পথ চিনে এদেশে চিনের প্রথম বসতি আছিপুরে
সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়
“The main purpose of the horseshoe-shaped or, more frequently, omega-shaped ridge surrounding the tomb is to substitute for a range of hills ridge which, according to the principles of feng shui, needs to protect the grave from the “noxious winds” from the three sides – the situation that is rarely naturally obtainable.” কথাগুলো লিখেছিলেন প্রখ্যাত চীনতত্ত্ববিদ জাঁ জ্যাকব মারিয়া দে গ্রুট (Jan Jakob Maria De Groot)। তাঁর ‘The Religious System of China’ গ্রন্থে। জীবনে অনেক সমাধিক্ষেত্রে গিয়েছি। চন্দননগরে ফরাসীদের কবরখানা দেখেছি। চুঁচুড়ায় ডাচদের কবরখানা দেখেছি। কলকাতায় সাউথ পার্ক স্ট্রিট কবরখানাতেও উঁকি দিয়েছি। নানান স্থাপত্যের স্মৃতিসৌধ দেখেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত চিন ভ্রমণে না যাওয়ায় সেখানকার অশ্বক্ষুরাকৃতি বা ওই জাতীয় সমাধি দেখার সুযোগ হয়নি। শুনেছি কলকাতার ছটি সমাধিক্ষেত্রে অশ্বক্ষুরাকৃতি সমাধি আছে। তার হদিশও পাইনি। অবশেষে এমন সমাধির দেখা মিলল। কলকাতার কাছেই দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বজবজের আছিপুরে হুগলি নদীর তীরে। সত্যিই ঘোড়ার ক্ষুরের মতো দেখতে সিমেন্টে বাঁধানো এক সমাধি। টকটকে লাল রঙ তার। গায়ে খোদিত কয়েক ছত্র চিনা লিপি। চিনা নববর্ষের সময়টুকু বাদে বছরের বাকি দিনগুলোয় নদীর অপরূপ চিত্রময়তা ও কলধ্বনিকে সঙ্গী করে এক অখন্ড নির্জনতায় ভরে থাকে এই সমাধিস্থল। ইতিহাস বলছে, এই সমাধি এক চৈনিকের। তিনি ছিলেন চিনের ক্যান্টন (বর্তমান গুয়াংডং) প্রদেশের (মতান্তরে ফুজিয়ান প্রদেশের) নাগরিক। নাম তাঁর ইয়াং তাই চাউ (Yang Tai Chow)। লোকের মুখে মুখে সে নাম বদলে হয় টং আছু (Tong Atchew)। তিনি বাংলায় তথা ভারতে প্রথম চিনা বসতি স্থাপনের কৃতিত্বের দাবিদার।
সে আজ থেকে প্রায় আড়াইশো বছর আগের কথা। বাংলার গভর্নর তখন ওয়ারেন হেস্টিংস। রমরমিয়ে চলছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে চিনের ব্যবসা। রপ্তানি হওয়া প্রধান পণ্য আফিম। চিন থেকেও জাহাজ ভর্তি করে আসছে সেখানকার চা, রেশম ও চিনামাটির বাসনপত্র। টং আছু ছিলেন একজন চা ব্যবসায়ী। ১৭৭৮ সালের কোনো একদিন তাঁর বাণিজ্যতরী এসে ভিড়েছিল কলকাতার ঘাটে। কিন্তু এদেশের মাটিতে পা রাখার কিছুদিনের মধ্যেই আছু ঠিক করেন চায়ের ব্যবসা ছেড়ে এখানে একটা চিনিকল বসাবেন। সেই উদ্দেশ্যে তিনি ওয়ারেন হেস্টিংসের কাছে দরখাস্ত পেশ করে কারখানা স্থাপনের জন্য জমি ও অনুমতি চাইলেন। জনশ্রুতি, চিন থেকে আছুর আনা চা পান করে হেস্টিংস সাহেব এতটাই মুগ্ধ হন যে তিনি সত্বর তাঁর আবেদন মঞ্জুর করেন। বজবজের ছ’মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে হুগলি নদীর তীরবর্তী ৬৫০ বিঘা ফসলি জমি তাঁকে দান করেন। এদিকে সেইসময় তখন বর্ধমানের মহারানী বিষণকুমারী দেওয়ান রূপনারায়ণ চৌধুরীর সহায়তায় তাঁর নাবালক পুত্র তেজচন্দ্রের অভিভাবিকারূপে রাজকার্য চালাচ্ছেন। আছুকে জমি দানের খবর কানে যেতেই আপত্তি জানিয়ে মহারানী দাবি করলেন – এ জমি বর্ধমান-রাজের। বাধ্য হয়ে হেস্টিংস তখন আছুর জন্য বার্ষিক ৪৫ টাকা খাজনা ধার্য করে দিলেন। আছু অবশ্য তাতে সানন্দেই রাজি হয়ে গেলেন। আসলে চিনা বিনিয়োগ টানতে এবং কোম্পানি-চিন মৈত্রী দৃঢ় করতেই হেস্টিংস আছুর আরজি মেনেছিলেন বলে মনে হয়।
জমি হস্তগত হওয়ার পর স্থানীয় চাষীদের দিয়ে আছু সেখানে চাষবাস করতে শুরু করেন।আখ চাষের পাশাপাশি নীল চাষও তিনি করেন বলে জানা যায়। তারপর তিনি এখানে চিনা কায়দায় চিনি তৈরির একটি কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেন। সেই লক্ষ্যে তিনি একবার স্বদেশে যান। সেখান থেকে চিনিকল চালানোয় পারদর্শী ১১০ জন চিনা শ্রমিক সংগ্রহ করে আবার ফিরে আসেন এদেশে। শ্রমিকদের সাথে তিনি শর্ত করে নিয়েছিলেন নির্দিষ্টকাল তাঁর কাছে থেকে হুকুমমতো কাজ করতে হবে। এভাবে চিনিকল প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে এখানে গড়ে ওঠে এক ছোটোখাটো চিনা উপনিবেশ। প্রতিষ্ঠাতা টং আছুর নামে কালক্রমে তার নাম হয় আছিপুর।
কিন্তু বিত্তশালী কৃষক ও চিনিকলের মালিক হিসেবে প্রভাব-প্রতিপত্তি একটু বাড়তে না বাড়তেই আছু এক সমস্যায় পড়েন। আছুর দেখাদেখি দু’তিন বছরের মধ্যে অনেক চিনা অভিযাত্রীই পসারের আশায় হরেক রকম ব্যবসা ফেঁদে কলকাতায় জাঁকিয়ে বসেছিলেন। তাঁরা বেশি বেতনের লোভ দেখিয়ে আছুর কারখানার শ্রমিকদের ভাঙিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। উপায়ন্তর না দেখে বিপন্ন আছু ১৭৮১ সালের ২৯ অক্টোবর সপারিষদ গভর্নর জেনারেল-এর কাছে চিঠি দিয়ে সমস্যাটি জানান। চিঠিতে তিনি স্পষ্টত লেখেন, “আমার অভিযোগের লক্ষ্য কলকাতার চিনা সমাজ। এইসব চিনারা জাহাজ-পলাতক, জীবিকাহীন ও ভবঘুরে। তারা নানাভাবে আমার কাজে বাধা দিচ্ছে। আমার শ্রমিকদের প্রলোভন দেখিয়ে কাজ ছেড়ে দিতে প্ররোচিত করছে। যে শ্রমিকদের আমি অনেক কষ্টে অনেক দূর থেকে অনেক অর্থ ব্যয় করে জোগাড় করে এনেছি। এমতাবস্থায় আপনাদের সহযোগিতা না পেলে ব্যবসা রক্ষা করা আমার পক্ষে আর সম্ভব হবেনা।” এই চিঠি পাওয়ার দিন কয়েকের মধ্যেই ৫ নভেম্বর গভর্নর জেনারেল ও তাঁর পরিষদের পক্ষ থেকে কলকাতায় এক হুকুমনামা জারি হল। তার মোদ্দা কথাটি হল – কোম্পানি সবরকম সাহায্য দিয়ে আছুকে তাঁর স্থাপিত চিনা উপনগরীটির উন্নয়নের জন্য উৎসাহ দিতে চান। তাই কেউ যদি আছুর অধীন শ্রমিকদের আশ্রয় দান করে, কিম্বা সেই শ্রমিকদের কোনো কাজে নিযুক্ত করে, তবে তাদের যথাযোগ্য শাস্তি দেওয়া হবে।
কোম্পানির নির্দেশে হয়তো কাজ হয়েছিল। তবে ততদিনে অনেক শ্রমিকই তাঁর কারখানা ছেড়ে চলে গেছেন। ভগ্নহৃদয় আছু মারা যান খুব সম্ভবত ১৭৮৩ সালে। আছু অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তাঁকে সেবা করেছেন ‘তেলি বিবি’ নামে এক মুসলিম মহিলা। তবে অনেকে বলেন, আছু ওনাকে বিয়ে করেছিলেন। ১৮০৪ সালের ১৫ নভেম্বর ‘ক্যালকাটা গেজেট’-এ প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপন থেকে জানা যায় আছুর সম্পত্তি নিলামে উঠেছে। ঘরবাড়ি, জমি, এমনকি তাঁর সাধের চিনির কলটি পর্যন্ত। এখন আছিপুরে সেসবের চিহ্নমাত্র নেই। নেই একজন চিনা মানুষও। আছুর মৃত্যুর পর একে একে তাঁর চিনিকলের সব কর্মচারীই রুজি রোজগারের টানে সপরিবারে কলকাতার টেরিটিবাজার অঞ্চলে চলে যান। আছুর আসল সমাধিটিও নেই। নদী গ্রাস করেছে তাকে। লেখার শুরুতে যে অশ্বক্ষুরাকৃতি সমাধির উল্লেখ করেছি, তা আসল সমাধির অনুকরণে তৈরি। তবে সেই সমাধির অনতিদূরে আজও বর্তমান আছুর প্রতিষ্ঠিত মন্দির। জায়গাটির নাম ‘চিনাম্যানতলা’। প্রথমবার চিন থেকে বাণিজ্যসফরে আসার সময় আছু সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন সোনার তৈরি দুটি দেবদেবীর মূর্তি। ১৭৮১ সালে এই মন্দির গড়ে আছু মূর্তি দুটি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি নাকি এক ‘স্বপ্নাদেশ’ পেয়ে মূর্তি দুটিকে নদীতে ভাসিয়ে দেন। পরিবর্তে চন্দন কাঠের দুটি মূর্তি বসান। লাল ও হলুদ রঙের পাঁচিল দিয়ে ঘেরা মন্দিরের প্রধান দরজার ওপর ফলকে লেখা- ‘God And Goddess Of Earth’। চিনা ভাষায় এই দুই দেবদেবীর নাম-‘পাকুম-পাহ্’ বা ‘থুটি কুং-থুটি ফো’। কিন্তু স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দারা তাদের নাম দিয়েছেন-‘খুদা-খুদি’। মন্দিরটি নির্মাণকালে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য প্রায় এই এলাকা অবধি বিস্তৃত ছিল। এখানকার যেসব মানুষ তখন জঙ্গলে কাঠ বা মধু সংগ্রহ করতে বা নদীতে মাছ ধরতে যেত, তারা সেসব কাজে বেরোনোর আগে ‘দক্ষিণ রায়’-এর পুজো দিত। দক্ষিণ রায় সুন্দরবন অঞ্চলে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে পূজিত এক লোকদেবতা, যাকে ‘বাঘের রাজা’ মনে করা হয়। তাকে পুজো করলে বাঘের হাত থেকে বাঁচা যাবে, এমনটাই বিশ্বাস। বিশাল মন্দির-প্রাঙ্গনে আছু একটি ছোটো চারকোণা দক্ষিণ রায়ের মন্দিরও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই মন্দিরের ভিতরে এখন কোনো মূর্তি নেই। ঘট পুজো হয়। সামনে মূল মন্দির। তার গর্ভগৃহ আয়তনে ছোটো হলেও পরিপাটি করে সাজানো। আসনে আসীন ‘খুদা-খুদি’। গর্ভগৃহের সামনে কক্ষে প্রার্থনাকক্ষ। সারা বছর এমনিতে ফাঁকা থাকলেও চিনা নববর্ষের সময় এই মন্দির-প্রাঙ্গনে তিল ধারণের জায়গা থাকেনা। কলকাতার টেরিটিবাজার ও ট্যাংরার ‘চায়না টাউন’ থেকে তো বটেই, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং বিদেশ থেকেও চিনারা আসেন সেই সময়। মন্দিরের বাইরে সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। টানা পনেরো দিন ধরে উৎসব চলে। প্রার্থনা কক্ষকে সাজিয়ে তোলা হয় রঙিন কাগজের লন্ঠন দিয়ে। ফুল দিয়ে সাজানো বড় বড় চিনামাটির ফুলদানি রাখা হয় লম্বা একটি টেবিলে। সেই টেবিলে দেবতার উদ্দেশে ভোগের ডালি সাজানো হয় নানারকম ফল, কেক, বিস্কুট, চকোলেট, চা, ঝলসানো শুয়োর, মুরগি, মাছ ও মদের বোতল দিয়ে। লম্বা লম্বা চিনা মোমবাতি ও ধূপকাঠি জ্বালিয়ে এবং প্রার্থনাকক্ষের ছাদ থেকে ঝোলানো একটি পেতলের ঘন্টা ও একটি ছোটো লাল রঙের ড্রাম বাজিয়ে দর্শনার্থীরা পূজো দেন। বাঁ দিকের একটি ঘরে আছে কনফুসিয়াসের বাঁধানো ছবি। ভোগ নিবেদন করা হয় তাঁর উদ্দেশেও। আর একটি ঘরে হাতে তৈরি বিশেষ আকৃতির কাগজের খাম, পুরোনো খবরের কাগজ ইত্যাদি আগুনে পোড়ানো হতে থাকে। ‘অশুভ শক্তি’-কে তাড়িয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতেই নাকি এই বিশেষ আচার পালন করা হয়। চিনাদের বিশ্বাস, পাকুম-পাহ্ ‘ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতাসম্পন্ন গণক-দেবতা’। তাই উৎসবের সময় প্রার্থনাকক্ষে চৈনিক পদ্ধতিতে তেমন গণনার আয়োজনও করা হয়ে থাকে। মন্দিরে পূজো সেরে সবাই যান আছুর বর্তমান সমাধিস্থলে। সেখানেও মোম-ধূপ জ্বালিয়ে, কাগজ পুড়িয়ে, ফলমূল নিবেদন করে তাঁরা শ্রদ্ধা জানান আছুকে। আছুকে তাঁরা ‘পিতামহ’ বলে মানেন। তবে উৎসবের জাঁকজমক এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। আগে এখানে ‘ড্রাগন ডান্স’, ‘লায়ন ডান্স’ – এসবও হত। এখন আর হয়না। লোকের ভিড়ও তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়। একথা জানিয়েছিলেন মন্দিরের দেখভালের দায়িত্বে থাকা শেখ ফারুকুল হক। তাঁরা ছয় পুরুষ ধরে এই কাজ করে আসছেন। তবে মন্দির ও আছুর সমাধিক্ষেত্রের সংস্কারাদি সহ সামগ্রিক তত্ত্বাবধান এখন করছে কলকাতার ‘ব্ল্যাক বার্ন লেন’-এর ‘জি হিং চার্চ অ্যান্ড ক্লাব’। তাঁদের একটি কথা জানানো প্রয়োজন মনে করি। মন্দির দর্শন করতে গিয়ে দেখেছি প্রধান দরজা ছাড়াও মন্দিরে প্রবেশের আরো একটি দরজা আছে। সেই দরজার ওপরে সম্ভবত ভুল করেই মন্দির প্রতিষ্ঠার সময়কাল লেখা হয়েছে – ১৭১৮। ওটা সংশোধন করে ১৭৮১ করে দিতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ
(১) কলকাতা – শ্রীপান্থ
(২) The Chinese in Calcutta: A Study on Settlement and Demographical Patterns – Arpita Bose
(৩) The legend of Tong Atchew, the ‘first ancestor of the Chinese in India’ – Ipsita Chakravarty
***********************************************************
সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচিতিঃ
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘দর্শন’-এ স্নাতকোত্তর সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত একজন লেখিকা,সংগীতশিল্পী এবং বিজ্ঞান ও মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী। ‘কালান্তর’,‘সুস্বাস্থ্য’ ‘উৎস মানুষ’,‘টপ কোয়ার্ক’,‘যুক্তিবাদী’, ‘এখন বিসংবাদ’,‘মানব জমিন’,‘আবাদভূমি’,‘সাহিত্য সমাজ’,‘সারথি’,‘অভিক্ষেপ’ ইত্যাদি বেশ কিছু পত্রিকা ও সংবাদপত্রে তাঁর লেখা গল্প, কবিতা, নিবন্ধ ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। একসময় তিনি ছিলেন ‘আজকাল’ পত্রিকার নিয়মিত পত্রলেখিকা। ২০০৩-এ ‘ভারতের মানবতাবাদী সমিতি’-র উদ্যোগে তাঁর সম্পাদনায় ‘র্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন’ প্রকাশন থেকে ড. পবিত্র সরকারের ভূমিকা সহ প্রকাশিত হয়েছে ‘ছোটোদের কুসংস্কার বিরোধী গল্প’-র দুটি খন্ড। তাঁর লেখা ‘ইতিহাসের আলোকে মরণোত্তর দেহদান–আন্দোলন ও উত্তরণ’ বইটি বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। দূরদর্শনে ‘মরণোত্তর দেহদান’ নিয়ে সম্প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্যও রেখেছেন। সম্প্রতি চলচ্চিত্রাভিনেত্রী ও সঙ্গীতশিল্পী কানন দেবীর জীবন নিয়ে তাঁর একটি গবেষণামূলক কাজ ‘ফেসবুক’-এ তাঁর টাইমলাইনে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রসংগীতে তিনি ‘সংগীত প্রভাকর’ ও ‘সংগীত বিভাকর’। দীর্ঘদিন শাস্ত্রীয় সংগীতেও তালিম নিয়েছেন। শৈশব ও কৈশোরে বেতারে ‘শিশুমহল’,‘গল্পদাদুর আসর’ ও ‘কিশলয়’-এর অনুষ্ঠানে বহুবার গান গেয়েছেন। পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রতিটি জেলায় ও এই রাজ্যের বাইরেও মঞ্চানুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত,পল্লীগীতি ও গণসংগীত ছাড়াও তাঁর ভাই রাজেশ দত্তর কথায়-সুরে ‘মানবতার গান’ পরিবেশন করেছেন। ২০০৬-এ রাজেশের কথায়-সুরে তাঁর গাওয়া ‘পাল্টা স্রোতের গান’ অডিও ক্যাসেট ও সিডি আকারে প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রজীবনে বেশ কয়েকটি নাটক ও শ্রুতিনাটকে অভিনয় করেছেন। পরবর্তীতে চন্দননগরের ‘কোরক’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাট্যাভিনয় করেছেন। আবৃত্তি,সংগীত ও কয়েকটি ‘রিয়্যালিটি শো’-এ বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কৈশোরে খেলাধূলার জগতেও তিনি বিচরণ করেছেন। স্কুলে ইন্টারক্লাস ‘কবাডি’ খেলায় নিজের ক্লাসের টীমে তিনি ‘ক্যাপ্টেন’-এর দায়িত্ব পালন করেছেন। চন্দননগরের ‘চিত্তরঞ্জন ব্যায়ামাগার’-এ তিনি ‘জিমনাস্টিকস্’,বিশেষত ‘তারের খেলা’-র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ব্রতচারী নাচের প্রশিক্ষণ শেষে শংসাপত্র-ও অর্জন করেছেন। এখন গৃহকর্মের ফাঁকে ও অবসরে লেখালেখি ও গানের চর্চা ছাড়াও আঁকতে ও ছবি তুলতে ভালোবাসেন। কিন্তু তাঁর নিজের সবচেয়ে প্রিয় বিষয় ’ভ্রমণ’।