Shadow

প্রেমের আখর – অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য্য


প্রেমের আখর

অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য্য

“আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে,
তখন কে তুমি তা কে জানত ….”
১৯১৬ সালের ঘটনা দিয়ে শুরু করছি।

আট বছরের এক ছোট্ট মেয়ের গল্প!

কলকাতার থেকে অনেক দূরে, এক  ছোট পাহাড়ী শহরে(১) ছিল তার বাস। পড়াশুনো সেই শহরের “লরেটো কনভেন্ট” স্কুলে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়লেও বাংলা ভাষার পাঠ সে তার বাড়িতেই নিয়েছিল।একদিন  বইয়ের তাক থেকে একটা পাতলা মলাটের সরু বই , রবিবাবুর লেখা “খেয়া” নিয়ে তার মা তাকে বললেন “এটা তোমার।” সত্যিকথা এই, যে মেয়েটি বইটি পড়বার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু লেখার একবর্ণও বুঝতে না পেরে বইয়ের তাকেই সেই বই  রাখলো ফেলে। পরে একদিন তেঁতুলের আচার মোছার জন্য একটা পরিষ্কার কাগজের প্রয়োজন হওয়ায়  সেই “দুর্বোধ্য” বইয়ের থেকে  একটা পুরো পাতাও নয়, মাত্র খানিকটা ছিঁড়ে ফেলতে, বাড়ীর সকলের কাছে  যথেষ্ট “হেনস্থা”  হতে হয়েছিল তাকে! আর এখানেই শেষ নয়, সেইসময়  বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন সদ্য কেমব্রিজ থেকে পাশ করে আসা প্রশান্তদা(২)। তিনি ভারী দুঃখিত হয়ে ছোট মেয়েটিকে বললেন” অমন মানুষ পৃথিবীতে আর নেই, বড় হয়ে এই বই ছেঁড়ার জন্য তোমাদের কত অনুতাপ হবে! কেউ তোমাদের ওঁর কবিতা পড়ে শোনায়নি?” ছোট মেয়েটির মাথা নাড়ানো দেখে, প্রশান্তদা সন্ধ্যাবেলা ঘরের বড় বাতি নিভিয়ে, চারটি মোমবাতি জ্বালিয়ে মেয়েটিকে ও তার ভাইবোনদের ডেকে গম্ভীর স্বরে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ে শোনালেন। সেই কবিতা পড়া শুনে কাব্যরসের উপলব্ধি মেয়েটির যদিও হয়নি, তবে রবিবাবু যে আর সব মানুষের থেকে আলাদা, সেটা অনুভব করতে পেরেছিল সে!
“ওগো সেদিন তুমি গাইতে যে সব গান
কোন অর্থ তাহার কে জানত?”
তারপর  একদিন শোনা গেল যে মেয়েটির প্রিয় সেই ছোট্ট পাহাড়ী শহরে বেড়াতে এসেছেন রবীন্দ্রনাথ! শহর সুদ্ধ সব বাঙালি ভেঙে পড়লো তাঁকে দেখতে  “ব্রুকসাইড” নামের বাড়িটিতে।  ছোট মেয়েটির জ্যাঠামশাই (৩) রবীন্দ্রনাথের খুব পরিচিত বলে, তাদের পরিবারের সদস্যদের কোনো বেগ পেতে হয়নি কবি সন্দর্শনে। কবির সুন্দর চেহারা  দেখে সেদিন মুগ্ধ হয়ে পড়েছিল সেই ছোট্ট মেয়েটি। কবি সেদিন আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলেন তাঁর “পুরাতন ভৃত্য” কবিতাটি।মেয়েটির মনে অবশ্য “কেষ্টা বেটাই চোর” বাক্যবন্ধটি ছাড়া আর বিশেষ কিছু রেখাপাত করে নি। তবে  সেদিন সে  কবির চেয়েও বেশি আকৃষ্ট হয়েছিল কবির দাদার নাতি দিনেন্দ্রনাথের প্রতি। অমন হাসি, অমন গান আর সবচাইতে বিস্ময়কর অমন মোটা মানুষ, মেয়েটি আগে কখনও শোনেওনি  আর দেখেওনি যে!
এরপর স্কুলে পড়ার সাথে সাথেই খুঁজে খুঁজে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়তে আরম্ভ করে মেয়েটি, আর ক্রমে ক্রমে সেই রসে মন ডুবে যেতে শুরু করল তার।১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হোল আর মেয়েটির বাবা(৪) , যিনি সার্ভে অফ ইন্ডিয়া কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন, বদলি হয়ে গেলেন কলকাতায়। তাই স্কুলের পালা সাঙ্গ হবার আগেই, ভাইবোন সকলের সাথে সেই পাহাড়ী শহর ছেড়ে দিয়ে,মেয়েটি চলে এলো কলকাতায়,ভর্তি হলো ডায়োসেসান স্কুলে।ধীরে ধীরে কলকাতার জীবনযাত্রার সাথে পরিচিত হয়ে উঠতে থাকে মেয়েটি। ১৯২২ সালের ডিসেম্বর মাসে মেয়েটি আশা করেছিল আগামী বছরে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেবে। ১৯০৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তার জন্ম তাই ১৫ বছর পূর্ণ হলেই, পরীক্ষায় বসতে পারবে সে। কিন্তু সে অনুমতি মিললো না। ফলে নীচের ক্লাসের মেয়েদের সাথে বসে,আরো একটি বছর অপেক্ষা করতে হোল তাকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় বসবার জন্য। এর মধ্যে একটি দুঃখজনক ঘটনা তাদের পরিবারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।
১৯২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মেয়েটির বড়দা(৫) যিনি ছিলেন তার জ্যেঠামশাই এর জ্যেষ্ঠপুত্র, অসাধারন প্রতিভাশালী,  পরিবারের প্রাণপুরুষ ও মধ্যমণি, তাঁকে অকালে চলে যেতে হল মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে! এই বিয়োগ মেয়েটির গোটা পরিবারের মনে বজ্রাঘাত হেনেছিল। জ্যেঠামশাইয়ের সাথে রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্টতার সুবাদে তার পুত্রও ছিলেন কবির কাছের মানুষ । তাই তার বড়দার মৃত্যুর আগে কবি তাকে দেখতে এসে প্রশ্ন করেছিলেন তার জন্য কবি কি করতে পারেন? উত্তরে তার বড়দা কবির গান শুনতে চেয়েছিলেন। কবি তাকে গান গেয়ে শুনিয়েছিলেন। অবশ্য সেই সময় মেয়েটি সেখানে উপস্থিত ছিল না। ১৯২৪ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিল মেয়েটি, মে মাসে পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে দেখা গেলো, ছেলেমেয়েদের মিলিয়ে ১২ তম স্থান অধিকার করেছে সে! মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান! অন্য সব বিষয়ে ৮০ র অধিক, অঙ্কে ৯৯ আর অ্যাডিশনাল অঙ্কে ৯৮, শুধু বাংলায় ৭৮ আর ফ্রেঞ্চে ৭৫। মেয়েটি পেল ২৫ টাকার জলপানি, স্কুল থেকে একভরি সোনার মেডেল আর ইউনিভার্সিটির থেকে অনেক টাকার বই! এমন সাফল্য সে সত্যিই আশা করেনি!
“শুধু সঙ্গে তারি গাইত আমার প্রাণ
সদা নাচত হৃদয় অশান্ত..”
 ডায়োসেসন কলেজে ভর্তি হোল মেয়েটি। আস্তে আস্তে জীবনের মাধুর্যের চেহারাটার একটু আভাস মেয়েটি ততদিনে মনের মধ্যে অনুভব করতে শিখছে! প্রশান্তদার ভাই বুলাদা ছিল ঠাকুরবাড়ীর ঘনিষ্ঠ! ততদিনে মেয়েটি এবং তার ভাই বোনেরা সকলেই রবীন্দ্রনাথের বেজায় ভক্ত বনে গেছে! বুলাদা কবির এত কাছের মানুষ যে কবি কলকাতায় এলে তাঁকে এখানে ওখানে নিয়ে যাবার দায়িত্ব পালন করে থাকে। মেয়েটি বুলাদাকে একদিন একটা নতুন অটোগ্রাফ খাতা দিয়ে বললো” রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে কিছু লিখিয়ে আনো; পুরনো জিনিস না, নতুন কবিতা যেন হয়।” বুলাদা দু-তিনদিন বাদে খাতাটা দিয়ে গেল। তাতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “নামের আখর কেন লিখিস্ আপন সকল কাজে? পারিস্ যদি প্রেমের আখর রাখিস্ জীবন মাঝে।”
ডায়োসেসান স্কুল থেকেই আই.এ পাশ করলো সে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ১৯২৬ সালে। ১৯২৮ সালে বি.এ পাশ করলো ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে। এবার একবারে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে! আর ১৯৩০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম.এ পাশ করলো প্রথম শ্রেণীতে যুগ্মভাবে প্রথম স্থানটি বজায় রেখেই!
বয়েস বাড়ার সাথে সাথে ও আপন শিক্ষার প্রভাবে, স্বাধীন চিন্তার ক্ষমতা ও স্বনির্ভরতা মেয়েটি অর্জন করেছে এতদিনে। তাই বাবার বারণ না মেনেই ১৯৩০ সালে দার্জিলিংয়ের মহারানি স্কুলে শিক্ষকের চাকরি নিয়ে একাই চলে গেল সে! অবশ্য সেই শিক্ষকতার কাজ খুব যে উপভোগ্য ছিল তার কাছে,তা নয়! তার মন যেন কোন অজানা কিছুর আশায় ব্যাকুল থাকত সারাক্ষণ!  আর সেখানে থাকাকালীন, দার্জিলিং ভ্রমণে এলেন কবি তাঁর দলবল নিয়ে! ম্যাকিনটশ রোডে আশানটুলি ও পাশের একটি বাড়িতে বসল চাঁদের হাট! কবির সাথে ছিলেন সস্ত্রীক দিনু ঠাকুর ও তার ভাগ্নে-ভাগ্নীরা, রথীন্দ্রনাথ ও প্রতিমা দেবী,  ডাক্তার নীলরতন সরকারের মেয়েরা, প্রশান্তদা আর তার স্ত্রী এবং আরো অনেকে। মেয়েটি তাঁর মেশোমশাইয়ের সাথে গেল কবির কাছে। সেই প্রথম তার কবির সাথে  সরাসরি কথা বলার সুযোগ হল! যে কদিন কবি সেখানে ছিলেন, মেয়েটি প্রতিদিনই প্রায় আশানটুলিতে গিয়ে কবি সান্নিধ্য উপভোগ করেছিল আর রবীন্দ্রনাথ যে একজন ভারি আমুদে মানুষ তার সম্যক উপলব্ধি লাভ করেছিল। বেশ কদিন কাটাবার পর একদিন কবি স্বগতোক্তি করলেন যে পাহাড় তার ভালো লাগেনা, কেমন যেন বুকের উপর বোঝা হয়ে চেপে বসে তাঁর! অসীম দিগন্ত যেন বড় বেশি ছোট হয়ে চারদিক দিয়ে বাধা সৃষ্টি করে।
মেয়েটি অবাক হয়ে গিয়েছিল সেদিন কবির মুখের সেই কথা শুনে! শৈশবে পাহাড়ী শহরে লালিত পালিত যে মেয়ে, তার কাছে এই কথা বেসুরো ঠেকবে বৈকি! এর পরেই সদলবলে, কবি নেমে গেলেন দার্জিলিং থেকে!
দার্জিলিং এর বাড়িতে একদিন কোথা থেকে এক সাধু এসে ঢুকলেন মেয়েটির বসবার ঘরে, আর জানালেন “আমি মন পড়ে দিতে পারি।” এটা ওটা বলবার পর, চলে যাবার সময় মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে সাধু বললেন “এক হপ্তা বাদে একটা চিঠি পাবে। এক মাস বাদে এখন যেমন আছ, সব বদলে ফেলবে।” এই বলে তিনি চলে গেলেন।
রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ফিরে গিয়েই মেয়েটিকে চিঠি লিখলেন এই জানিয়ে যে বর্তমানে সেখানকার শিশু বিভাগের পরিচালক এক বছরের ছুটিতে যাচ্ছেন। তাই মেয়েটি যেন শান্তিনিকেতনে এসে এক বছরের জন্য সেই বিভাগের দায়িত্ব নেয়! সাধুর ভবিষ্যত বানীর এক সপ্তাহের মধ্যেই এই চিঠি পৌঁছালো মেয়েটির হাতে!
এবার মেয়েটিকে পায় কে! তবে বাড়ীর সকলে যতই রবীন্দ্রনাথের ভক্ত হন না কেন বাড়ীর মেয়ের একলা শান্তিনিকেতনে চাকরি করবার অনুমতি কিন্তু মেলেনি সহজে! তাই বাড়ীর লোকের প্রায় বিনা সম্মতিতেই, মেয়েটি এসে পৌঁছাল আশ্রমে! শুরু হলো এক নতুন জীবন, অন্যভাবে পথচলা। জুন মাসের শেষ, ১৯৩১ সাল! রবীন্দ্রনাথ তাকে বলেছিলেন যে তিনি চান মেয়েটি আশ্রমে মনের সুখে থাকুক। তিনি অবহিত ছিলেন মেয়েটি শিশুদের জন্য গল্প লিখে থাকে, তাই ভেবেছিলেন তাকে শিশু বিভাগের কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু এখন তাঁর মনে হচ্ছে, তার চেয়ে মেয়েটি যেন কলেজে ইংরেজি সাহিত্য আর স্কুলের উঁচু ক্লাসের ইংরেজি পড়াবার দায়িত্ব নেয়। মেয়েটির কিছু বলবার ছিল না, আর থাকবারই বা কি আছে! স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাকে ডেকে কাজ করতে বলেছেন, সেই ছিল তার কাছে যথেষ্ট পাওয়া!
রবীন্দ্রনাথের তখন সত্তর বছর বয়স, নিয়মিত পড়ান না, কিন্তু অবারিত দ্বার। যার সাহসে কুলোত সেই গিয়ে তাঁকে মনের কথা বলে আসতে পারতো। সপ্তাহে সপ্তাহে সাহিত্য সভা হত, ছেলে মেয়েরা নিজেদের রচনা পড়তো, অধ্যাপকরা উপস্থিত থাকতেন, সভাপতিত্ব করতেন। ভোর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত গানের হাওয়া বইতো। মনে হতো সমস্ত আশ্রমটাই গান গাইছে। বাংলার ছয় ঋতু যে কি মহান, কি মধুর তার স্বাদ পেতে, সুগন্ধ নিতে শিখল সেই মেয়েটি!
ধূ- ধূ করছে খোলা মাঠ, দূরে দিগন্তে নীল বনরেখা, পূবে রেলের উঁচু বাঁধ, নীচের কাটিং দিয়ে ট্রেন গেলে ধোঁয়া দেখা যায়। রেলের ওপারে মাঠ পেরিয়ে পারুলডাঙা। পশ্চিমে শ্রীনিকেতন পর্যন্ত ফাঁকা রাস্তার দু ধারে খোলা মাঠ, ভাঙা খোয়াই ধূ-ধূ করছে। চেয়ে চেয়ে দেখে মেয়েটি, আর বুঝতে পারে রবীন্দ্রনাথ কেন দার্জিলিংয়ে বলেছিলেন পাহাড় তার বুকের উপর বোঝার মত চেপে বসে!
শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরা সেবার কবির সত্তর বৎসর পূর্তির জয়ন্তী উৎসবের তোড়জোড়ে ব্যস্ত। সেই পরিবেশের মধ্যেই নিজেকে মগ্ন করে রেখেছে সে। ভোরবেলায় ওঠা, বৈতালিক, গাছের তলায় ক্লাস। সবটার মধ্যে এমন এক বাঁধন ছাড়া ভাবের সঙ্গে কড়া নিয়ম – পালন দেখে হকচকিয়ে যায় তার মন। সারাদিন ঘন্টা দিয়ে ভাগ করা, কলঘরে যাওয়া, ঘর ঝাঁট দেওয়া, খাওয়া, বসা, উপাসনা করা, খেলাধুলো, গানবাজনার নিয়ম নিগড়ে বাঁধা। আবার তারি মধ্যে অগাধ ছুটির অবকাশ, দল বেঁধে কোপাই যাওয়া, গেটের নীচে সাহিত্যবাসর, নাচগান আর অভিনয়ের সময় বেরিয়ে আসে অনায়াসে!
প্রতিদিনের এত আনন্দের মাঝেও, পরনিন্দা, পরচর্চা, ব্যক্তিগত আক্রোশ, ছোট গোষ্ঠীর মধ্যে রেষারেষি, নিজের সুবিধা করে নেওয়ার চেষ্টা এসবের শিকার হয়েছিল মেয়েটি! এই নিয়ে ক্ষুব্ধ চিত্তে রবীন্দ্রনাথের সামনে দাঁড়ালেই উনি বাজপাখির মতো তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে যেই নরম গলায় বলতেন “ওরা বলেছে বলে কি তোমার গায়ে ফোস্কা পড়েছে?” অমনি ক্ষুব্ধ চিত্ত শান্ত হয়ে যেত মেয়েটির। তিনি বলতেন “ছোট মুখের ছোট কথায় কান দিয়ো না। আমাকেও তো কত কি বলে। চিরকাল বলেছে।”
পরে মেয়েটি বুঝতে পেরেছিল, যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই এই ধরনের আবহাওয়ার সৃষ্টি হয় তবে এর জন্য রবীন্দ্রনাথের শিক্ষার আদর্শ এতটুকুও ম্লান হয় না।প্রকৃতির বুকে ছেলেমেয়েদের ছেড়ে দেবার যে কথা কবি বলতেন, মেয়েটি আশ্রমে এসে সেই মনোহরকে নিজের চোখে দেখতে পেল। রবীন্দ্রনাথ তাকে একদিন পাকা ধানের ক্ষেতের ধারে দাঁড় করিয়ে ধানের গান শোনালেন। মেয়েটি মুগ্ধ হয়ে শুনলো বাতাসের দোলা লেগে পাকা ধানের শীষ একটার পর একটা আছড়ে পড়ছে আর মধুর এক ঝম-ঝম-ঝম শব্দ উঠছে।
“বুঝেছিলেম অনুমানে এ কণ্ঠহার দিলে কারে…:
কবি সন্ধ্যায় রোজ উত্তরায়ণের বারান্দায় এসে বসতেন। অধ্যাপক কর্মী অতিথি – অভ্যাগতের ভিড় জমে যেত। বেশিরভাগই নিঃস্বার্থভাবে তাঁর পায়ের কাছে বসে তার মুখের কথা শোনার আশায় থাকতেন। কেউ হয়তো তাঁর গলায় জুঁই ফুলের মালা পরিয়ে দিল, তিনি তাই পরেই বসে রইলেন । রেশমি জোব্বা পরে, গলায় ফুলের মালা পরে, মেয়েটি সেদিন বসে থাকতে দেখেছিল বলিষ্ঠ দেহ, তীক্ষ দৃষ্টি, দৃঢ় কণ্ঠ, পৌরুষের প্রতিমূর্তি এক কবিকে! সান্ধ্যভোজ কবি তাড়াতাড়ি সেরে নিতেন। ভৃত্য বনমালী এসে দাঁড়ালে, যে যার উঠে প্রণাম করে বাড়ী যেতেন। সেদিন মেয়েটি ছিল একা। কবি তাকে বললেন “তুমি যেও না, আমার কাছে বস।” কবি খেতে বসলেন, মেয়েটি তাঁর পাশে বসে দেখতে থাকে। বনমালী খাবার দিল। মীরাদেবী আসেননি, প্রতিমা দেবী অসুস্থা। এরকম মাঝে মাঝে হত, কবি একা খেতেন। কবি সেদিন নিজের কোয়ার্টার – প্লেটখানি মেয়েটির সামনে ঠেলে দিয়ে, নিজের হাতে পাত থেকে লুচি,তরকারি, সন্দেশ তুলে মেয়েটিকে দিলেন আর কত যে গল্প করলেন মেয়েটির সাথে! মেয়েটি প্রণাম করে চলে আসার সময় বললেন “দাঁড়াও, দক্ষিণা দিতে হবে না?” বলে গলা থেকে ফুলের মালাটি খুলে মেয়েটির হাতে দিলেন। মেয়েটি কিছুই বলতে পারেনি সেদিন, শুধু মনে মনে বুঝেছিল এ তার জীবনের এক বিশেষ উজ্জ্বল মুহুর্ত।
“যেতে  যদি হয় হবে–
যাব, যাব, যাব তবে।
লেগেছিল কত ভালো, এই–যে  আঁধার আলো
খেলা করে সাদা কালো উদার নভে।”
বেশ ছিল মেয়েটি, কিন্তু কোথায় যেন তাল কেটে গেল। জায়গাটা বড় ভালো ছিল, অনেক ভালো লোকের সান্নিধ্য ছিল, অনেক মানুষের স্নেহের বন্ধন ছিল, কিন্তু মেয়েটির মনে হত যথেষ্ট সম্মান সেখানে ছিল না। তাই চাঁদনি রাতে গান শোনা, বর্ষাশেষে কোপাই নদীর তীরে বেড়ানো, খোয়াইয়ের রহস্য আবিষ্কার করার মতো আকর্ষণীয় কাজ ছেড়ে মেয়েটি কলকাতায় ফিরে গেল। কবি তখন বিদেশে। কবি ফিরে এলে মেয়েটির চলে আসার কথা কেউ তাঁকে জানায়। অনেকদিন চুপ থাকার পর, মেয়েটি কবিকে লেখে একটি চিঠি। তার প্রত্যুত্তরে কবি লেখেন
কল্যাণীয়াসু,
তোমার চিঠিখানি পড়ে খুব খুশি হয়েছি। প্রতিদিনের কাজের টানা – হেঁচড়া গোলমালের মধ্যে আমাদের আশ্রমের আসন অখন্ড থাকে না। মলিনও হয়, দুঃখও পাই। কিন্তু সেই কাজের বাইরে তুমি যে আসন পেয়েছ সে রইল তোমারি চিরকালের জন্যে। তোমার যখন অবকাশ, যখন খুশি, যদি এসো তাহলে দেখবে তোমার জন্য রয়েছে তোমার যথার্থ স্থান।
আজ ৭ই পৌষের মন্দিরের কাজ শেষ করে এলেম। তোমার কথা মনে পড়ল। ছুটি নেই তোমাদের, যদি আসতে পারতে নিশ্চই তোমার ভাল লাগত।
তুমি আমার আন্তরিক আশীর্বাদ গ্রহণ করো।
ইতি।
শুভানুধ্যায়ী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
৭ ই পৌষ ১৩৩৯।
কলকাতায় ফিরে মেয়েটি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে আশুতোষ কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন, একসাথে গোখেল কলেজেও। কিন্তু সে সব এখন থাক। কবির সাথে মেয়েটির সম্পর্কের কথা সবিস্তারে বলাই আমার এই লেখার উদ্দেশ্য।
১৯৩৩ সালে বাবা মায়ের অমতে, রেজিস্ট্রি বিয়ে করে মেয়েটি। পাত্র ছিলেন বিলাত ফেরত ডাক্তার। যোগ্যতার দিক থেকে পাত্রীর থেকে কোনো অংশে কম না হলেও পাত্র ছিলেন হিন্দু আর মেয়েটি ছিল গোঁড়া ব্রাহ্ম পরিবারের।
মেয়েটি তার আপন শিক্ষার মানদন্ডে, ধর্মের গোঁড়ামির থেকে তার হৃদয়ের আহ্বানকে বেশি যুক্তিসঙ্গত বলে বিবেচনা করে এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করে নি! বাবা মা বিয়েতে উপস্থিত না থাকলেও, কলকাতার রাস্তায় সেদিন বৃষ্টিতে এক হাঁটু জল দাঁড়ালেও, সাড়ে সাতশো অতিথি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন। সেকালের গাড়ি খুব উঁচু ছিল বলেই আসতে পেরেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের নিজের নকশায়, নিজের হাতের তৈরি ছোট চামড়ার হ্যান্ডব্যাগ উপহার দিয়েছিলেন মেয়েটিকে, যা ছিল তার কাছে এক অমুল্য সম্পদ!
সালটা সম্ভবত ১৯৩৯, মেয়েটি তখন দুই সন্তানের জননী। কবির দৌহিত্রি, রথীন্দ্রনাথ ও প্রতিমার পালিতা কন্যা নন্দিনীর (যে “পুপে” নামেই বেশি পরিচিত ছিল) বিবাহ উপলক্ষে আমন্ত্রিত হয়ে আবার শান্তিনিকেতনে যাত্রা।
আশ্রমে সকাল থেকেই বিয়ের উৎসব লেগে গেছিল।অতিথি আপ্যায়নের ঢালাও ব্যবস্থা! বড় বড় তাঁবু খাটিয়ে তার নিচে শালপাতার পাতে সারি সারি বসে পদ-মান-নির্বিশেষে সবাই খাওয়া দাওয়া করছে। মেয়েটি এই ব্যবস্থাপনা দেখে মুগ্ধ!
সন্ধ্যায় উদয়ন বাড়ির পূবের বারান্দায় রবীন্দ্রনাথ নাতনির বিবাহ দিলেন। বর সিন্ধি, অতি ধনী পরিবারের ছেলে। বিয়ে কি মতে হয়েছিল জানা নেই, তবে যজ্ঞ হয়েছিল। মেয়েটি সেই যজ্ঞের আগুনে কবির মুখের অপার্থিব সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল, মানুষ যে কত সুন্দর হতে পারে, এই ভেবে! মেয়েটি তার স্মৃতিচারনে এই বিবাহের বর্ণনা লিখেছিল “ও সব ছবি আমার মনের পটেও সচল হয়ে রয়েছে। সেকালের জমিদারি আতিথেয়তার সুন্দর একখানি ছবি। যার মধ্যমণি বর-কন্যা নয়, তাদের মা-বাবাও নয়, প্রায় আশী বছরের পিতামহ। অনেকখানি ঝুঁকে পড়েছেন, কানে কম শোনেন, চোখে কম দেখেন কিন্তু মনের দীপ্তিতে ধ্রুবতারার মতো জ্বলেন।”
“সমুখে শান্তি পারাবার ভাসাও তরণী হে কর্ণধার ….”
কাহিনির শেষে এসে দাঁড়িয়েছি। সেদিনের ছোট্ট মেয়েটি আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিতা। ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট, বাংলা শ্রাবণমাস, বর্ষাকাল। আজ মেয়েটির মন বড়ো উতলা আর ব্যথিত! কিছুদিন থেকেই সে জানে কবি বড়ই অসুস্থ। কলকাতায় এনে অপারেশনেও কোনো সুফল তো হয়ইনি বরং খারাপই হয়েছে। সব কাজ-কর্মের মধ্যে বারে বারে শান্তিনিকেতনের এক বছরের স্মৃতি ফিরে ফিরে আসছে। কোথায় একদিন বসে ছিলেন, কাছে গেলে হেসে মুখ তুলে চেয়েছিলেন। কোনদিন উত্তরায়ণের বারান্দায় ছেলেমেয়েদের শেলির স্কাইলার্ক পড়িয়েছিলেন। উত্তরায়ণের আমবাগানে আম গাছের তলায় কবে চা খাওয়া হয়েছিল। কবে নাটকের মহড়া দিতে দিতে কোন কথা বলেছিলেন। ছোট ছোট টুকরো স্মৃতি ভীড় করে আসছিল মেয়েটির মনে। এমন সময় জোড়াসাঁকো থেকে ফোন এল কবিকে শেষ দেখার অনুরোধ নিয়ে। মেয়েটি একবার ভাবলো যে কবির রোগক্লিষ্ট চেহারার সাক্ষী হবার থেকে তাঁর অপরূপ রূপকেই মানসপটে চিরভাস্বর রাখাই শ্রেয় হবে। কিন্তু তার বালবন্ধু পূর্ণিমা তাকে জানালো যে কবির রূপ আজও অতি সুন্দর!
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে যে ঘরে কবি শুয়েছিলেন, সেই ঘরের দুদিকের দরজা বন্ধ ছিল। মেয়েটি তার পাশের ঘরে গিয়ে বসবার কিছু পরে তাকে শেষ দেখা দেখবার জন্য কবির ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো। ঘরের মাঝখানে লম্বা একটি খাটে কবি শায়িত ছিলেন। চোখ বোঁজা, মুখে গভীর শান্তি, বেদনার কোনো চিহ্ন নেই, প্রাণেরও কোনো সাড়া নেই, শ্বেত-পাথরে খোদাই করা মূর্তি যেন। খালি বুকটা উঠছে পড়ছে। পাশে নিচু টুলে বসা ডাক্তারের এক হাতে অক্সিজেনের টিউব, অন্য হাত কবির নাড়ির ওপর। মেয়েটি কবির পায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। মুখের দিকে চেয়ে থাকে আশ্চর্য হয়ে, কি সুন্দর, কি শান্ত! হঠাৎ ডাক্তার অক্সিজেনের নল নামিয়ে রেখে, নাড়ি থেকে হাত তুলে, দু-হাতে নিজের মুখ ঢাকলেন। মেয়েটি চেয়ে দেখলো, বুকটা আর উঠছে পড়ছে না। তিনি চলে গেলেন।
আমার গল্পের শেষ এখানেই। আশা করি পাঠকেরা নিশ্চই এতক্ষণে আমার গল্পের নায়িকা সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটিকে চিনতে পেরেছেন। যদি পেরে নাও থাকেন, তাহলে উপরে বর্ণিত কিছু চরিত্রের (সংখ্যার মাধ্যমে চিহ্নিত) পরিচয় দিলাম নিচে ক্রমানুসারে, যা থেকে গল্পের নায়িকাকে অবশ্যই চেনা যাবে।১ শিলং শহর
২ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ
৩ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
৪ প্রমদারঞ্জন রায়
৫ সুকুমার রায়
তবে একদম আনকোরা নতুন পাঠকদের জানাই যে এই গল্পের নায়িকা হলেন আমার এক অত্যন্ত প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় লেখিকা শ্রীমতী লীলা মজুমদার।
তাঁকে শুধুমাত্র একজন লেখিকা বললে ভুল বলা হবে কারণ বর্ণময় চরিত্রের এই বিদুষী ছিলেন একাধারে সাহিত্যিকা, সম্পাদিকা, শিক্ষাবিদ, চিত্রকার, নাট্যকার, বেতার প্রযোজক, রন্ধনশিল্পী এবং আরো বিশিষ্ট শিল্পগুনের অধিকারিনী এক বিরাট মাপের মানুষ! রবীন্দ্র সমকালীন ও রবীন্দ্রোত্তর যুগের বহু দিকপালের সংস্পর্শে তাঁর আপন প্রতিভার উন্মেষের সাথে সাথে, সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে করে তুলেছিলেন উজ্বল থেকে উজ্বলতর! যে সকল পুরস্কারে তাঁকে  সম্মানিত করা হয়েছিল, তার মধ্যে রবীন্দ্রপুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, লীলা পুরস্কার ও ভারতীয় শিশুসাহিত্যের পুরস্কার উল্লেখ্য। তাঁর বিশাল কর্মময় ও সৃষ্টিশীল জীবনে যে সকল বনস্পতির সাহচর্য তিনি পেয়েছিলেন, নিঃসন্দেহে সেই দলের অন্যতম মহীরুহ ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ! পারিবারিক সূত্রে এবং সেই সাথে তাঁর আপন প্রতিভার দ্যুতির কারনে, লেখিকা  ছিলেন রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত কাছের ও স্নেহের পাত্রী! তাই লেখিকার জীবনকাহিনীতে বার বার বিভিন্ন সময়ে বর্ণিত রবীন্দ্র সান্নিধ্যের কথা ব্যক্ত হয়েছে! আজ সেই ঘটনাগুলির সময়ানুক্রমিক বিবরণ একত্রিত করে আপনাদের সামনে নিবেদন করবার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। উপরের লেখাটিতে, তাঁর রচিত “আর কোনোখানে” ও “পাকদণ্ডী” নামক বই দুটির বয়ানই বিবৃত করা হয়েছে।
***************************************************

অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য্য পরিচিতিঃ
জন্ম, স্কুল, কলেজ সবই কলকাতা। কর্মজীবন কেটেছে অবশ্য বিশাখাপত্তনম, অন্ধ্র প্রদেশে। সঙ্গীত প্রিয় ও রবীন্দ্রানুরাগী!

 

27 Comments

    • Bhaskar Chakraborty, Tushar Kanti Chakraborty, Shankari Chakraborty

      Amazing compilation of events. Innocent perspective. Compelling narrative. A great insight into the human side of Bengal’s most incredible bard through the eyes of a little girl who grew into an icon herself. A true reading pleasure.

  • Paramita Goswami

    ছড়িয়ে রাখা ফুলগুলি জড়ো করে মালা গাঁথার অপূর্ব এক প্রয়াস। ভালো লাগলো।

  • Saumitra

    খুবই যত্ন করে সাবলীল ভাষায় তথ্যসমৃদ্ধ লেখা – অনেক অজানা ঘটনা জানতে পারলাম, পড়তে খুবই ভালো লাগলো l

    • শান্তা গুপ্ত

      বড়ো ও ভালো লাগলো ।অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম, অসংখ্য ধন্যবাদ ।

  • Moumita Acharys

    খুব ভালো লাগলো ,অনেক অজানা জিনিস জানতে পেরে

  • Krishna Naha

    খুবই ভালো লেখা। অনেক তথ্যসমৃদ্ধ। বেশ কিছু ঘটনা আগে জানা থাকলেও এই পরিশীলিত লেখাটির মাধ্যমে যেন ছবির মত আঁকা রইল।

  • শুভদীপ ভট্টাচার্য্য

    খুব ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে নতুনভাবে জানতে পারলাম।

  • Sumita Bhaduri

    Sundor lekha.ajana tathyer sange param satya pratistha peyeche je amra bayas barar sange sange dhire dhire Rabindranath ke bujhi je bojhar ses nei.lekhak ke anek dhanyabad emon lekha upohar debar jonno.

  • সোনালী গুহ

    লীলা মজুমদার আমার একজন অত্যন্ত প্রিয় লেখিকা।খুবই সুন্দর বর্ণনা!!!অসাধারণ দুই মহীরুহের আত্মিক বন্ধনের মালা গাঁথা!!

  • Brati Ghosh

    অনেক অজানা কথা জানা গেল। ভালো লাগল পড়ে।

  • অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য

    আপনার ভালো লেগেছে জেনে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে!

  • আশিস কুমার সরকার

    “দীর্ঘ ও হ্রস্ব” র পর আবারও মুগ্ধ হ’লাম, বিষয়বৈচিত্র্য ও ভাষার সৌকর্যে ! লেখকের বৈদগ্ধ ও রবীন্দ্রানুরাগ তথা সাহিত্যানুরাগ লেখাটির ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে !!… আশ্চর্য সমাপতন — মাত্র কয়েকদিনআগেই নতুনকরে “পাকদন্ডী” পড়লাম !!! ….. অধীর আগ্রহে পরের লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

    • Akhilesh Samanta

      দারুন লেখা, অনবদ্য । পড়তে পড়তে পৌঁছে গেলাম শান্তিনিকেতন, শ্রীনিকেতন, খোয়াই মায় ভুবনডাঙার মাঠও ঘুরে এলাম ।
      তবে আমার মতো আনকোরাদের জন্য ১,২,৩,৪,৫ খুবই জরুরী ছিল ।

  • Sunanda Mukherjee

    খুব ভালো লাগলো কখনো সহজ স্রোতের টানে ভেসে যেতে, কখনো ডুবে যেতে আর কখনো নুড়ি পাথর কুড়িয়ে পেতে । অভিনন্দন আর শুভ কামনা জানাই ।

  • বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

    অগ্নি, আমি এই লেখার আলোচনা করার যোগ্য নই। এতো সাবলীল লেখা যে আমার মতো মূর্খ ও এর স্বাদ থেকে বঞ্চিত হলোনা। সাবাস অগ্নি। চালিয়ে যা।

    বিদ্যুৎ

  • বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

    অগ্নি, অনেক ভয়ে ভয়ে ভীত ভাব নিয়ে ভাবনা টা লিখলাম। খুব সাবলীল তথ্য সমৃধ্য রচনা।
    আমার মত মূর্খ যখন পরে আনন্দ পেয়েছে, সুতরাং *আপনি থাকছেন sir* ,
    আপনি চালিয়ে যান।
    আমরা আপনার প্রসাদ পেতে থাকি।
    ভালো থাকিস।

  • গৌতম চক্রবর্তী

    এই লেখা সম্বন্ধে মতামত দেওয়ার যোগ্যতা আমার নেই
    তবে তোর খুব পরিশ্রম হয়েছে,খুঁজে খুঁজে মনিমুক্ত তুলে এনেছিস। আমরা আরো চাই। চালিয়ে যা

  • Rana Bhattacharyya

    কি বলবো কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। এরকম আরও লেখা চাই। অগ্নি তারুণ্য তোর চরিত্র থেকে কোনদিন যাবে না।

  • অরূপ

    খুব সুন্দর গল্পের মত, রুদ্ধশ্বাসে পড়ছিলাম, কে উনি জানার জন্য।
    অগ্নিদা আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। অজানা কে জানানোর জন্য।

  • Rasbehari Chakravorty

    সবটাই পড়লাম। অত্যন্ত শক্তভাষার মোড়কে সজ্জিত প্রতিবেদন পড়ে খুব ভালো লাগলো। বহুতথ্যের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ রচনাটি আমাদের মতো আনকোরা পাঠকদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। আমাদের আরও পড়তে ও জানতে অনুপ্রাণিত করে। লীলা মজুমদার ও রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক অনেকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। অগ্নি, তুমিও অনেক উচ্চমানের লেখক হতে পার। তোমার প্রখর স্মরণশক্তি ও রবীন্দ্রনাথের প্রতি অসীম অনুরাগ তোমার অগ্রগতির সম্পদ হয়ে থাকবে। যা যা বল আর পড় সেগুলি আক্ষরিত করে রেখে যাও। অনেক সুপাঠ্য হবে।

  • আশিস দাস

    অনবদ্য লেখা ll এইধরনের আরো লেখা চাই আপনার কাছ থেকে অগ্নিমিত্র বাবু

  • অনিন্দ্য

    লেখার প্রসাদগুণে একটানে পড়ে ফেলা গেল। যাঁরা জানেন না, তাঁদের জন্য মেয়েটির পরিচয়ের রহস্যের মোড়কটাও বেশ যথাযথ। দুই মহাজীবনকে এক সুতোয় সুন্দর গাঁথা হয়েছে।

  • Santanu Bhattacharyya

    লীলা মজুমদারের লেখা আমাদের অনেকেরই অত‍্যন্ত প্রিয়। তাঁর অসাধারণ মেধার কথাও জানি। অগ্নির এই লেখাটিতে সে ওঁর চোখে দেখা ও জানা রবীন্দ্রনাথকে আমাদের কাছে উপস্থাপন করেছে অসাধারণ মুন্সিয়ানায়। মনে পড়ে,
    ‘আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না।
    সেই জানারই সঙ্গে সঙ্গে তোমায় চেনা।’
    লেখাটির একেবারে শেষে এসে সেই ছোট্ট মেয়েটির পরিচয় পাঠকের কাছে তুলে ধরার আইডিয়াটা বড়ো সুন্দর হয়েছে। আরও লেখা চাই। চরৈবতি, চরৈবতি।

  • গুঞ্জন গাঙ্গুলি

    অত্যন্ত মনোগ্রাহী এবং অভিনব একটি রচনা। পাঠককে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক নিশ্বাসে পরে ফেলতে বাধ্য করে। আমার লোভ আরো বেড়ে গেলো আপনার লেখার প্রতি।

Comments are closed.

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!