অচেনা একজন
রিমিতা কর
আজ সারাদিন রাহীর সাথে একবারও কথা বলার সময় পায়নি অত্রি। হাতের কব্জি উল্টে সে দেখল সন্ধ্যে ছটা। রাহীর লাস্ট মিসড কলটা বোধহয় বিকেল তিনটেতে এসেছিল। একবার নয় পরপর তিনবার। অত্রি তখন মিস্টার তলাপাত্রর কাছ থেকে আগামী সাতদিনের অ্যাসাইনমেন্টটা বুঝে নিচ্ছিল। মিস্টার তলাপাত্র অত্রির বস এবং এই রিজিয়নের জোনাল ম্যানেজার। বয়স মধ্য চল্লিশ। লম্বা ফর্সা ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ির সাথে দামী গোল্ডেন ফ্রেমের চশমা। যেমন স্মার্ট তেমন খুঁতখুঁতে আর ডিসিপ্লিনড। আরও একটা আশ্চর্য গুন ওনার আছে। লোকটা চোখ দেখে মন পড়তে পারে। এই একটা কারনে অত্রি রীতিমতো তলাপাত্র কে ভয় পেয়ে চলে। সত্যিই আশ্চর্য ক্ষমতা বলতে হবে। এই যেমন কিছুক্ষণ আগে তলাপাত্র নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে অত্রিকে বোঝাচ্ছিল। সামান্য বিষয় নিয়ে লোকটা এত ডিটেলে বলে যে অত্রির ঘুম পেয়ে যাচ্ছিল। টিফিনের পর ঠান্ডা ঘরে বসে এত বকবকানি শুনলে কার না ঘুম পাবে। প্রোডাক্ট ডিটেল তো একটা দিন স্টাডি করলেই তৈরি হয়ে যায়। এত বোঝানোর কি আছে? তাছাড়া আজকাল রাহীর সাথে ফোনে কথা বলতে বলতেই অত্রির মাঝরাত হয়ে যায়। তাই দুপুরের দিকে ঘুম ঘুম পায়। সবে সামান্য তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব এসেছে। অমনি তলাপাত্র বলে উঠলেন,
“গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে বেশি রাত পর্যন্ত কথা বলে এনার্জি নস্ট করো না। এখন শুধু কেরিয়ারে ফোকাস করো।”
চমকে উঠে থতমত খেয়ে অত্রি কোনরকমে বলল,
“না স্যার ওসব কিছু না। আমি তো শুনছি।”
এবার একটু থেমে শান্ত গলায় তলাপাত্র বললেন,
“দেখো অত্রি তুমি কোন স্কুল পড়ুয়া নও যে গার্লফ্রেন্ডের নামে লজ্জায় লাল হয়ে উঠবে। তবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বিয়েটা হলেই কিন্তু সব মেয়ে এক ছাঁচে পড়ে যায়। বায়না না মিটলেই সমস্যা। তাই বলছি টার্গেটে মন দিয়ে প্রমোশনের চেষ্টাটা চালিয়ে যাও। ছুটির দিনে একটু আধটু ঘুরতে যাও। কিন্তু রাতের ঘুমটা খুব দরকার।”
অত্রির আর বলার মতো কিছু থাকেনা। মনে মনে ভাবে মহা বিপদে পড়া গেল। সত্যিই তো সে কাল অনেক রাত অবধি রাহীর সাথে কথা বলেছে। কিন্তু লোকটা জানল কি করে। অত্রি মন দেবার চেষ্টা করলো। তবে হু হু করে সময় এগোচ্ছে। রাহীর সাথে আজ আর বোধহয় তার দেখা হবেনা। অন্য দিন এইসময় অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে সে। সল্টলেক থেকে শাটল ট্যাক্সি তে রুবি যায়। সেখানে রাহীর অফিস। রাহী সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। আজ অবশ্য মনে হয় না রাহী তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে। রাহীর রণং দেহি চেহারাটা অত্রি যেন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে।
“কি হল ভয় করছে।”
তলাপাত্রর গলায় চমকে ওঠে অত্রি।
“কেন স্যার? কিসের ভয়?”
“না গার্লফ্রেন্ড অপেক্ষা করছে তাই বলছি।”
অত্রি এবার সত্যি সত্যিই ভয় পেল। তলাপাত্র মানুষ তো নাকি অন্য কিছু।
“আচ্ছা যাও আজ ছেড়ে দিলাম। কাল বাকিটা হবে।”
অত্রি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। দ্রুত ফাইলপত্র গুছিয়ে নিয়ে বেরতে যাবে এমন সময় তলাপাত্রর ডাক,
“অত্রি এক মিনিট ওয়েট করো আমি আসছি। তোমায় ড্রপ করে দেব।”
“না স্যার আমি বাসে চলে যাব।”
“কিন্তু মেয়েটা কতক্ষণ ওয়েট করবে?”
“কোন মেয়েটা?”
“মেয়েটার নামটাও আমি বলবো। তুমি নিজেই বলো।”
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পড়ে অত্রি। তলাপাত্র বলল,
“চলো চলো নিচে নামো। আমি আসছি। যেতে যেতে সব শুনব।”
অত্রি আর দেরি না করে কাঁচের দরজা ঠেলে চেম্বারের বাইরে চলে আসে। এসেই রাহীকে ফোন করতে করতে লিফট এর দিকে এগিয়ে যায়। রাহীকে সে এই এক বছরে ভালো করেই চিনে গেছে। এত সহজে যে সে ফোন তুলবেনা অত্রি জানে। তবু চেষ্টা করলো। কিন্তু অবাক কাণ্ড আজ একবারেই ফোন ধরল। তারপর নিশ্চুপ। অত্রি অস্থির হচ্ছে। তলাপাত্রর গাড়িতে ওঠার আগে কথা শেষ করতেই হবে। ছিনে জোঁকের মত পেছনে পড়ে আছে লোকটা। অত্রির বিষয়ে কেন যে এত আগ্রহ কে জানে। তবে আজকের মত এই সব কথা আগে কোন দিন বলেনি। বোধহয় ফাঁকা অফিসে একা পেয়ে ল্যাজে খেলাচ্ছে। তবে লোকটার প্রেমের ক্ষেত্রে সাংঘাতিক অভিজ্ঞতা বলতে হবে। যাক্গে ওকে নিয়ে চর্চা করার সময় বা ইচ্ছে কোনটাই অত্রির নেই। সে ব্যস্ত হয়ে বলল,
“রাহী লক্ষ্মীটি রাগ কোরো না। অনেক কথা আছে। আধ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছি। ঠিক পনেরো কুড়ি মিনিট পর অফিস থেকে বের হও। তলাপাত্রর গাড়িতে যাচ্ছি।”
গম্ভীর গলায় রাহী বলল,
“কোন প্রয়োজন নেই। আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি।”
“প্লিজ প্লিজ একবার কথা টা শোনো। ওই তলাপাত্র আজ সারাদিন আমাকে দম ফেলতে দেয়নি। তোমায় যে একটু ফোন করব সেই সুযোগ পর্যন্ত দেয়নি।”
পেছন থেকে তলাপাত্রর হিসহিসে গলা,
“যত দোষ নন্দ ঘোষ। গার্লফ্রেন্ড কে একবার ফোন করবে বললে কি করতে দিতাম না।”
ভীষণ ভাবে চমকে গিয়ে ফোনটা কেটে দিয়ে অত্রি কোনরকমে বলল,
“না স্যার ও কিছু না। আমি তো এমনি।”
“থাক আর কিছু বলতে হবে না। ফোনটা মাঝপথে কেটে দিয়ে তো আরও বিপত্তি করলে। পারবে তো সামলাতে। আর একবার নয় ফোনটা লাগাও।”
তলাপাত্রর কথা শুনে অত্রি মনে মনে বলে,
“বাপরে তোমার সামনে ফোন লাগাই আর কেস খাই। রাহীর সাথে দেখা না হয় না হবে। মুখ না খুলতেই সব বুঝে যাচ্ছো। বললে আর রক্ষা নেই।”
গাড়িতে উঠে তলাপাত্র ড্রাইভার কে বললেন,
“সোজা রুবির দিকে চলো।”
তারপর অত্রির দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বললেন,
“কি অত্রি ঠিক বলছি তো।”
“হ্যাঁ স্যার। কিন্তু আপনি।”
“জানতে হয়। আমাদেরও তো দিন ছিল।”
অত্রি এবার একটু সাহস করে বলেই ফেলল,
“আপনি কি ম্যাডামের সাথে ওখানে মানে।”
হো হো করে হেসে উঠে তলাপাত্র বললেন,
“না না সে সৌভাগ্য আমার হয়নি।”
“কিন্তু স্যার আপনি আমাকে নিয়ে যা ভাবছেন তা কিন্তু নয়।”
“ও তাহলে কিছু নয় বলছো। তা তোমার বাড়ি তো এন্টালি তুমি রুবির দিকে কেন যাবে বললে। তাছাড়া কার কাছে আমার নামে সব দোষ দিয়ে নিজের সাফাই গাইছিলে।”
অত্রি বুঝতে পারছে তলাপাত্র আজ বেশ খোসমেজাজে আছে। তাকে জোকার বানিয়ে বেশ মজা লুটছে লোকটা। কিন্তু ওদিকে রাহীকে যে কিভাবে মানাবে তাই অত্রি ভাবছে। রাহীর বাড়িতেও যাওয়ার উপায় নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অস্থির হয়ে ওঠে সে। প্রায় এসে গেছে। ফোন করার জন্য হাতটা নিস্ পিস্ করছে। কিন্তু করতে সাহস পাচ্ছে না। বলতে বলতে গাড়িটা রুবির গোল চত্বরে ঢুকে পড়েছে। কিছুটা এগিয়ে অত্রি গাড়িটা কে দাঁড় করাতে বলে। গাড়ি থেকে নেমে পড়ল সে। তলাপাত্রকে ধন্যবাদ জানিয়ে এগিয়ে যায় নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ডের দিকে। কিন্তু চারদিক তাকিয়ে কোথাও সে রাহীকে দেখতে পেল না। ব্যস্ত হয়ে ফোন লাগালো রাহীকে। ফোন সুইচ অফ। বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ল সে। সেই সাথে তলাপাত্রর ওপর রাগটা গিয়ে পড়ে অত্রির। তার এই স্ট্রাগলের একঘেয়ে জীবনে একমাত্র শান্তি রাহীর সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত গুলো। কোচবিহার থেকে সবাইকে ছেড়ে যখন কলকাতায় অত্রি এসেছিল তখন এই শহরটা মরুভূমির মতো লাগত ওর। তারপর একদিন কাজের সূত্রে রাহীর অফিসে যাতায়াত শুরু হয়। ক্রমশ দুজনের আলাপ বন্ধুত্ব শেষে মন দেওয়া নেওয়া। রাহীও মনের দিক থেকে খুব একা। ছোটবেলায় মা কে হারিয়ে বাবা আর বিধবা পিসির কাছে বড় হয়েছে। অত্রি কে পেয়ে সে যেন জীবনের দিশা পেয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে অত্রি যখন দিশেহারা ঠিক তখনি তলাপাত্রর গাড়িটা সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে মুখ বাড়িয়ে মিস্টার তলাপাত্র বললেন,
“উঠে এসো অত্রি।”
অত্রির ভেতরটা বিরক্তিতে ভরে যায়। মাথাটা ক্রমশ গরম হয়ে যাচ্ছে। লোকটা কি মতলবে তার পিছু ছাড়ছে না। চাকরি যায় যাক্ এবার কিছু একটা বলতেই হবে।
“উঠে এসো উঠে এসো গাড়ি দাঁড় করানো যাচ্ছে না।”
ধমক দিয়ে ওঠে তলাপাত্র।
ঘটনার আচম্বিতে গাড়িতে উঠতে বাধ্য হয় অত্রি। কিন্তু একটা কথাও সে বলছে না এখন। তলাপাত্রও বেশ চুপচাপ। একটু পরে অত্রির খেয়াল হল গাড়ি টা যাদবপুরের দিকে যাচ্ছে। সে ব্যস্ত হয়ে বলল,
“স্যার আমাকে নামিয়ে দিন। এখান থেকে এন্টালির বাস পেয়ে যাব।”
“অত্রি এখন যদি একটা অনুরোধ করি রাখবে? যদি বলি তোমার ম্যাডামের হাতে তৈরি এক কাপ কফি খেয়ে যাও।”
তলাপাত্রর গলায় কি ছিল কে জানে অত্রির রাগ পড়ে যায়। সত্যিই তো এই শহরে বাড়িতে ডেকে এক কাপ কফি খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাবার মতো কাছের মানুষ তার কেউ নেই।
অত্রি বলল,
“নিশ্চয়ই স্যার চলুন।”
এখন বেশ ভালো লাগছে অত্রির। মিস্টার তলাপাত্রর মধ্যে কেমন একটা নিজের মানুষের ছোঁয়া রয়েছে। তার মতো জুনিয়রের জন্য এত বড় একটা মানুষের এই আহ্বান অনেক সম্মানের। এইসব ভাবতে ভাবতে অত্রি দেখল গাড়িটা যাদবপুরের একটি অভিজাত আবাসনে ঢুকে পড়েছে। তলাপাত্র বেশ খুশি মনে অত্রি কে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে লিফটের দিকে এগিয়ে গেলেন। অত্রির বেশ টেনশন হচ্ছে। তলাপাত্রর কাছ থেকে দু একবার ম্যাডামের কথা ছাড়া তাঁর পরিবার সম্বন্ধে আর কিছুই শোনেনি সে। তাছাড়া কলকাতার এতবড় আবাসনেও সে আগে আসেনি। কলকাতার মানুষ জন সম্পর্কে এখনও কেমন একটা ভীতি রয়েছে তার। যাইহোক বেল বাজাতে এক মহিলা দরজা খুলে দিল।
“ম্যাডাম কে ডাকো। বলো অত্রি এসেছে। অত্রি এসো এসো। এখানে বসো। আমি একটু আসছি।”
ব্যস্ত গলায় কথা গুলো বলে ভেতরে চলে গেলেন তলাপাত্র। ফ্ল্যাটের চারদিক দেখে অত্রি তাজ্জব হয়ে যায়। রুচিসম্মত স্নিগ্ধ অন্দর সজ্জা অত্রির চোখ মন জুড়িয়ে দেয়। বৈভবের থেকেও চোখ টানে ঘরের সর্বত্র ধ্রুপদী শান্তিনিকেতনি ছাপ। রামকিঙ্কর বেজ যামিনী রায়ের দেওয়াল জোড়া পেন্টিং বেতের সোফা পোড়া মাটির সাঁওতাল দম্পতি নরম আলো সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত আবহ সৃষ্টি করেছে। অত্রি মনে মনে তারিফ করে এবাড়ির গৃহিণীর অপূর্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে। একটু পরেই ধবধবে সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরে ঘরে ঢুকলেন মিস্টার তলাপাত্র। পাশে হুইল চেয়ারে ঠেলে ঢুকলেন অপূর্ব মুখশ্রীর অনাবিল হাসিমুখের এক ভদ্রমহিলা।
“অত্রি ইনি তোমার ম্যাডাম। ”
ম্যাডাম হাঁটতে পারেন না। হতবাক অত্রি। উঠে দাঁড়িয়ে হাত তুলে প্রণাম জানায় সে।
“তুমি অত্রি। উফ্ তোমাকে দেখার জন্য ছটফট করছিলাম।”
একগাল হেসে ম্যাডাম বললেন। অত্রি আরও অবাক হয়ে যায় সে কে এমন যে তাকে দেখবার জন্য ম্যাডাম অস্থির হয়ে ছিলেন।
“আরে ওর কফিটা আনতে বলো।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ সব রেডি। মান্টি আনছে।”
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কফির ট্রে নিয়ে যে ঘরে ঢুকলো তাকে দেখে অত্রি নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। চোখ নামাতেও পারছে না।
“কি হল অত্রি তুমি ওকে চেনো নাকি?”
“না মানে-‐- মানে?”
“কি মানে মানে করছো?”
দমফাটা হাসিতে অত্রি ছাড়া বাকি তিনজন ফেটে পড়ে। অত্রি অসহায়ের মতো রাহীর হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে। রাহী এখানে এলো কি করে। এখনো বুঝতৈ পারছে না অত্রি। এমন সারপ্রাইজড বোধহয় জীবনে প্রথম হল অত্রি।
ম্যাডাম হাসতে হাসতে কোন রকমে বললেন,”মান্টি আর হাসতে পারছি না পেট ব্যথা করছে।”
“তোমায় বলেছিলাম না মিমি ও খুব গোবেচারা। আর মেসোমনি কে খুব ভয় পায়।”
তলাপাত্র ও অত্রির দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বললেন, “মান্টি এবার খুব বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আর না এবার অত্রি কে সব খুলে বল।”
“বলছি বলছি মেসো। তুমি কি ভাবছ ও সব না শুনে এখান থেকে যাবে।”
ম্যাডাম বললেন,“যাবে কি রে? ও তো ডিনার করবে। তারপর ইচ্ছে হলে যাবে না হলে এখানে থেকে যাবে।”
অত্রি ব্যস্ত হয়ে বলল,“না না।আমাকে উঠতে হবে ম্যাডাম।”
কফির ট্রে টা টেবিলে রেখে রাহী সোফায় বসে বলল,“কি হল এখনি যাবে না কি। এখনো ভয় পাচ্ছ আমার মেসোকে। বলবো এই দুমাস ধরে মেসোর নামে আমাকে কি কি বলেছো।”
“মান্টি।” ধমক দিয়ে ওঠেন ম্যাডাম।
“আচ্ছা শোনো এই আমার মিমি। মানে আমার সবচেয়ে প্রিয় ছোটমাসি। আর তোমার তলাপাত্র আমার মেসোমনি। মিমিরা বহুদিন কলকাতার বাইরে ছিল সবে দুমাস কলকাতায় ফিরেছে। মেসো যে নতুন চাকরি নিয়ে কলকাতায় এসেছে আমি জানতাম না। তোমার মুখে তলাপাত্র শুনে শুনে সন্দেহ হয়েছিল। তারপর মিমির কাছে এসে তোমার কথা বলতে সব পরিস্কার হয়ে গেল। আর শোনো আজকের এই পুরো প্ল্যানটা কিন্তু তোমার বসের।”
অত্রি আড়চোখে সারের দিকে চেয়ে মাথা নিচু করে নেয়। তারপর ম্যাডাম বললেন,
“আমাকে দেখে বুঝতে পারছ তো অত্রি আমাদের জীবনটা কেমন। আমরা দুজনেই একসময় শান্তিনিকেতনের স্টুডেন্ট ছিলাম। সেখানেই বন্ধুত্বের শুরু।”
“জানো অত্রি মিমি মেসো দুজনেই ভীষণ সুন্দর রবীন্দ্রসংগীত গায়।”
“কিন্তু ম্যাডাম আপনার এই অবস্থা কি করে।”
“আমাদের বিয়ের একবছরের মধ্যে এক ভয়ংকর গাড়ি দুর্ঘটনায় তোমার ম্যাডামের কোমর থেকে পা প্যারালিসিস হয়ে যায়। তবে এখন অনেক ভালো। এই হুইল চেয়ারে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ায় গানের অনুষ্ঠানের জন্য।”
“তোমার এই স্যার না থাকলে আমি সত্যিই সেদিন মরে যেতাম অত্রি।”
রাহী এবার উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল,“জানো অত্রি আমার মিমির মতো লাকি সবাই হয় না। মেসোর মতো স্বামী যার আছে তার জীবনে কোথাও কোন অপূর্ণতা থাকতে পারে না।”
অপার বিস্ময়ে তলাপাত্র ও তাঁর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে অত্রি। চেনা স্যারের মধ্যে এক নতুন মানুষ কে যেন নিমেষে আবিষ্কার করে অত্রি। ভালোবাসার এক পবিত্র আলোয় ঝলমলে হয়ে ওঠে চারিদিক।।
*******************************************************
রিমিতা কর পরিচিতি
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় জন্ম। পড়াশোনা কোলকাতায়৷ বিজ্ঞানের স্নাতক রিমিতার ছোট থেকেই বাংলা ভাষার প্রতি অনুরাগ৷ মায়ের অনুপ্রেরণায় শৈশব থেকেই আবৃত্তি ও শ্রুতিনাটকের চর্চা শুরু করেন৷ স্কুলের পত্রিকায় লেখা দিয়ে হাতেখড়ি৷ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গল্প প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে সোশাল মিডিয়াতে নিয়মিত লেখেন৷ বেশ কিছুদিন চাকরি করার পর এখন গৃহ শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত।