লড়াইয়ের নাম দুর্গা
শাশ্বতী হোসেন
স্বাধীনতা মানে বুঝিস বাউরির পো?
পাখির পারহা উড়হা আর উড়হা –
ড্যানা খুল্যে নীল আকাশে পতপতায়ঁ উড়হে চরহা
অ্যতদিন আমার জইন্যে বসে আছিস
আর একটঅ বছর…
আইসছে বছর শারহুল ফোটার আগুতেই
আমদের বিহা।
দেশ্যে যুদ্ধ চইলছে
মহিলা রেজিমেন্ট ক্যাম্পে ট্রেনিং পুরোদমহে চইলছে।
ট্রেনিং শেষ হল্যে যুদ্ধে যাবঅ
শত্রুদের ষড়যন্ত্রের টিলহাগুলা ধুলার পারহা উড়াইন দিবঅ
একটঅ খুশির খবর শুন,মহিলা শাখার এলিট কমান্ডোর পোস্ট পায়েঁছি।
কত স্যালুট পাই জানিস?
কেনে পাবঅ নাই বল?
হামি যে সে মিয়া নকি? আমার নাম দুর্গা শবর
বাপের নাম জগনা শবর।
ছুটবেলা থাক্যে আমার রাজমিস্তিরি বাপ
হামার ভিত্রে খাদানের গাড়হার পারহা
সাম করায়ঁ দিছে–তুই বড় হয়্যে সৈনিক হবি।
দেশের লাগ্যে লড়াই করবি।
তার জইন্য ইখন থাক্যে হাঁড়ি-পাতিল খেলা বন্ধ কইরতে হবেক।
আমার দুনিয়াটঅ দমহে ছুটঅ রে দুগ্গা
তকে লিয়ে একটঅ স্বপন দেখে আস্যেছি
ই মাটি ই দেশের শত্রুর সঙ্ঘে লড়াই কর্যে বাঁচতে হবেক।
তর বাপের কিরা—
আমি জগনা শবরের বিটি দুর্গা শবর
বাপের কিরা শুইধতে হাতে লিয়েছে ফায়ার আর্মস
শরীরে জলপাই পোশাক।
আমার লাউডগের পারহা শরীর ইখন কালহ পাথরের খুদাই পারহা –
মজার কথাটঅ কি জানিস–
তরা আসলে ভাবতেই পারিস না
মিয়ারাও যুদ্ধবেশ পইরতে পারে
জনমভূমির দরদ বুইঝতে পারে
ভালঅ কাজে দেশ-দুনিয়া হিল্যাইন দিত্যে পারে
আমদের দেশ মা বহুৎ অত্যাচার সহে সহে
কঁকার পারহা–কে শুইনবেক উয়ার দুখ?
বাঙ্কের উঁচা মাচায় দাঁড়ায় তর দুর্গা
ইখন আকাশের তাজা চাঁদট–টুকু আকাশকে ভাল্যে দেখ বাউরির পো।
তর গোপন গল্ফগুলা আমার বুকে লুকায়ঁ রাখ্যেছি
আর একট বছর ওয়েট কর
বাপকে বলে রাখ–
শারহুল ফোটার আগুতেই আমদের বিহা।
অ আমার টাঁড়-ঝুমুরের সুর
সনাঝুড়ি গলায় গানের কলি কেনে নিঝুম?
তর ছাতিতে মাদল কেনে বাজে না আর?
কেনে আমার কেশ-কুসুমে কেয়া ফুল বাসায় না?
অ জগনা শবরার বিটি?
দুর্গা শবরার চখের কণায়
শাওনের জল কেনে বাউরির পো?
বল তর দুর্গা কেনে কাঁদে আশিন পরবে?
***************************************
শাশ্বতী হোসেন পরিচিতি:
জন্ম-১৯৬৪। হবি-লেখা। বিভিন্ন বাণিজ্যিক, (দেশ তথ্যকেন্দ্র) ওয়েব ম্যাগ, প্রচুর পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশিত। জঙ্গলমহলের আঞ্চলিক মানুষের জীবনচর্চা ওদের মুখের ভাষা নিয়ে কবিতার চর্চা।
সেলাম দূর্গা 🙏