উতলা উলূপী
পরাগ ভূষণ ঘোষ
নাগরাজ কৌরব্যের রাজত্বে প্রজারা সর্বদাই খুশীতে থাকেন। কৌরব্য শুধু রাজাই নন, সকলের সর্ব বিষয়ে দৃষ্টি রাখেন। অনার্য কৌরব্যের সুনাম, খ্যাতি, যশ চতুর্দিকে থাকা সত্বেও মনের ঈশান কোণে একটি কালো মেঘ জমে থাকে। আর্যরা তাদের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। ওরা যুদ্ধবিদ্যায় ও গুপ্ত আক্রমণে পারদর্শী। এদিকে তার বৈমাত্রেয় শত্রু শিবিরও ওত পেতে থাকে সর্বক্ষণ। একটু অসতর্কতা ডেকে আনতে পারে চরম বিপর্যয়। এ কারণেই তার একমাত্র কন্যাকে পিতা কৌরব্যের উৎসাহকে সম্মান জানিয়ে যুদ্ধবিদ্যা করায়ত্ত করতে হয়েছে।যথাসময়ে কন্যার বিবাহ দেন বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে। অসামান্য সুন্দরী ছিলেন সেই রাজকন্যা। পদ্মফুলের মতো মুখমন্ডলে বুদ্ধিদীপ্ততার ছাপ স্পষ্ট। সরোবরের ন্যায় চক্ষুদুটির মনোহরী দৃষ্টিতে স্নিগ্ধতা। একঢাল দীর্ঘ কৃষ্ণকুন্তলদাম রাজকন্যার পৃষ্ঠদেশ অতিক্রম করে কটিদেশ ছাড়িয়ে নিম্নাঙ্গে প্রবাহিত। দেহসৌষ্ঠব ঈর্ষণীয়। সৃষ্টিকর্তা তাঁর সকল শৈল্পিক উপকরণ ঢেলে দিয়েছেন এই রাজকন্যার অঙ্গে। কিন্তু তাঁর বিবাহোত্তর সুখ, আমোদ প্রমোদ ছিল ক্ষণস্থায়ী। জ্ঞাতি শত্রু গরুড় আর্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই রাজকন্যার পতি সুপর্ণনাগকে হত্যা করে। যুবতী রাজকন্যার জীবনে নেমে আসে ঘোর ঘনঘটা। দিন ও কালের আবর্তনে সেই শোক তাঁকে ক্রমশ বিষণ্ণ করে তোলে। দেহ মনকে সংযত রেখে সে আর কোনও দ্বিতীয় পুরুষের দিকে দৃষ্টিপাত করেনি। তাঁর সৌন্দর্য্য, তাঁর রূপ, তাঁর কামনা বাসনাকে বশে রেখে দিন অতিবাহিত করাটা এক কঠিন পরীক্ষার সামিল। বিষণ্ণতা ধীরে ধীরে তাঁর শরীরে প্রকাশ পায়। পিতা কৌরব্য তাঁর কন্যার কারণে উদগ্রীব হয়ে রাজ কবিরাজকে ডেকে পাঠান। কবিরাজমশাই বিধান দেন রাজকন্যা বিষাদ রোগে আক্রান্ত। অল্প বয়সে পতি হারিয়ে আজ যে অবস্থায় আছে রাজকন্যা, সেখান থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় তাঁর পুনরায় বিবাহ বা কোনও পুরুষের প্রেম ও সঙ্গ যেটা তাঁকে শরীর মনে সতেজ রাখবে। কিন্তু রাজকন্যা আর কোনও পুরুষের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার মানসিক প্রবৃত্তি হারিয়ে ফেলেন। অন্তরের অন্দরে সেই অনুভূতিকে চিরনিদ্রায় শায়িত রাখেন।
নারী প্রহরী পরিবেষ্টিত হয়ে রাজকন্যা প্রত্যহ অবগাহনের নিমিত্ত গঙ্গাস্নানে যান। আজও তিনি সেই উদ্দেশ্যেই গঙ্গায় এসেছেন। প্রহরীদের সঙ্গে কিছু জলক্রীড়া করার পর সুখস্নানে লিপ্ত ছিলেন। আচমকা এক দৃশ্য দেখে তাঁর মনে ঢেউ খেলে যায়। স্নানরত অবস্থায় মস্তক উন্নত করে দেখেন এক অপরূপ সুপুরুষ তীরে দন্ডায়মান। গভীর মনোযোগে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে অথবা সূর্য্য দেবতাকে নিবিষ্টমনে প্রণাম করছেন। সদ্যস্নাত সৌম্যকান্ত মানুষটির উর্দ্ধাঙ্গ অনাবৃত, স্বেদবিন্দুর মতো গঙ্গার জল সেই অনাবৃত অঞ্চল বেয়ে নিম্নগামী। গাত্রবর্ণ পরিচয় দেয় সে কোনও ক্ষত্রিয়। টানটান চিবুক ও উন্মুক্ত প্রশস্ত বক্ষ যেন কোনও রাজার পরিচয় বহন করে।
রাজকন্যা নিজের মনকে শান্ত করার জন্য ভিন্ন দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। কিন্তু বৃথা যায় তাঁর সেই প্রচেষ্টা। ব্যাকুল আঁখি চায় বারংবার ফিরে ফিরে চাইতে। মানসিক অস্থিরতা তাঁকে চঞ্চল করে তোলে। পতি চলে যাওয়ার পর কোনওদিন সে তাঁর মনকে অসংযত হতে দেন নি। অথচ আজ দেহ, মন আর বশে থাকতে চাইছে না। জল থেকে ভেসে উঠে তিনি ঐ যুবা পুরুষকে দু চোখ ভরে দেখতে থাকেন বারবার। শেষে ডুব সাঁতারে যুবার পদতলের তীরে ভেসে ওঠে। সুপুরুষ যুবা তাঁর প্রণাম সমাপন করে নিমীলিত চক্ষুদ্বয় উন্মোচিত করে সম্মুখে অপরূপা সিক্ত বসনা যুবতীকে প্রত্যক্ষ করে তাঁর দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
রাজকন্যা প্রশ্ন করেন,“আমার হৃদয় বিদারণকারী, তোমার পরিচয় দাও। তোমাকে দর্শন করে অনুমান করি কোনও রাজন আমার সম্মুখে।”
“আমি ব্রহ্মচর্য পালনরত এক ক্ষত্রিয়। আমি তৃতীয় পাণ্ডব। তোমার পরিচয়?”
“তুমি অর্জুন? হস্তিনাপুরের পাণ্ডবদের রাজধর্ম পালন, তাঁদের জ্ঞান, তাঁদের কথা সকলেই জানেন। কিন্তু তুমি এই বেশে নির্জনে, নিরালায় কেন? আমি নাগরাজ কৌরব্যের একমাত্র কন্যা উলূপী।”
“হে রাজকন্যে, সে কথা থাক। আমার পথে আমাকে যেতে অনুমতি দাও।”
“পাণ্ডবশ্রেষ্ঠ, তুমি আমাদের সাম্রাজ্যের অতিথি। অতিথিকে সেবা করা আমাদের প্রধান কর্তব্য। চলো আমার সঙ্গে প্রাসাদে। তুমি ক্ষুধার্ত বটে। প্রাসাদে সেবা গ্রহণ করে রাত্রি যাপন করে আমাদের ধন্য করো।”
“কিন্তু আমার এখন ব্রহ্মচর্যাশ্রমের দিন অতিবাহিত হচ্ছে। ইন্দ্রিয় দমন এই পর্যায়ের প্রধান, কঠোর ও একমাত্র পরীক্ষা। আমাকে সেই স্থান থেকে বিচ্যুত করো না। আমি যে তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্ত সেটা তুমি আন্দাজ করাতে আমি খুশী।”
রাজকন্যা উলূপীর নিমন্ত্রণ রক্ষার্থে অর্জুন তাঁর পশ্চাতে অনুসরণ করেন এবং কিয়ৎক্ষণ পর যুগলে রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে। পথমধ্যে এই সাম্রাজ্যের যে সকল চিত্র তিনি দেখতে পান তাতে যথেষ্ট প্রীত হন। প্রথম দৃষ্টিতেই এই রাজ্যের বা সাম্রাজ্যের প্রজাদের সর্বদা স্মিতহাস্য, খুশির আলোকে আলোকিত মুখমন্ডলগুলি দেখে মনে প্রশান্তি এনে দেয়। পাখির কলতানে মুখরিত চারিদিক,মৎস্যকুল সরোবরে ক্রীড়ায় মত্ত। প্রাসাদের মূল ফটক থেকে রাজপুরোহিত সসম্মানে তাঁকে অন্দরমহলে নিয়ে যান।
বিশ্রাম ও আহার সমাপনের পর উলূপী একটি নিরালা কক্ষে অর্জুনকে নিয়ে প্রবেশ করেন।
“বীর অর্জুন, এই কক্ষে রাত্রি যাপন করো। আমার অন্তরে কিছু জিজ্ঞাস্য উদ্রেক হয়েছে। সেগুলির সঠিক উত্তরের প্রতীক্ষায় আমি উন্মুখ।”
“তোমার প্রশ্ন তো প্রাঞ্জল হওয়াই স্বাভাবিক। আমি নিশ্চিত তুমি জানতে চাও আমি কেন এই পরিবেশে, এই বেশে, এই দেশে ?”
“মহানুভব, ঠিক এই প্রশ্নগুলোই আমাকে দংশন করছিল। আমার সংযমের ব্রত ভেঙ্গে খানখান হয়ে গিয়েছে। আজ আমি নির্দ্বিধায় অকপটে স্বীকার করছি আমি তোমার অপেক্ষায় দিন অতিবাহিত করছিলাম। তুমি আমায় গ্রহণ করে তপ্ততা নিরসন করো।”
“সেটা সম্ভব নয়। আমি অঙ্গীকারবদ্ধ। নারীসঙ্গ আমার ব্রহ্মচর্য পালনে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তুমি অনন্যা, তুমি বিদুষী, তুমি অপরূপা। আমাকে প্রলোভনের হাতছানি দেওয়া তোমার আচার বিরুদ্ধ।”
“হে সখা, আমার শরীর, মন, অন্তরাত্মা সব তোমায় দিয়েছি ঢেলে। আমার পাপিষ্ঠ মনে কামনার উদ্রেক হয়েছে। আমি মানি না তোমার ব্রহ্মচর্য, তোমার অঙ্গীকার।”
“কৌরব্যতনয়া, তুমি শান্ত হও। আর তো মাত্র কয়েকঘণ্টা। তারপর প্রভাতের সতেজ রবিকিরণে আমি বিদায় নেব। আবার অন্য কোনও ভিনদেশ, ভিন রাজ্যে পাড়ি দেবো। এ ভাবেই শেষ হবে আমার বারো বৎসরের সংযমী ব্রহ্মচর্য সময়সীমা।”
“কিন্তু কেন এই শৃঙ্খল প্রিয়তম?”
“সে এক কাহিনী,….. দ্রুপদরাজ তাঁর কন্যা দ্রৌপদীর বিবাহের নিমিত্ত উপযুক্ত পুরুষের খোঁজে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। জলের প্রতিবিম্বে দৃষ্টিপাত করে বিপরীতে অবস্থিত বস্তুটির সঠিক স্থানে লক্ষ্যভেদ করে আমি দ্রৌপদীকে জয় করি।”
“তাহলে তুমি ব্রহ্মচর্য পালনে ব্রতী কেন?”
“নিয়মকে সম্মান জানানোর ফল।”
“কিন্তু আমার দেহমন আর অপেক্ষায় থাকতে রাজি নয়। তুমি বলো -”
“হস্তিনাপুর রাজপরিবারের কোনো সদস্যের বিজয়ী হয়ে প্রাসাদ অভিমুখে গমন এক বৈচিত্র্যময় রঙিন উৎসব হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরিস্থিতি প্রতিকূল থাকায় আমরা একপ্রকার লুক্কায়িত অবস্থায় দ্রৌপদীকে জয় করে আমরা আমাদের পর্ণকুটিরে পুনরায় প্রত্যাবর্তন করি।”
“প্রিয়তম, তুমি দ্রুপদ রাজকন্যাকে জায়ারূপে গ্রহণের কারণে বিশ্বের সর্বাধিক সুখী ও আনন্দিত পুরুষ হবে সেটি স্বাভাবিক। পরন্তু এই রাজ্যে কি প্রকারে আগমন? কি হেতু?”
“আমার অগ্রজ দুই ভ্রাতা ও অনুজ দুই ভ্রাতা সহ আমি আমার নববিবাহিতাকে সঙ্গী করে সেই অজ্ঞাতবাসস্থান পর্ণকুটিরে প্রবেশের ক্ষণে মাতা আমাদের প্রত্যাবর্তনের সন্দেশ পান। তিনি কক্ষের অন্দরে অবস্থিত অবস্থায় খুশিতে আপ্লুত হয়ে আদেশ দেন সেই জয়লাভ করা বস্তু যেন সকল ভ্রাতা সমান অংশে বিভক্ত করে নিই ও উপভোগ করি। এইরূপে দ্রৌপদী পঞ্চভ্রাতা বা পঞ্চপাণ্ডবের জায়া পাঞ্চালী নামে পর্ণকুটিরে প্রবেশ করেন।”
“প্রিয়তম পার্থ, তোমার রূপ, তোমার বাচনভঙ্গীতে আমি মুগ্ধ। অতিরিক্ত সময় অপচয়ে আমি অপারগ। তুমি সংক্ষিপ্ত ভাবে জানাও। আমি তোমাকে পতিরূপে গ্রহণ করতে উন্মুখ, মিলিত হওয়ার নিমিত্ত অপেক্ষারত। এসো বীর, গ্রহণ করো এই দেহপট।”
“আমরা ক্ষত্রিয়, আমরা রাজবংশ। আদেশ ও কর্তব্য পালন আমাদের প্রধান দায়িত্ব। মাতা কুন্তীর আদেশ কি প্রকারে পালন করা হবে সেই বিষয়েই যখন সকলে চিন্তিত ছিলাম, সেই মুহূর্তে নারদ আমাদের সমস্যার সমাধান করেন। সমস্ত বিষয়ের নিরসন ঘটান।”
“বাহ, অতি উত্তম। কি প্রকার এই সমাধানসূত্র?”
“তিনি অতীব বাস্তব ও গ্রহণযোগ্য সমাধানসূত্র আমাদের সকলের মাঝে উপস্থাপিত করেন যেখানে কিছু অন্তর্নিহিত শর্তও প্রযোজ্য ছিল। দ্রৌপদীকে আমরা পঞ্চ ভ্রাতাই স্ত্রী রূপে গ্রহণ করি। প্রতি ভ্রাতা একটানা একটি বৎসর দ্রৌপদীর সঙ্গে পতি-জায়া সম্পর্ক স্থাপন করিবেন। সেই সময়কালে অন্যকোনও ভ্রাতা নিয়ম ভঙ্গ করিলে তাঁহাকে বারো বৎসর নির্বাসনসহ ব্রহ্মচর্য পালন করিতে হইবে। এই নিয়মের কোনও অন্যথা হইবে না। প্রজাপতি নারদের এই সমাধানের পশ্চাতে কারণটি প্রশংসনীয়। সন্তানের পিতৃত্ব পরিচয় সুনিশ্চিত করা। এই সমাধান সূত্রকে মান্যতা দিয়ে প্রথম বৎসর সর্বজ্যেষ্ঠ পাণ্ডব ন্যায়-নীতিপরায়ণ, ধার্মিক ধর্মরাজপুত্র যুধিষ্ঠির পতির ভূমিকা পালন করেন।”
“হে বীরপাণ্ডব,পরবর্তী অংশ শোনার প্রতীক্ষায়।”
“ক্ষত্রিয়ের সহজাত প্রবৃত্তি হলো অপরের বিপদে রক্ষা করা। এক ব্রাহ্মণের গোশালা হতে গাভী চুরির সংবাদ কর্ণগোচর হওয়ার মুহুর্তেই সেই তস্করকে বন্দি করার তাগিদ আসে। আমার গাণ্ডীবটি আনয়নের নিমিত্ত অস্ত্রাগারে প্রবেশ করি। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সেইক্ষণে পাঞ্চালীর সহিত রমণে লিপ্ত ছিলেন। নারদমুনির শর্ত লঙ্ঘন করার নিমিত্ত আমার বারো বৎসরের নির্বাসন এবং ব্রহ্মচর্য।
তুমি আমার হৃদয় দুর্বল করে দিও না। আমার ব্রহ্মচর্য পালনের ব্রত থেকে আমাকে বিচ্যুত করো না।”
“হে প্রাণেশ্বর পার্থ, তোমার ক্ষত্রিয়ধর্ম কি সেকথাই বলে? তোমার ব্রহ্মচর্য পালন করার হেতু তো দ্রৌপদী। তাঁর অবর্তমানে সেই শর্তের বিধি মেনে চলার কোনও যৌক্তিকতা নেই। এক রাজকন্যে, যে তোমাকে ঘনিষ্ঠভাবে পাওয়ার লাগি তার দেহ, মন, আত্মা, তাঁর প্রতিটি রোমকূপ, তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উৎসর্গ করেছে, সেই প্রাণাধিক প্রিয় পুরুষ যখন তাঁর সম্মুখে হাজির হয় তখন সেই ক্ষত্রিয়ের ধর্ম ও দায়িত্ব সে এড়িয়ে যেতে পারে না। এসো আমার কামনার শিখায় আলোকিত হই আমরা। এই তমসাকে সাক্ষী রেখে আমাদের ভালোবাসা হয়ে উঠুক এক দৃষ্টান্ত।”
“নাগকন্যা উলূপী, আমি প্রভাতের ঊষালগ্নেই এই স্থান পরিত্যাগ করিব। আমার সংযমী জীবনের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করো না। অবশ্য তোমার কথাও সঠিক। নারদের দেওয়া শর্ত পালন একমাত্র আমাদের পাঁচ ভ্রাতা ও দ্রৌপদীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।”
“মহাবীর পাণ্ডবশ্রেষ্ঠ, তোমার বীরত্ব, সততার কথা কর্ণগোচর হয়েছিল পূর্বেই। সেই সময়কাল হতেই তোমাকে আমি পতিরূপে নিঃশব্দে নিভৃতে চেয়েছি। কথার ছলে সময় অতিবাহিত করে ঊষালগ্নকে দ্রুত আহ্বান কোরো না। কথা দিলাম অদ্য এই নিশিযাপনের পর তোমায় মুক্তি দেব বিনা দাবিতে, আমার আর কিছু চাওয়া, পাওয়ার নেই। এসো অর্জুন, এই আনন্দঘন সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করি।”
কথোপকথনে প্রায় মধ্যরাত হয়ে যায়। অতঃপর অর্জুন তাঁর সংযমী বাঁধের ফটক আলগা করে। অবশিষ্ট রাতটুকু প্রথম রিপুর তাণ্ডবে অতিবাহিত হয়। উলূপীর সঙ্গে তাঁর এক রাতের পতিজায়া সম্পর্কের বীজটি প্রোথিত করে প্রভাতেই স্থান পরিত্যাগ করেন।।
(সমাপ্ত)
**********************************
পরাগ ভূষণ ঘোষ পরিচিতি:
পিতা ঈশ্বর নির্মল চন্দ্র ঘোষ। মাতা ঈশ্বর সাথী ঘোষ। জন্ম শহর শিলিগুড়ি, জেলা দার্জিলিং। বর্তমান নিবাস বহরমপুর। পেশায় ব্যাঙ্ক কর্মী। পিতা ছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারী। ছোটবেলায় লক্ষ্য করতেন স্বর্গীয় পিতৃদেব ও স্বর্গীয়া মাতৃদেবী অবসর সময়ে সর্বদা বই পড়ায় নিজেদের লিপ্ত রাখতেন। যে কারণে কৈশোরবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। পরিবারে টুকটাক লেখালিখির প্রচলন ছিল যেটা আজও আছে।