সম্পাদকীয়
দেবদত্ত বিশ্বাস
দেখতে দেখতে চার বছরে পদার্পণ করলো আমাদের ভালোবাসার,আমাদের প্রাণের আন্তর্জালিক বহুমুখী সাংস্কৃতিক পত্রিকা কুলায় ফেরার” বিহান বেলা” সংখ্যা। বিহান শব্দের অর্থ হলো প্রাতঃকাল। বিহান তৎসম শব্দ নয়। এটি মূল হিন্দি শব্দ ‘বিভান’ থেকে এসেছে। “প্রভাত” কে এর সমার্থক তৎসম শব্দ বলা যায়। এমন বহু শব্দ বাংলা উচ্চারণের সংগে সংগতি রেখে পাল্টেও গিয়েছে। যেমন উর্দু শব্দ ‘ওয়াকিফ্ হাল’,যার অর্থ অবগত হওয়া বা করা। বাংলায় লেখা হয় “ওয়াকিবহাল”! বাংলা শব্দ ভান্ডারে এমন কয়েক সহস্র শব্দের অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে। যাইহোক,এখানে বাংলা ব্যাকরণ আলোচ্য বিষয় নয়। পরবর্তীতে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
বাংলার গানের কবি এবং প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী তে আমাদের প্রাণের কাছে,প্রাণের পাশে থাকা কুলায় ফেরার চতুর্থ বিহান বেলা সংখ্যাটি তাঁর স্মৃতিতেই নিবেদিত। বাংলা একই বৃন্তের দুই কুসুম রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সুবাস দেশ ছাড়িয়ে,দেশের সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া ভেদ করে বিশ্বের সর্বত্রই উদ্ভাসিত। হংকংও তার ব্যতিক্রম নয়। বিমান পথে (কারণ ভারত থেকে হংকং পৌঁছানোর জন্য স্থলপথের দূরত্ব অনেক বেশি,সময়সাপেক্ষ এবং ঝকমারির,জলপথেও তাই!) ভারত থেকে এর দূরত্ব প্রায় চার হাজার কিলোমিটার। সমুদ্রঘেরা চৈনিকশাষিত এই মনোরম শহরেও কিন্ত রবীন্দ্র নজরুলও পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। তাঁদের জন্মবার্ষিকী প্রতিবছর অত্যন্ত শ্রদ্ধা এবং নিষ্ঠার সংগে হংকংয়ে পালন করেন এখানকার ভারত এবং বাংলাদেশের বাংলাভাষী সম্প্রদায়। তখন নিজেকে হংকংবাসী একজন বাংলাভাষী হিসেবে নিজের খুব গর্ব হয়। বুক ভরে ওঠে আনন্দে। চোখ বুজে,মাথা ঠেকাই বাংলা মায়ের চরণে। দু ফোঁটা অশ্রুপুষ্পে তাঁর চরণ ধুয়ে দিই। যোগ প্রশিক্ষকের দৈনন্দিন ব্যস্ততম কর্মযজ্ঞের শেষে অবসর সময়ে আমার সঙ্গী হলো ভ্রমণ আর বাংলা সঙ্গীত। রবীন্দ্র,নজরুল সলিলের সুর সলিলে ডুবে থাকি। নিজে গান জানিনা। তবে গান ভালেবাসি প্রাণ দিয়ে। নিজের কথা বলতে এই সম্পাদকীয় নয়। পাঠকদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে। আবেগ তাড়িত হয়ে কথাগুলো কলমে চলে এলো। শ্রদ্ধেয় পাঠক পাঠিকা নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন।
২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস কে স্মরণ করে ২৪ শে ফেব্রুয়ারি কুলায় ফেরার সংগীতাঞ্জলী গোষ্ঠী একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। এই পরিবারের অন্যতম অক্লান্ত সৈনিক এবং বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞে ব্রতী শ্রীমতী ব্রতী ঘোষের বেহালার বাসভবনে এই অনুষ্ঠান টি হয়। গল্প,প্রবন্ধ,কবিতা পাঠ সঙ্গীতে ভরা ছিলো সমগ্র অনুষ্ঠান। একটি কবিতার বইও প্রকাশিত হয় মঞ্চ থেকে। বিশিষ্ট বিদগ্ধ জনেরা মঞ্চে এবং দর্শক মন্ডলীতে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন। ব্রতী ঘোষকে ধন্যবাদ।
এবারে বিহান বেলা সংখ্যায় নজরুল নিয়ে নানা স্বাদের নানা রকম রচনা রয়েছে।
আবার একটি ক্যালেন্ডারের পাতা পাল্টাতে চলেছে। আবার একটি নতুন বছর আসছে। বাংলা বছর। পয়লা বৈশাখ,১৪৩১ । আবার আসছে দগ্ধ দিনের কাল,বৃষ্টি ভরা কাল। শিউলি মাখা,ঢাকের বোলের শরৎ….। এ ভাবেই শুধু যাওয়া শুধু আসা চলতে থাকবে। এর নামই যে জীবন।
কুলায় ফেরার সকল পাঠকপাঠিকা,লেখকলেখিকা,সব স্তরের শিল্পী,কম্পিউটর প্রকৌশলী,সকল শুভানুধ্যায়ী দের আগামী নববর্ষের শুভেচ্ছা। আপনাদের সকলের ঐকান্তিক ভালোবাসা ও সহযোগিতায় কুলায় ফেরা থেমে যায়নি। এগিয়ে চলেছে গত চার ধরে,গতি বৃদ্ধি ও হয়েছে। এ ভাবেই যেন এগিয়ে যেতে পারি আরও বহুদূর। থামা নয়,চরৈবতি,চরৈবতি।
নমস্কার।
দেবদত্ত বিশ্বাস
সম্পাদক