Shadow

অমৃত সংবাদ – সোনালী গুহ

p.c.SylhetView24

।। অমৃত সংবাদ ।।

।।সোনালী গুহ।।

             অমৃতের ভাণ্ডারে গল্পের শেষ নেই। অবশ্য সবই তার নিজেরই গল্প।না ঠিক গল্প নয়,সবই সত্যি ঘটনা।

ছোট থেকেই অন্য পাঁচটা ছেলের মত নয় সে।গ্রামের বাড়িতে একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছে । ছোট্ট নিরিবিলি গ্রাম আমতলা।গ্রামের অনতিদূরে বয়ে যাচ্ছে ছোট্ট একটি নদীচূর্ণী।গ্রামের ছেলের দল যখন গ্রীষ্মের দুপুরে চূর্ণীর জলে মাতামাতি করে সাঁতার কেটে বেড়ায়,তখন অমৃত নিরিবিলি একটা গাছের তলায় বসে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকেপার বিস্ময়ে । ছোট্ট অমৃতের মনে কত প্রশ্ন।এইভাবেই একটু শান্ত,সরল ছেলেটির বেড়ে ওঠা। পড়াশোনায় বরাবরই ভালো সে।চার ভাইবোনের মধ্যে বড় হওয়ায়,মা তেমন করে নজর দিতেও পারেননা। তাছাড়া একান্নবর্তী পরিবারের সন্তানরা নিজেরাই কীভাবে যেন বড় হয়ে যায়। অমৃতও সেইভাবেই প্রতি ক্লাসেই ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করে যেত।তেমন করে কেউ ওকে খেয়ালও করত না। এইভাবেই চলছিল দিন। ক্রমে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে আইন নিয়ে ভর্তি হল অমৃত।সকলেই একটু অবাক হল। মুখচোরা ছেলেটা এই আইন ব্যবসায় কীভাবে কথা বলবে।কিন্তু এই ক্ষেত্রেও অমৃত ভালো রেজাল্ট করতে লাগলো।দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন অমৃত ওর বাবাকে একদিন বলে,”বাবা,আপনি অনুমতি দিলে,আমি কয়েকজন ছাত্র পড়ানোর কাজ নিই। আমার পড়ার খরচ আমি তবে চালাতে পারব। বাকী ভাইবোনদের পড়ার খরচ আছে,সেগুলো আপনি দেখুন।এই কথা শুনে বিশ্বম্ভরবাবুও খুশি মনেই রাজী হলেন। অমৃত বাবার অনুমতি পেয়ে সানন্দে কয়েকটা টিউশন শুরু করলো। ক্রমে শিক্ষক হিসেবেও তার পরিচিতি গড়ে উঠলো গ্রামে।নিজের বাড়ির বৈঠকখানা ঘরে সকালে সে এক ব্যাচ ছাত্র পড়াত। সন্ধ্যায় কলেজ ফেরত সপ্তাহে তিনদিন একটি ছেলের বাড়ি গিয়ে পড়াত।  

 আজকের গল্প সেখানে ঘটা এক দারুণ মজার ঘটনা নিয়েই।

গ্রামের বাড়ি সাধারণত যেমন হয়,বাগান ঘেরা খোলামেলা এক বাড়িতে নবম শ্রেণীর এক ছেলে ছিল অমৃতের ছাত্র। ছাত্রটি পড়াশোনায় ভালো বলে অমৃতের বেশ পছন্দ ছিল। কিন্তু গোল বাঁধলো,ছাত্রের বাড়ির এক অ্যালসেশিয়ান কুকুরকে নিয়ে।স্বভাব শান্ত অমৃতের একটা বদঅভ্যাস ছিল,কুকুর দেখলেই মুখ দিয়েক্রীক্রীর “… করে একটা আওয়াজ করত।যেটা কুকুরেরা বেশ অপছন্দ করত। এই বাড়িতেও প্রথম দিনেই বেঁধে রাখা হালুমকে দেখে অভ্যাস বশতঃ ঐরকম আওয়াজ করছে অমৃত। কেউ খেয়াল না করলেও হালুম কিন্তু বেশ অপছন্দ করেছে। কিন্তু প্রতিদিনই যখন সে পড়াতে আসে,হালুম বাঁধাই থাকে।তাই হালুমের অসন্তোষ কেউই জানতে পারেনি। ঠিক তেমনই হালুমকে দেখলেই অমৃতের এই দাঁত কিড়মিড় করা সেটাও সকলের অজানা। কেবল হালুম মনে মনে এই অপমানের প্রতিশোধ নেবার অপেক্ষায় ছিল।

এইভাবেই বেশ কয়েকমাস ভালোভাবেই দুজনের মধ্যে একটা ঠাণ্ডা লড়াই চলছিল। যেটা নিয়ে অমৃতও খুব একটা গুরুত্ব দেয় নি।

 সেদিন স্কুল,কলেজ ছুটি ছিল নেতাজীর জন্মদিন উপলক্ষে।অমৃতের সেদিন সকালের ব্যাচ ছিল না। সে ভাবলো সকালেই পড়িয়ে আসবে ওই ছেলেটিকে। তখন এত ফোন করে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল না কোথাও। তাই অমৃত সকালের খাবার খেয়ে উপস্থিত হল ছাত্রের বাড়ি।

বিপত্তি বাঁধলো এইখানেই। হালুম বাগানে খোলা ছিল। অমৃত সেটা খেয়াল করে নি। গেট খুলে ঢুকে খেয়াল করলো তীর বেগে ছুটে আসছে হালুম তার দিকে। এতদিনের পুঞ্জীভূত রাগ…. চোখে অসম্ভব জিঘাংসাহালুম আজ অমৃতকে দেখে আক্রমণের উদ্দেশ্যে ছুটে আসছে।মুহূর্তের মধ্যে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অমৃতকে নির্দেশ দিলপালাও। কিন্তু সামনেই তো হালুম আসছে,মূর্তিমান যমের রূপ ধরে।দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে অমৃত সামনে যে ঘর পেল সেখানেই ঢুকে,খাটে উঠে ফ্যান ধরে ঝুলে পড়ল। 

ততক্ষণে হালুমের গর্জনে বাড়ির লোকও এসে গেছেন। তারা হালুমকে ধরে ফেলেছেন। হিংস্র আক্রোশে ফুঁসছে সে। ওকে তো শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হল।     

      কিন্তু মাষ্টার গেলো কই?!!!দারোয়ান বললে,” মাস্টারসাব ভাগ গিয়া“…

বাড়ির পুরানো ভৃত্য দিনু বললে,” বাগানের ভেতরেই কোথাও লুকিয়ে আছেন মাস্টার

     এইরকম নানাবিধ আলোচনা চলতে লাগলো মাস্টার মশাইকে খুঁজতে।  

      খোঁজ খোঁজছাত্রই শেষে ঘরের মধ্যে ফ্যান ধরে ঝুলন্ত অবস্থায় আবিষ্কার করলো স্বভাবশান্ত মাস্টার মশাইকে। তিনি তখনো চোখ বুজে আছেন। মুখেবাঁচাওবাঁচাও!!” ক্ষীণ ধ্বনি।

     বিস্ময়ে হতবাক সকলে। মাস্টার তখন খুবই বিধ্বস্ত,কিন্তু নামতেও পারছেন না লজ্জায়। বাড়িতে হাসির ধু পড়ে গেল। নামানো হল মাস্টারকে। ভয়ে তখনও কাঁপছেন তিনি।
**********************************

সোনালী গুহ পরিচিতি
পেশায় শিক্ষিকামাতৃভাষায় কিছুটা মনের আনন্দে লেখালিখি করেন। অত্যন্ত অমায়িক, সবার সাথে মিলেমিশে, সবাইকে নিয়ে চলতে স্বস্তি অনুভব করেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!