ভয়ঙ্করের আকর্ষণ:লাদাখের চাদর ট্রেক
বিজিত কুমার রায়
বোধহয় পৃথিবীর অন্য কোনো ট্রেকের সাথে এর তুলনা হয় না। ভাবুন তো মাইনাস ৩০ ডিগ্রিতে জমে যাওয়া নদীর ওপরে হেঁটে ট্রেক করা, দুই পাশে জমাট বরফের পাহাড়, জমে যাওয়া পাহাড়ি ঝর্ণা।
না আমার নিজে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। সে তাকত ও আর এই ৬৭ বছরে নেই। কিন্তু কয়েকটি লেখা পড়ে মনে হলো এই ট্রেক নিয়ে লেখার কথা। হয়তো পাঠকদের মধ্যে কেউ আছেন যিনি বা যাঁরা এই ট্রেক নিজে করেছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা জানার অপেক্ষায় রইলাম। নিজে যাইনি বলে ছবিগুলি নেট থেকে সংগ্রহ করা।
১১১৫০ ফুটের উচ্চতায় এই ট্রেক মনে করিয়ে দেয় যেন নর্থ পোলে ট্রেকের কথা। পুরোদস্তুর গরম কাপড়ে ঢেকে, কাঁটা ওয়ালা জুতো পরে জমাট বাঁধা নদীর ওপর ধীরে হাঁটা। সাথে আপনার রসদ চলবে স্লেজের ওপর। এই চাদর ট্রেকে দরকার অভিজ্ঞ গাইডের কারণ নদীর কোথাও পাতলা আস্তরণ ভেঙে ঢুকে যেতে পারেন অতলস্পর্শি ক্রেভিস এ। তাই খুব সাবধানে রাস্তা বুঝে চলা।
আপনার পরিচয় হবে জানস্কার অঞ্চলের লোকেদের সাথে ও তাদের সংস্কারের সাথে। বেঁচে থাকার তাগিদে সবরকম প্রতিকূলতা মানিয়ে চলতে হবে। আমি কেন পারবো না এই মনোভাব নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে এগিয়ে চলা।
কার্গিল থেকে লেহ এর দিকে না গিয়ে আরও একটি রাস্তা গিয়েছে জাঁসকর এর দিকে। এই রাস্তা কিন্তু একেবারেই ভাঙাচোরা রাস্তা, পেট্রোল পাম্প নেই, খাবার জিনিষও বিশেষ পাওয়া যায় না তাই হয় রসদ নিয়ে চলা বা কোনো ট্রেকিং গ্রূপের সাথে যাওয়া।
কার্গিল পদুম রোড দিয়ে সুরু ভ্যালি হয়ে শুরু। রাস্তাতে পড়বে এক মজার দৃশ্য। নুন আর কুন পাহাড় পাশাপাশি। দুটোই তেইশ হাজার ফিট উঁচু প্রায় কিন্তু নুন পাহাড় সবসময় বরফে ঢাকা আর কুন পাহাড় শুধুই পাথর। এর নিচে রয়েছে গ্লেসিয়ার পারকিচিক।
পথে রংদুম গুম্ফা পেরিয়ে পড়বে ১৫০০০ ফিট মতো উঁচুতে পেনজি লা গিরিপথ। পড়বে লাদাখের বিখ্যাত গ্লেসিয়ার বা হিমবাহ দ্রাং-দ্রুঙ। এখান থেকে শুরু হয় দারচা মানালির ট্রেকিং। এছাড়া এই রাস্তাতে পড়বে অনেকগুলি গুম্ফা যেখানে স্বয়ং দালাই লামা অবধি থেকেছেন। দেখতে পাবেন নেরাক জলপ্রপাত, যেটি ঠাণ্ডাতে সম্পূর্ণ জমে গিয়েছে। এই ট্রেকে যাওয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ সময় জানুয়ারির মাঝে থেকে এক দেড় মাস। খরচা সম্ভবত হাজার বিশেক টাকা মাথা পিছু লেহ থেকে লেহ। ৬২ কিমি ট্রেক সময় নেবে ৮-৯ দিন।
তবে এই সারা জীবন মনে রাখার মতো ট্রেক করতে হলে আগে লেহতে মিলিটারি হাসপাতালে সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষাতে পাস করতে হবে । তবেই মিলবে যাওয়ার ছাড়পত্র। তাই যাদের মনে সাহস আছে আর শরীরে আছে কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা বেরিয়ে পড়ুন এই ট্রেকে। নেটে চাদর ট্রেক দিয়ে সার্চ করুন সব দরকারি খবর পেয়ে যাবেন।
*******************************************
বিজিত কুমার রায় পরিচিতি
জন্ম স্কুল কলেজ সবই কলকাতা। জন্ম ১৯৫৩। স্কুল, শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় শ্যামপুকুর আর কারিগরী স্নাতক বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শিবপুর মেকানিক্যাল ১৯৭৪-১৯৭৫ সাল। কর্মক্ষেত্র অবশ্য সারা দেশ জুড়ে। বি এইচ ই এল (ভেল) কোম্পানীর তিরুচিরাপল্লী, কলকাতা, দিল্লী, ভূপাল ও ভারতবর্ষের সমস্ত প্রদেশের পাওয়ার প্ল্যান্টে।
রথ দেখা ও কলা বেচা হিসাবে দেশে ও বিদেশের বহু স্থানে একলা ও সস্ত্রীক ভ্রমণের সৌভাগ্য আছে। শখ – পারলে সারাদিন বই ও বিভিন্ন পত্রিকা পড়া। এছাড়া বয়সের সাথে কিছুটা ধর্মের দিকে ঝোঁক। রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দীক্ষাপ্রাপ্ত ও রামকৃষ্ণ সারদা বিবেকানন্দ দর্শনের দিকে উৎসাহ। আর এই বাবদে মিশনের নানা জনকল্যানকারী কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত।