সম্পাদকীয়
‘ কু লা য় ফে রা র তৃ তী য় ব র্ষ পূ র্তি ‘
তীব্র দহনের দু:সহ একটা লম্বা ইনিংসের পর বৃষ্টি ধারায় শুষ্ক ধরা অবশেষে শীতল হতে শুরু করেছে। রুক্ষ ফুটিফাটা মাটি সিক্ত হয়েছে বর্ষণে। ধুলোময়,নোংরা,বিবর্ণ গাছের পাতা গুলো ধারা স্নানে এখন পরিস্কার,চকচকে,সবুজ,প্রাণবন্ত। এই নীল গ্রহের একমাত্র আত্মঘাতী,ভাতৃঘাতী,অকৃতজ্ঞ প্রাণীরা বিশ্বের সর্বত্রই অরণ্য ধ্বংস করে বসত বিস্তৃত করে চলেছে। এদেশও পিছিয়ে থাকবে কেন? পুষ্করিণী,জলাশয় বুজিয়ে মাথা তুলছে মাল্টি স্টোরিড। বিপন্ন হচ্ছে বন্যপ্রাণী। পাখিকুল। বাতাসে বাড়ছে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা। গ্রীণ হাউস এফেক্টে বাড়ছে উত্তাপ। বরফ গলছে মেরু প্রদেশের। বিজ্ঞানীদের শংকা,আগামী শতকের আগেই বিশ্বের তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রীর উপর উঠে যাবে! তবে বর্ষা এসে যাওয়ায় স্বস্তি। এই লেখা যখন প্রকাশিত হবে,ততদিনে ঝমঝমিয়ে বর্ষণের কাল শুরু হয়ে যাবে! এই চরম প্রতিকূল আবহাওয়াতেও কুলায় ফেরা তার নিজ কাজে কিন্ত আত্ম নিমগ্ন। স্থিতধী। গম্ভীর। দেখতে দেখতে তিন বছরে পা দিলো “কুলায় ফেরা”। এই তিন বছরে অনেক কিছুর সাক্ষী সে। কুলায় ফেরার জন্ম হয়েছিলো যখন,সারা বিশ্ব তখন এক ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী ভাইরাসের আগ্রাসনে অতিমারীর মৃত্যুলীলায় কাঁপছে। সভ্যতা সৃষ্টির পর কেউ কি দেখেছে দিনের পর দিন জনশূন্য রাস্তাঘাট। সমস্ত বিপনীতে তালা। বন্ধ,বাজারঘাট। রেল স্টেশন,বাস স্টপ,হাওয়াই আড্ডা শুনসান। বিদ্যানিকেতনগুলিতে তালাচাবি। বিশ্বের মহা শক্তিধর মানবকুল প্রাণভয়ে নিজ ঘরে ইচ্ছাবন্দী। পশু পাখিরা মুক্ত বিশ্বে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সময়েই কালের নিয়মে চলে গেছেন লতা মঙ্গেশকর,বাপ্পী লাহিড়ী,সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়,এস পি বালাসুব্রহ্মনিয়মের মত দিকপাল শিল্পীরা।এই মারণ ভাইরাসের বলি হয়েছেন এস পি বি সাহেব। তবে,এই অভূতপূর্ব মারণলীলা কুলায় ফেরাকে তার এগিয়ে চলার পথকে থামাতে পারেনি। পত্রিকা নির্দিষ্ট সময় প্রকাশিত হয়েছে।সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনে সে অক্লান্ত। দু দুটি সাহিত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন এ সময়েই হয়েছে। তার নিবিড় উদ্যমের সেই সাহিত্য,সংস্কৃতির বহমান ধারা আজও অব্যাহত।
এই চরম প্রতিকূল আবহাওয়াতেও কুলায় ফেরা তার নিজ কাজে কিন্তু আত্মমগ্ন। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের ১৬৩ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে গত ২৩ মে সন্ধ্যায় অন্তর্জালে নিবেদিত হলো রবিরচনা নির্ভর সঙ্গীতের অনুষ্ঠান “কারণে অকারণে রবীন্দ্রনাথ”। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বহু শিল্পী এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। এবছর বাঙলা সঙ্গীতের মরমী শিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম শতবর্ষ। গত ষোলই জুলাই সতীনাথবাবুর গান,সুর সৃষ্টি নিয়ে কথায় ও গানে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান “শতবর্ষের আলোয় সতীনাথ” নামে ফেসবুক লাইভে এক ঘন্টার এক সাংগীতিক অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হলো। অত্যন্ত উপভোগ্য এই অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেছেন দেশ বিদেশের বহু দর্শক। এই সব অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে শিল্পীরা অংশ নিয়ে ছিলেন।। দূর থেকেই শিল্পীরা তাঁদের সঙ্গীত ইত্যাদি নিবেদন করছেন,উপস্থাপনা করছেন,ঘোষণা করছেন ক্যামেরার সামনে। সরাসরি তা অন্তর্জালে জমা হচ্ছে অরিজিনেটিং স্টেশন বা মাদার স্টেশন বিশাখাপত্তনমে। আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাকে সম্প্রচার করা হচ্ছে সেখান থেকে। যন্ত্রগণককে নিপুণ হাতে নিয়ন্ত্রণ করে মুহূর্তের মধ্যে তাকে সম্পাদনা করে,টাইটেল সহ অন্তর্জালে যুক্ত করা হচ্ছে। অংশ নেওয়া লেখক লেখিকা,সংগীত, বাচিক,নৃত্য এবং যন্ত্রশিল্পী দের থেকে তাই এই প্রযুক্তি শিল্পীদের অবদানও কোনও অংশে কম নয়। সুখের এবং আশার কথা,সামগ্রিক ভাবে এই সব অনুষ্ঠানের সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিগত দিকে প্রভূত উন্নতি করেছে কুলায় ফেরা।
আগামীতে আমরা আরো উজ্জ্বল উপস্থাপনার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে চলেছি নিরন্তর।
কুলায় ফেরা আন্তর্জালিক,আন্তর্জাতিক এবং নান্দনিক পত্রিকার সকল লেখক লেখিকা,পাঠক পাঠিকা এবং এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সব ধরণের শিল্পী, কলাকুশলী,নেপথ্য শিল্পী,প্রযুক্তিবিদ ও শুভাকাঙ্খীদের কুলায় ফেরা পরিবারের পক্ষ থেকে ভালোবাসা,অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।।
নমস্কারান্তে,
দেবদত্ত বিশ্বাস
সম্পাদক
কু লা য় ফে রা
২৬শে জুলাই ২০২৩
এত্ত সুন্দর হয়েছে সম্পাদকীয় যে কি বলি ! মন ভরে গেলো পড়ে।
কুলায় ফেরার তৃতীয় বার্ষিকী সংখ্যাটি অন্তর্জালে পেলাম।সর্বত্র অত্যন্ত যত্নের ছাপ।সম্পাদনা,রচনা নির্বাচন থেকে শুরু করে ইলাস্ট্রেশন,সব স্তরেই সুষ্ঠু চিন্তার প্রকাশ।গল্প কবিতা প্রবন্ধের বিপুল সম্ভারে জমজমাট।মানসিক ক্ষুধা নিবৃত্তি থেকে রসনাতৃপ্তির আয়োজনে ক্ষামতি নেই।তবে আরও কয়েকটি বিষয়,যেমন বিজ্ঞান -প্রযুক্তি,রম্যরচনা,ক্রীড়া,উল্লেখকরার মতন সংক্ষিপ্ত সংবাদ জাতীয় বিভাগ সংযুক্ত করা যায় কিনা কর্তৃপক্ষ কে ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি।