মহামারী শেষে
চিন্ময় চক্রবর্তী
আর যারা বাকি ছিল,
তারা সব চলে গেল মহামারী পারে।
কেউ নেই বাঁধা কোনো তারে,
রক্ত বোধ নেই আর। জাত নেই, ধর্ম নেই ৷
নেই কোনো সুতো।
একটাই পরিচয়। যুদ্ধ পুরোহিত।
আর সব অর্থহীন। অন্য সব কথা।
অন্তমিল নেই কোনো। এমন কবিতা।
বাকি ছিল যারা সব,
পিতৃহারা,মাতাহীন,পরিবার,কিছু নেই কোনো,
অন্য ভাষা যদি শোনা যায়,
চেষ্টা করো,কান পেতে শোনো।
যুদ্ধ মাঠ ভিন্ন ছিলো,
অস্ত্র ভিন্ন,ভিন্ন দল,
শুধু ছিলো অন্তিমের চাক্ষুষ ফলাফল।
মহামারী পার করে বেঁচে থাকা।
প্রকৃতির প্রতিশোধ চেখে দেখা।
আর শুধু মিল এক। সবকিছু
আলাদার মাঝে,
ক্ষুদ্র অসুর এক একা একা রাজে।
শত্রু এক। ক্ষুদ্র এক কীট।
মানব সভ্যতা মাঝে ছোট্ট এক
ভয়ঙ্কর গিঁট ,
মানুষের অন্ধকার থেকে উঠে আসা।
ভয়াল সে শত্রু বড় খাসা। খাদ্য তার
ধর্ম,জাতি,
ভেদাভেদ, চামড়ার রঙ।
সব খেয়ে শেষ করে দিয়ে গেল,
যেইখানে যত ছিলো জং।
কোনো অবিচার নেই,
রাগ নেই, ক্ষমা নেই, আছে শুধু তীক্ষ্ণ এক তীর,
কোনোখানে নেই কোনো ক্ষোভ,
শুধু আছে প্রতিশোধ,শোধ প্রকৃতির।
যদি কিছু বোধ আসে,
ভেদাভেদ,মারামারি,বুদ্ধিনাশে,
স্বার্থ আর সীমাহীন লোভ,
আছে যার,যার নেই,সব একাকার।
চরম তান্ডব নৃত্যে নটরাজ,অট্টহাসি তার।
কেড়ে নেবে,খাবে সব? ধর্ম বেচে
উচ্চরব?
অর্থহীন অহংকার শেষ।
ধরিত্রী পড়বে নিজ বেশ।
তবু যারা বেঁচে রবে,মহামারী পারে,
নতুন পৃথিবী গড়ে,
রয়ে যাবে,সেইখানে,যেইখানে নেই ভেদাভেদ ,
মন্দির মসজিদ নেই, কোরানের পাশে রাখা দেখি চার বেদ।
বাইবেল ত্রিপিটক সব বই আছে,
মানুষের হৃদয়ের কাছে।
দুর থেকে শ্যামাগান শুনি,
আজানের মাঝে মাঝে আসে গুরবাণী,
মহামারী শেষে,যদি বেঁচে থেকে যাই,
রবো সেই দেশে।
************************************************************
চিন্ময় চক্রবর্তী পরিচিতি
জন্ম ১৯৬৫ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি চন্দননগরে।রসায়নে সাম্মানিকের পর পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতোকোত্তর। তারপর কর্মসূত্রে নানান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার বুড়ি ছোঁয়া। তার মধ্যে আই আই এম কলকাতা উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম প্রথম সারির বহুজাতিক সংস্থায় পূ্র্বভারতের বাণিজ্যিক কর্ণধার। কবিতা রাজ্যে বিচরণ করা নিজের মনের জানালা খোলা রেখে। ইতিমধ্যেই চারটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত: আমার আকাশ,ভেঙেছে আকাশ,মেঘের ওপারে তারার খোঁজে এবং সাঁঝবেলার আগুনপাখি ।।