অনির্বাণ
বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত
——————————
চুল্লিটা নিভিয়ে দিও না,
ওকে জ্বলতে দাও।
ওর গভীর বুকের পাঁজরে,
লেখা রয়েছে অনেক গল্পকথা।
বহু অভিমানের সাক্ষী,
অনেক হতাশার ইতিকথা।
মনের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার মলম।
কারো জানা নেই।
মুক্তির খোঁজ মেলে,
ওই দগদগে আগুনে।
জীবনের সায়াহ্নে এসে,
সব সত্যিগুলো যখন,
মিথ্যা হয়ে যায়,
তখন চুল্লিটা জ্বালিয়ে রেখো।
আধুনিকতার সাথে সাবেকিয়ানার,
চিরন্তন শত্রুতা ।
মেলালেও মিলবে না কিছুতেই।
হিসাবের খাতা খুললে,
ব্যালান্স সিট বিগ জিরো।
শত অপমান লাঞ্ছনা পেরিয়ে,
যাকে আপন করি।
বিচারের তুল্যমূল্যে যখন হতে
হয় খুনের আসামী,
চুল্লির কাছে আশ্রয় মেলে সস্নেহে।
তাই চুল্লিটাকে নিভতে দিওনা,
ওকে জ্বালিয়ে রেখো।
ভালোবাসার ভিখারি হয়ে,
যখন রিক্তহস্ত হতে হয় বারংবার
সম্পর্কের আবরণে জোড়াতালি দিতে দিতে শতচ্ছিন্ন হয়,
বিশ্বাসের অ্যাকাউন্ট যেদিন পেনিলেশ,
চুল্লিটাতে আগুন দিও সেদিন।
ব্যর্থতা,হতাশা,অবসাদ,
যদি মাত্রা ছাড়ায়,
চেনা মানুষেরা হয় অচেনা,
নিষ্কলঙ্ক হয়েও কলঙ্কিত হতে হয় অহরহ,,
তবে আগুনটা উস্কে দিও।
সরলতার প্রতিকূলে জটিলতা,
আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে অহরহ।
বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়,
মোহিনী রম্ভা।
লাগামছাড়া নদীর স্রোতে,
পানসি ভাসায়।
সুরাপাত্রে নেশাতুর হয়,
জীবনের অলিগলি।
আগুনটাকে জ্বলতে দিও।
একে একে যখন সবাই করবে ঘৃণা,
বলবে মরলেই বাঁচি এমানুষটা।
সকলের চোখে যেদিন,
হব আবর্জনাস্তুপ ।
চুল্লিটা জ্বালিয়ে রেখো,
আমার জন্য।
আমি ঘুমাবো তোমার কোলে,
শান্তির ঘুম।
কেউ জাগাবে না আমায়,
শরীরে কর্কট যন্ত্রণার,
নিবারণ হবে চিরনিদ্রায়।
চুল্লিটা জ্বালিয়ে রেখো,
নিভতে দিও না।
*********************************
বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত: জন্ম,ঝাড়গ্রাম শহরে। বর্তমানে একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদে আসীন । ছোটবেলা থেকেই এক সৃষ্টিশীল সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা। পেশাগত জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝে সাহিত্যচর্চা,তাঁর কাছে গ্রীষ্মের বিকালে মলয় বাতাস।