যমালয়ে জীবন্ত মানুষ
পরাগ ভূষণ ঘোষ
যুদ্ধ না বলে মহাযুদ্ধ বলাই সঠিক। ছত্রিশ বছর হলো এই মহাযুদ্ধ অতিক্রান্ত। আত্মীয় পরিজন,বন্ধুবান্ধব অনেকেই আজ আর নেই। সমরক্ষেত্রেই প্রাণ গিয়েছে। যুদ্ধ প্রারম্ভে যারা ছিলেন যুবক তাঁরা আজ বৃদ্ধ হয়েছেন। শিশুরা হয়েছে যুবক। দুপক্ষের মৃত্যু মিছিলে সাম্রাজ্য আজ প্রায় জনশূন্য।
হস্তিনাপুরের সিংহাসন যুধিষ্ঠির প্রায় প্রৌঢ়ত্বে এসে লাভ করেছিলেন। এখন তার ভ্রাতারা ও দ্রৌপদীও বার্ধক্যে পদার্পণ করেছেন। ইতিমধ্যে যদুবংশ ধ্বংস হয়েছে মুসল নামক এক অভিশাপের কারণে। এ প্রসঙ্গে দুটি প্রাসঙ্গিক কথা উল্লেখ করতে হচ্ছে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরে দ্বারকায় যাদব বংশীয়দের মধ্যে চরম অরাজকতা সৃষ্টি হয়। দুর্নীতি,বিদ্বেষ চারদিকে ঘিরে ধরে। এই সময়ে কৃষ্ণ বলরামের গৃহে কিছু মুনি ঋষির আগমন ঘটে। অরাজকতা কাটিয়ে শান্তি,সততার বীজ প্রতিষ্ঠা করার মূল লক্ষ্য নিয়ে। বলরামের পুত্র সারণ ও আরও কয়েকজন সমবয়সী যাদব মিলে এক কুবুদ্ধির আশ্রয় নেয়। উপস্থিত মুনিদের অপ্রস্তুতে ফেলাই মূল উদ্দেশ্য। কৃষ্ণপুত্র শাম্বকে গর্ভবতী মহিলা সাজিয়ে শাড়ী পরিয়ে ঐ মুনিদের সামনে হাজির করিয়ে সকলে বলে,“আপনারা আশীর্বাদ করুন ইনি যেন পুত্র সন্তান জন্ম দেন। ইনি যাদববীর বভ্রুর স্ত্রী”। ঋষিরা এদের প্রতারণা ধরে ফেললেন এবং জানালেন,“ইনি অর্থাৎ শাম্ব একটি মুসল প্রসব করবে। ঐ মুসলের প্রভাবে কৃষ্ণ ও বলরাম ব্যতিরেকে যাদব বংশ ধ্বংস হবে। বলরাম যোগবলে দেহত্যাগ করবেন এবং কৃষ্ণ এক ব্যাধের শরে প্রাণ হারাবেন”। পরদিন শাম্ব একটি লোহার মুসল (মুসল অর্থে মুগুর) প্রসব করে।
মূল প্রসঙ্গে ফিরে আশা যাক।
কৃষ্ণ বলরামসহ যাদবকূলের সকলের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে অর্জুন যাদবপ্রজা কিছু নারী ও শিশুদের জীবিত অবস্থায় এনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন হস্তিনাপুর সংলগ্ন ইন্দ্রপ্রস্থে। অর্জুনের মুখে এই ঘটনা শোনার পর যুধিষ্ঠিরের বৈরাগ্য দেখা দেয়। তিনি তার সব ভ্রাতাদের ডেকে বলেন,“বয়সের ভারে অমি আজ ন্যুব্জ,প্রত্যেককেই একটি নির্দিষ্ট সময় পর এই লোক ছেড়ে চলে যেতে হয়। এমতাবস্থায় আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি শীঘ্রই অন্তিম পথে পদার্পণ করবো। তোমরা তোমাদের কর্তব্য স্থির করো।”
যুধিষ্ঠিরের সংকল্প জেনে বাকি চার ভ্রাতা ও দ্রৌপদী বললেন তারাও প্রাণত্যাগ করতে চান।
সকলে স্থির করেন সারা ভারত পরিক্রমা করে শেষে হিমালয়ের পথে পরলোক যাত্রা করবেন। কিন্তু সমস্যা দানা বাঁধে উত্তরাধিকার নির্বাচন নিয়ে।
দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্রের কেউই আজ বেঁচে নেই। শুধুমাত্র অর্জুন সুভদ্রার মৃত পুত্র অভিমুন্যর পুত্র পরীক্ষিত ও অর্জুন চিত্রাঙ্গদার পুত্র বভ্রুবাহন যোগ্য উত্তরাধিকার পেতে পারে। কিন্তু বভ্রুবাহনের পক্ষে তার মাতার বিবাহের শর্ত অনুযায়ী মণিপুর ছেড়ে হস্তিনাপুরে বসবাস করা মুশকিল। অবশেষে পরীক্ষিতকে দেওয়া হয় হস্তিনাপুর ও কৃষ্ণ পৌত্র বজ্রকে ইন্দ্রপ্রস্থ।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শেষ লগ্নে ধৃতরাষ্ঠের বৈশ্যাদাসীপুত্র যুযুৎসু কুরু দলত্যাগ করে পাণ্ডব দলে নাম লেখানোর ফলে তার প্রাণ রক্ষা পায়।
যুধিষ্ঠির এই প্রবীণ,ধার্মিক ব্যক্তিটিকে পরীক্ষিত রাজসভার অন্যতম মন্ত্রী নিযুক্ত করে সকলে ভারত পরিক্রমায় বেরিয়ে যান। পথমধ্যে এক সারমেয় যুধিষ্ঠিরের সঙ্গী হয়। যে প্রাণীটি স্বর্গের দরজা পর্যন্ত গিয়েছিল।
পাণ্ডবদের সততা,ন্যায়পরায়ণতা,সত্যতার উপর আস্থা ছিল নিজেদের। তারা নিশ্চিত ছিলেন এই বার্ধক্যে এসে তারা সশরীরে স্বর্গলাভ করবেন।
তাদের যাত্রা শুরু হলো। বহু পথ অতিক্রম করে ক্রমশ পূর্বদিকে এগিয়ে যান। চতুষ্পদ প্রাণীটি তাদের কাছ থেকে এক মুহূর্তের জন্যও সরে যায় নি।
শ্রান্ত পাণ্ডবগণ ব্রহ্মপুত্র তীরে উপস্থিত হলে অগ্নিদেবতা মনুষ্যরূপ ধারণ করে অর্জুনের সম্মুখীন হন। অর্জুন তার প্রিয় গান্ডীবটি সঙ্গে এনেছেন। নিজ পরিচয় দিয়ে অগ্নিদেব বলেন,“প্ৰিয় জিনিস পরিত্যাগ করে স্বর্গের সিঁড়ি উত্তরণ করতে হয়। এই গান্ডীবটি বরুণদেবের কাছ থেকে এনে তোমাকে দিয়েছিলাম। প্রয়োজন ফুরিয়েছে। গান্ডীব মায়া ত্যাগ করে মহাপ্রস্থানের পথে পা বাড়াও।”
অর্জুন পরম মমতায় গান্ডীব স্পর্শ করে সেটি ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসিয়ে দেন। স্মিতহাস্য অগ্নিদেব অন্তর্হিত হন।
মহাপ্রস্থানের উদ্দেশ্যে তারা উত্তর দিকে চলতে চলতে হিমালয়ে উপস্থিত হলেন।
এই স্থল থেকে সকলে যোগ সাধনার একটি বিশেষ স্তরের মাধ্যমে স্বর্গারোহণ করার পরিকল্পনায় নিমগ্ন হন।
ক্রমাগত উত্তরে চলতে চলতে আচমকা পাঞ্চালী পরিশ্রান্ত হয়ে ভূমিতে পড়ে যান। ভীম আঁতকে উঠে যুধিষ্ঠীরকে উদ্দেশ্য করে বলেন,”মহারাজ, দ্রৌপদী তো কোনওদিন অধর্ম করে নি। কেন সে এই দেহ নিয়ে আমাদের সঙ্গে স্বর্গে যেতে পারলো না?”
যুধিষ্ঠির তার যুক্তিযুক্ত উত্তর দেন এবং দ্রৌপদীর প্রাণহীন দেহ সেখানেই রেখে এগিয়ে যান। এইভাবে কিছুক্ষণ পরপর একে একে যথাক্রমে সহদেব,নকুল,অর্জুন ভূপতিত হন। প্রত্যেকের পাপ বা অধর্ম কি ছিল সেগুলো ব্যাখ্যা করে ভীমকে শোনান যুধিষ্ঠির।
অবশেষে ভীমও পড়ে যান ও দেহত্যাগ করেন। চার ভাই ও তাদের সকলের একমাত্র স্ত্রীকে ফেলে রেখে স্বর্গের পথে যুধিষ্ঠির একাই এগিয়ে যেতে থাকেন সঙ্গে সেই কুকুরটি তার গায়ে গায়ে এগোতে থাকে।
বেশ কিছুদুর যাওয়ার পর আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে গুরু গম্ভীর নিনাদে এক দেবরথ এসে উপস্থিত হয় যুধিষ্ঠিরের সম্মুখে।
রথ থেকে নেমে এলেন দেবরাজ ইন্দ্র। বললেন,“তুমি ধৰ্মরাজ,তুমি সারাজীবন ধর্মের পাশে থেকেছো। তোমার পুণ্যের পাত্র পূর্ণ। আমি দেবরাজ ইন্দ্র,তোমাকে এই পার্থিব শরীর নিয়ে স্বর্গে যাওয়ার অভ্যর্থনা জানাই। আমার রথে তোমার নির্দিষ্ট স্থানে আসন গ্রহণ করে চলো স্বর্গের আনন্দলোকে।”
“আপনাকে আমার প্রণাম দেবরাজ। অন্যায় ক্ষমা করবেন। আমি আজ বড় ব্যথিত মনে আপনাদের নিকট এগিয়ে চলেছি। কিন্তু আমার প্রাণাধিক প্রিয় ভ্রাতারা মধ্যপথে পতিত হয়ে আছে। এমতাবস্থায় আমি কি প্রকারে আপনার আদেশ পালন করতে রথে উত্তরণ করি? ওরা আমার প্রিয়জন। ওরা মাঝ রাস্তায় নিজেদের প্রাণ হারিয়েছে তাই আমি শোকে বিমর্ষ। আমি একা স্বর্গলাভ করতে অনিচ্ছুক।”
“ধৰ্মরাজ,তুমি এই মানবদেহ নিয়ে স্বর্গে আরোহণ করছো। তুমি যে চিন্তায় বিভোর আছো সেটা প্রশমিত করার জন্য বলি,তোমার ভ্রাতারা ও তোমাদের স্ত্রী ইতিমধ্যেই স্বর্গে চলে গিয়েছে। তুমি তাদের দেখা পাবে ওখানে।”
যুধিষ্ঠির একটু যেন শান্তি পেলেন এই কথা শুনে।
রথে চড়তে গিয়ে ইন্দ্র আবার বললেন,”স্বর্গে তুমি একা যাবে। এই প্রাণীটির সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। স্বর্গে কুকুর নিয়ে যাওয়া যাবে না।”
ধর্মরাজ বললেন,”তবে স্বর্গে আমার যাওয়াও হবে না। এই কুকুরটি আমার অনুগত ভক্ত। সে আমার পাশে আছে এতদিন ধরে। আমার সহযাত্রী। আমার দুঃখের দিনের একমাত্র অংশীদার। একে যদি স্বর্গে প্রবেশ করার অনুমতি না দেন তবে আমিও যেতে অপারগ। একে ছেড়ে আমার চলে যাওয়া চরম নিষ্ঠুরতা হবে”।
ইন্দ্রের সঙ্গে যুক্তিতর্কে জড়িয়ে পড়েন যুধিষ্ঠির।
অকস্মাৎ কুকুরটি অদৃশ্য হয়ে যায়। পরিবর্তে সেই স্থানে আবির্ভূত হন স্বয়ং ধর্মদেব।
প্রসন্ন চিত্তে ধর্মদেব বলেন,”তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য আমি কুকুরের রূপে তোমার সঙ্গে এতদিন ছিলাম। আমি খুশী তোমার ধর্মপরায়ণতা ও দয়াশীল হৃদয় দেখে। তুমি স্বর্গে গিয়ে অমৃতলাভ করো।”
দেবরাজ ইন্দ্র,ধর্মদেব ও অন্যান্য দেব দেবীরা যুধিষ্ঠিরকে সশরীরে রথে তুলে স্বর্গে নিয়ে যান।
দেবরাজের রথে চড়ে যুধিষ্ঠির স্বর্গের দ্বারে উপস্থিত হন। কিন্তু গোল বাঁধে রথ থেকে অবতরণ করার পরেই। তিনি আশা করেছিলেন তার ভাইয়েরা,দ্রৌপদী,কর্ণ,সকলেরই দেখা পাবেন। প্রফুল্ল চিত্তে তিনি স্বর্গে প্রবেশের মুখেই যার সাক্ষাৎ পেলেন তাতে তিনি রুষ্ট হয়ে পড়েন।
মধ্যাহ্নের জ্যোতিতে সকল দেবদেবীরা যুধিষ্ঠিরকে আহ্বান করার নিমিত্ত দ্বার প্রান্তে উপস্থিত হয়ে আহ্বান করেন। কিন্তু এই দেবকুলের মাঝে ইনি কেন?
ক্রুদ্ধ যুধিষ্ঠির ইন্দ্রকে বলেন,“দেবরাজ,এই পাপিষ্ঠ নরাধম দুর্যোধন আপনাদের স্বর্গে কি প্রকারে পৌঁছলেন?এর সঙ্গে বসবাস করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। এই দুরাত্মার অভিসন্ধিতেই আমরা বনবাসে কাটিয়েছি। এ্রর মাতুল শকুনী ও সে যুগ্মভাবে কূটনৈতিক চালে পাশা খেলায় আমাদের পরাস্ত করে। দ্রৌপদীকে প্রকাশ্যসভায় নিগ্রহ করা হয় এই দুর্যোধনের প্ররোচনায়। আমাদের যাবতীয় দুঃখ কষ্টের কারণ এই পাপী মানুষটি। এর মুখ দর্শন করাও আমার অধর্ম। আমাকে আমার ভাইদের কাছে নিয়ে চলুন। দুর্যোধনের মতো লোভাতুর চতুর মানুষ কি করে স্বর্গ লাভ করেন? এই কি আপনাদের স্বর্গের ন্যায় বিচার?”
উত্তেজিত যুধিষ্ঠিরকে নির্মল করতে আসরে নারদ নামেন এবং বলেন,“স্বর্গে শত্রুতা বৈরিতা থাকতে নেই। এখানে সকলেই স্বর্গবাসী। আপনি শান্ত হন। ইনি ক্ষত্রিয় ধর্মমতে যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন,সেইহেতু উনি স্বর্গ লাভ করেন।”
নারদের কথায় যুধিষ্ঠিরের রাগ প্রশমিত হয় না। বলেন,”আমাকে আমার ভাইদের কাছে নিয়ে যাও। এছাড়াও কর্ণ, ধৃষ্টদ্যুম্ন,সাত্যকি প্রভৃতি বীরদের সঙ্গে দেখা করতে চাই।”
দেবদেবীরা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। দেবরাজ ইন্দ্র তখন বললেন,“হে ধর্মপুত্র,তোমার সকল ভাইরা ও সকল বীরগণের সাক্ষাৎ পেতে হলে আমার সঙ্গে তোমায় যেতে হবে।”
যুধিষ্ঠির তৎক্ষণাৎ রাজি হলেন। কিন্তু এ কোথায় নিয়ে এলেন দেবরাজ, যিনি নিজে অন্দরমহলে প্রবেশ করতে পারবেন না জানিয়ে এক দেবদূতকে সঙ্গে পাঠালেন অথচ যুধিষ্ঠিরকে প্রবেশ করতে বলছেন? পাঞ্চালীরা কি এখানেই আছেন? অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন। সেখানেও আবার অবাক হওয়ার পালা। চারদিক অন্ধকার,পচাগলা দুর্গন্ধ,পচা মাংসপিন্ড এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ে আছে। অন্ধকারের মধ্যে কান্নার রোল কানে আসছে। পুতিগন্ধময় এস্থানে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই উদগার আসছে। এরকম বিভীষিকাময় পরিবেশে এক মুহূর্তও কাটানো যায় না। চিৎকার করে বলে ওঠেন,“এটা কোন জায়গা? আমার ভাইরা কোথায়? তোমরা কে?কেন এই জায়গায় আছো?”
দেবদূত বললেন,“ধর্মরাজ,এটা নরক। আপনার নিকটাত্মীয়রা এখানেই আছেন।”
অন্ধকার চিরে ভেসে আসে,”আমি কর্ণ,আমি ভীম,আমি সহদেব”। একে একে সকলেই নিজের পরিচয় অন্ধকারে ছুঁড়ে দেয়।
যুধিষ্ঠির আবার বলেন,
“এ কেমন বিচার? এ কেমন আইন? সারাজীবন ন্যায়ের পথে,সত্যের পথে থেকে আমার নিজের মানুষেরা নরক যন্ত্রণা ভোগ করছে,অপরদিকে পাপ কাজ করে দুর্যোধন স্বর্গে? ধিক্কার জানাই এই স্বর্গকে”।
অবশেষে ইন্দ্র প্রবেশ করেন ঐ নরকে এবং মুহূর্তে সকল পুতিগন্ধ দূর হয়ে মিষ্টি সুবাসে চারদিক ভরে ওঠে।
ইন্দ্র বলেন,”প্রত্যেক মানুষেরই পাপ ও পুণ্য আছে। শুধু পাপ বা শুধু পুণ্যযুক্ত মানুষ নেই। যাদের পাপ কম পুণ্য বেশী তারা স্থায়ীভাবে স্বর্গে বাস করে কিন্তু অল্প পাপের জন্য নরকে কিছুদিন কাটাতে হয়। অনুরূপভাবে যারা পাপী তারা প্রথমে স্বর্গে কিছুদিন ও পরে নরকে স্থায়ীভাবে বাস করে। এই কারণেই দুর্যোধন কিছুদিনের জন্য স্বর্গ দর্শন করছে। ও এবার নরকে থাকবে। তোমার ভাইয়েরা,দ্রৌপদী,কর্ণ এরা এবার স্বর্গে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।”
যুধিষ্ঠির প্রশ্ন করেন,
“ওরা কি এমন অন্যায় বা পাপ কাজ করেছে যে ওরা নরকে কিছুদিন বসবাস করছে?”
“ধর্মরাজ,প্রথমেই জানিয়েছি প্রত্যেকেই ন্যায়-অন্যায়,পাপ-পুণ্য অর্জন করে। ওরাও করেছে। তুলনামূলক ভাবে তুমি কিঞ্চিৎ পাপ করেছো সেইজন্য তোমাকে শুধু নরক দর্শন করালাম।”
“প্রভু,আমি কি পাপ করেছিলাম যে কারণে আমাকে এই স্থান চাক্ষুষ করতে হলো?”
“তুমি দ্রোণকে অশ্বত্থামার মিথ্যে মৃত্যুর খবর দিয়েছিলে সে কারণে তোমাকে কৌশলে নরক দর্শন করানো হলো। এখন নিশ্চিন্তে চলো স্বর্গে,সকলেই তোমার প্রতীক্ষায়।”
যুধিষ্ঠির অতঃপর দেবরাজের সঙ্গে স্বর্গে গেলেন ও তার প্ৰিয়জনদের সাক্ষাৎ পেলেন। কর্ণ, দ্রৌপদী ও অন্যান্য আত্মীয়দের দেখে তৃপ্ত হলেন।।
*********************************************
পরাগ ভূষণ ঘোষ পরিচিতি
আটান্ন বছর বয়সী পরাগ ভূষণ ঘোষ। পিতা ঈশ্বর নির্মল চন্দ্র ঘোষ। মাতা ঈশ্বর সাথী ঘোষ। জন্ম শহর শিলিগুড়ি, জেলা দার্জিলিং। বর্তমান নিবাস বহরমপুর। পেশায় ব্যাঙ্ক কর্মী। পিতা ছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারী। ছোটবেলায় লক্ষ্য করতেন স্বর্গীয় পিতৃদেব ও স্বর্গীয়া মাতৃদেবী অবসর সময়ে সর্বদা বই পড়ায় নিজেদের লিপ্ত রাখতেন। যে কারণে কৈশোরবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। পরিবারে টুকটাক লেখালেখির প্রচলন ছিল যেটা আজও আছে।