
হরিরামের স্মরণসভা
মণি ফকির
আমি আর গৌতমদা দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি। সে এগিয়ে এসে দেহাতি হিন্দি তে বলল,”এখানে কি হচ্ছে ?”
বললাম,”ভাই স্মরণসভা।”
সে বলে,”ও ক্যায়া হোতা হ্যায় ?”
বললাম,”আরে ! কোন বিশিষ্ট লোকের মৃত্যুর পর তাঁকে ও তাঁর কীর্তি কে স্মরণ করা হয়,শ্রদ্ধা জানানো হয়।”
এবার এল গোলা ।
“বাবু কিতনা খরচা হোতা হ্যায় ? হামাকো ভি করানা হ্যায় আপনা |”
“আরে বল কি হে,জীবিত লোকের স্মরণসভা 😳? তাও যদি কেউকেটা কেউ হতো।”
গৌতমদা হাসছে। দোকানের সবাই হাসছে। হরিরাম কিঞ্চিৎ কাঁচুমাচু হয়ে বলল,”বাবু আপনারা লেখা পড়া জানা লোক। আমি আর কি বুঝি। বেশ ফটো লাগিয়ে,ফুল দিয়ে সাজিয়ে কতো ভালো ভালো কথা হয়। আমারো ইচ্ছে এমন হোক ।”
কোনোভাবে সেদিন তো কাটিয়ে দিলাম। এদিকে ওর দোকানে গেলেই ধরে। ভয়ে দোকানে যাওয়া ছেড়ে দিলাম। ব্যাটা চা টা বড্ড ভালো বানায়। না গিয়ে থাকাও যাচ্ছেনা। একদিন ক্লাবে বসে আছি । শ্রীমান হাজির। বলে স্মরণসভা করাবে। কত লাগবে বল ।
কয়েকজন চ্যাংড়া পোলাপান ছিল। সাইডে ডেকে বলল,“আরে করিয়ে দাও না,বাকি যা বাঁচবে তা দিয়ে এই শীতে পিকনিক টা হয়ে যাবে।”
এই কৈতবে আমাদের সায় ছিলনা। কাটানোর জন্য বললাম,”দেখো প্রায় হাজার দশেক খরচা।”
বাজেট শুনে একটু দমে গেল হরিরাম। মুখ টা দেখে মনে অপরাধ বোধ হচ্ছিল। দুদিন পর সে এসে হাজির,”বাবু ছয় হাজার জোগাড় করেছি। বাকিটাও আনবো। আপনারা মাই বাপ আছেন। করে দিন।”
কি আর বলি। টাকাটা নিলাম। ও খুব প্রসন্ন মুখে চলে গেল।
আমরা সবাই অনেক পরিকল্পনা করে একটা স্মরণসভা প্ল্যান করলাম। একটি ছেলেকে দিয়ে একটা কাল্পনিক পোর্ট্রেট আঁকানো হলো। লোক জোগাড় করতে গিয়ে সমস্যা। সবাই বলছে কে এই হরিরাম ভাই? কি করত? চিনি না তো। বলা হলো বিশিষ্ট সমাজসেবী, পর্দার আড়ালে থেকে মানুষের জন্য করতো,হরিরাম আগরওয়াল।
কেস হলো অনুষ্ঠানের দুদিন আগে। হরিরাম বলে সেও আসবে। আমাদের তো মাথায় হাত। বলে কি! যার স্মরণসভা সে স্বশরীরে ! একটাও বাইরে পড়বে না। একজন বলল,”আরে গুরু আসুক না। ওকে আর কে তেমন চেনে। ছবি তো অন্য লোকের।”
আমরা নিমরাজি হলাম।
অনুষ্ঠানের দিন আমরা চাপে। ওকে সাইড করতে হবে। সামনে আসতে চাইলেই বিপদ।
যথারীতি অনুষ্ঠান শুরু হলো। সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নও হলো। এদিকে হরিরামের পাত্তা নেই। আমরা হাঁফ ছেড়ে বাচলাম। মনটা খুঁতখুঁত করছিল। হাজার পাঁচেক টাকা বেঁচেছিল। ঠিক করলাম ওর হাতেই দিয়ে দেব। মুস্কিল হলো ফোন নম্বর নেই। বাড়ি চিনি না। কোনোভাবেই যোগাযোগ করা গেল না। পরের দিন দোকানে গেলাম,বন্ধ। তার পরের দিনও। পাশে একটা ফাস্ট ফুডের ঠেলা ছিল। ওরা বলল দাদা জানেন হরিরাম না দিন তিনেক আগে হঠাৎ মরে গেছে। শুকনো নেশা করত। ঘুমের মধ্যেই…
আমরা আর কথা বাড়ালাম না। সোজা ওখান থেকে দামোদর ঘাটে,একটি পুরোহিত ধরে নিয়ে গেলাম। যা যা নিয়ম মেনে যখন ফিরছি,হাল্কা করে গৌতম দা বলল,”সত্যি সত্যিই ওর স্মরণসভা হয়ে গেল। মনটা একটু হলেও হাল্কা লাগছে।”
*********************************
মণি ফকিরের জন্ম শিল্পনগরী বার্ণপুরে। সাহিত্য চর্চার অভ্যাস ছাত্র জীবন থেকেই। অনুপ্রেরণা মা ও মামার কাছ থেকে। প্রথম কবিতার বই *মণি ফকিরের পদাবলী* প্রকাশিত হয় ২০১৮ পূজোয়। গল্পকারের মূল বৈশিষ্ট্য তার গল্প বোনার ও বলার সাবলীল ধরন। গল্পের শেষে কিছু না বলা কথার প্রচ্ছন্ন ঈঙ্গিত মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে।।
খুব সুন্দর হয়েছে..নতুন ধরনের গল্পে…. হাসির পরিবেশ হঠাৎই গম্ভীর হয়ে গেল
খুব সুন্দর হয়েছে..নতুন ধরনের গল্পে…. হাসির পরিবেশ হঠাৎই গম্ভীর হয়ে গেল..বেশ ভালো লাগলো
খুব সুন্দর হয়েছে..নতুন ধরনের গল্প…. হাসির পরিবেশ হঠাৎই গম্ভীর হয়ে গেল..বেশ ভালো লাগলো