বাজি
ব ন্দ না মি ত্র
সমুদ্রের তীর থেকে একটু ভেতরে সরু জেলে ডিঙিটা ঢেউএর তালে ব্যালান্স করছিল বলাই,শক্ত তামাটে পেশিবদ্ধ দুই হাতে বৈঠা ফেলছিল স্রোতের ওঠা পড়া বুঝে। গা চিট চিট করছে নোনা ঘামে,সুয্যি মাথায় উঠেছে দু প্রহর হল, এখনও তেমন মাছ পড়ে নি আজ। এই সময় অন্যদিন ঝাঁক বেঁধে রূপচাঁদা,লইট্যা,ম্যাকারেল,সার্ডিন,করাতি,চিংড়ি, এমনকি ইলিশও জালে উঠে পড়ে,আজ পূর্ণিমা,জোয়ারের হেতু জল বেড়েছে-মাছ মোটেই আসছে না ধারে কাছে। এমন চললে ও আজ নিজেই বা কি নেবে আর ওর সাকরেদ শম্ভুকেই বা কি দেবে! সেই সকাল থেকে ওর সঙ্গে রয়েছে ছেলেটা, খাই খরচ বলেও তো দশ বিশ টাকার মাছ হাতে তুলে দিতে হবে! মেজাজ ভাল নেই বলাইএর। কোমর হাতড়ে বিড়ির প্যাকেটটা বের করল – যাঃ শালা, মাত্র একটা বিড়ি পড়ে আছে! সামনে একটা সাদা পাল খাটানো বড় নৌকা ভাসছে, পালের ডগায় একটা মাছরাঙা। বলাই হাঁক দেয়,” শম্ভু, বল তো পাখিটা কোন দিকে বাঁক নেবে? বলতে পারলে শেষ বিড়িটা তোর ৷” শম্ভু একবার হাওয়ার গতি দেখে নিয়ে বলে-“ডানদিক”। সঙ্গে সঙ্গে ওকে ভুল প্রমাণ করে মাছরাঙা বাঁ দিকে এক গোঁত্তা খেয়ে ডানা মেলে। বলাই এতক্ষণে গলা খুলে হো হো হেসে শম্ভুকে বলে-“আগুনটা দে এদিকে।” শম্ভু দেশলাইটা ছুঁড়ে দিয়ে বিড় বিড় করে-“শালা বেইমান পাখি!” বলাইএর মেজাজটা জুতের হয় একটু। বিড়িটা নিয়ে এত রঙ্গ করার দায় ছিল না কোন, সোজাসুজি টানাই যেত। কিন্তু একটু অনিশ্চিত ছোঁয়া লাগিয়ে নিলে উত্তেজনায় টান টান এ বিড়ির স্বাদই আলাদা। বলাইএর জুয়াড়ির রক্তে ফুঁসে ওঠা তুফান ঠান্ডা হয় যেন। এই এক নেশা ওর, চলতে ফিরতে জুয়া খেলা চাই, যত সাধারণ বিষয় হোক না কেন, বাজি ধরে না জিতলে ওর যেন ঠিক শান্তি হয় না। এমনকি বউ কুন্তীকেও এ বিষয়ে বেশ ট্রেনিং দিয়ে পোক্ত করে তুলেছে। গতবছর বিয়ের একবছর ঘুরলে রাতে কুন্তীর সামনে দু হাত মুঠো করে ধরে তুলে বলেছিল,“বেছে নাও টক্কা না ফক্কা! টক্কা নিলে নাকফুল,ফক্কা নিলে ফুসস।” কুন্তী হাতে পায়ে ধরতে বাকি রেখেছিল সোজা সাপটা গয়নাটা দিয়ে দেওয়ার জন্য। ও ভালই জানে, বাজি ধরলে কথার নড়চড় হয় না বলাইএর,যদি শূন্য মুঠো বেছে নেয়,ওই নাকফুল সটান দোকানে ফেরত চলে যাবে। কিন্তু যতই কাকুতি মিনতি করুক না কেন,বলাই ওকে খেলিয়ে ছেড়েছিল ৷ যখন কুন্তি ওর চেনা জানা যত দেবতা আছে সকলের পায়ে মাথা খুঁড়ে একটা বন্ধ মুঠোয় আঙুল ঠেকিয়েছিল,ওর বুকে ধড়াম ধড়াম ঢেঁকির পাড় পড়ছে। কি ভাগ্যিস,সেই মুঠোতেই নাকফুল ছিল,আনন্দে কেঁদে ফেলেছিল কুন্তি। বলাই মুচকি হেসে বলেছিল,”দেখ,যদি সাদামাটা দিয়ে দিতাম ফুলটা এতক্ষণে সাত খুঁত বের করতিস,এত খুশি পেতিস কি! “কুন্তি এবারে রাগে অভিমানে কেঁদেছিল। তবে মনে মনে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল,ফুলটা এখন আর বলাইএর মর্জির দান নয়,রীতিমত জিতে নেওয়া,ওর হকের ধন। কুন্তিও শোধ নেয় বইকি! বিশেষ বিশেষ দিনে হ্যারিকেন নিভিয়ে ঝুম অন্ধকার ঘরে পায়ে পায়ে ঢুকে বলাইএর চোখ টিপে বলে,”কি রঙের শাড়ি পরেছি বলো,লাল না নীল?” আশায় আশায় থাকা বলাই জানে সঠিক রঙ বলতে না পারলে আজ রাতে আর কুন্তিকে পেতে হচ্ছে না ! ওকেও চোখ বুঁজে জুয়ার দানই দিতে হত। জিতে গেলে সে রাতে কুন্তিকে পরস্ত্রী মনে হত যেন,সে উত্তেজনার স্বাদই আলাদা! তবে হেরে গিয়ে নিরাশ হয়ে একা কাটাতে হয়েছে রাত,তেমনও হয়েছে। খেলার নিয়ম খুব কড়া,কারোকে কোন রেহাত নেই।
এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ওর অভ্যস্ত চোখ দেখতে লাগল জলের নীচে কোন কালো ছায়া সমুদ্র নীল থেকে আলাদা করে দেখা যায় কিনা,কোন বড় মাছের ঝাঁক। মনে মনে ভাবল যদি আজ একটা বড় মাছের ঝাঁক পায়,ব্লু হোয়েল বারে দুটো বিলিতি খাবে,না পেলে বটতলার ঠেকে দিশি।
ভরাবর্ষার এই দু তিন মাসেই যা মোটা রোজগার করে নিতে হয় বলাইকে,তারপর অন্যসময় এটা ওটা করে যা হয়। এখন সমুদ্রের পাঁচশ মিটারের মধ্যেই সারি সারি হোটেল। ট্যুরিস্টের ভিড় লেগেই থাকে বছরভোর। ওদের ডিঙি নৌকায় তুলে একটু সাগরের জলে ভাসিয়ে আনা,আধ ঘন্টার রেট,শাঁখ,ঝিনুক গছিয়ে দেওয়া,মাঝ বয়েসি মাসিমাদের কোমর জলে হাত ধরে স্নান করানো-এই সব করেও আসে কিছু মিছু। তারপর এখন সারা বছর টুকটাক হোটেল,হোম স্টে,রেস্ট্যুরেন্ট,ইঁট গেঁথে ইমারত তোলার কাজ হয়েই চলেছে। খুব লাভ জনক ব্যবসা। গাড়ি নিয়ে কলকাতা থেকে চার ঘন্টার মামলা, সিজনের সময় দেড়া, দুগুণ দামে সব ঘর বুক হয়ে যায়। বলাই এইসব কাজেও লেগে থাকে, জোগাড়ে বলো জোগাড়ে,আবার সস্তার হোটেলের ওয়েটার বা সুইপার বলো তাই সই, দরকারে বউ এসে রান্নার কাজে হাত লাগায়,ঝাড়া মোছা করে,ফুড়নের কাজ। বকশিসও পায়। সব মিলিয়ে বছরে একটা নাকফুল বা পায়ের চুটকি বউকে গড়িয়ে দিয়ে পারে। বলাই এখানে জন্মে বড় হয়েছে, দিন দিন যেন বদলে যাচ্ছে জায়গাটা। আগে নিবিড় ঝাউবন ছিল সমুদ্রের তট বরাবর, ফাঁকা বালুর সৈকত বিছিয়ে থাকত মাইলের পর মাইল। হু হু সমুদ্রের হাওয়া শিস কেটে যেত সারাদিন,নৌকো যেন নোঙর বাঁধা থাকতেই চাইত না। তখন ক্বচিৎ কদাচিৎ এক আধটা হোটেল,দোকানপাট হাতে গোনা,খাওয়ার জায়গাও নেই বললেই চলে। লোকের রোজগারই বা কি ছিল! বলাই ছোটবেলায় যেদিন মাছ খেতে পেত সেদিন মনে হত পরব লেগে গেছে। অথচ ওর বাবাও তো মাছমারাই ছিল,মাছ ধরেই কাটত দিন। একটু মাথাচাড়া দিতে না দিতেই ও নিজেও তো সঙ্গী হত বাবার, হেল্পারের পয়সাটা বাঁচত। কিন্তু একটা মাছেও হাত দেবার হুকুম ছিল না, ও সব বিক্রির মাছ। এখন অন্তত খেয়ে পড়ে বাঁচছে।
বলাইএর বাবা সবসময় ঘুনঘুন করছে। আশির ওপর বয়স,শরীর বেঁকে গেছে, কোমর পড়ে গেছে,এক জায়গায় বসে সমানে চাল,ছোলা,মুড়ি,মটর কটর কটর চিবিয়ে যায়, আর বিড় বিড় করে চলে। নিজে চলতে পারে না,খেতে পারে না,দেখতে পায় না ভাল–তাই সকলের ওপর তার রাগ,বিজ বিজ বকে যায়-“সমুদ্দুর দেবতাকে পাথরে শেকলে আস্টেপৃস্টে বেঁধেছে, সহ্যি হবে? যেদিন ঢেউ উঠবে,সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। ঝাউগাছগুলো সব কেটে কেটে শেষ করে ফেলল,ঝড় হবে। ঝঞ্ঝায় রুখবে কে! ওরাই তো এ তল্লাটের পাহারাদার, আমাদের সেই বাপ পিতেমোর কাল থেকে আগলে আসছে। যেদিন প্রেলয় আসবে,তোদের ঐ সাতমহলা হোটেলগুলো হুড়মুড় ভেঙে পড়বে,সাথে সাথে আমরাও মরবো ৷” বলাইএর মা বছরদুয়েক দেহ রেখেছে,তাই বুড়োর প্রলাপ শোনার লোকের অভাব বড়। বলাই ভোরবেলা পাঁজাকোলা করে তুলে সকালের নিত্যকাজগুলো করিয়ে নিজের ধান্দায় বেরিয়ে যায়। তারপর সারাদিন ঐ মাটির কলসি ভরসা। ঘরে ঢোকা যায় না দুর্গন্ধে। ছেলের বউ খাবারের থালাটা কোনমতে ঠেলে দিয়ে ওয়াক ওয়াক করতে পালিয়ে যায়। বুড়ো নোংরা মাদুরে কাঁথায় পড়ে পড়ে ভাবে, “দিন কারো সমান যায় না রে,তোরও সময় আসবে,সুদে আসলে শোধ দিতে হবে এই হতচ্ছেদার ৷” বলাই যত রাতেই , যত নেশা করেই ঘরে ফিরুক,ঠিক পরিস্কার ঝরিস্কার করে শুকনো কাপড় পরিয়ে কাঁথা বদলে দেয়। বুড়ো তখন সারাদিনের জমানো অভিযোগ ছেলের কাছে উপুড় করে। বলাই হাসতে হাসতে বলে,“বাপ,তোমার যে লাতি হবে গো,আর পাঁচটা মাস একটু সবুর করতে হবে। এখন আশাকর্মী দিদিরা বলে গেছে বৌকে দিয়ে ভারি কাজ করানো যাবে না। ওকে সাবধানে রাখতে হবে।“
“লাতি না লাতিন ?” কড়া তামাক বহুদিন ধরে খাওয়ার ফলে বোঁজা খ্যাসখ্যাসে গলায় খুশি আর উত্তেজনা উপচে বুড়োর।
ছেলে হবে কি মেয়ে কে জানে! কুন্তী বলে “মেয়ে,বেশ কুট কুট হাতে পায়ে সঙ্গে সঙ্গে থাকবে,রঙিন ফিতে চাইবে,গিলটি করা দুল চাইবে,পুতুল চাইবে,একটু হাত নুড়কুত হলে চাল ধুয়ে দেবে, মাছে নুন হলুদ মাখিয়ে রাখবে।” বলাই ভাবে,একটা ছেলে হলে বেশ হয়। নিজের হাতে দাঁড় বাইতে শেখাবে,জাল ফেলতে শেখাবে,মাছ চেনাবে,সমুদ্রের স্রোতের রঙ, বাঁক, ঢেউএর ভাষা, রাতে নক্ষত্র দেখে দিক চিনে নৌকোর গলুই সামলানো – যেসব বিদ্যে এত কষ্ট করে , রুয়ে ধুয়ে নিজে শিখেছে এই এতগুলো বছর ধরে সব এক এক করে শিখিয়ে যাবে নিজের উত্তরাধিকারীকে। কিন্তু–ছেলে না মেয়ে! বলাই বলে,”লাতি হলে তোমাদিগের সকলকে নিয়ে প্রভু জগন্নাথের পায়ে পূজো চড়িয়ে আসব। আর নাতনি হলে তোর মায়ের সোনা বাঁধানো চারগাছা চুড়ি দিয়ে মুখ দেখব আমি”–বলাইকে অবাক করে দিয়ে বুড়ো বলে ওঠে। “তোর মা বলেছিল ছেলের ঘরে ফিরে আসবে সে, ঐ চুড়ি কটা আমার কাছে গচ্ছিত রেখে গেছে। “বাহ,বেশ নতুন ধরনের বাজি তো,বলাই ভাবে। তাই বটে,ছেলে হলে সুভালাভালি,কিন্তু মেয়ে হলেও তো তবে খারাপ হয় না,মা আবার ঘুরে আসে যদি। মায়ের বড় আঁচলধরা ছিল ও,প্রথম প্রথম নাও পাড়ি দিলে মা আছাড়ি পিছাড়ি কাঁদত,হাসত সব পড়শিরা। জেলের ঘরে একি আদিখ্যেতা! সদ্যোজাত সেই কন্যা সন্তানের মুখের আদলে মাকে চিনতে পারবে তো বলাই! এটা নিয়েও কুন্তীর সংগে একটা বাজি ধরা যায় বইকি!
সেদিন রাতে শন শন হাওয়া বয়,টিপটিপ বিস্টি। এমন বিস্টিতে ইলিশের ঝাঁক দল বেঁধে মোহানার দিকে আসে ইলিশ শিশুর জন্ম দিতে। গর্ভবতী ইলিশ মায়েরা যখন নদীর বুকে যত্ন করে আঁতুর ঘর বানায় নিজেদের,ব্যথাতুর শ্লথ শরীরকে এলিয়ে দেয় ক্লান্তিতে,জননের কাজে ব্যস্ত হয়,মনোনিবেশ করে শরীরের ভার হালকা করতে-মানুষ তখন চুপিচুপি জাল ফেলে গভীরে,সূক্ষ্ম ফাঁদে ঘিরে ফেলে সেই জন্ম দেওয়ার কাজে ব্যস্ত,অসর্তক প্রাণীগুলোকে,জল থেকে তুলে আনে জলের বাসিন্দাদের। তারা ছটফট করতে করতে ঝিমিয়ে যায়। মানুষের ঘরে তখন খিচুড়ি হয়, ভাপা হয়, তেলকাঁটা ভাজা হয়, ডিমের টক হয় । মাছমারার ঘর নতুন টাকার গন্ধে ম ম করে,খুশির আমেজ কেমন ছড়িয়ে পড়ে মিঠে রেড়ির প্রদীপের মত,ছেলেপিলের মুখে সেই আলো ঠিকরে পড়ে,হাসি ফোটে। বলাই ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে জালভর্তি জলের রূপোলী শস্যের,ইলিশ মায়ের মতই কুন্তীর ডিমভরা থলথলে শরীর নদীর বালিয়ারি ভেবে লেপ্টে আছে বিছানার চাদর,স্বপ্ন দেখে সদ্যোজাত কন্যার মুখে যেন মায়ের মুখের আদল, বুড়ো বাপের শিথিল লোল দুর্বল হাত, সন্তানের মত জড়িয়ে রেখেছে বলাইএর গলা। স্বপ্ন দেখে ঝম ঝম বৃষ্টি পড়ছে আকাশ ফেঁড়ে, আলগা কাঠের দরজা জানলার ফাঁক দিয়ে জলের ঝাপটা আসছে ঘরে। সেই জলচূর্ণের ধারালো আঘাতে ঘুম ভেঙে যায়। কুন্তী ঠেলছে ওকে,“ওঠো ওঠো,জল ঢুকছে ঘরে।“
সাঁঝ রাতের টিপ টিপ বৃষ্টি ততক্ষণে ভয়াল ভীষণ ঝঞ্ঝার চেহারা নিয়েছে। দৈত্যের মত ঢেউ আছড়ে পড়ছে বোল্ডার পেরিয়ে তটের ওপর, সৈকতের বালুতেই দাঁড়িয়ে থাকা অতিথিনিবাসগুলো সেই বারুণী প্রতাপে থরথর করে কাঁপছে। কুন্তী ভয়ার্ত গলায় বলল,“ঘর বেশিক্ষণ থাকবে না,জলের তলায় চলে যাবে। চলো হাইস্কুলের রিলিফ ক্যাম্পে চলো,আশেপাশে সবাই চলে গেছে। আমি শুকনো খাবার,জল,কাপড় আর আমাদের সরকারী কাগজপত্র প্লাস্টিকে ভরে পুঁটলিতে নিয়ে নিয়েছি। “বলাই পাশের ঘরে গিয়ে বুড়োকে ধাক্কা দেয়,বুড়ো কাপড় চোপড় সব ভিজিয়ে ফেলেছে,গন্ধে টেঁকা যাচ্ছে না। এখন সাফ সুফ করারও সময় নেই তো। জেলেবস্তি প্রায় খালি হয়ে গেছে,এরপর আর স্কুলঘরেও জায়গা পাওয়া যাবে না। কুন্তীর হাত ধরে বাপকে কাঁধে ফেলে জলে নামে বলাই। বাঁধ বেশ খানিকটা দূর। যেতে পারবে? জলের স্রোতে কুন্তীর হাত ধরে রাখা যাচ্ছে না, এঁকে বেঁকে যাচ্ছে। বুড়োও শুয়ে থেকে থেকে ভারি হয়েছে বেশ, কোলে নিয়ে হাঁটতে দম বেড়িয়ে যাচ্ছে বলাইএর,মনে হচ্ছে শক্তিতে কুলোবে না শেষ পর্যন্ত। আচ্ছা যদি এমন হয়, দু জনকে রাখা যাবে না, যেকোন একজনকে ছেড়ে যেতে হবে, কাকে ছেড়ে কাকে রাখবে বলাই? সন্তানসম্ভবা স্ত্রী, না কি নিশ্চিন্ত নির্ভর করা গলা জড়িয়ে থাকা বিরাশি বছরের বুড়ো বাবা! চিন্তাটা মাথায় আসতেই মাছি তাড়ানোর মত তাড়িয়ে দিতে চায়, কিন্তু মাছির মতই সে কিছুতেই যায় না, ভন ভন করে সমানে। খক খক কেশে ওঠে বুড়ো, তার ময়লা ভেজা শরীরের পুতিগন্ধে বমি আসে বলাইএর। কুন্তী কাঁদছে গুণ গুণ করে, শরীর শিথিল হয়ে পড়ছে তার, একটা হাত পেটে দিয়ে আছে, বাচ্চাটার নড়াচড়া বোঝার চেষ্টা করছে। বলাই ভাবে পকেট থেকে একটাকার কয়েন বের করে টস করবে নাকি! বাজি ধরবে? হেড পড়লে কুন্তী,টেল পড়লে বুড়ো? না কি … ভাবতে ভাবতেই একহাতে কুন্তীর কোমর শক্ত করে জড়িয়ে,অন্য হাতে বাবাকে ঠেলে আরেকটু কাঁধ বরাবর ওপরে তুলে নিয়ে বলাই আন্দাজে আন্দাজে জলের স্রোত ভাঙতে থাকে।
**********************************************
বন্দনা মিত্র পরিচিতি
পেশায় প্রযুক্তিবিদ, ধাতুবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা। একটি পাবলিক সেক্টর সংস্থায় কর্মরতা। ঘোরতর সংসারী।
শখের খাতিরে লিখতে শুরু করে এখন ওটা প্রাণের তাগিদ হয়ে গেছে। তাছাড়া বাদ বিচার না করে বই পড়া, বই কেনা, ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা মারা ভালো লাগে।