দেবী ভাগবত ও ভায়োলিন এর জন্ম কথা
মণি ফকির
মহিষাসুর এর সেনাপতি শুম্ভ ও নিশুম্ভের দাপটে দেবকূল তখন তটস্থ, নিরুপায় হয়ে শরণ নিল ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের। বিষ্ণু গেলেন হয়গ্রীব (অর্ধেক ঘোড়া, অর্ধেক মানুষ – Hybrid Incarnation)অবতারের রূপ নিয়ে অসুর ভাইদের রাজ্যে। উদ্দেশ্য দুর্বলতা খুঁজে বের করা যাতে ওদের দমন করা যায়। গোপন সূত্রে জানা গেল দুর্দম অসুর ভাইদের দুটি মোক্ষম দুর্বলতা – সুন্দরী রমণী ও সঙ্গীত। দেবতারা দেবী দুর্গার রূপভেদ মহামায়ার শরণাপন্ন হলেন।
দেবী মণিকাঞ্চন পাহাড়ের চূড়ায় অবতীর্ণ হলেন। সেখানে একটি অদ্ভুত ব্যাপার ওঁর নজরে এলো। একটি গাছের গুঁড়ির কিছু আলগা আঁশ বা তন্তু হাওয়ার আঘাতে অদ্ভুত সুর সৃষ্টি করছে। ঠিক অনেকটা রোমান হার্প বা উইন্ড চাইমের মতো। তীক্ষ্ণধী দেবী একটি দুটি গাছের গুঁড়ির তন্তু জুড়ে তারের আকার দিলেন। একটি গাছের ডাল বেঁকিয়ে হয়গ্রীবের লেজের চুল দিয়ে বানালেন ছড়। বাজাতে লাগলেন এক সম্মোহনী সুর। জন্ম হলো আদি ভায়োলিনের।
বাহুলীন হয়ে বাজে যা তাই বেহালা বা ভায়োলিন।
শুম্ভ ও নিশুম্ভের কাছে খবর গেল – এক এলোকেশী অসামান্যা রূপসী নারী পর্বত শৃঙ্গে বসে অশ্রুতপূর্ব সুরের মূর্চ্ছনা তৈরী করছেন। অসুর ভাইদের অমাত্যরা শুনে বললেন এই নারী আপনাদের রাণী হবার যোগ্য।
দুই ভাই রওনা দিল। শৃঙ্গে পৌঁছে বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ার আগেই মহামায়ার রূপ ও বাহুলীন সৃষ্ট সুরে সম্মোহিত হয়ে পড়ল দুজন। এই সুযোগে মহামায়া বধ করলেন দুই দোর্দণ্ডপ্রতাপ অসুর বীরদের।
পরবর্তী কালে বাংলা ১২৮১ সনে প্রকাশিত বঙ্গ সংগীত বিদ্যালয় এর ত্রীতন্ত্রী শ্রেণীর শিক্ষক শ্রী কালীপদ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘ বাহুলীন তত্ত্ব ‘বইতে এই তথ্যের উল্লেখ পাওয়া গেছে।
নীচে আদি ভায়োলিন, হয়গ্রীব অবতার ও পুস্তকের ছবি দিলাম।
** কাহিনীসূত্র: দেবী ভাগবত ও আমার সঙ্গীত শিক্ষক শ্রী অমিতাভ ঘোষ ।
চিত্র সূত্র: গুগল।
******************************
মণি ফকিরের জন্ম শিল্পনগরী বার্ণপুরে। সাহিত্য চর্চার অভ্যাস ছাত্র জীবন থেকেই। অনুপ্রেরণা মা ও মামার কাছ থেকে। প্রথম কবিতার বই *মণি ফকিরের পদাবলী* প্রকাশিত হয় ২০১৮ পূজোয়। গল্পকারের মূল বৈশিষ্ট্য তার গল্প বোনার ও বলার সাবলীল ধরন। গল্পের শেষে কিছু না বলা কথার প্রচ্ছন্ন ঈঙ্গিত মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে।।