রূপনগরের রূপকথা (দ্বিতীয় পর্ব)
সিঞ্চন চট্টোপাধ্যায়
(আজ লালনের পালা)
লালনের আসল নাম কেউ জানেনা। কোথা থেকে এসেছে তাও কেউ জানে না। জানেন শুধু বাবামশাই। বোধহয় লালন ফকিরের গান গায় বলে বাবামশাই ওর নাম লালন রেখেছেন। অস্টিন ছাড়া বেশিরভাগএর নামই তো বাবামশায়ের দেওয়া। লালন তো শুধু ফকিরের গান গায় না, সুফি গায়, লোকসংগীতও গায়। আজ সবার খাওয়া-দাওয়ার দায়িত্ব লালনের। সকাল থেকে রান্নাঘরের ব্যবস্থা সামলে তবে এসেছে রঙ্গমঞ্চে। প্রায় ২৫ জন পুরুষ ও মহিলা সেই কোন্ ভোর থেকে রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত। লোক তো কম নয়! তিনশ জন ছাত্র, পঞ্চাশ জন শিক্ষক ও কর্মচারী, দুশো জন সেবক ও সেবিকা, ডাক্তার ও সহকারি মিলিয়ে সেও প্রায় পঞ্চাশ জন। এছাড়াও বহিরাগত অতিথির সংখ্যা বাড়ে কমে রোজ। আজ যেমন প্রায় তিনশো লোকের রান্না হচ্ছে।
রূপনগরের রান্নাঘর এর বিশেষত্ব, এখানে পুরো রান্নাটাই হয় সৌরশক্তিতে। নিচে রান্নাঘর। তার ওপরে ভান্ডার ঘর। এর উপরে দুটি তলা খাবার ঘর। ছাদে বসানো হয়েছে বিরাট বিরাট সৌরশক্তি চালিত যন্ত্রপাতি যা কিনা প্রয়োজনে দশ হাজার লোকের রান্নার ব্যবস্থা করতে পারে।
নামগুলো ভারী চমৎকার। রান্নাঘরের নাম বল্লভ। ভান্ডার ঘরের নাম দূর্যোধন। দুটি ভোজন কক্ষের নাম পাঞ্চালি এবং দ্রৌপদী।
অজ্ঞাতবাসের সময় বিরাট রাজার রান্নাঘরে ভীমের নাম ছিল বল্লভ। রাজসুয় যজ্ঞের সময় দূর্যোধন চেষ্টা করেছিল যজ্ঞ পন্ড করার। তাই ভান্ডার ঘরের দায়িত্ব চেয়ে নিয়ে ছিল যাতে ভান্ডার ঘর উজার করে দিতে পারে। কিন্তু কৃষ্ণ জানতেন দুর্যোধনের হাতে কমল চিহ্ন আছে ফলে সে যতই খরচা করুক তার দ্বিগুণ ভরে যাবে ভান্ডার ঘর।
পাঞ্চালি এবং দ্রৌপদী নাম রাখার কারণ অনেকেরই জানা। বনবাসকালে দ্রৌপদীর রান্নার পাত্রে কখনোই খাবার কম পড়তো না যতক্ষণ না পর্যন্ত দ্রৌপদী নিজে সেই পাত্র থেকে খাচ্ছেন। একবার তো বড় বিপদে পড়েছিলেন দ্রৌপদী। তার দুপুরের খাওয়া শেষ এদিকে দুর্বাসা মুনি সাঙ্গ পাঙ্গদের নিয়ে হাজির এবং দ্বিপ্রাহরিক ভোজনের ইচ্ছা প্রকাশ করে স্নান করতে গেলেন দুর্বাসা। এই সময় বিপদতারণ কৃষ্ণ এসে হাজির। দ্রৌপদীকে বললেন বড় খিদে পেয়েছে খেতে দাও। দ্রৌপদী বিপদের কথা বললেন সখা কৃষ্ণকে। কৃষ্ণ বললেন তোমার পাত্রটি একবার নিয়ে এসো। দ্রৌপদী নিয়ে এলেন। দেখা গেল পাত্রের কোনায় এক কনা খাবার লেগে আছে। সেই টুকরোটি কৃষ্ণ মুখে দিয়ে বললেন এ বিশ্বের সকল আত্মা তৃপ্ত হোক। ব্যাস দুর্বাসা এবং সঙ্গীদের স্নান করতে করতেই পেট ভরে গেল ঢেকুর তুলতে তুলতে তারা অন্য পথে রওনা দিলেন।
বাবামশাই এর প্রত্যেকটি নামকরণের পিছনে কিছু না কিছু কারণ রয়েছে বা গল্প রয়েছে। রঙ্গ মঞ্চ প্রায় শেষের পথে। বাবামশাই লালনকে ইশারা করতেই লালন রঙ্গ মঞ্চ ছেড়ে খাওয়া দাওয়ার তদারকিতে রওনা দিলো। পথ চলতে চলতেই ভাবছিল রান্নাঘর খাবার ঘরের নামকরণের কথা। লালন যখন রূপনগরে প্রথম আসে তখন এত মানুষ জনও ছিল না, রান্নাঘরটাও ছিল খুব ছোটই। তারপর শুরু হল বাবা মশাইয়ের পরিশ্রম। সঙ্গে জনাদশেক শিক্ষক, সেবক ও সেবিকা। শুরুতে সবার জন্য খাবার জোগাড় করাটাও ছিল খুব কঠিন। আর আজকের দিনে সব খাবার আনন্দ রূপেই তৈরি হয়। কিছু জিনিস ছাড়া সবকিছুই আনন্দ রূপে তৈরি করা হয়। বল্লভের পেছনে বিরাট সবজির বাগান। সেখানে সব ধরনের সবজি চাষ হয়। যতটুকু খাবার জন্য লাগে, তা বাদে চলে যায় সমবায়িকা তে বিক্রি হতে। বছরে যা ধান গম চাষ হয় তার বেশির ভাগটাই বিক্রি হয়ে যায়। খাবার জন্য সামান্য লাগে সেসব রাখা থাকে গুদাম ঘরে। ভুট্টা আর আখ চাষ হয় প্রচুর আখের থেকে গুড় হয় কিন্তু ভুট্টা রূপনগরে কোন কাজেই আসে না। তাই বেশিরভাগ আখ আর ভুট্টা বিক্রি হয়ে যায়। রূপনগরে চিনি আর ময়দা ব্যবহার করা বারণ। বাবামশাই বলেন, দেশ থেকে চিনি আর ময়দা তুলে দিলে মানুষের রোগবালাই অনেক কমে যাবে। সবজি বাগানের শেষে রয়েছে ডেয়ারি। আড়াইশ এর বেশি গরু, মহিষ, ছাগল রয়েছে সেখানে। পাশে রয়েছে দুগ্ধজাত খাবার তৈরীর কারখানা। দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবারের বেশিটাই বিক্রি করা হয়।
ঘন্টা বাজল। রঙ্গমঞ্চের আজকের সভার শেষ হবার বার্তা পৌঁছে গেল রূপনগরে। এবার দ্বিপ্রাহরিক খাবার পালা। লালন তাই জোরে পা চালাল। পনেরো মিনিটের মধ্যে ঘণ্টা বাজাতে হবে খাবার ঘরে। সবকিছু ঠিকঠাক করে নিতে হবে এরমধ্যে। বাবামশাইয়ের আজ উপবাস। কিন্তু তিনি আসবেন অবশ্যই। সকালে এক প্রস্থ মিটিং করে নিয়েছে লালন। কি কি রান্না হবে, সে অনুযায়ী কি কি সবজি, বাগান থেকে আসবে ভান্ডার ঘর থেকে কি কি আসবে, রাঁধুনিদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিকঠাক উপদেশ দিয়ে রান্না শুরু করিয়ে তারপর লালন রঙ্গমঞ্চে গিয়েছিল। এবার সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখে নেবার পালা লালনের। রান্নার জায়গা থেকে শুরু করে খাবার অলজায়গা পর্যন্ত এক ছুটে সবকিছু দেখে নিল লালন। সব ঠিকঠাকই আছে। আবাসিক এবং অতিথিরা বসলেই পরিবেশন শুরু হবে। কয়েকজনকে ডাক দিয়ে জেনে নিল লালন এবার শুরু করা যায় কিনা!
সবার মুখে চোখে একটু উৎকণ্ঠা রোজই থাকে । কারণ বাবা মশাই শৃঙ্খলা পছন্দ করেন, তার অন্যথা হলে উনি রেগে যেতে পারেন। নিচে গিয়ে লালন ঘড়ি দেখে ঘন্টা বাজিয়ে দিলো। নিচেই রয়েছে হাত পা ধোয়ার জায়গা। বল্লভের পাশে এক ফালি খাবার জায়গা আছে ।যে সব অতিথি উপরে উঠতে পারবেন না তাদের খাবার ব্যবস্থা এখানে। সবার আসা শুরু হয়ে গেল। হাত পা ধুয়ে সবাই দ্রৌপদী আর পাঞ্চালি তে বসে পড়তে লাগলেন। বসার ব্যবস্থা এখানে সবার জন্য নিচে। একটা করে লম্বা মাদুরের ফালি নিচে সারিবদ্ধ ভাবে সবার বসার জন্য। এক ফুট উঁচু লম্বা লম্বা বেঞ্চ সামনে রাখা, তাতে কলাপাতা পেতে রাখা পাশে মাটির গেলাসে জল। পেতে রাখা ধোয়া কলাপাতায় নুন লেবুর টুকরো কাঁচা লঙ্কা।
বাবামশাই প্রবেশ করলেন সঙ্গে অস্টিন ভাই, বাসবদত্তা দিদি সঙ্গে আরো চার পাঁচ জন। পাঞ্চালিতে ঢুকেই সবার দিকে এক নজর দেখতে দেখতে হাত জোর করে বললেন–আজকের অতিথিদের সেবার দায়িত্ব পেয়ে আনন্দরূপ খুব খুশি। আপনারা তৃপ্ত হলে আপনাদের আশীর্বাদে আমরা ধন্য হবো। অতিথিরা প্রতি উত্তর দিলেন নমস্কার জানিয়ে।
“আজ তো লালনের পালা” বাবামশাই বললেন, “তা কোই তাকে যে দেখছিনা হেথা!”
লালন দ্রৌপদীতে যাবার জন্যে সিঁড়িতে পা দিয়ে ছিল। পড়ি কি মরি করে ছুটে বাবামশাই এর সামনে হাজির। বাবা মশাই হাসলেন তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বললেন “ইনি হলেন লালন, আজ আপনাদের তৃপ্তি করে খাওয়ানোর দায়িত্ব এনার। খাওয়া দাওয়া ভালো লাগলে ওকে আশীর্বাদ করবেন। আর যদি খারাপ লাগে তাহলে আপনাদের খুশি করার জন্য অন্য ব্যবস্থা ওর জানা আছে কি বলো হে লালন!” লালন হাতজোড় করে মাথা ঝুঁকিয়ে অস্ফুটে বলল “হ্যাঁ বাবামশাই”। বাবামশাই আবার বললেন আজ তোমাদের মেনু কি?
লালন বলতে শুরু করল–শাক ভাজা, শুক্তো, লাউ দিয়ে মুগের ডাল, ঝুড়ি ঝুড়ি আলু ভাজা, আলু পটলের তরকারি, রুই মাছের কালিয়া, যারা নিরামিষ খাবেন তাদের জন্য ছানার ডালনা। চাটনি পাপড় মিষ্টি দই আর রসগোল্লা। বাহ বাহ বেশ বেশ, বাবা মশাই বললেন, সঙ্গে যোগ করলেন এসব কিন্তু আমাদের নিজস্ব বাগানের উৎপাদন তাই নিশ্চিন্তে উপভোগ করুন আজকের দুপুরের খাবার।
ফরাসি ভাষায় বলে বন অ্যাপেটাই ট। আমাদের এখানে নিয়ম প্রথমে প্রার্থনা তারপর ভোজন। কই হে অস্টিন শুরু করো অর্থ টা বুঝিয়ে দিও কিন্তু। অস্টিন বাংলা বলতে গিয়ে কখনো-সখনো আটকায় কিন্তু সংস্কৃত টা অসম্ভব ভালো উচ্চারণে পাঠ করে। ভারী অথচ সুললিত কণ্ঠস্বরে অস্টিন যজুর্বেদ থেকে নেওয়া শ্লোক পাঠ করতে শুরু করলো।
ওম, অন্নপতে অন্নস্য নৌ দেহামনমিব্যস্য শুশ্মিনঃ /
প্র প্রদাতারং তারিষ উর্জম নৌ ধেহি দ্বিপদে চতুষ্পদে //
ওমশান্তি ওমশান্তি ওমশান্তি
অস্টিন এর সাথে অতিথিদের অনেকেই সশব্দে অথবা অস্ফুটে উচ্চারণ করলেন।
এবার অস্টিন বলল এই শ্লোকের ব্যাখ্যা হল –
হে খাদ্যশস্য এবং সমস্ত ভোজ্য প্রদানকারী প্রভু, আজ আমাদের খাবার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
এই খাবারটি কীটাণু মুক্ত, বিনাশ মুক্ত এবং পুষ্টিকর হোক, এবং এটি আমার শরীর, মন এবং আত্মার পক্ষে মঙ্গলকারী হোক, আমি প্রার্থনা করি!
হে অন্নদাতা এবং খাবার সরবরাহকারীদের দাতা, সমস্ত জীবিত প্রাণী যেন প্রতিদিন তাদের ভরণপোষণ পেতে পারে!
শান্তি , সর্বত্র, সর্বদা সকলের জন্য থাকুক!
সবাই বলুন ওম শান্তি। একসাথে সবার উচ্চারণে পাঞ্চালি গম গম করে উঠলো।
সবার পাতে একের পর এক খাবার পরিবেশন শুরু হলে বাবা মশাই দ্রৌপদীর দিকে রওনা হলেন। দ্রৌপদী খাবার ঘরে বসার ব্যবস্থা একই রকম এবং খাবার মেনু নিচের মতই। কিন্তু খেতে বসেছেন আবাসিকরা অর্থাৎ ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক শিক্ষিকা এবং সেবক সেবিকারা। কুড়ি জনের বসার জায়গা খালি অর্থাৎ এরা প্রথমে পরিবেশন করবেন তারপরে খেতে বসবেন। প্রতিদিন দুবেলা এই পরিবেশক দল বদল হয়। এখানেও চলে পালা।
বাবা মশাই দ্রৌপদীতে প্রবেশ করতেই বসে থাকা সবাই উঠে দাঁড়ালো। এক সাথে সবাই বলল “প্রণাম বাবামশাই”। বাবামশাই দুটি হাত তুললেন তারপর বললেন জয় হোক সবাই অগ্রনি হও। পরে উত্তোলিত হাত দুটি দিয়ে ইশারা করলেন বসার জন্য। এক ছাত্র এগিয়ে এলো বাবামশাই এর পাশে দাঁড়ালো নিচের কক্ষে অর্থাৎ পাঞ্চালিতে উচ্চারিত শ্লোক উচ্চকণ্ঠে সবাই উচ্চারণ করলো। বাবামশাই বললেন-যদি তোমরা মনে করো, যে খাবার পরিবেশিত হবে সে শুধু তোমাদের আহার মাত্র তবে তাতে পুষ্টি তৃপ্তি আনন্দ কম হতে পারে। কিন্তু যদি মনে করো পরমেশ্বরের প্রসাদ গ্রহণ করছো তবে সবকিছু একই সাথে পাবে। এবার তোমরা খাবার খাও পরমেশ্বর তোমাদের শক্তি প্রদান করুন। সবার দিকে একবার তাকালেন বাবামশাই তারপর বললেন তোমরা খেতে থাকো, এর মাঝে আমি তোমাদের একটা গল্প শোনাই। সবাই খাওয়া শুরু করলো বাবা মশাই বলতে শুরু করলেন। “একটা সাধারণ মধ্যবিত্ত সংসারে এইরকম একটা দুপুরে বাবা-মা এবং ভাই বোন দুপুরের খাবার খেতে বসেছিল। ভাই এবং বোনের মধ্যে, ভাই, খেতে খেতে কয়েকটি ভাত থালার পাশে ফেলে দেয়। বাবা দেখতে পেয়ে ছেলেকে বলেন, খোকা ভাত গুলো তুলে নাও। ছেলে তার উত্তরে বলে ওগুলো নিচে পড়ে গেছে নোংরা হয়ে গেছে তাই আমি ওগুলো তুলবো না। উত্তরে বাবা বলেন, তোমার মা অনেক যত্ন করে প্রতিদিন এই ঘরের মেঝে পরিষ্কার করেন। তাছাড়া এর থেকে অনেক অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন খাবার খেয়ে সারা পৃথিবীতে বহু মানুষ জীবন ধারণ করছে। তুমি খোকা ওই ভাত গুলো তুলে নাও। তাতে ছেলে বলে, ওই কটা তো ভাত যদি না তুলি কি আর এমন ক্ষতি হবে। বাবা এর কোন উত্তর দেন না। সবার খাওয়া শেষ হয়। ছুটির দিনে বাবা ছেলে মেয়েকে নিয়ে কিছু না কিছু খেলা খেলতে বসেন। আজও সেই মতো ছেলে মেয়ে বাবা দুপুরে বিছানায় বসে খেলার আয়োজন শুরু করে। হঠাৎ বাবা মেয়েকে বলেন যাও তো খুকি মায়ের কাছ থেকে এক মুঠো চাল নিয়ে এসো। মেয়ে ছোট বাটিতে করে এক মুঠো চাল নিয়ে আসে। বাবা ছেলেকে বলেন খোকা একটা একটা করে ৩৬৫ টা চাল গুনে ফেলো তো দেখি একটাও যেন কম না হয়! বাবার কথা মত ছেলে ৩৬৫ টা চাল গুনে আলাদা করে সরিয়ে রাখে। এবার বাবা মেয়েকে বলেন যাও তো খুকি মাকে বলো এই চাল কটা ফুটিয়ে ভাত বানিয়ে দিতে। মা বিরক্ত হলেও ওই কটা চাল ফুটিয়ে মেয়ের হাত দিয়ে পাঠিয়ে দেন। এবার বাবা বলেন দেখো খোকা রোজ যদি একটা ভাত তুমি ফেলে দাও তাহলে এক বছরে তুমি এতগুলো ভাত নষ্ট করবে। আজ তুমি কতগুলো ভাত ফেলেছ মনে আছে? ছেলে মাথা নাড়ে। বাবা বলেন আমি দেখেছি সাত থেকে আট টা ভাত পড়েছিল অর্থাৎ এর সাত থেকে আট গুণ তুমি সারা বছরে নষ্ট করবে যদি তোমার এই স্বভাব না বদলাও। তোমরা দুজনই মনে রেখো পৃথিবীতে অন্নের অভাবে বহু মানুষ অভুক্ত থাকে একটা ভোজ্য বস্তুর কণাও যেন অপচয় না হয়। ছেলে এবং মেয়ে দুজনেই বুঝতে পারল খাবার অপচয় করা কখনই উচিত নয়।
বাবামশাই হাত তুলে সবার উদ্দেশ্যে বললেন সবার জয় হোক এবং রওনা দিলেন নিজের আশ্রয়ের দিকে।
*****************************************
সিঞ্চন চট্টোপাধ্যায় :
লেখক খুব অল্প বয়সেই লেখা শুরু করেন। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকেই গল্প ,কবিতা, উপন্যাস এবং নাটক লিখতে শুরু করেন। ছাত্রাবস্থা শেষ করার পর প্রথম হাতে খড়ি তৎকালীন ভারত কথা পত্রিকার সাংবাদিকতা। সঙ্গে চলতে থাকে বিভিন্ন পত্র–পত্রিকায় ফ্রিল্যান্সিং। এরপর জীবিকার জ্যামিতিক আকারের মধ্যে ঘোরাফেরা দেশ–বিদেশ দেখা এবং সময় সময় লিখতে থাকা। আজ কুলায় ফেরার পাতায় অনুভবের ছবি লেখা শুরু নতুন আঙ্গিকে। এবার ধারাবাহিক উপন্যাস। যে স্বপ্ন প্রত্যেক মানুষ কখনো না কখনো দেখেন বা দেখেছেন, এক সুস্থির সুন্দর সুমার্জিত সমাজ জীবন! তারি লেখা চিত্র ফুটিয়ে তুলতে চলেছেন লেখক সিঞ্চন চট্টোপাধ্যায়।