Shadow

অটিজম – শিশুদের এক সমস্যা – অজন্তাপ্রবাহিতা

অটিজম – pc ..somoy tv

অটিজম – শিশুদের এক সমস্যা

কলমে –  অজন্তাপ্রবাহিতা

অটিজম কোনো রোগ নয়,এটি একটি অবস্থা। অটিজম শব্দটি শুনলে অনেকেই  ঘাবড়ে যান। অটিজম সম্পর্কে সবারই  জানা দরকার।
অটিজম আসলে কি ?
এটি  স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার,অর্থাৎ মস্তিষ্কের বিকাশ জনিত একটি  জটিল দশা। সংক্ষেপে একে ASD – Autism Spectrum  Disorder বলা হয়। অটিজমের বাংলা নাম আত্মসংবৃত।
পরিবারে যখন শিশু জন্ম নেয় তখন তাকে ঘিরে  আমাদের আনন্দ,উচ্ছাস ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার  কোনো সীমা থাকে না। শিশু মানেই প্রাণশক্তির ভান্ডার। সময়ের সঙ্গে  যেমন শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি হয়,ঠিক তেমনি,মানসিক বিকাশও ঘটে।কিন্তু,কোনো কোনো  শিশুর ক্ষেত্রে চিরাচরিত স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার গল্পটা  মিলে যায় না।  আড়াই বছর পেরোতেই যদি দেখা যায় শিশুটি আর পাঁচটা বাচ্চার মতো স্বাভাবিক ব্যবহার করছে না,তখন ডাক্তারের পরামর্শের দরকার হয়।। শিশুটিকে পরীক্ষা করার পর যখন জানা যায় যে সে অটিজমে আক্রান্ত তখন অনেকসময বাবা-মা বুঝে উঠতে পারেন না কি করলে তাদের সন্তান সুস্থ হয়ে উঠবে।
মেডিক্যাল তথ্য অনুযায়ী,অটিজম হচ্ছে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা। শিশুর জন্মের প্রথম তিন বছরের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ ধরনের শিশুরা নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় না। কোনো খেলনা বা আনন্দদায়ক বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয় না বা বিশেষ আচরণ বারবার করতে চায়,যেমন,বারবার হাত নাড়ানো। কোনো বিশেষ বস্তুর প্রতি অতি মাত্রায় আসক্তি থাকা। ভাষার ব্যবহার রপ্ত করার পর আবার ভুলে যাওয়া ইত্যাদি। কিছু শিশুর ক্ষেত্রে  জীবনের প্রথম বারো মাসের মধ্যেই  এএসডি উপসর্গ দেখা যায়।অটিস্টিক শিশুদের অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমস্যা হয়। তারা অন্যের কথা ও অনুভূতি বুঝতে পারে না। স্বাভাবিকভাবে কথা বলার চেষ্টা,অঙ্গভঙ্গি,মুখের অভিব্যক্তি ও স্পর্শের মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে প্রকাশ করতে সক্ষম হয় না। আমাদেরকেও বুঝে নিতে হয় ওদের কথা।
অটিজমের কারণ কি ?
অটিজমের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখন পর্যন্ত নির্ণয় করা  যায় নি।  বিজ্ঞানীরা মনে করেন,
 ১. জিনগত সমস্যা
২. পরিবেশগত সমস্যা
৩. রোগজীবাণুর সংক্রমণ
৪ শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ায় গোলমাল  অটিজমের প্রধান কারণ।
গর্ভাবস্থায়  ভিটামিন ডি এবং আয়রনের ঘাটতি থাকলে  শিশুর অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা পাঁচগুণ বেশী। শিশুর প্রাথমিক খাদ্যে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডের অভাব হলেও কিন্তু  অটিজমে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
মেয়ে শিশুর তুলনায় ছেলেদের মধ্যে অটিজম চারগুণ বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে ।
এই অবস্থায় আক্রান্ত শিশুদের স্বাভাবিকভাবে পারস্পরিক  যোগাযোগ স্থাপনের যে  দক্ষতা অর্জন করার কথা,তা হয় না। অটিজমে আক্রান্ত সকল শিশুর মধ্যে যে তীব্র অসামর্থ্য থাকবে তা নয়,কোনো কোনো অটিজম শিশুর স্বাভাবিক জীবনের কিছু  কিছু উপাদানের ঘাটতি থাকে মাত্র।
অটিস্টিক বাচ্চাকে কি স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যায়,এই প্রশ্ন বাবা মায়েরা করে থাকেন।
‘হ্যাঁ ‘  বা ‘না’  তে এই কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেয়া অসম্ভব। অটিজম বিষয়ক গবেষকরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং অন্ত্রের মধ্যে খুবই শক্তিশালী এক ধরনের সম্পর্ক আছে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা পেটে ব্যথা,দলা বা চাকা অনুভূত হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য,ডায়রিয়া এবং পেট ফাঁপানোয় বেশি ভুগে থাকে।
সঠিক খাবার ও ভিটামিন মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করলে অটিজমে আক্রান্ত শিশুর অনেক উপসর্গের তীব্রতা কমানো যেতে পারে। তবে গ্লুটেন যুক্ত খাবার,ডেয়ারি প্রোডাক্ট,দুষ্পাচ্য আঁশযুক্ত খাবার,চর্বিযুক্ত খাবার,কার্বোনেটেড খাবার,কফি,আইসক্রিম ইত্যাদি খাবার  একেবারে পরিহার করা ভালো।
রক্তের শর্করার ভারসাম্য রক্ষা,ভিটামিন ও মিনারেলসের ঘাটতি পূরণ,থাইরয়েডের কার্যকারিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অটিজম বাচ্চার অতি চঞ্চলতা,আক্রমণাত্মক আচরণ,মনোযোগ স্বল্পতা,চক্ষু যোগাযোগহীনতা,বিকৃত অঙ্গভঙ্গি ও অন্যান্য উপসর্গের তীব্রতা কমানো যেতে পারে।
থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য সামুদ্রিক মাছ,আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়ালে অটিজম শিশুর মানসিক,বুদ্ধিবৃত্তি ও স্নায়বিক উন্নতি ঘটানো যেতে পারে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা হিসেবে যেসব খাবার দেওয়া যেতে পারে তা হলো যেকোনো ধরনের আলু যেমন- গোল আলু,মিষ্টি আলু,চীনা আলু এবং গাজর,মিষ্টি কুমড়া,মূলা,বীটস,লাউ,ওটামিল বা জইচূর্ণ,চালের রুটি বা ফরাসি রুটি,চাল ও চাল শস্যজাতীয় খাবারসমূহ,কলা,আম,পেঁপে ও আপেলের রস,পেপারমিন্ট,ক্যামোমাইল ও ফেনেলের মত চকলেট,বন্ধুসুলভ ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ খাবার,যেমন-দই।
বাচ্চাদের খাওয়ানো অনেকটাই যুদ্ধ জয় করার মতো। সাধারণ শিশুদের তুলনায় অটিস্টিক শিশুদের খাদ্যাভ্যাস গঠন ও খাদ্য গ্রহণে পাঁচগুণ বেশি সমস্যা দেখা যায়। শিশুর খাবার খাওয়ার অনীহার প্রবণতা দেখলেই তাকে একবার তার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে নেওয়াই  তার জন্য উপকারী। শুধু অটিস্টিক বাচ্চা কেন, যে কোন বাচ্চাকেই খাওয়াতে গেলে মায়েদের অনেক নতুন পন্থা ভাবতে হয়। একই খাবারকে নানাভাবে তৈরি করে খাওয়ালে বাচ্চাদের খাবার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়।
ভিটামিনের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অটিস্টিক শিশুর জন্য। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুখাদ্যে ভিটামিন এ,ভিটামিন বি৬,ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম দিলে শিশুর ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন কেস স্টাডিতে দেখা গেছে,নির্দিষ্ট ডোজের ভিটামিন সি ব্যবহার করে অটিস্টিক বাচ্চার বারবার বিশেষ ধরনের অঙ্গ সঞ্চালনের অভ্যাসের উন্নতি ঘটেছে।
আত্মসংবৃতির প্রকাশ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন হারে ঘটে। আধুনিক গবেষণা মতে,প্রতি হাজারে ১-২ জন আত্মসংবৃতিতে এবং এক হাজারে ৬ জনের এএসডি থাকতে পারে। বিশেষ করে ১৯৮০ সালের পর থেকে জানা গেছে এমন আত্মসংবৃত নির্ণয়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তবে এর পিছনে উন্নত নির্ণয় পদ্ধতি এবং সচেতনতা বৃদ্ধিই মূল কারণ বলে বিবেচিত হয়।
প্রশিক্ষিত অটিজম থেরাপিস্টের মাধ্যমে থেরাপি প্রদান করে এই ধরণের বাচ্চাদের অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যেতে পারে। কোনো বাবা মা-ই চান না যে তাঁদের সন্তান কোনোভাবে কষ্ট পাক।  নানাকারণে প্রতিনিয়ত আমরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যাই। আমরা,যারা  স্বাভাবিক সন্তানের মাতাপিতা,তাঁরা কতটা ভাগ্যবান,একবার ভেবে দেখুন। প্রত্যেকটি শিশু আমাদের কাছে নক্ষত্র সমান । তাদের সঠিক ভাবে বড় করে তোলা  তোলার  দায়িত্ব আমাদের। তাই,শিশুদের সম্ভাব্য রোগ ও অবস্থা নিয়ে আমাদের সচতন থাকা বিশেষ জরুরি।

তথ্য সংগ্রহ – ইন্টারনেট
*********************************

অজন্তা প্রবাহিতা
লেখক পরিচিতিঃ আসামের ডিব্রুগড় শহরে জন্ম। স্কুলিং আসামের তৈলনগরী ডিগবয়ে। উচ্চমাধ্যমিকের পরে উচ্চশিক্ষার জন্য স্বপ্নের শান্তিনিকেতনে পাড়ি। সেখান থেকে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী। বিভিন্ন পত্রিকা ও সংকলনে লেখালেখি করেন। বন্যপ্রাণী ও পাখী সংরক্ষণের চেষ্টায় নিকটতম বন্ধুদের সাথে www.lensinwoods com নামে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংরক্ষণের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। জীবনের লক্ষ্য,নিজের কাজের সাহায্যে যেন পৃথিবীর বুকে নিজের একটা আঁচড় কেটে যেতে পারেন।

 

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!