Shadow

স্ত্রীধন – ডঃ পর্ণশবরী ভট্টাচার্য্য

PC: timesofindia.indiatimes.com

স্ত্রীধন : প্রাচীন ভারতে নারীদের সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কিত মতবাদ

ডঃ পর্ণশবরী ভট্টাচার্য্য

মানুষের সামাজিক পদমর্যাদা ও গুরুত্ব নির্ধারিত হয় মূলতঃ তার অর্থনৈতিক অবস্থানের প্রেক্ষিতে৷ আর সেই অবস্থান যদি শাস্ত্রসম্মত ভাবে  স্বীকৃত হয় তাহলে সেটাই প্রতিষ্ঠিত বিধি| প্রাচীনতম সাহিত্যিক উপাদান বৈদিক সাহিত্য থেকে শুরু করে আদি মধ্য যুগ পর্যন্ত যেসব শাস্ত্রীয় গ্রন্থ এবং তাদের টীকা ভাষ্য আছে,তার সবগুলিতেই বিধিবদ্ধ আইনের কথা পাওয়া যায়৷সম্পত্তির অধিকার (property right) নিয়ে এই সব গ্রন্থে বিশদ আলোচনা,নির্দেশাবলি, অনুশাসন আছে,যদিও সেই অধিকার-বিশেষভাবে পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার~কেবলমাত্র পুরুষের৷ ফলে অর্থনৈতিক ভাবে তাদের একটি সুরক্ষাবলয়  তৈরি হয়েছিল,কিন্তু বঞ্চিত ছিল নারীরা| সমাজে নারীর ভূমিকা এবং তার যথার্থ স্থানটিকে চিহ্নিত করতে গিয়ে দেখাযায়,শিক্ষা,রাজনীতি,দর্শন,কলাবিদ্যা,বিভিন্ন সামাজিক বৃত্তি এমনকি কিছু ক্ষেত্রে যুদ্ধ বিদ্যাতে পারদর্শী এবং অগ্রণী হলেও সম্পত্তিতে সমানাধিকার বা সামান্যতম অধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রেও শাস্ত্রকাররা বিমুখ৷
অবশ্য পৈত্রিক সম্পত্তি না হলেও অন্য এক ধরনের সম্পদ অর্জন বা তার অধিকার লাভের ব্যবস্থা আইনানুগ ভাবেই শাস্ত্রকাররা করেছিলেন  যা যুগের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করতে থাকে ৷ সম্পত্তিলাভের এই বিকল্প ব্যবস্থারই নাম ‘স্ত্রীধন’| ‘স্ত্রীধন’ বলতে বোঝায় নারীর নিজস্ব অর্জিত সম্পত্তি যার মালিকানা তার একান্ত নিজের এবং এই  সম্পত্তিদান,ব্যয়,বিক্রয়,হস্তান্তর সবটাই তার ইচ্ছাধীন|
বৈদিক যুগ মূলতঃ পুরুষ প্রধান হওয়া সত্ত্বেও মেয়েদের নিজস্বতা বিশেষ ক্ষুণ্ণ হয়নি,নারীরা শিক্ষালাভের এমনকি শিক্ষাদানের ও (আচার্যা) অধিকারিণী ছিলেন৷ বৈদিক সূত্রগুলির রচয়িতার (মন্ত্রদ্রষ্টা) মধ্যে অনেকেই ছিলেন নারী-যেমন অত্রিকন্যা বিশ্ববারা,অগস্ত্যের পত্নী লোপামুদ্রা,কক্ষিবতের কন্যা ঘোষা,অশ্ভৃণের কন্যা বাক্ প্রমুখ| পিতৃগৃহে কুমারী মেয়েদের দীর্ঘকাল উপস্থিতি,প্রাক্ বিবাহ প্রেম,গোপন প্রেম,অভিসার যাত্রা,অবৈধ সন্তান ও তার স্বীকৃতি ঋগ্বেদে পাওয়া যায়৷ নারীদের রাজনৈতিক অধিকারও স্বীকৃত ছিল ৷  তারা ‘সভা’ নামক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে যেত,আলোচনায় অংশ নিত (সভাস্থিতা),মতামত ও দিত৷ তাদের উপনয়ন হত,বেদপাঠে ইচ্ছুক মেয়েদের যজ্ঞোপবীত ধারণ করতে হত,নিত্য গায়ত্ৰী পাঠ করতে হত (আশ্বলায়ন গৃহসূত্র)-অর্থাৎ মেয়েদের ক্ষেত্রে সামাজিক শিথিলতা অনেকটাই ছিল কিন্তু পিতৃধনে তাদের কোন  অধিকার ছিল না।
পরবর্তী সংহিতা ও ব্রাহ্মণ গ্রন্থ সমূহের যুগে নারীজাতির সামাজিক মর্যাদা ও অবস্থানের ক্ষেত্রে নানা পরিবর্তন ঘটেছে৷ ধর্মসূত্র সমূহেই প্রথম ব্যক্তিগত,সামাজিক ও পারিবারিক আইনকানুনকে প্রণালীবদ্ধ করা হয়৷  ধর্মসূত্র সমূহে বলা হয়েছে উপহার স্বরূপ মেয়েরা যা লাভ করবে তার মালিকানা তাদেরই যা পরবর্তীতে তাদের কন্যার ওপর বর্তাবে৷ যৎসামান্য হলেও সর্বপ্রথম মেয়েদের প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কিছু আলো দেখা গেল৷  ধর্মসূত্রেই পাওয়া গেল যে, বিধবারা স্বামীর কিছু অস্থাবর সম্পত্তি,বিবাহে প্রাপ্ত অর্থ ও অলংকার এর অধিকার পেতে পারে৷ যদিও আপস্তম্ব  ধর্মসূত্রে বলা হয়েছে,পুত্র,গুরু বা শিষ্য যদি না থাকে তাহলে পিতার সম্পদ কন্যা পেতে পারে। মেয়েদের অধিকার নিয়ে কিঞ্চিৎ ভাবনার পরিচয় সূত্র সাহিত্যেই প্রথম পাওয়া যায় ৷
অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্য ‘স্ত্রীধনের’ ওপর কিছুটা আলোকপাত করেছেন৷ তাঁর মতে ‘স্ত্রীধন’ চার প্রকার-‘শুল্ক’ অর্থাৎ (কন্যাপণ),’অন্বাধেয়'(বিবাহ পরবর্তী প্রাপ্তি),’অধিবেদনিক'(শ্বশুর গৃহে যাত্রার সময় সে যা পায়) এবং বন্ধুদত্ত (বন্ধুদের দেওয়া উপহার)| কৌটিল্য মেয়েদের বিধবা বিবাহ,বিবাহ বিচ্ছেদ এবং পুনর্বিবাহের পক্ষে ছিলেন৷ স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুরের অনুমতিক্রমে বিধবা স্ত্রী দ্বিতীয়বার বিবাহ করলে ‘স্ত্রীধন’ থেকে বঞ্চিত হতো না৷ পুত্রবতী বা অপুত্রবতী বিধবা পুনর্বিবাহ না করলে তার সম্পত্তির অধিকার বজায় থাকতো৷ কৌটিল্যর মতে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় যে বিবাহগুলি সিদ্ধ (রাক্ষস,পৈশাচ ইত্যাদি) সেখানে যে কন্যাপণ মেয়ের মতো পিতা পান,তাঁদের অবর্তমানে তা সেই  কন্যা লাভ করে কিন্তু পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বিবাহ গুলির (ব্রাহ্ম,দৈব,আর্য ইত্যাদি) ক্ষেত্রে ‘স্ত্রীধন’ হিসাবে শুধুমাত্র জীবনধারণের উপকরণ সম্পর্কিত বস্তু (বৃত্তি) এবং অলঙ্কার (আবধ্য) মেয়েটি পায়৷ স্বামীর মৃত্যুর পর শুচিতা বজায় রাখলে একজন মেয়ে স্বামী যা রেখে গেছেন তার কিয়দংশ পায়৷ সেসব পাবার পর  সে যদি পুনরায় বিয়ে করে তাহলে মৃত স্বামীর যে অর্থ সে পেয়েছে তাকে স্বামীর আত্মীয়দের ফিরিয়ে দিতে হবে তার অর্থ মূল্যের সুদ সহ৷ কিন্তু বিয়েতে পূর্বতন শ্বশুর মশায়ের মত থাকলে সেই অর্থ তাকে প্রত্যর্পণ করতে হয় না ৷ যদি সেই স্ত্রী প্রথম পক্ষের স্বামীর গোষ্ঠীর (সবর্ণ) কোন ব্যক্তিকে বিয়ে করে তাহলে সেই বিয়েকে রীতিমত বৈধ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়৷ সেক্ষেত্রে প্রথমপক্ষের স্বামী বা শ্বশুরের কাছ থেকে সে যা যা পেয়েছিল সবটাই রাখতে পারে৷ কৌটিল্য একথাও বলেছেন যে,কোনো নারী পুনর্বিবাহের পর প্রথম স্বামীর সন্তানদের ভরণ পোষণের কারণে সম্পত্তির অংশ রাখতে পারেন৷ কিন্তু মেয়েরা পিতৃ সম্পদের মালিকানা পাবে কিনা সে বিষয়ে কৌটিল্য নীরব৷
প্রাচীন ভারতের মূল আইন গ্রন্থ হিসাবে মানব ধর্মশাস্ত্র বা মনুস্মৃতিকেই ধরা হয়ে থাকে৷ মনুস্মৃতিতে সম্পদের উত্তরাধিকার এবং বিভাজনের সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী পাওয়া যায়। পিতা নিজ ইচ্ছানুযায়ী  সম্পত্তির বিলি বন্দোবস্ত করবেন অথবা তাঁর মৃত্যুর পর পুত্ররা ভাগ করে নেবে৷ জ্যেষ্ঠের শ্রেষ্ঠভাগই মনুর পছন্দ। বাকী সম্পত্তি সব ভাইদের মধ্যে সমান ভাবে ভাগ হবে৷
‘স্ত্রীধনের’ বিষয়টিকে মনু আরও কিছুটা সুনির্দিষ্ট করেছেন। মনু একবারও বলেননি যে কন্যারা পুত্রদের মতই পিতার সম্পদ পাবে। কিন্তু তিনি বলেছেন যে,অবিবাহিতা ভগ্নীর বিবাহের জন্য ভ্রাতারা তাদের প্রাপ্ত সম্পদের এক চতুর্থাংশ ব্যয় করবে নৈতিক কারণে। মনু ছয় প্রকার ‘স্ত্রীধনের’ কথা বলেছেন-‘অধ্যাগ্নি’ যা বিবাহকালে অগ্নির সম্মুখে প্রদত্ত হয়,  ‘অধ্যাবাহনিক’ যা কন্যার পতিগৃহে যাত্রাকালে প্রদত্ত হয়,’প্রীতি দত্ত’ যা আত্মীয় স্বজন হিতৈষীরা প্রীতিসহকারে দিয়ে থাকে,’ভ্রাতৃদত্ত’,’মাতৃদত্ত’,ও’পিতৃদত্ত’| কোনও ব্যক্তির পুত্রসন্তান না থাকলে যদি তার কন্যাকে ‘পুত্রিকা’ (যে কন্যা পুত্রের দায়িত্ব নিয়ে বরাবরের জন্য পিতৃপুরুষের পারলৌকিক কর্তব্য সম্পাদন করবে) মনে করে সেক্ষেত্রে কন্যাই পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারিনী হবে ৷ যদিও  মায়ের কোনরকম সম্পত্তি  থাকলে মেয়ে তা সরাসরি পেতে পারে ৷
যাজ্ঞবল্ক্য ‘স্ত্রীধন’ সম্পর্কে মনুর বক্তব্যকে আরও প্রাঞ্জল করেছেন৷ যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতিতেও ছয় ধরণের ‘স্ত্রীধনের’ কথাই আলোচিত হয়েছে~পিতা,মাতা,ভ্রাতা,স্বামী প্রদত্ত ধন,বিবাহ কালে যজ্ঞাগ্নির সামনে প্রদত্ত ধন,স্বামী দ্বিতীয়বার বিবাহ করলে সান্ত্বনাস্বরূপ প্রদত্তধন,কন্যার জ্ঞাতি ও আত্মীয় বর্গ প্রদত্ত ধন এবং বিবাহের পরে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত ধন|   উল্লেখযোগ্য এই যে,এই সব ধনই কোন না কোন ভাবে উপহার সূত্রে প্রাপ্ত যার মধ্যে এক ধরণের নৈতিকতা আছে কিন্তু কোন আইনসম্মত অধিকার নেই। যাজ্ঞবল্ক্যের মতে একজন মেয়ে পরিপূর্ণভাবে তার ‘স্ত্রীধনের’ মালিক৷ কোন বিশেষ বিপদে,ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে,অসুস্থ হলে এবং এমন কোন অবস্থা যদি সৃষ্টি হয় যখন স্ত্রীর অর্থ ভিন্ন  আত্মরক্ষার কোন  উপায় নেই-তখনই স্বামী এই ধন প্রার্থনা করতে পারেন,যদিও তা ধার হিসাবে৷
মনু ও যাজ্ঞ্যবল্ক্য পরবর্তী স্মৃতিকার~নারদ,কাত্যায়ন,বৃহস্পতি,পরাশর ইত্যাদি~’স্ত্রীধন’ নিয়ে মনুর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হয়েও আরও কিছু যুক্ত করেছেন৷ ‘শুল্ক’ বা ‘অন্বাধেয়’ ছাড়াও সৌদায়িক যা একটি মেয়ে কুমারী থাকাকালীন লাভ করে৷ কাত্যায়ন  নগদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দু হাজার পণ (রৌপ্যমুদ্রা) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন,এবং স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন৷ যাজ্ঞবল্ক্যকে অনুসরণ করে নারদ বলেছেন,’স্ত্রীধন’ সম্পূর্ণভাবে মা থেকে মেয়ে এবং মেয়ের কোন সন্তানাদি না থাকলে তার মৃত্যুর পর তার স্বামীতে বর্তাবে৷ স্বামীর সম্পত্তিতে অপুত্রক বিধবার সম্পূর্ণ অধিকার স্মৃতিশাস্ত্রকাররা মেনে নিয়েছেন৷ বৃহস্পতির মতে স্ত্রী যেহেতু স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী,একটি অর্ধের মৃত্যু হলে তার অর্ধাংশ তো রয়েই যাচ্ছে ৷
মনুস্মৃতির টীকাকার  মেধাতিথির মতে অবিবাহিতাদের সম্পত্তির ভাগ না দিয়ে বিবাহকালে খরচ করাই শ্রেয়৷ তিনি আরও বলেন,সকল সম্পত্তি স্থাবর বা অস্থাবর যা কোন নারী কুমারী অবস্থায়,বিবাহে অথবা বিবাহোত্তর জীবনে তার পিতামাতা,স্বামী বা পরিবারের থেকে পায় সবই তার ‘স্ত্রীধন’| যাজ্ঞবল্ক্যের ভাষ্যকার বিশ্বরূপ বলেন যে কোন ব্যক্তির পুত্রবধূ বা পৌত্রবধূ পতিহীনা হলে তাদের মৃত স্বামীদের ভাগের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে৷ স্ত্রী নিজ সম্পত্তির দাবী করতে না পারলেও স্বামী যদি তার জীবদ্দশার সম্পত্তির ভাগ বাঁটোয়ারা করেন তার একটা অংশ স্ত্রীর প্রাপ্য৷ স্ত্রী  উপার্জন করে নিজের  সম্পত্তি ও গড়ে তুলতে পারে কিন্তু স্বামী জীবিত থাকলে তা বিক্রি বা বন্টন করতে পারবে না ৷
আদি মধ্যযুগের বিধি প্রণেতারা পূর্ববর্তী যুগের স্মৃতিকারদের তুলনায় মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার নিয়ে একটু বেশি মস্তিষ্ক চালনা করেছেন৷ স্মৃতিচন্দ্রিকায় বলা হয়েছে,মেয়েরা পিতৃপুরুষের সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী অবশ্যই হতে পারে,এক্ষেত্রে বৈতিরীয় সংহিতার বক্তব্য~স্ত্রীলোক সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী অবশ্যই হতে পারে না-এ কথাকে ব্যঙ্গ করে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ অপুত্রক বিধবা যে স্বামীর সম্পত্তির পুরোদস্তুর মালিক হতে পারেন একথা বিজ্ঞানেশ্বর এবং অপরার্ক বলেছেন৷ ব্যাস ও শ্রীকর বলেছেন, ছোট সম্পত্তি হলে বিধবাকে তার অধিকার দেওয়া যেতেই পারে৷ আদি মধ্যযুগের বিধি প্রণেতাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ‘দায়ভাগের’ লেখক জীমূতবাহন ও যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতির ‘মিতাক্ষরার’ ভাষ্যকার বিজ্ঞানেশ্বর৷ ‘দায়়ভাগ’ ও ‘মিতাক্ষরা’ তে মূলত : সম্পত্তি সংক্রান্ত বন্দোবস্ত নিয়েই লেখা৷ ‘দায়ভাগ’  এর বক্তব্য হল পিতা তাঁর ইচ্ছামত সম্পত্তি বন্টন করতে পারেন এবং তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সে  সম্পত্তিতে পুত্রের অধিকার  জন্মায়  না৷ একে বলে ‘উপরমস্বত্ত্ববাদ’ আর মিতাক্ষরার তত্ত্ব হল ‘জনস্বত্ববাদ’ অর্থাৎ জন্মানো মাত্র কোন পুত্রসন্তান পৈত্রিক বা পারিবারিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী৷ প্রসঙ্গত:বঙ্গদেশে দায়ভাগ আইন প্রচলিত এবং উত্তর ভারতে মিতাক্ষরা আইন|
কন্যাদের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানেশ্বর বিবাহিতাদের চেয়ে অবিবাহিতাদের এবং প্রদত্তাদের চেয়ে অদত্তাদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন৷ অপুত্রক বিধবাকে পুরো সম্পত্তির অধিকার দিয়েছেন ৷ স্ত্রীধনের ক্ষেত্রেও তিনি প্রথাগত তালিকাকে মানেন নি ৷   জীমূতবাহনের মতে স্ত্রীধন একান্তভাবেই স্ত্রীর সম্পত্তি যা সে ইচ্ছামতো দান,উপভোগ বা বিক্রয় করতে পারে৷
প্রাচীন ভারতে নারীর সম্পত্তির মালিকানা  সম্পর্কে  আলোচনা প্রসঙ্গে একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে শাস্ত্র প্রণেতারা নারীদের অধিকার নিয়ে কিছু অন্তত: ভেবেছিলেন এবং যুগের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তা পরিমার্জনেরও চেষ্টা করেন৷ পৈত্রিক সম্পত্তিতে প্রত্যক্ষ ভাবে মেয়েদের অধিকার না দিলেও বিবাহ সূত্রে বা বিবাহোত্তর জীবনে তারা যাতে একেবারে নিঃস্ব না থাকে তার কিছু ব্যবস্থা তারা করেছিলেন৷ কিন্তু তৎপরবর্তীকালে সমাজ জীবনে যখন গতিশীলতার সঞ্চার হয়েছে,জীবনধারণের মান বেড়েছে,রক্ষণশীলতা বহুলাংশে কেটে বিভিন্ন সংস্কার হয়েছে,এমনকি উনবিংশ শতকে একটা নবজাগরণ ঘটে গিয়ে সাহিত্য,শিল্প,দর্শন,বিজ্ঞান,প্রযুক্তি সব কিছুতেই অভাবনীয় উন্নতি সাধিত হয়েছে তখনও কিন্তু উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনটি অবহেলিত| ইতিমধ্যে মেয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অবদান রেখেছে,তাদের রীতিমত প্রমাণ করতে হয়েছে যে তারা পুরুষের তুলনায় কোন অংশে পিছিয়ে নেই তবু সুসভ্য ব্রিটিশ রাজত্ব উত্তরাধিকারের প্রশ্নে মাথা ঘামায়নি৷ শেষ অবধি ১৯৫৩ খ্রীষ্টাব্দে ‘হিন্দু উত্তরাধিকার আইন’ (Hindu Succession Act.) দ্বারা সুপ্রীম কোর্ট প্রথম স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষকে সমানাধিকার দেয়। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এটি অবশ্যই একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ|

তথ্যসূত্র

  1. History of the Dharmasastras by P.Vkane
  2. The Position of Women in Hindu Civilization by A.S Altekar
  3. Socio-economic life ib ancient India by  B.P Majumdar
  4. প্রাচীন ভারতের সমাজ,নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।
    *****************************************************************************

    ডঃ পর্ণশবরী ভট্টাচার্য্য


    ডঃ পর্ণশবরী ভট্টাচার্য্য পরিচিতিঃ
    এসোসিয়েট প্রফেসর, ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশন (কলেজ), কলকাতা

 

 

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!