জ্যোতির্লিঙ্গ ওঁকারেশ্বর
বিজিত কুমার রায়
উজ্জয়িনীতে মহাকাল দর্শনের পর (সাল ২০০৫), আমরা ইন্দোর ও মাণ্ডু দর্শনের পর রওয়ানা হই ওঁকারেশ্বরের উদ্দেশ্যে। তখন আমি ভূপালে পোস্টেড ছিলাম।
পথে আরো একটি প্রসিদ্ধ শিব মন্দির মাহেশ্বর দর্শনের অভিজ্ঞতা হয়। নর্মদা তীরে অতি সুপ্রাচীন ও শান্ত পরিবেশে এই মন্দির।
এরপরে আমরা এসে উপস্থিত হই নর্মদার দক্ষিণ পাড়ে। নর্মদার অপর পারে সেই সুবিখ্যাত জ্যোতির্লিঙ্গ ওঁকারেশ্বর যেটি একটি দ্বীপে অবস্থিত। কথিত আছে কিছু ওপর থেকে এই দ্বীপটি দেখলে দুইটি দ্বীপকে দেখা যায় যেটি ওঁ বর্ণের আকার। দ্বীপে ব্রিজে করেও পার করা যায় তবে আমরা নৌকায় পার হই।
পুরাণে আছে কঠোর তপস্যারত মহাদেব অমরকন্টকে সমাধিমগ্ন অবস্থায় যখন ছিলেন তখন তাঁর সেই তপোজ্জ্বল উত্তপ্ত শরীর ঘর্মাক্ত হতে থাকে। তাঁর পবিত্র সেই স্বেদরাশি থেকে উদ্ভুতা এক অপরূপ কন্যা তাঁর কাছে আসেন। মহাদেব তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি আপনার শরীরজাত, আপনারই কন্যা। মহাদেব তাকে নর্মদা নাম দিয়ে আশীর্বাদ করেন দেবী জাহ্নবীর সাথে তাঁর নামও উচ্চারিত হবে এবং তাঁর পাড়ে মহাদেব নিত্য বিরাজিত থাকবেন। যিনি ওঁকারেশ্বর নামে প্রসিদ্ধ।
নদীর অপর পারে মন্দিরের সারি। পাকানো সিঁড়ি বেয়ে মান্ধাতা পাহাড়ের ওপরে জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির। রাস্তায় বিখ্যাত সাধু সীতারামদাস ওমকারনাথজীর সাধনস্থলী।
বেশ কিছুটা ওপরে উঠে এসে পৌছালাম মূল মন্দিরে। নাটমন্দিরটি খুব বড়ো নয় তবে প্রায় ১৪ ফুট উঁচু ৬০টি স্তম্ভের ওপর নাটমন্দিরটি স্থাপিত। স্তম্ভের গায়ে অপরূপ কারুকার্য। নাটমন্দিরের পশ্চিমপ্রান্তে নন্দীর এক বিশাল মূর্তি। নন্দিশ্বরের চরণে মাথা ঠেকিয়ে একটি ছোট গর্ভগৃহে প্রবেশ করলাম।
মন্দিরের দক্ষিণপ্রান্তে রুপার রেলিং ঘেরা একটি ছোট কুন্ডের মাঝখানে বহুবাঞ্ছিত জ্যোতির্লিঙ্গ ওঁকারেশ্বর বিরাজ করছেন। খুবই ছোট কালপাথরের অমসৃণ লিঙ্গ উচ্চতায় আধ হাতেরও কম। লিঙ্গের আকৃতি ছোট ছোট উঁচু নিচু কয়েকটি চূড়ার মতো। হাত দিয়ে স্পর্শ করলে মনে হয় যেন ওঁকার আকৃতি। লিঙ্গের তলা দিয়ে সবসময় জল চুঁইয়ে বেরোচ্ছে। মুছে দিলেও আবার উঠছে। পূজারী বললেন মা নর্মদারই একটি গুপ্ত ধারা এই ভাবে আসছে।
আমরা রেলিংয়ের ধারে বসে ওঁকারলিঙ্গকে স্পর্শ করে পূজা করলাম। একপাশে অখণ্ড জ্যোতি জ্বলছে। সন্ন্যাসীর আদিগুরু আচার্য শঙ্কর এখানেই সন্ন্যাস গ্রহণ করে সিদ্ধ হয়েছেন।
এরপর সন্ধ্যা আরতির জন্য লিঙ্গ ও কুন্ড ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করলেন পূজারীরা। তারপর বিধিমত পঞ্চমৃত, চন্দন, অগুরু ইত্যাদি দিয়ে স্নান ও শৃঙ্গার করা হলো। সুন্দর সিল্কের কাপড় দিয়ে চারপাশ ঢেকে শুধু লিঙ্গটি বার করে রাখা হলো। মালা ও বেলপাতা দিয়ে সাজিয়ে তারপর রুপার সাপ লিঙ্গকে বেষ্টন করে রাখা হলো।
পূজারীরা বেষ্টন করে বসলেন। বিশাল জয়ঢাক ও ডমরু বাজানো শুরু হলো। পঞ্চ প্রদীপ দিয়ে আরতি শুরু হলো।
আরতি বন্দনা গাওয়া হলো।
জয় শিব ওম্কারা
ভজ শিব ওম্কারা
ব্রহ্মা বিষ্ণু সদাশিব অর্ধাঙ্গী ধারা
ওম হর হর হর মহাদেব।
আরতি শেষ হলে আমরা তৃপ্ত মনে বেরিয়ে এলাম এক সুন্দর অনুভূতি নিয়ে।
জয় ওঁকারেশ্বর মহাদেব।
ছবিগুলি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত।
**************************************************
বিজিত কুমার রায় পরিচিতি
জন্ম স্কুল কলেজ সবই কলকাতা। জন্ম ১৯৫৩। স্কুল, শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় শ্যামপুকুর আর কারিগরী স্নাতক বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শিবপুর মেকানিক্যাল ১৯৭৪-১৯৭৫ সাল। কর্মক্ষেত্র অবশ্য সারা দেশ জুড়ে। বি এইচ ই এল (ভেল) কোম্পানীর তিরুচিরাপল্লী, কলকাতা, দিল্লী, ভূপাল ও ভারতবর্ষের সমস্ত প্রদেশের পাওয়ার প্ল্যান্টে।
রথ দেখা ও কলা বেচা হিসাবে দেশে ও বিদেশের বহু স্থানে একলা ও সস্ত্রীক ভ্রমণের সৌভাগ্য আছে। শখ – পারলে সারাদিন বই ও বিভিন্ন পত্রিকা পড়া। এছাড়া বয়সের সাথে কিছুটা ধর্মের দিকে ঝোঁক। রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দীক্ষাপ্রাপ্ত ও রামকৃষ্ণ সারদা বিবেকানন্দ দর্শনের দিকে উৎসাহ। আর এই বাবদে মিশনের নানা জনকল্যানকারী কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত।