’জন ছিল, যার মধ্যে তিনজন শেরপা যারা পর্বত আরোহণ করেন তাদের সমস্ত রকমের সাহায্য করে। আর মালপত্র বহন করার জন্য তিনজন পোর্টার ছিল। এরা সবাই স্থানীয় লোক এবং যে যার বাড়ি চলে গেছে।
     যিনি কথা বলছিলেন সম্ভবত তিনি একজন ডাক্তার। কারণ দলের মধ্যে অল্পবয়সী সুন্দর ফর্সা চেহারা যুবকটি বলে উঠলেন, ” ডাক্তারদা খাবারটা খেয়ে নিন আগে। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। পেম্বা শেরপা আর নামগিয়ালরা এতক্ষণে বাড়িতে শুয়ে পড়েছে। এবার শরীরটা আরাম পেয়ে বিদ্রোহ শুরু করেছে। শুয়ে পড়বো তাড়াতাড়ি ৷”  ডাক্তারদা প্রত্যুত্তরে খুব স্নেহের সঙ্গে যুবকটিকে বলে উঠলেন,“তোমার জ্বরটা মনে হয় আবার না ফিরে আসে। গালের ক্ষতে লাগানোর ওয়েন্টমেন্ট আর রাতের ওষুধটা তোমার ঘরে বিছানার উপরে রেখে এসেছি। কাল যতক্ষণ পারো,বিশ্রাম নিও। সকালের জলখাবার আমরা না হয় একটু দেরিতেই খাব। তারপর তোমার ভায়োলিন নিয়ে বসা যাবে। “কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা ডিনার শেষ করে উঠে পড়লো। উঠে দাঁড়ানোর সময় ফর্সা চেহারার অল্পবয়সী যুবকটির মুখ থেকে যন্ত্রণায় কঁকিয়েওঠার মতো আর্তনাদ বেরিয়ে এলো! এটা জয়ন্তি,শোভনারা অনেকেই শুনতেও পেয়েছিল।
       পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট করার পরে ওরা গাড়ি নিয়ে লোকাল সাইট সিয়িং করতে বেরিয়ে পড়ল।এসে সবাইকে লাঞ্চ করতে হবে। আগের দিন ওরা সবাই মায়াবতী, লোহাঘাট ঘুরে এসেছে। খুব ভালো লেগেছে মায়াবতীর অদ্বৈত আশ্রম। রৌদ্রোজ্জ্বল,হিমেল পরিবেশ।
চারিদিকে দেওদার,পীচ,পাইন,ফার ইত্যাদি মহীরুহে ঢাকা ঘন জঙ্গল, পিছনে সদা জাগ্রত তুষার চূড়ায় মোড়া পর্বত শৃঙ্গ। জিম করবেটের স্মৃতি বিজড়িত শ্বাপদ সঙ্কুল গহীন অরণ্যের মাঝে এসে ওরা ভীষণ রোমাঞ্চিত! অদ্বৈত আশ্রমের অধ্যক্ষ মহারাজও ওদের কৌতূহলের জবাবে বলেছেন, যে তিনি নিজে তো বটেই অনেক ট্যুরিস্টকেও তিনি একজোড়া ব্যাঘ্র দম্পতিকে টিফিন টপের উপর দাঁড়ানো অবস্থায় দেখিয়েছিলেন। আজকে ওরা সবাই মিলে কৌশানির আশেপাশে সমস্ত প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে বেরিয়েছে।বেশ কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বইছে যদিও রৌদ্রোজ্জ্বল দিন। ভালোই লাগছিল প্রকৃতির নয়নাভিরাম ল্যান্ডস্কেপ। ফিরে আসতে ওদের বেলা তিনটে বেজে গেল।
          বাংলোর কম্পাউন্ডে ঢুকতেই ওরা বেহালায় সুর মূর্ছনা শুনতে পেল । ” এস শ্যামল সুন্দর ” বাজছে। বেশ মিষ্টি হাত। ওরা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং হলে এসে বসার সঙ্গে সঙ্গে খাবার এসে গেল। গোগ্রাসে খেতে খেতে ওরা শুনতে পেল বেহালায় বাজছে ” মহারাজ, একি সাজে”। এরপরে ওরা সবাই শুনে চমকে গেল এক জলদ মন্দ্র স্বরে, কে যেন গাইছেন “নিশীথে কি কয়ে গেল মনে,কি জানি “!
         জয়ন্তী বলে উঠলো মনে হচ্ছে “ডাক্তার দা কালকে যিনি ডাইনিং হলে কথা বলছিলেন তিনি গাইছেন। বেশ দরাজ গলা কিন্তু।”
         খাওয়া-দাওয়া শেষ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে ওরা ছাদে এসে বসল যে যার ক্যামেরা ,মোবাইল নিয়ে। তখনো ছাদে বেশ রোদ ছিল। আজকের মেনু টা খুবই উপাদেয় ছিল। সবাই খুবই খোশ মেজাজে আছে। ছাদ থেকে দূরে কুমায়ুন রেঞ্জের তুষারাবৃত পর্বত শীর্ষ গুলি দেখা যাচ্ছে। সেই দিকে তাকিয়ে ওরা আলোচনা করছিল ওই দূরে কোন একটা পর্বত চূড়ায় ওরা আরোহণ করেছেন। সত্যিই কি দুঃসাহসিক অভিযান!
         অঞ্জনা,পল্লবী এই সময় বলে উঠলো ” জয়ন্তী ! আজকে একটা গান শোনা,দারুণ জমে যাবে। কতদিন তোর গান শুনিনি ৷” জয়ন্তী বলল,”আমি তো রবীন্দ্র সংগীত শিখিনি। দুই একটা যাও বা জানি কথাগুলো ভুলে গেছি। তোরা যখন গাস তখন মনে পড়ে যায় ৷”
           জয়ন্তী তার বাবার কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নিয়েছিল। উনি ছিলেন মুনাব্বর আলি খাঁর শিষ্য। কাজেই কেউ গাইতে বললে, বিশেষত বন্ধু-বান্ধবীদের মহলে ও চিন্তায় পড়ে যায়! ও ধরল, ” আলবেলা সজন আয়োরে ! ” শান্ত নির্জন প্রকৃতির মাঝে ওর সুর ঋদ্ধ গলায় আহির ভৈরবের আকুতি সবাইকে যেন সুরের মায়াজালে আবদ্ধ করে রেখেছিল।সবাই যেন নেশায় বুঁদ হয়ে গেছে-এমন ভাবে ঝিম ধরে বসে আছে! তন্ময় হয়ে ও কতক্ষণ গান গেয়েছে খেয়াল করেনি, চোখ খুলে দেখে সামনে কালকের নতুন অতিথিরা দাঁড়িয়ে আছে!
   “কি গাইলে মা তুমি নিজেই জানো না! এই বুড়োটা তোমাকে দুহাত ভরে আশীর্বাদ করছে তুমি যেন এভাবেই সবাইকে আনন্দ দিতে পারো”,আবেগ মথিত গলায় ডক্টর হিমাংশু বিশ্বাস বলে উঠলেন। পাশের সুদর্শন যুবকের হাতে বেহালা! গালে একটা ক্ষত চিহ্ন,একটু খুঁড়িয়ে হাঁটতে হচ্ছে। ডান পায়ে দুটো আঙুলে ব্যান্ডেজ জড়ানো। তার দিকে তাকিয়ে ডাক্তাররা বলে উঠলেন,”স্বরূপ,তুমিই বলো,এরকম গান যদি রোজ শুনতে পেতাম তাহলে আমরা এর মধ্যেই কাঞ্চনজঙ্ঘা,এভারেস্ট এক্সপিডিশন যে কোনদিনই করেই ফেলতে পারি !” নির্ভেজাল রসিকতা শুনে সবাই একসঙ্গে হেসে উঠল।
         স্বরূপ বললো,”সত্যিই অনবদ্য আপনার গান। আর তাছাড়া নিচের বাংলোর যিনি হেড কুক,বিশ্বনাথ দা,হাওড়ার লোক,অনেক দিনের পরিচিত,তিনিও বলছিলেন আপনারা অনেকেই বেশ ভালো গান করেন।
   এরপর ছাদে উপস্থিত প্রত্যেকে নিজেদের পরিচয় বিনিময় করলেন। জয়ন্তী বলে উঠলো,”আপনারা কোন পর্বত শৃঙ্গ জয় করলেন ডাক্তার দা,তা কি এখান থেকে দেখা যায়?”         ডাক্তার বলে উঠলেন, ” কোন পর্বত শৃঙ্গ সত্যিই কি জয় করা যায়? আমরা যারা এভারেস্ট, কে২,কাঞ্চনজঙ্ঘা , অন্নপূর্ণা বা অন্য যেকোনো শৃঙ্গ সামিট করি তা আমাদের বিশ্বাস ,অভিজ্ঞতা, পরিশ্রম ,ভালবাসা ,আবেগ, দক্ষতা এসব কিছুর সংমিশ্রণে যে মানসিকতা অর্জন করি, তার সুষ্ঠ প্রয়োগ কৌশলে তার কাছে পৌঁছতে পারি মাত্র! এটা অবশ্য আমার ব্যক্তিগত মত। কারোর সঙ্গে নাও মিলতে পারে। এটা হল আমরা যারা সুন্দর , সত্যকে ভালোবাসি তাকে পূর্ণমাত্রায় উপলব্ধি করতে চাই। কখনো ব্যর্থ হই ,আবার কখনো সফল হই। ব্যর্থ হলে আবার চেষ্টা করি সত্যকে সহজ রূপে প্রত্যক্ষ করার জন্য। আমরা মাইকতোলি পর্বত শৃঙ্গ যা এখান থেকে দেখা যায় না তা কেবলমাত্র প্রত্যক্ষ করে এসেছি গত পরশুদিন। বয়সে আমাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ স্বরূপ চ্যাটার্জি ,এই যে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ,যার বেহালা এই সমস্ত অভিযানে সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে থাকে,যার সুরমূর্ছনা আমাদের অনেক মানসিক শক্তি, আনন্দ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়; এইবারের অভিযানে ও কিছুটা আহত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে! ওর গালে আর পায়ে তুষার ক্ষত হয়েছে। আগামীকাল আমাদের কলকাতা পৌঁছানোর কথা ছিল ,কিন্তু আরও কয়েকটা দিন ওর জন্যই ,ও সম্পূর্ণ সুস্থ না হয়ে ওঠা পর্যন্ত ,আমরা কেউই বাড়ি যাবার কথা ভাবছি না। ভালোই হলো আমরা এতদিন ওর বেহালা শুনে এসেছি। এই কটা দিন তোমাদের গান শুনবো। আমরা আজ সন্ধ্যায় ডিনারের আগে তোমাদের গান শুনবো। স্বরূপ বেহালা বাজাবে ,দারুণ সময় কাটবে!”
    জয়ন্তী বলে উঠলো, ” ডাক্তার দা আপনার গান আমরা শুনেছি ,আবার শুনবো।”
” নিশ্চয়ই গাইবো ৷ রবীন্দ্রনাথের গান আমায় ভীষণ উজ্জীবিত করে”,ডাক্তার দা বলে উঠলেন।
 স্বরূপ  বলে উঠলো,”মাইকতলি শৃঙ্গে আরোহণ করার আগে ক্যাম্প থ্রিতে যখন আমরা ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়ের মুখে পড়ি ,কিছুক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিজেদের বাঁচাতে ব্যস্ত ছিলাম। তারপর যখন আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায় ,তখন ডাক্তারদার ডাকে তাবুর বাইরে এসে যে আকাশ দেখি তা আপনারা এখানে বসে ধারণাও করতে পারবেন না! এরকম অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করবার জন্যই আমরা এই ভয়ংকর সুন্দরের প্রতি ধাবমান হই বারে বারে। সেই সময় ওনার গলায়, ” আকাশ ভরা ,সূর্য তারা, বিশ্বভরা প্রাণশুনে ওই রাতেই আমরা সামিট করতে বেরিয়ে পড়ি ।”
     ” এই মুহূর্তে আপনার কত জ্বর আছে আপনি কি দেখেছেন”? জয়ন্তী জিজ্ঞাসা করল।
 ” বেশি না এই একশোর মত, তবে এই ক্ষত গুলোতে যন্ত্রণা আছে। ডাক্তারদাও আছেন। ইনজেকশন দিয়েছেন,ওষুধ খাচ্ছি,ভয় নেই। আপনি আর একটা গান শোনাবেন?”
    ডাক্তারদাও বললেন,”মা যা গান শোনালে,শুধু আমি বা স্বরূপ নয়,এই দুজন এক্স ডিফেন্সের লোক একজন পাঞ্জাবি প্রভসুখন গিল,আর এই বিহারী রামপ্রসাদ দুবেজীও তোমার গানের ভক্ত হয়ে গেছেন। এবার তুমি যা ভালো বোঝো,শোনাও।” বাদ বাকি দুজন একটু শান্ত প্রকৃতির। ওরাও সম্মতি সূচক মাথা নাড়লেন।
জয়ন্তী শুরু করলো,” চলে যাই হো বেদর্দা হামার,হম রোয়ে মরিহে…….আখতারি বাঈ এর পাহাড়ি দাদরা গোধূলি সন্ধ্যার রক্তিম আভায়, তুষার শুভ্র পর্বত শীর্ষে,এক অপার্থিব,অপ্রাকৃত নৈসর্গিক দৃশ্য ধীরে ধীরে উন্মোচিত করছে! তার পাহাড়ি দাদরার প্রত্যেকটি শব্দের আর্তি,সুরের মায়াজালে স্নাত হয়ে সেই অপরূপ শোভার সাযুজ্যতা বজায় রেখেছে।মাঝে মাঝে দুবেজী মাথা নেড়ে হায় হায় করছেন। আর সবাই যেন সুরের মায়াজালের ঘোরে আবদ্ধ হয়ে আছেন !মানে নেশায় বুঁদ হয়ে যাওয়া আর কি! “গোরি,গোরি,বহিয়া,হরি হরি চুরিয়া,লাইকে সিলবাট্টা হমার……..। স্বরূপ প্রথম দিকটায় বেহালার ছড় টেনে জয়ন্তির সুরের সঙ্গে বেশ ভালোই সঙ্গত করছিল। জয়ন্তি মাথা ঝুঁকিয়ে,মৃদু হেসে তার প্রাপ্তি স্বীকার করেও ছিল,কিন্তু কিছুক্ষণ পরে স্বরূপ ছড় টানা বন্ধ করে শুধু সুরের স্রোতে সাঁতার কাটতে থাকলো চোখ বুজে! এবার প্রত্যেকের বাড়ি ফেরার সময় এগিয়ে এল।
         এর মধ্যে জয়ন্তীরা একদিন আলমোড়া ঘুরে আসলো সবাই।স্বরূপের জ্বর বেশ ভালই ছিল। ওর তুষার ক্ষত শুকোতে বেশ ভালই সময় লাগবে। জয়ন্তীরা চলে যাবার পর দিনই স্বরূপদের ফ্লাইটের টিকিট কাটা।
স্বরূপের সঙ্গে দেখা করার জন্য জয়ন্তী একটু ইতস্তত করে স্বরূপের ঘরে ঢুকে দেখল, স্বরূপ জ্বরে অচেতন হয়ে ভুলভাল বকছে। কপালে হাত দিয়ে চমকে উঠে ডাক্তার দা কে ডাকবার জন্য ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে একেবারে ডাক্তার দার মুখোমুখি হয়ে গেল। উনিও স্বরূপকে দেখবার জন্যই আসছিলেন। জয়ন্তিকে দেখে বললেন যে ” গতকাল রাতেই ভাল জ্বর ছিল। আমি সারারাত ওর মাথার কাছে বসে ছিলাম ।আগামীকাল তোমরা চলে যাবে; তারপরের দিন আমরা যাব ।কোন বারই এরকম হয় না। একটা অস্পষ্ট যন্ত্রণা বোধ হচ্ছে !এ ‘কদিন বেশ গান আর আড্ডায় কেটে গেল । কিছু যদি মনে না করো ,একটা কথা বলবো মা!খারাপ লাগলে না হয় এই বুড়োটাকে যা খুশি বলো। কিছু মনে করব না!”        জয়ন্তি বলে উঠলো,”এভাবে বলছেন কেন ডাক্তার দা? আপনার যা খুশি বলুন। আমাদেরও প্রত্যেকের মন খারাপ।”
  “সেই জন্যেই তো বলছি মানে বলার চেষ্টা করছি যে ওই হতভাগা টার দায়িত্ব তুমি নাও না! তিন কুলে ওর কেউ নেই । বড় ভালো ছেলে ।আমি ওর অভিভাবক। এই কদিন তোমরা দুজনে সঙ্গীতে এক সঙ্গে সঙ্গত করলে!এবার জীবন যুদ্ধে সঙ্গত কর! আর গতকাল রাতে ও আমাকে বলেছে তোমার কথা । বস্তুত আমি আর ওর অফিসের সহকর্মীরা ওর জন্য পাত্রী খুঁজছিলাম।”
     ডাক্তার দার কথা শুনে জয়ন্তীর সারাটা মুখমন্ডল লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে উঠলো!ওর চোখে খুশির ঝিলিক ডাক্তার দা ও এক লহময় দেখতে পেলেন!
  “স্বরূপ তোমাকে নিজের মুখেই বলবে বলে ঠিক করেছে। কিন্তু ওর যা অবস্থা দেখছি,আজকের রাতে ওকে আরও একটা ইনজেকশন দিতে হবে।”
এই সময় স্বরূপ চোখ মেলে তাকালো। ডাক্তারদা জয়ন্তীকে দেখিয়ে বললেন,”তোমার ওকে যা বলার আছে বলে ফেলো। সময় নষ্ট করো না। আমি এক্ষুণি আসছি। এসে যেন পজিটিভ রেজাল্ট পাই।”
         ডাক্তার দা বেরিয়ে যেতেই জয়ন্তী বলে উঠলো,“আমাকে নিজের মুখে বলতে পারতেন তো !”
         “সে তো পারতামই,এই অবস্থায় পড়েছি ! তারপর সারাদিন তোমার বন্ধুরা তোমাকে ঘিরে রাখে।বলি কি করে?” কথাটা  বলে স্বরূপ ওর ডান হাতটা বাড়াল জয়ন্তীর দিকে।       জয়ন্তী ওর হাতটা ধরে বলে উঠলো,”এই হাতটা শক্ত করে ধরে রেখো। কোনদিন ছেড়ো না ৷”
          এরপরে হই হই করে কলকাতায় ফিরে ডাক্তার দার নেতৃত্বে ও পৌরহিত্যে সমস্ত বাধা অতিক্রম করে ওদের দুজনের চারটে হাত এক করার কাজ সুসম্পন্ন হয়ে গেল । জয়ন্তির মা-বাবাকে ডাক্তারদাই বোঝালেন।
          স্বরূপের ইচ্ছে ছিল হানিমুন প্রথা মাফিক না করে কোন একটা পাহাড়ি পথে ট্রেকিং করে জয়ন্তীকে পাহাড়ের দুর্গমতাকে জয় করে যে স্বপ্নময় আনন্দের জগৎ পাওয়া যায়,তার সন্ধান দেওয়া;সে নিজে যে আনন্দ পেয়েছে তার অংশীদার করা। ডাক্তার দার তত্ত্বাবধানে স্বরূপ আর তার অফিসের বন্ধুরা কয়েক জন মিলে পিন্ডারি গ্লেসিয়ার যাবে বলে ঠিক করল। ওদের অফিসের সহকর্মীদের মধ্যে পূর্ণিমা ভাটিয়া বলে একজন পাঞ্জাবি দুহিতাও আছে। যথাসময়ে ওরা ১৫ দিনের জন্য সব লাগেজ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ল। প্রথমে ওরা বাগেশ্বর থেকে সংগ্রাম হয়ে যথাক্রমে লোয়ার,আপার লোহার খেত,ঢাকুরি,দোয়েলি,খাতি,ফুরকিয়া তে এসে থামল। ৪দিন ধরে হেঁটে,কখনো থেমে একটু বিশ্রাম নিয়ে,অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে, এসে পৌঁছলো ফুরকিয়াতে। প্রত্যেকেই বিশেষ করে স্বরূপ আর ডাক্তারদা ওর দিকে খেয়াল রেখেছিল। সকলেই ক্রমাগত উৎসাহ দিচ্ছিল । ফুরকিয়া থেকে রাতের অন্ধকার থাকতে থাকতেই হাড় কাঁপানো হিম ঠান্ডায় যখন ওরা জিরো পয়েন্টের দিকে রওনা হল, তখন চাঁদের মায়াবী আলো আর অজস্র জোনাকি ভরা আকাশের নীল শামিয়ানা দেখে জয়ন্তী আনন্দে কেঁদে ফেলে স্বরূপকে জড়িয়ে ধরলো। এরকম আকাশ ও জীবনে প্রথম দেখলো ,আর বিস্ময়ে একেবারে নির্বাক হয়ে গেল ।একেবারে সামনে তুষার ধবল পর্বত শৃঙ্গ। মাথার উপর চাঁদের আলো আর সারাটা দিকচক্রবালে অজস্র হীরের দ্যূতিতে পায়ের নিচের নরম তুলতুলে বরফগুলোয় যেন হাঁটার সময় বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে যাচ্ছিল। ঠিক সূর্য ওঠার আধ ঘণ্টা আগে ওরা জিরো পয়েন্টে পৌঁছে গেল। আরো একটা বিদেশি পর্বতারোহীদের দল তাদের প্রচুর মালপত্র , পোর্টার ,নারী-পুরুষ মিলিয়ে১৫/১৬ জন তো হবেই,এসে গেল। ওরা যাবে আরো উপরে।
          এরপর যখন সূর্য উঠতে শুরু করলো একটু একটু করে তখন মনে হল যে কারা যেন প্রত্যেকটা পাহাড়ের চূড়ায় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। নানা রকমের রঙের আগুন। মনে হচ্ছে যেন কারা নানা রকমের রঙের আবির নিয়ে হোলি খেলছে। স্বরূপ জয়ন্তীকে বলল,” ধীরে ধীরে তাকাও,সামনের যে পিকগুলো দেখতে পাচ্ছো, তার মধ্যে ডান দিকের যে চূড়াটা দেখা যাচ্ছে ওইটা হলো মাইকতোলি, যেটা আমরা এখানে এসে আরোহণ করেছি। তারপর একে একে ভানুটি,দুর্গাকোট,টেন্ট পিক,থারকোট, সুন্দর ডুঙ্গা খাল, পাওয়ালিদুয়ার,নন্দাকোট,বালজোরি পিক গুলো যত্ন করে দেখালো। একসময় স্বরূপ জয়ন্তীকে জিজ্ঞাসা করল,”কেমন লাগছে?”
জয়ন্তী বলল,”এখন বুঝতে পারছি কিসের টানে সবকিছু উপেক্ষা করে তোমরা এরকম পাগলের মতন এ সমস্ত বিপদ সংকুল জায়গায় ছুটে আস! বাস্তবে মনে হচ্ছে এটাই যেন স্বর্গ! এবার থেকে আমাকে নিয়ে এই সমস্ত জায়গায় আবার আসবে!”স্বরূপ একটু মৃদু হাসলো ।
       এবার সমস্ত কিছু গুছিয়ে নিয়ে ফিরে আসার পালা। সেই KMVNএর বাংলোটায় ওরা দুদিনের জন্য বিশ্রাম নিতে এল। এরপর বাড়ি ফিরে এসে সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।            এই পর্যন্ত জয়ন্তী আর স্বরূপের জীবন যাপন বায়োস্কোপের রঙ্গিন বর্ণচ্ছটায় যেন মোড়া ছিল। কিন্তু সময়ের রথের চাকা কোন দিকে গড়াবে, তা আগে থেকে কেউই জানতে পারে না! একদিন ফ্ল্যাটের বাথরুমে অকস্মাৎ পড়ে গিয়ে জয়ন্তীর সন্তান হবার সম্ভাবনা চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়! স্বরূপ তখন অফিসে। খবর পেয়ে সবাই ছুটে আসে। হাসপাতালে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে ঘরে ফিরে মানসিক যন্ত্রণায় জয়ন্তী একেবারে ভেঙে পড়ে।স্বরূপ এই সময়ে ওর সঙ্গে থেকে থেকে অনেকটাই ওকে সুস্থ করে তোলে।
        স্বরূপও কেমন যেন ঝিমিয়ে যেতে থাকে।অফিস থেকে আগে যেমন এসে হাতমুখ ধুয়ে কখনো জয়ন্তীকে নিয়ে বাইকে করে কোন বন্ধুর বাড়িতে আড্ডা দিতে যেত ,অথবা মুভি দেখতে কোন হলে যেত। ওরকম প্রাণবন্ত মানুষটাকে বিমর্ষ দেখে জয়ন্তী কারণ জিজ্ঞাসা করায় জানতে পারল যে ওদের দলবল এবার ধৌলাগিরি পর্বত আরোহণ করতে যাবে। কিন্তু খুব স্বাভাবিকভাবেই স্বরূপ যাবে না বলায় দলের বাকিরা একটু উদ্যমহীন হয়ে পড়েছে ।কিন্তু স্বরূপের পারিবারিক বিপর্যয় খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে যে অবস্থায় গোটা পরিবারকে দাঁড় করিয়েছে , তাতে কেউই মুখ ফুটে ওকে কিছু বলতেই পারছে না। জয়ন্তী স্বরূপের অসহায় অবস্থা বুঝতে পেরে ওকে বেশ জোর দিয়েই বললো ,” তুমি এবার যাও। না হলে মানসিকভাবে আমরা যে কেউই সুস্থ থাকতে পারবো না।”
            জয়ন্তীর কথায় স্বরূপ রাজি হল বটে ,কিন্তু এরপরে আর কোন অভিযানে ও যাবে না ,সেই সিদ্ধান্ত জয়ন্তীকে স্বরূপ জানিয়ে দিল। ওদের যাবার দিন জয়ন্তীকে জড়িয়ে ধরে স্বরূপ কেঁদে ফেলল। এই অবস্থায় জয়ন্তীকে ছেড়ে যেতে সায় দিচ্ছিলনা ওর মনটা।
 আর এই প্রথম ওর সর্বক্ষণের বিশ্বস্ত সঙ্গী ভায়োলিনটাও ও নিয়ে গেল না।
            এর পরের ঘটনা আরো করুণ এবং বিয়োগান্ত। সৃষ্টিকর্তার বিচার বিবেচনা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও মাঝে মাঝে সংশয় জাগে ! ধৌলাগিরি সামিট সফলভাবে করার পর নেমে আসার সময় ভয়ংকর তুষার ঝড় আর অ্যাভালাঞ্চের মধ্যে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যায় স্বরূপ আর নামগিয়াল সহ আরো দুজন শেরপা। কয়েক দিন ধরে সমস্ত রকম সরকারি ও বেসরকারিভাবে তল্লাশি করেও কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি! স্বরূপ চিরজীবনের মতো নিরুদ্দেশ হয়ে গেল! জয়ন্তী অর্ধমৃত হয়ে বেঁচে রইলো! কম্প্যাসিয়নেট গ্রাউন্ড এ স্বরূপের চাকরিটা ও পেলো ঠিকই, কিন্তু প্রথম প্রথম ভীষণ অনিয়মিত ছিল ওর অফিসে যাবার ব্যাপারটা। স্বরূপের ব্রাঞ্চেই পোস্টিং এর ব্যবস্থা করা হল। কিছুটা সুবিধা হলো কারণ পূর্ণিমা ভাটিয়ার সঙ্গে ওর তো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল আগেই।
         ঠিক প্রতিবছর এই সময়ে জয়ন্তী পিন্ডারি গ্লেসিয়ার ট্রেক করতে আসে। সঙ্গে থাকেন ডাক্তার দা ,পূর্ণিমা আর সুখনলাল । কিসের টানে জয়ন্তী এই কষ্টসাধ্য পরিশ্রম করে এখানে আসে, তা বুঝতে পারেন ডাক্তার দা। সুখন লালের ইশারায় পূর্ণিমা, জয়ন্তীর হাত ধরে পিছনে রাখা ফোল্ডিং চেয়ারে সাবধানে বসিয়ে দিল। ঠিক এই সময়টা যেন জয়ন্তী নিজের মধ্যে থাকেনা ! অথচ,ওকে দেখেও কেউই,বুঝতে পারবে না, কিসের এক ভাঙ্গা,গড়া,অবিরত চলতে থাকে ওর মনের মধ্যে! একটা ভয়ানক আকুতি থাকে ওর প্রতিটা মুহূর্তের শ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে! অনেকটা ওই দূরের হিমবাহ গুলো যেমন ভয়ংকর শব্দ করে ভেঙে পড়ছে,সেভাবেই প্রতিক্ষণে,জয়ন্তীও ভাঙছে! যা,বোঝা গেল ওর হঠাৎ করে নয়! অনেকটা আত্মসন্মোহিত হয়ে গেয়ে ওঠা,”দূরে কোথায়,দূরে দূরে,আমার মন বেড়ায় গো ঘুরে,ঘুরে”! ওর গানের প্রতিটা শব্দ কঠিন হিমবাহের অন্তরে যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। প্রতিটা হিমবাহের খাঁজে ,খাঁজে যেন ওর অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে একটা আকুতি পৌঁছে যাচ্ছে।
       ধৌলাগিরি সামিট করে ফিরে আসার পথে স্বরূপরা নিখোঁজ হয়ে যাবার পরে জয়ন্তী খুব স্বাভাবিক ভাবেই ডাক্তারদাকে ওখানকার বেস ক্যাম্পে নিয়ে যাবার জন্য অনুরোধ করেছিল। কিন্তু সবদিক বিবেচনা করে ডাক্তারদা জয়ন্তীকে নিয়ে যেতে সাহস করলেন না।
               স্মৃতিমেদুরতায় ভারাক্রান্ত জয়ন্তী নিরুদ্দিষ্ট স্বরূপের প্রতীক্ষায় বিচ্ছিন্ন বদ্বীপের মতন ভেসে রইলো।
*****************************

সুরজিৎ সরখেল পরিচিতি :
১৯৫৭ সালে কলকাতায় জন্ম। ২০১৮ সালে ভারতীয় জীবন বীমা নিগম থেকে অবসর নিয়েছেন। সঙ্গীতে একটা পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল। সেজমাসী এবং মেজমামা প্রখ্যাত সুরকার স্বর্গীয় হৃদয় রঞ্জন কুশারীর তত্ত্বাবধানে সঙ্গীত চর্চা শুরু হয়। কলেজ জীবন শুরু হবার পর সঙ্গীতে আকৃষ্ট হন। অফিসে কর্মজীবনের ফাঁকেই শুরু হয় সাহিত্য চর্চা। কিছু প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সাময়িক পত্র পত্রিকায়। এছাড়াও বাগানে বিভিন্ন রকমের গাছপালা নিয়ে সময় কাটাতে ভালোবাসেন।

 

1 Comment

  • Mitra Madhumita

    পর্বতারোহণ সম্পর্কে বেশ জ্ঞান আছে তা বোঝা গেল সুরজিৎ দা… বিয়োগান্ত গল্প,মনে ব্যথার রেশ রেখে যায়….

Comments are closed.

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!