|| উপলব্ধি ||
শাঁওলি দে
[এক]
অফিস থেকে ফেরার পথে পোস্টারটা চোখে পড়ল। এই পথ আমার রোজকার সঙ্গী। অথচ আগে কোনোদিন দেখিনি তো! ম্যাড়মেড়ে সাদা কাগজের ওপর লাল কালি দিয়ে লেখা,পারিবারিক,শারীরিক,ব্যক্তিগত,সামাজিক যেকোনো সমস্যার চটজলদি সমাধান চান? বউ ছেড়ে গিয়েছে? স্বামীর পরকীয়া? চাকরি নেই? রাগী বস? সন্তানহীনতা? চিন্তা নেই আমরা আছি। স্বামী উত্তরানন্দ মহারাজ,গোল্ড মেডেলিস্ট,এলাহাবাদ শাখা। ১০০% গ্যারান্টি। নিচে একটা ফোন নম্বর দেওয়া। এই মুহুর্তে জীবন নিয়ে জাস্ট ঘেঁটে আছি। যাব নাকি একবার? কয়েক সেকেন্ড থমকালাম। টের পেলাম ভ্রু কুঁচকে গেছে নিজে থেকেই। ঘোরতর নাস্তিক আমি। এসবে বিশ্বাস কোনো কালেই ছিল না,অথচ আজ যাব নাকি ভাবছি? এ কী হল আমার? একরাশ বিরক্তি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কিন্তু মনের ভেতরে কোথাও ওই লাল কালির লেখাটা খোঁচা দিতে লাগল অনবরত।
পরদিন অফিস ফেরতা আবার ওই পোস্টারের সামনে এসে দাঁড়ালাম। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দক্ষ হাতে নম্বরটা ডায়াল করলাম। রিং বাজছে,একবার দুবার তিনবার। ওপাশ থেকে এক মহিলা গলা বলে উঠল,নমস্কার,উত্তরাশ্রম থেকে বলছি। বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
চমকে উঠেছি রীতিমতো। এতো পুরো কর্পোরেট স্টাইল! থতমত ভাবটা বুঝতে না দিয়ে বললাম “স্বামীজির সঙ্গে একটু দেখা করতে চাই।”
-নাম? যান্ত্রিক গলায় জানতে চাইল মেয়েটি।
-আমার? মানে আমার নাম পিনাক,পিনাকপাণি দত্ত।
-শনিবার,দুপুর ২টো। ঠিকানা মেসেজ করে দিচ্ছি এই নম্বরে। দেরি করবেন না।
খটাস করে ফোন রাখার আওয়াজ পেলাম। আরও কিছু কথা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। বলা হল না। না হোক। শনিবারই বলব। কাল থেকে সামান্য বিশ্বাস জন্মেছে বুঝতে পারছি। আসলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে হয়ত তাই হয়। ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো পেলে যেমন আঁকড়ে ধরে বাঁচার জন্য,আমিও তাই করছি। এতে অন্যায় তো নেই কিছু!
শনিবার সকাল সকাল স্নান সেরে বেরিয়ে পড়লাম। খাইনি কিছু। কী জানি যদি পুজোর কোনো ব্যাপার থাকে। যে ঠিকানা মোবাইলে এসেছে তা বেশ দূরে,হলদিবাড়ির একটা প্রত্যন্ত গ্রামে। শিলিগুলি থেকে হলদিবাড়ি আসতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘন্টা। ডাইরেক্ট বাস পেলে চিন্তা থাকে না। কিন্তু এই সময় হয়ত নেই। বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ। মালবাজার,ধূপগুড়ি কিম্বা জলপাইগুড়ির প্রচুর বাস যাচ্ছে আসছে অথচ এক ঘন্টা হতে চলল হলদিবাড়িগামী বাসের দেখা নেই। বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে গেছে বেশ খানিকটা। সিদ্ধান্তটা ভুলই নিয়ে ফেলেছি। আগেই যদি জলপাইগুড়ির বাসে চাপতাম এতক্ষণ অনেকটাই এগিয়ে যেতাম। দুপুর দুটো বলেছিল মেয়েটি। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দশটা বেজে গেছে। এবার খিদেটাও অনুভব করছি। ব্যাগ থেকে জলের বোতলটা বের করে গলায় কয়েক ঢোক ঢেলে নিলাম। সামান্য স্বস্তি পেলাম। রোদের তেজ বাড়ছে প্রতি মুহুর্তে। জিভ দিয়ে ভেজা ঠোঁটটা চেটে নিলাম খানিকটা। পেছনে একটা চা,বিস্কুট,কেকের দোকান। বারবার ওদিকে চোখ চলে যাচ্ছে।
-একটা চা দিন তো? অধৈর্য গলায় বলে উঠলাম।
কালো মত ভদ্রলোকটি তাকালেন,কেটলির ভেতরের তরলকে আরো ফুটতে দেওয়ার জন্য আগুন উস্কে দিলেন খানিকটা। তারপর থালায় রাখা প্লাস্টিকের কাপে ঢেলে দিলেন। কিছুটা চা ছলকে পড়ল থালায়। ভদ্রলোকের সেদিকে হুঁশ নেই। পর পর খদ্দেরদের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছেন একা হাতে। আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে লম্বা চুমুক দিলাম। ভীষণ গরম! জিভটা খানিক পুড়ে গেল। এবার সত্যি সত্যি বিরক্ত লাগছে। ধুর কেন যে মরতে এই সিদ্ধান্ত নিলাম! চা-টা সবে শেষ হয়েছে কানে আসল হলদিবাড়ি ডাইরেক্ট,হলদিবাড়ি ডাইরেক্ট ! হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। সাড়ে দশেও যদি ছাড়ে একটার মধ্যে পৌঁছানো উচিত। চা-এর বিল মিটিয়ে বাসে চেপে বসলাম।
[দুই]
ধুঁকতে ধুঁকতে বাস যখন হলদিবাড়ি ঢুকল তখন প্রায় দেড়টা বাজে। যেটুকু আসার ইচ্ছে ছিল তাও তলানিতে ঠেকেছে। তবু নামলাম। সারি সারি রিক্সা,টোটো ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। সামনের একটা টোটো চালককে ধরলাম,উত্তরাশ্রম যাবেন?
ছেলেটি একটু যেন অবাক হল মনে হল। তারপর গম্ভীর গলায় বলে উঠল ক’জন?
জানালাম আমি একাই।
-পঞ্চাশ নেব,যাবেন তো বলুন,ছেলেটি কেজো গলায় বলে উঠল। হাতে সময় কম। এখন দরাদরি করার সময় নেই,অগত্যা টোটোতে চেপে বসলাম। পাকা রাস্তাটা কিছুদূর গিয়েই আচমকা শেষ হয়ে গেছে। এরপর লম্বা সরু কাঁচা রাস্তা,মাঠ কেটে বানানো।
ছেলেটি গুনগুন গান গাইছে। চটুল হিন্দী গান। মিষ্টি একটা বাতাস বইছে। আশার একটা রেখা যেন দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি। টের পেলাম মনের বিরক্তিভাবটা যেন কোথায় উধাও হয়ে গেছে,আর তার হদিশ পাচ্ছি না।
চালকটির বয়স বেশি না,আলাপ জমানোর জন্য বলে উঠলাম,”আর কতদূর ভাই?
ছেলেটি আমার কথার উত্তর না দিয়ে উলটে আমাকেই প্রশ্ন করল,-প্রথমবার?
-হ্যাঁ,জায়গাটা কেমন? জানতে চাই।
-চলুন না স্যর দেখতেই পাবেন,বলেই ছেলেটি বিশ্রি করে হাসতে লাগল।
আবার ওই বিরক্তিটা ফিরে ফিরে ফিরে আসছে। যাই হোক,এতদূর এসে আর ফিরে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। টোটোতে বসে চুপচাপ দু’পাশের দৃশ্য দেখছিলাম। সবুজ মাঠের ভেতর থেকে এঁকে বেঁকে চলে যাওয়া রাস্তাটা কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে বোঝার উপায় নেই। দু’চারটে আমগাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে মাঝে মধ্যে আর দূরে দূরে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু বাড়ি ঘর। বেশিরভাগই বেড়ার,পাকা বাড়ি প্রায় নেই বললেই চলে। হঠাৎই সশব্দে দাঁড়িয়ে পড়ল টোটো। এদিক ওদিক তাকালাম,এসে পড়েছি নাকি? কিন্তু আশেপাশে তো কোনো আশ্রম দেখা যাচ্ছে না! চালক ছেলেটি নেমে বলল,এখানেই নামতে হবে,এরপর হাঁটা পথ।
প্রায় দু’টো বাজে। ঠা ঠা রোদ তার ওপর জনমানবহীন এই গ্রাম। বেশ একটু অস্বস্তিই হচ্ছিল। টোটো থেকে নেমে ভাড়া মেটাতেই ছেলেটি উলটো দিকে আঙুল উঠিয়ে বলল,ওইদিক দিয়ে চলে যান।
তাকিয়ে দেখলাম দু’পাশে সারি সারি নারকেল গাছের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ঘিঞ্জি একটা গলি। গলিও বলা ভুল হবে বোধহয়! আসলে আলপথ। রাস্তা থেকে নেমে সেইদিকেই রওনা হলাম। ছাতা আনিনি,রোদে পুড়ে যাওয়ার জোগাড়; তারপর খাইনি কিছু। জলও আর ভালো লাগছে না। চলছি তো চলছিই। মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে কত কথা। এত কষ্ট সহ্য করছি,জানি না আজ কোনো সুরাহা হবে কিনা ! বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর ঘন্টার আওয়াজ কানে এল। যাক চলে এসেছি,তবে!
আওয়াজ বরাবর কিছুদূর যেতেই একটা চাতাল চোখে পড়ল। আমি সামনে এগিয়ে এলাম। চাতালের ভেতর একটা যজ্ঞকুণ্ড,আর চাতাল পেরোতেই বিরাট একটা বাড়ি। এই স্বজন বিবর্জিত শুনশান এলাকায় বাড়িটা দেখে ভুত দেখার মতোই চমকালাম। কে বানাল এখানে এমন বাড়ি? আর এটাই কি সেই উত্তরাশ্রম? একটু এগিয়ে যেতেই কানে কিছু মন্ত্র শুনতে পেলাম আর ঘণ্টাধ্বনি। কাউকে চোখে পড়ছে না যে কিছু জিজ্ঞেস করব। আবার ওই নম্বরে ফোন করব নাকি ভাবছি,ওমনি পেছন থেকে কে একজন ভারি গলায় বলে উঠল,পিনাকপাণি দত্ত? দুটো তো অনেকক্ষণ বেজে গেছে,মহারাজ কারো জন্য অপেক্ষা করেন না। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম লম্বা দোহারা চেহারার একজন লোক,খালি গা পরনে লাল শালু,কপালে লাল তিলক,কেমন তান্ত্রিক তান্ত্রিক চেহারা। দেখলে ভক্তি কম ভয়ই লাগে বেশি।
ধীর গলায় বললাম,আসলে বাস ছিল না তো!
-আসুন তাড়াতাড়ি আসুন,বাবার বিশ্রামের সময় আগত তার আগে কথা বলে নিন। লোকটি হাঁটতে শুরু করল আমি ওঁর পিছু নিলাম। পাকা বাড়িটির পাশ দিয়ে সরু রাস্তা চলে গিয়েছে,ঘন্টার আওয়াজ সেখান থেকেই আসছে। মিনিট পাঁচেক হাঁটার পর একটা বিরাট হলঘরের সামনে এসে দাঁড়ালাম।
-আসুন,পা ধুয়ে জুতো খুলে ভেতরে আসুন
[তিন]
ভেতরে যখন প্রবেশ করলাম আমার অবাক হওয়ার আরও বাকি ছিল। হলঘরটিতে বসে আছে প্রায় শ’খানেকের ওপর লোক। সাদা মার্বেল বসানো বিরাট মেঝে ঝাঁ চকচকে…
কোথাও এতটুকু ধুলোবালি পর্যন্ত নেই। বড় বড় ফ্যান চলছে চারিদিকে। হলঘর পেরোতেই একটা ছোট চেম্বার মতো,দরজায় বড় বড় করে লেখা ভেতরে আসুন আর হাসি মুখে বাড়ি যান,স্বামী উত্তরানন্দ মহারাজ।
আমি অবাক চোখে চারিদিক পর্যবেক্ষণ করছি। সঙ্গের ভদ্রলোকটি বললেন,এই যে এত লোক দেখছেন এদের সবার নাম আপনার পরে,কারো আবার কালও। সবাই এসে অপেক্ষা করছে। নেহাত আপনার ভাগ্য ভাল স্বামীজী নিজেই আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন! বলেই হাতে থাকা একটি হলুদ কাগজ ধরিয়ে দিলেন। একটা রসিদ,দু’হাজার টাকার। গল্পটা আস্তে আস্তে ধরতে পারছি ! অনিচ্ছা সত্ত্বেও পকেট থেকে নতুন গোলাপি একটা নোট বের করে বাড়িয়ে দিলাম। লোকটি তা পকেটে পুরে গম্ভীর গলায় বলল,এবার ভেতরে যান।
ছোট খুপরি মতো একটা ঘর,বাইরের জাঁকজমক থেকে একেবারেই আলাদা। ঘরময় ধোঁয়া আর কড়া ধূপের গন্ধ। একটা টেবিলে কয়েকটা মোমবাতি জ্বলছে। কাঁচের পাত্রে রাখা অসংখ্য ক্রিস্টাল পাথর। একটা রুদ্রাক্ষের বড় মালা। টেবিলের উলটো দিকে যিনি বসে আছেন তার কাছেই হয়ত আছে আমার সমস্ত সমস্যার সমাধান। চোখ বুজে ধ্যান করছেন তিনি। আমি একটু ইতস্তত করছি,ডাকব নাকি এইসব ভাবছি,আর তখনই গমগমে গলায় তিনি বলে উঠলেন,এসেছিস? আয় বোস আমার কাছে।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো সামনে রাখা চেয়ারে বসে পড়লাম। অজান্তেই কখন যে হাত জোড় করে ফেলেছি জানি না।
অদ্ভুত সৌম্যদর্শন চেহারার এক মানুষ। মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো চুল,পরনে লাল শালু। তিনি চোখ খোলেননি এখনও। ওই অবস্থাতেই বলে উঠলেন,এত হতাশ কেন? তোর চেয়েও অনেকে খারাপ আছে! জানিস তো!
চমকে উঠেছি রীতিমত,গলা ধরে এসেছে,বললাম,বাবা,এভাবে চলতে থাকলে আমি আর বাঁচব না!
-মরা কি অত সহজ রে? অনেকেই মরতে চায়,সবাই কি পারে? চোখ বুজেই বাবা বলে যেতে লাগলেন।
পালাচ্ছিস কেন? সমস্যার মোকাবিলা কর,মুখোমুখি দাঁড়া,দেখবি একদিন আলো জ্বলবে।
-বাবা,আমি কিছু বলতে পারছি না। একটা অদ্ভুত ঘোর আমায় ঘিরে ধরেছে।
সে অবস্থাতেই বললাম,আপনি এত কথা জানলেন কিভাবে,বাবা ?
হো হো করে হেসে উঠলেন বাবা। বললেন,এই যে এখানে এত লোক আসে,তাদের মধ্যে কারো কারো মধ্যে নিজের ছায়া দেখি,তুই তার মধ্যে একজন।
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি বাবার দিকে। মনে মনে বলে উঠলাম,মনে হচ্ছে এখানেই সারাজীবন কাটিয়ে দিই,এইভাবে বাবার পায়ের কাছে বসে।
তিনি বুঝি মনের কথা টের পেলেন,সৌম্যদর্শন মুখটা আরো আলোকিত করে বলে উঠলেন,এখানে থাকতে চাইছিস কেন? এখানে কারা থাকে জানিস? যারা জীবন থেকে পালাতে চায়! যারা ঘর চায় অথচ বন্ধন চায় না,যারা ছাদ চায় কিন্তু আশ্রয় দিতে জানে না!
খানিকটা দ্বিধা নিয়ে বললাম,আপনি? আপনিও কি তাই?
চুপ করে আছেন তিনি। বেশ কয়েক মিনিট,আমার অস্বস্তি হচ্ছে খুব। কিছু কি ভুল বলে ফেললাম। মাফ চাইব?
তাকিয়ে দেখলাম তিনি চোখ খুলছেন ধীরে ধীরে। রক্তাক্ত সেই চোখ,তীব্র,তীক্ষ্ণ। আমি সেই চোখের দিকে তাকিয়ে আছি নিষ্পলক। একি! ওখানে কাকে দেখতে পাচ্ছি আমি? নিজেকে? একটা সম্পূর্ণ হেরে যাওয়া মানুষকে? আমি ভয়ে চোখ বুজে ফেললাম। স্বামীজী হেসে উঠলেন। বিকট সে হাসি। আমার অন্তর্মূল কেঁপে উঠল। আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। উঠে পড়লাম। ঘর থেকে বেরিয়ে ছুটছি,দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে ছুটছি। একটা সম্পূর্ণ হেরে যাওয়া মানুষ ছুটে চলছে বহু বহু আলপথ,এবড়ো খেবড়ো পেরিয়ে।[চার]
পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। দিগন্তব্যাপী লাল আভা। দূরে কোথাও কোনো গৃ্হস্থের ঘরে সন্ধের শাঁখ বেজে উঠছে। ঝিঁঝিঁপোকার একটানা ডাক আর ঘরে ফেরা পাখিদের কলকাকলিতে বিষাদের সুর। জনমানব শূন্য পথে একাকী হেঁটে যাচ্ছি আমি,উত্তরাশ্রম থেকে। সারাদিনের এই যাত্রা আমায় শেখালো অনেক কিছু। শেখালো ধৈর্য,সহনশীলতা।পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে সুইচ অন করলাম। হুড়মুড় করে যান্ত্রিক বার্তা ঢুকে যেতে লাগল একের পর এক। আমার মুখ জুড়ে হাসি ফুটে উঠল। মনের ভেতর গুনগুনিয়ে উঠল ঘরে ফেরার গান। যে গানে কোনো বিষাদ নেই,হার নেই,আঁধার নেই। আমাকে রুখে দাঁড়াতে হবে সব খারাপের বিরুদ্ধে। আমিও কাউকে আশ্রয় দিতে চাই। স্বামীজির মতো আরেকটা হেরে যাওয়া মানুষ আমার আর হয়ে ওঠা হল না।
আমি সকালের অপেক্ষায় রইলাম,সুন্দর,ঝকঝকে একটা সকাল।।
******************************************
শাঁওলি দে পরিচিতিঃ জন্ম ১৯৮২ সালে কোচবিহার জেলার প্রান্তিক শহর হলদিবাড়িতে। বর্তমানে বৈবাহিক সূত্রে জলপাইগুড়ির বাসিন্দা। ইংরাজি সাহিত্যের ছাত্রী,লেখালিখি শুরু ছোটবেলাতেই। ইংরাজির সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশবিদ্যায় স্নাতকোত্তর। কবিতা দিয়ে শুরু,পরবর্তীতে ছোটগল্প,অণুগল্প ও ভ্রমণ প্রকাশিত হয়েছে বহু পত্র পত্রিকায়। দেশ,উনিশকুড়ি,উত্তরবঙ্গ সংবাদ,এখন ডুয়ার্স,রংরুট,ফেমিনা বাংলা,কথা সাহিত্য,নন্দন,শিলাদিত্য,তথ্যকেন্দ্র,লংজার্নি,উত্তরের সারাদিন,গৃহশোভা,আজকালসহ নানা পত্রিকায় বেরিয়েছে লেখা ৷ ফিচার লেখাতেও সমান স্বচ্ছন্দ। যৌথভাবে অণুগল্প সংকলন (দুই দুগুনে এক) ছাড়াও আরও অনেক সংকলনে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। কলকাতা বইমেলা ২০১৯-য় প্রকাশিত হয়েছে ছোটগল্পের বই ‘মায়াঘর’ (প্রকাশক ‘দ্য কাফে টেবল’) ও অণুগল্পের বই ‘বৃষ্টিফোঁটার মতো’ (প্রকাশক-সৃষ্টিসুখ),আছে একটা ই-বুক ‘মেয়েবেলার গল্প’ (প্রকাশক-শপিজেন)। নির্বাচিত গল্পের সবগুলোই কোনো না কোনো বাণিজ্যিক কিংবা ছোট পত্রিকায় প্রকাশিত।
উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি বই পড়া,গান শোনা নেশা।