Shadow

প্রকৃতির বন্ধু রাহুল – অজন্তা প্রবাহিতা

p.c.Depositphotos

প্রকৃতির বন্ধু রাহুল

কলমেঅজন্তা প্রবাহিতা

আমার ভাইপো রাহুল ছোট্ট হলেও অসম্ভব কৌতূহলী। সে প্রকৃতি,গাছপালা আর প্রাণীদের নিয়ে জানতে দারুণ ভালোবাসে। একদিন রাতে তার দাদু বললেন,”জানো,দাদুভাই,আমাজন এমন এক জঙ্গল,যেখানে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রহস্য।

রাহুল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,”কী রহস্য, দাদু?”

দাদু মৃদু হেসে বললেন,”শোনা যায়,আমাজনের গভীরে এমন এক গাছ আছে,যা নিজে নিজেই হাঁটতে পারে! কেউ কাছে গেলে তার লতাগুলো সাপের মতো নড়েচড়ে ওঠে। এমনকি,কেউ কেউ বলে,সেই গাছ বড় জন্তু আর মানুষকেও গিলে ফেলতে পারে!”

রাহুলের চোখ বড় হয়ে গেল।সত্যি, দাদু?”

দাদু বললেন, “কেউ জানে না সত্যি কি না। আমাজন এখনও রহস্যে মোড়া।

সেদিন রাতে রাহুল যখন ঘুমিয়ে পড়ল,তখনও তার মনে দাদুর কথাগুলো ঘুরছিল।

হঠাৎ সে অনুভব করল,সে এক বিশাল সবুজ জঙ্গলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে! চারপাশে অজস্র লম্বা গাছ, ঝুলন্ত লতা,আর নাম না জানা পাখির ডাক। রাহুল অবাক হয়ে ভাবল,”এটা কি স্বপ্ন? নাকি আমি সত্যিই আমাজনে চলে এসেছি?”

সে একটু এগিয়ে গেল। সামনে এক বিশাল নদী। সেখানে বিশাল এক অ্যানাকোন্ডা শুয়ে আছে। সে ভয় পেয়ে পেছনে সরে এল। ঠিক তখনই পেছন থেকে কেমন যেন একটা শব্দ শোনা গেলচররর! সে ধীরে ধীরে ঘুরে তাকাল। সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা অদ্ভুত গাছ। তার মোটা শিকড় মাটির ওপরে, আর লতাগুলো আস্তে আস্তে নড়ছে। হাওয়ার সঙ্গে গাছের পাতাগুলো কাঁপছে,কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার,সে অনুভব করল যেন গাছটা তাকে দেখছে!

এটাই কি সেই রহস্যময় গাছ?” রাহুল ফিসফিস করে বলল। সে গাছের আরও কাছে যেতেই হঠাৎ তার লতাগুলো সাপের মতো এগিয়ে এল! রাহুল ভয় পেয়ে দৌড় দিল। এদিকে হঠাৎই এক অদ্ভুত আওয়াজ শোনা গেলকাট! কাট! কাট!

রাহুল লুকিয়ে দেখে, একদল মানুষ গাছ কেটে নিচ্ছে। তাদের বড় বড় করাতের শব্দে জঙ্গল কাঁপছে। অনেক বড় গাছ মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। এক বৃদ্ধ আদিবাসী লোক তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছে, “এসব বন্ধ করুন! এই গাছগুলো কেটে ফেললে পুরো জঙ্গল ধ্বংস হয়ে যাবে!” কিন্তু লোকগুলো শোনার বদলে বৃদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। রাহুলের মনে হল,কিছু একটা করতেই হবে! সে জঙ্গলের ভেতর ছুটতে লাগল, এমন কিছু খুঁজতে যা এই কাটা বন্ধ করতে পারে। হঠাৎ সে এক জায়গায় দেখল,মাটির নিচে এক বিশাল শিকড় নড়ছে। এটা একটা বিশেষ গাছ—”ড্রাগনের রক্তগাছ! এর লাল রস গাছের ক্ষত সারিয়ে দিতে পারে।

সে দ্রুত কিছু রস সংগ্রহ করল আর সেটা নিয়ে গিয়ে গাছগুলোর কাটার জায়গায় ছড়িয়ে দিল। মুহূর্তের মধ্যে গাছের গায়ে নতুন ছাল গজিয়ে উঠল!

লোকগুলো বিস্মিত হয়ে গেল! “ কী? এই গাছগুলো তো আপনাআপনি সেরে যাচ্ছে!”

তারা ভয় পেয়ে দৌড়ে পালাল।

আদিবাসী বৃদ্ধ রাহুলের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন,”তুমি প্রকৃতির বন্ধু। প্রকৃতি তোমাকে আশীর্বাদ করুক!”

ঠিক তখনই রাহুলের চোখ খুলে গেল।

সে দেখল,সে তার নিজের বিছানায়! জানালার বাইরে চাঁদের আলো পড়ছে।

সে নিজের কপাল ছুঁয়ে দেখল,ঘাম জমেছে।

এটা কি স্বপ্ন ছিল? নাকি সত্যি?” সে মনে মনে ভাবল।

পরদিন সকালে সে দাদুকে সব বলল। দাদু মৃদু হেসে বললেন,”দেখলে তো,প্রকৃতি আমাদের কত কিছু শেখায়। আমরা যদি গাছপালা রক্ষা না করি,তাহলে একদিন আমাজনের মতো সবুজ জায়গাগুলো হারিয়ে যাবে।

সেদিন থেকে রাহুল ঠিক করল,সে প্রকৃতির রক্ষার জন্য কাজ করবে। সে তার বন্ধুদের নিয়ে স্কুলেপ্রকৃতি ক্লাবখুলল,যেখানে তারা গাছ লাগানো, প্লাস্টিক বন্ধ করা আর পরিবেশ রক্ষার প্রচারণা চালাবে।

আমাজন আজও রহস্যময়। হয়তো রাহুলের স্বপ্ন একদিন সত্যি হবে, হয়তো সে সত্যিই একদিন আমাজনে যাবে। কিন্তু তার আগে সে ঠিক করেছেপ্রকৃতির বন্ধু হতেই হবে!
********************************

অজন্তা প্রবাহিতাঃ
লেখক পরিচিতিঃ আসামের ডিব্রুগড় শহরে জন্ম। স্কুলিং আসামের তৈলনগরী ডিগবয়ে। উচ্চমাধ্যমিকের পরে উচ্চশিক্ষার জন্য স্বপ্নের শান্তিনিকেতনে পাড়ি। সেখান থেকে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী। বিভিন্ন পত্রিকা ও সংকলনে লেখালেখি করেন। বন্যপ্রাণী ও পাখী সংরক্ষণের চেষ্টায় নিকটতম বন্ধুদের সাথে www.lensinwoods com নামে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংরক্ষণের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। জীবনের লক্ষ্য,নিজের কাজের সাহায্যে যেন পৃথিবীর বুকে নিজের একটা আঁচড় কেটে যেতে পারেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!