Shadow

ইউরোপ ভ্রমণ (দ্বিতীয় পর্ব) : ক্রুসে যাত্রা আর হল্যান্ড, ব্রুসেলস ভ্রমণ – বিজিত কুমার রায়

Amsterdam Canal , PC: Thrillophilia

ইউরোপ ভ্রমণ (দ্বিতীয় পর্ব) : ক্রুসে যাত্রা আর হল্যান্ড, ব্রুসেলস ভ্রমণ

বিজিত কুমার রায়

পরের দিন খুব সকালে উঠে তৈরি হয়ে চা খেয়ে রুম থেকে বেরোনো হলো। বাইরের ডেকে গিয়ে হুহু করে কাঁপতে কাঁপতে বাইরের দৃশ্য দেখলাম ও কিছু ছবি তোলা হলো। তারপর রেস্টুরেন্টে গিয়ে ভালো রকম প্রাত:রাশ হলো। এরপর মালপত্র (ছোট ব্যাগ, কারণ বড়ো সুটকেস ইত্যাদি বাসেই ছিল) নিয়ে বেরোনোর রাস্তাতে হল্যান্ডে ঢোকার ইমিগ্রেশন।
বাসে উঠে আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল “মাদুরোদম” একটা মিনিয়েচার সিটি। হল্যান্ডের রাস্তা ছিল খুব সুন্দর আর মাঝে মাঝে চোখে পড়ছিল পুরোনো উইন্ড মিল। মাদুরদমের ভেতরে পুরো একটা শহর যেন মিনিয়েচার স্কেলে তৈরি করা আছে। মজা লাগে দেখতে অনেকটা গালিভার ট্রাভেলসের মতো। কিছু ছবি তোলা হলো।
এরপরের গন্তব্য ছিল একটি চিজ তৈরির ফেক্টরিতে। সেখানে যদিও চীজ তৈরি দেখলাম কিন্তু গন্ধে প্রাণ যায়। তারপর দেখলাম হল্যান্ডের কাঠের জুতা তৈরির ফেক্টরী।
অ্যামস্টারডাম (ওলন্দাজ ভাষায় Amsterdam আম্‌স্ট্যর্‌ডাম্‌; মূলতঃ Amstel Dam আম্‌স্ট্যল্‌ ডাম্‌ অর্থাৎ “আমস্টেল নদীর বাঁধ”)। নেদারল্যান্ড্‌সের রাজধানী ও অন্যতম প্রধান শহর। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান বন্দর, ও বাণিজ্যকেন্দ্র। রাজধানী হলেও নেদারল্যান্ডস সরকারের মূলকেন্দ্র, এখানে নয়, হেগ শহরে। দ্বাদশ শতকের শেষের দিকে একটি ছোট মাছ ধরার গ্রাম হিসেবে আবির্ভূত হয়ে, সপ্তদশ শতাব্দীতে ডাচ গোল্ডেন এজ-এর সময় আমস্টারডাম পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলির মধ্যে একটি হয়ে ওঠে, যার ফলে ব্যবসাতে তার উদ্ভাবনী উন্নয়ন ঘটে। সেই সময়, নগদ অর্থ এবং হীরক বাণিজ্যের জন্য প্রধান কেন্দ্র ছিল এই শহর। উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে শহরটি বিস্তৃত হয়, এবং অনেক নতুন আশেপাশের এলাকা এবং শহরতলির পরিকল্পনা এবং নির্মাণ করা হয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত আমস্টারডামের খালসমূহ এবং উনবিংশ শতকের স্থাপত্য [স্টিলিং ভ্যান আমস্টারডাম, প্রতিরক্ষা লাইন অফ আমস্টারডাম] ইউনেস্কো-র পৃথিবীর ঐতিহ্যবাহী স্থান-সমূহের তালিকায় অন্তরভুক্ত হয়েছে। শহরের হৃদয় দিয়ে রক্তনালীর মতো প্রবাহিত ক্যানেল। ক্যানেলের ভেতর ভেসে যাচ্ছে নৌকা, স্টিমার। স্পিডবোটও রয়েছে। রয়েছে ওয়াটার বাস। ক্যানেলের দুই ধারে মধ্যযুগীয় গির্জা, রাজপ্রাসাদ। শহরটির নাম আমস্টারডাম। এ শহর সাইকেলের, ফুলের, পনিরের, হীরার এবং শিল্পের। পৃথিবীর বিখ্যাত কয়েকটি মিউজিয়াম আছে এ শহরে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রিকস মিউজিয়াম ও ভ্যানগঘ মিউজিয়াম। অ্যামস্টেল নদীর মোহনায় এই শহর। নর্থ সি ক্যানেলের মাধ্যমে উত্তর সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত। আমস্টারডাম ভ্রমণ শুরু হল ক্যানেল-ক্রুজ দিয়ে। শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া চওড়া ক্যানেল দিয়ে পর্যটকরা ভেসে চলছেন জলযানে। পর্যটকদের সুবিধার্থে ডাচ ও ইংরেজি ভাষায় দুধারের প্রাসাদ ও রাস্তা সম্পর্কে ধারা বিবরণী দেওয়া হচ্ছে। চতুর্দশ শতকে নির্মিত গির্জার পাশ দিয়ে যাচ্ছে আমাদের জলযান। শরতের ঝকঝকে নীল আকাশের প্রেক্ষাপটে চতুর্দশ শতকের প্রাচীন গির্জা। এবার দুপাশে দেখা যাচ্ছে মধ্যযুগীয় প্রাসাদের সারি। রাজপরিবারের সদস্য, রাজদরবারের হোমড়াচোমড়া, বীর নাইট, বণিক ও বিশিষ্ট অভিজাতদের বাসস্থান। মধ্যযুগীয় প্রাসাদগুলোকে দেখে মনে হয় এক্ষুনি খুলে যাবে কারুকার্যময় বিশাল ফটক আর বেরিয়ে আসবে অশ্বারোহী বীর নাইট। সেন্ট্রাল আমস্টারডামের বাড়িগুলোও যথেষ্ট দেখার মতো। ক্যানেলের তীরে চমৎকার রং করা সারিসারি বাড়ি। চোখ সরাতে কষ্ট করতে হবে আপনাকে! মনে হবে চিত্রশিল্পের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। শুধু ক্যানেলের তীরেই নয়, ক্যানেলের উপরেও আছে বাড়ি—ভাসমান বাড়ি।
আমস্টারডামে অনেকগুলো জাদুঘর রয়েছে। এর মধ্যে রাজকীয় রিকস মিউজিয়াম, ভ্যান গঘ মিউজিয়াম, আনা ফ্রাঙ্ক মিউজিয়াম, মাদাম তুঁশোর আমস্টারডাম শাখা, হার্মিটেজ এবং আমস্টারডাম মিউজিয়াম বেশি বিখ্যাত। শিশুদের জন্য চমৎকার একটি সায়েন্স মিউজিয়ামও রয়েছে। বিখ্যাত মিউজিয়ামগুলো বেশিরভাগই মিউজিয়াম প্লেইন বা মিউজিয়াম স্কোয়ারের আশপাশে অবস্থিত। আমস্টারডাম এ ড্যাম স্কোয়ারে এক ঘন্টার বোট রাইড হলো হল্যান্ডের খালে, সাথে দেখা হলো বিভিন্ন প্রাসাদ বোট থেকে। ফিরে এসে লাঞ্চ হলো ম্যাকডোনাল্ডে। কিছু স্যুভেনির কেনা হলো। এরপর রওনা দিলাম বেলজিয়ামের ব্রুসেলস এর দিকে। রাস্তাতে একটি পুরানো উইন্ড মিলে থামা হলো ও ছবি তোলা হলো। প্যালেস স্কোয়ারে পৌঁছে প্রচুর পুরানো বাড়ি, প্যালেস ও চার্চ দেখা হলো। যদিও সবই মধ্যযুগের কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ভালো হওয়ার জন্য সুন্দর। দোকানে গিয়ে প্রসিদ্ধ বেলজিয়ান চকোলেট কেনা হলো।
ওখান থেকে একটু খানি দূরে একটা স্ট্যাচু দেখা হলো যেটার নাম ম্যানিকিন পিস। শোনা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কিছু সৈন্য এক জায়গাতে বসে মদ্যপান ও হইহই করছিল। একটি ছোট বাচ্চা জানলা দিয়ে তাদের ওপরে সুসু করে দেয়। সেই মজার ঘটনাটি মনে রাখার জন্য এই ভাস্কর্য। অবশ্য আরও নানা গল্প প্রচলিত আছে। সন্ধ্যাবেলা হোটেলে চেকইন করলাম রামাদা হোটেলে। এরপর ডিনার সেরে সোজা বিছানাতে।
আজকের মতো গুড নাইট। কাল রওয়ানা হবো প্যারিসের দিকে।
******************************************
বিজিত কুমার রায় পরিচিতি
জন্ম স্কুল কলেজ সবই কলকাতা। জন্ম ১৯৫৩। স্কুল, শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় শ্যামপুকুর আর কারিগরী স্নাতক বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শিবপুর মেকানিক্যাল ১৯৭৪-১৯৭৫ সাল। কর্মক্ষেত্র অবশ্য সারা দেশ জুড়ে। বি এইচ ই এল (ভেল) কোম্পানীর তিরুচিরাপল্লী, কলকাতা, দিল্লী, ভূপাল ও ভারতবর্ষের সমস্ত প্রদেশের পাওয়ার প্ল্যান্টে। রথ দেখা ও কলা বেচা হিসাবে দেশে ও বিদেশের বহু স্থানে একলা ও সস্ত্রীক ভ্রমণের সৌভাগ্য আছে। শখ-পারলে সারাদিন বই ও বিভিন্ন পত্রিকা পড়া। এছাড়া বয়সের সাথে কিছুটা ধর্মের দিকে ঝোঁক। রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দীক্ষাপ্রাপ্ত ও রামকৃষ্ণ সারদা বিবেকানন্দ দর্শনের দিকে উৎসাহ। আর এই বাবদে মিশনের নানা জনকল্যানকারী কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত।

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!