Shadow

রামগড় পর্বত শিখরে – অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য্য

‘হৈমন্তী’ রামগড়ে – ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

রামগড় পর্বত শিখরে

অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য্য

সম্প্রতি সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে যে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শাখা খুলবার সিদ্ধান্ত সরকারী অনুমোদন লাভ করেছে এবং সেই শাখাটি  স্থাপিত হতে চলেছে উত্তরাখণ্ড প্রদেশের কুমায়ুন অঞ্চলের অন্তর্গত “রামগড়”* নামক একটি স্থানে। এই আপাত অখ্যাত “রামগড়” স্থানটিতে বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় শাখা নির্বাচনের তাৎপর্য্য সাধারণ পাঠককুলকে অবগত করাতেই আমার এই নিবেদন। আর তার জন্য বর্তমান সময় থেকে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় এক শতাব্দীরও কিছু বেশী সময় আগে। আসুন আমরা সেই অতীতের পথে কালান্তরে ভ্রমণ শুরু করি।
কাহিনীর শুরু এক কিশোরের পথচলা দিয়ে। কলকাতার এক অভিজাত পরিবারের সেই কিশোরের পিতা তাঁর পুত্রকে এক আদর্শ  ব্রহ্মচর্যাশ্রমে প্রতিপালিত করে তুলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই তিনি তাঁর পুত্রকে ব্রহ্মচর্যাশ্রমের কঠোর জীবনের প্রত্যক্ষ অনুভবের স্পর্শে দীক্ষিত করার উদ্দেশ্যে পদব্রজে তীর্থভ্রমণের নির্দেশ দিলেন। ভগিনী নিবেদিতার মুখে তিনি অবগত হন যে বেলুড়মঠের এক সন্ন্যাসী হিমালয় ভ্রমণে চলেছেন। তিনি তাঁর পুত্রকে সেই সন্ন্যাসীর সাথে যুক্ত করে দিলেন। গেরুয়া বসন, ঘাড়ে কম্বল,পায়ে ভারী মিলিটারি বুটজুতো পরে এক অদ্ভুত বেশে ট্রেনে চেপে বসল সেই কিশোর! গন্তব্য কেদারনাথ, তবে সচরাচর হরিদ্বারের পথে নয়, আলমোড়ার পথ ধরে।
সকালবেলা কাঠগুদাম স্টেশনে পৌঁছে, ট্রেন থেকে নেমেই সন্ন্যাসী মহারাজের নেতৃত্বে পথচলা শুরু। উদ্দেশ্য, সন্ধ্যার পূর্বেই নৈনিতাল পৌঁছানো। সমতলবাসী সযত্নপালিত সেই সম্ভ্রান্ত পরিবারের  কিশোরের নিজস্ব মালপত্রসহ, ক’ মাইল খাড়া পথের চড়াই ভাঙার অভিজ্ঞতা বলাই বাহুল্য সুখের ছিল না  আর তাই সেই পাহাড়ী  যাত্রাপথের চারিপার্শ্বের অপূর্ব নিসর্গ দৃশ্য উপভোগ করবার মতো মনের অবস্থা তখন  তার ছিল না। বেলাশেষে, নৈনিতাল পৌঁছে, হ্রদের ধারে, পূর্ণ বিশ্রামে রাত্রি প্রভাত হল। নৈনিতালের পর পরবর্তী গন্তব্যস্থল ছিল ভওয়ালি, যা ছিল নৈনিতাল থেকে নীচে নামার পথ। সেখানে পৌঁছে সোহহং স্বামীর আশ্রমে বিশ্রামের পর আবার যাত্রা। এবারের লক্ষ্য রামগড়!
এবার চড়াই পথে রামগড় পৌঁছে, এক মুসলমানের হোটেলে আশ্রয় গ্রহণ। হোটেল মালিক সন্ন্যাসী মহারাজের ভক্ত, তাই তিনি সকলকে তার অতিথি করে রেখে গুরুকে সম্মান প্রদর্শন করলেন। হোটেল সংলগ্ন মস্তবড়ো ফলের বাগান। দু’ দিন ধরে কিশোরটি প্রাণভরে সেই বাগানের বিলাতি ফল ও জ্যাম-জেলির রসাস্বাদন করে তৃপ্ত হলো। সে আকৃষ্ট হয়েছিল রামগড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে, মুগ্ধ হয়েছিল সেখানকার লতানো জংলি গোলাপের অনির্বচনীয় সৌরভে! কিশোরটি লক্ষ্য করেছিল যে, ছোট ছোট সাদা রঙের একহারা পাপড়ি যুক্ত ওই সুগন্ধী ফুলের একটি গাছ কোথাও থাকলে, মাইল খানেক দূর থেকেই তার সুবাস বাতাসে ভেসে আসত! অল্পবয়সে রামগড়ের সৌন্দর্যের সেই সুখস্মৃতি যে কিশোরের মনে স্থায়ী আবাস করে নিয়েছিল, তার পরিচয় আমরা পরবর্তী কালে পেতে চলেছি।
রামগড় থেকে আলমোড়া, আলমোড়া থেকে রুদ্রপ্রয়াগ হয়ে, দূর দুর্গম পাহাড়ী পথের ক্লেশ, প্রাকৃতিক রম্য রূপের মুগ্ধতা, পথিমধ্যের বিচিত্র ঘটনার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে সেই কিশোরটি তার অভীপ্স গন্তব্যস্থল কেদারনাথে পৌঁছেছিল। কিন্তু আমরা সেই পথে আর অগ্রসর না হয়ে আবার ফিরে আসব “রামগড়ের” ইতিবৃত্তে!
হিমালয় ভ্রমণের কষ্টসাধ্য, দুর্লভ অভিজ্ঞতা ও সুখস্মৃতিকে সঙ্গে করে ফিরে এসে কিশোরটি যোগ দিল তার পিতার নবস্থাপিত ব্রহ্মচর্যাশ্রমে, বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রথম কয়েকটি ছাত্রের একজন হিসেবে। সেখান থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করে আমেরিকা থেকে কৃষিবিদ্যার পাঠ নিয়ে ফিরে এসে, সেই কিশোর ততদিনে পরিণত হয়েছেন এক যুবাপুরুষে! আর তার পিতার পরিচিতি ও খ্যাতি তখন কেবলমাত্র বাংলাদেশ বা ভারতবর্ষেই নয়, সারা পৃথিবীতেই হয়েছে ব্যাপ্ত! হ্যাঁ, এতক্ষণে সকল পাঠক ঠিকই অনুমান করেছেন যে এই নব্যযুবা হলেন কবি রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর!
১৯১৩ সালের কথা, যে বছর কবি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন, সেই সময় খবর কাগজে একদিন একটি বিজ্ঞাপন রথীন্দ্রনাথের নজরে আসে। নৈনিতালের কাছে, রামগড় পাহাড়ের উপরে “স্নো-ভিউ” নামে একটি বাগানবাড়ি বিক্রি আছে। বাগানটির আয়তন তিনশ বিঘা, আপেল, পীচ, খোবানি, আখরোট প্রভৃতি ভালো ফলের গাছে সজ্জিত। এই বাগান কিনতে ভারী ইচ্ছা হোল রথীন্দ্রনাথের। কৈশোরের সেই সুখস্মৃতিকে আরো একবার ফিরে পাওয়ার অদম্য ইচ্ছায় মরিয়া হয়ে সেইদিনই সন্ধ্যায় তিনি একাই ট্রেনে উঠে পড়লেন বিজ্ঞাপনে বর্ণিত বাগানের সন্ধানে! আবেগের বশে প্রয়োজনীয় রাহাখরচের হিসাব না করেই যাত্রা! কাঠগুদামে নেমে ঘোড়ার পিঠে চেপে পাকদন্ডী ধরে রামগড়ের পথে একাকী পথ চলা শুরু। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, চড়াই উতরাই পেরিয়ে চললেও পথের শেষ আর হয় না!  অনেক সময়ের পরে যখন পথ হারাবার আশঙ্কায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে উঠেছে মন, ঠিক তখনই একটি পাহাড়ের চড়াই পেরিয়ে চোখের সামনে ঝকঝকে তুষারাবৃত পর্বতশৃঙ্গ প্রকাশিত হল! ঘোড়া থেকে নেমে ঘাসের উপর বসে সেই অপূর্ব দৃশ্য প্রাণভরে নিরীক্ষণ করলেন রথীন্দ্রনাথ। নীচের দিকে তাকিয়ে দেখলেন অনতিদূরেই একটি বাড়ি। বাড়িটি বন্ধ, তবে যে দু-একজন  মালি বাগানে কাজ করছিল, তাদের কাছে জানা গেল সেই বাড়িটিই “স্নো-ভিউ”। ঘুরে ঘুরে বাড়ি, বাগান দেখলেন  তিনি। ভারি ভালো লাগলো আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করলো তাঁকে। হোটেলে রাত কাটিয়ে, পরদিন বিল মেটাতে গিয়ে বোঝা গেল যা অর্থ অবশিষ্ট আছে, তাতে হোটেলের বিল দেবার পর কলকাতায় ফিরবার পাথেয়র সংস্থান হবে না! তাই হোটেল মালিকের কাছে সোনার আংটি ও হাতঘড়ি জমা রেখে কিছু টাকা ধার করে কলকাতায় ফিরে বাবামশাইকে জায়গাটির বর্ণনা দিতেই কবি উৎসাহিত হয়ে দিলেন অনুমতি! “স্নো-ভিউ” কেনা হয়ে গেল। তবে কবির বাড়ির নাম পছন্দ হোল না, তাই বদলে তার নাম রাখলেন “হৈমন্তী”।
পরের বছর, অর্থাৎ ১৯১৪ সালের গ্রীষ্মাবকাশে প্রথমবার পরিবারের সকলের সাথে “হৈমন্তী” যাওয়া স্থির হোল। রথীন্দ্রনাথ আগেই কলকাতা থেকে দিনেন্দ্রনাথ ও তরুন শিল্পী মুকুল দে কে নিয়ে বদরিকাশ্রম ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন, সেখান থেকে ফিরে “হৈমন্তী”তে এসে দেখলেন “চাঁদের হাট” বসেছে! রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর পরিবারের সকলেতো ছিলেনই, তাদের সাথে C. F. Andrews সাহেব এবং লখনউ থেকে কবির আমন্ত্রণে অতুল প্রসাদ সেনও অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়েছেন! তাই এতদিনের নির্জন “হৈমন্তী”র পরিবেশ, দিনেন্দ্রনাথের ও বিশিষ্ট অতিথিগনের উপস্থিতিতে, হাসি, গান আর গল্পগুজবে মুখরিত হয়ে উঠলো!
আহারাদির প্রাচুর্যের অভাব ছিল না, বাগানের থেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণে শাক-শবজি ও নানাবিধ ফল আমদানি হয়েছিল। রথীন্দ্রনাথ লিখছেন “এত স্ট্রবেরি কখনো খাইনি, খেয়ে শেষ করতে পারা যেত না বলে স্ট্রবেরির টক, স্ট্রবেরি দিয়ে মুগের ডাল — নানান উপায় আবিষ্কার করতে হত ফলগুলি সদ্ ব্যবহার করার জন্য।”
সবচেয়ে জমিয়েছিল গান! গায়কের ত্র্যহস্পর্শ– একসাথে রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ ও দিনেন্দ্রনাথ! দিনরাত গানের ফোয়ারা ছুটলো “হৈমন্তী”তে। রবীন্দ্রনাথ সকল কাজ ছেড়ে প্রতিদিন নতুন গান রচনা ও তাতে সুর দিতে মগ্ন হলেন। যেহেতু দিনেন্দ্রনাথ কাছে আছেন–রবীন্দ্রনাথ নির্ভয়, কারণ সুর হারিয়ে যাবে না। দিনেন্দ্রনাথ একবার সুর শুনলেই মনে রাখবেন। তাই মনের আনন্দে গান বাঁধতে থাকেন রবীন্দ্রনাথ।


রামগড় থেকে হিমালয়ের দৃশ্য – ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বাগানের এক কোণে পাহাড়ের গায়ে একটা গুহার মতো ছিল, যেখানে সকালে আড্ডা বসত। সকলের পছন্দ অতি সুন্দর সেই স্থানটি। পিছনে খাড়া পাহাড়, যার চূড়া পর্যন্ত গভীর বনের আচ্ছাদন। বড়ো বড়ো পুরানো ওক গাছ, তাদের ডালপালা ‘মস্’ এ ঢাকা, যার মাঝে নানা রকম অর্কিড ফুটে আছে। সকলে বসতেন উত্তর মুখ করে, খোলা দিকে দৃষ্টি চলে যায় বহুদূর পর্যন্ত। সামনে পাহাড়ের ঢেউ যেখানে থমকে দাঁড়ায়, সেখান থেকে আকাশ ভেদ করে উঠেছে তুষারাবৃত পর্বতমালা! কেদারনাথ, বদরীনাথ, নন্দগিরি, পঞ্চটুলি ও আরো কত হিমালয়ের উচ্চ শৃঙ্গশ্রেণী। তাদের অলৌকিক সৌন্দর্যে চোখ যায় ঝলসে। যে পাহাড়ের নীচে “হৈমন্তী”, তার ঢাল দ্রুত নেমে গেছে বহু নীচে নদী পর্যন্ত, যে নদীর জল দেখা যায় না– কেবল কানে এসে পৌঁছায় তার ক্ষীণ ঝিরঝির শব্দ!
নতুন কি গান বাঁধা হয়েছে, তার জন্য সকলেই উৎসুক হয়ে থাকেন। অতুলপ্রসাদের আগ্রহ সকলের চেয়ে বেশী। তিনি রবীন্দ্রনাথকে অনুরোধ করলে, কবি দিনেন্দ্রনাথের দিকে তাকিয়ে বলেন ‘তোকে কাল যেটা শেখালুম, তুই-ই গেয়ে দে না, আমার কি ছাই এখন মনে আছে।’ দিনেন্দ্রনাথ গান ধরেন, একটা শেষ হলে আর একটা, অতুলপ্রসাদের তৃষ্ণা মেটে না। নতুন গানের ঝুলি শেষ হলে পুরানো গান গাইতে বলেন, তাঁর যেগুলি বিশেষ ভালো লাগে। রবীন্দ্রনাথ তখন অতুলপ্রসাদকে বলেন ‘তোমার আশ তো মিটল, এখন আমাদের আশ মেটাও, আমরা এবার তোমার গান শুনি।’ অতুলপ্রসাদ তখন তাঁর মিষ্টি গলায় গানের পর গান শুনিয়ে যান। ভৃত্য বনমালী এসে যতক্ষণ না খেতে যাবার তাড়া দিয়ে সভা ভঙ্গ করে দেয়, ততক্ষণ চলে গান।
এবার একটু আসা যাক “হৈমন্তী”র আর এক বিশিষ্ট অতিথি Andrews সাহেবের প্রসঙ্গে। ইংলন্ডের এক পাদ্রি পরিবারে জন্ম Andrews সাহেবের। দিল্লির      St. Stephen কলেজের অধ্যাপক Andrews সাহেব ১৯১২ সালে ছুটিতে লন্ডনে গিয়েছিলেন এবং সেখানে William Rothenstein এর বাড়ীতে কবি Yeats যে কয়েকজন সাহিত্যিককে আমন্ত্রিত করে গীতাঞ্জলির ইংরেজি তর্জমা পড়ে শুনিয়েছিলেন, সাহেব ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। রবীন্দ্রনাথের সাথে সেই তাঁর প্রথম আলাপ ও সেদিন থেকেই কবির ভক্ত। ছুটির পর দিল্লি ফিরে, অবকাশ মতো শান্তিনিকেতনে আসতেন। তাঁর খুবই ইচ্ছা ছিল কলেজের কাজ ছেড়ে দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে সাহায্য করার। এইবার রামগড়ে এসে সাহেব জানালেন যে তিনি কলেজের অধ্যাপকের কাজে ইস্তফা দিয়ে এসেছেন, এখন রবীন্দ্রনাথ তাঁকে যে কাজ দেবেন তাই করতে তিনি প্রস্তুত! তাঁর আর কোনো বন্ধনই নেই, তিনি শান্তিনিকেতনের জন্য ও ভারতবর্ষের জন্য তাঁর জীবন সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। রবীন্দ্রনাথ Andrews সাহেবকে সাদরে গ্রহণ করলেন। রবীন্দ্রনাথ বিশেষ ভাবে এই কারণে খুশি হলেন যে, যদিও তাঁর ইংরেজি ভাষায় অনূদিত  Gitanjali, Chitra, The Gardener , The Cresent Moon ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ তখন প্রকাশিত হয়ে গেছে, তবুও বিখ্যাত বিলাতি Macmillan প্রকাশনা সংস্থা তাঁকে চিঠি লিখছে আরো বাংলা কবিতার ইংরেজি তর্জমার বই প্রকাশের আগ্রহ জানিয়ে — তাই Andrews সাহেবের আগমন তাঁর সেই কাজকে নিঃসন্দেহে ত্বরান্বিত করবে!
রামগড়ের নির্জন বাসকালে, ছটফটে Andrews সাহেব “Fruit-Gathering” কবিতা বইয়ের সম্পাদনার ভার পেয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে সেই কাজেই মশগুল হয়ে আর সব কথা ভুলে রইলেন। রথীন্দ্রনাথ তাঁর স্মৃতিকথায় লিখছেন “সমস্তদিন ধরে বাবার খাতা থেকে কবিতা বাছাই করে নিয়ে একবার একভাবে সেগুলি সাজান, আবার বদলে অন্যভাবে সাজান। সন্ধেবেলায় সকলে মিলে যখন একত্র হই, অ্যানড্রুজ সাহেব বাবার পায়ের কাছে বসে খাতা তুলে দিয়ে অনুরোধ করেন কয়েকটা কবিতা পড়ে শোনাতে। বাবা পড়তে থাকলে সাহেব মুখ উজ্জ্বল করে তাঁর আবৃত্তি নিবিষ্ট মনে শোনেন। মাঝে মাঝে যখন কোন কবিতা বিশেষ ভালো লাগে লাফিয়ে উঠে বাবাকে জড়িয়ে ধরেন। অনেক সময় তাঁর চোখ দিয়ে দরদর করে জল পড়ছে আমরা দেখতুম, শুনতে শুনতে তিনি এতই বিচলিত হয়ে পড়তেন।”
একদিন অতুলপ্রসাদ রবীন্দ্রনাথকে অনুরোধ করলেন– ‘আপনি কাল যে সুরটি গুনগুন করছিলেন আপনার ঘরে, আমার বড়ো ভালো লাগছিল শুনতে, গান বাঁধা নিশ্চই হয়ে গেছে, ওই গানটি আমাদের শুনিয়ে দিন’। রবীন্দ্রনাথ বললেন– ‘সেটা যে দিনুকে এখনো শেখানো হয়নি, তা হলে আমাকেই গাইতে হবে।’ রবীন্দ্রনাথ গাইলেন:
         এই লভিনু সঙ্গ তব সুন্দর হে সুন্দর
             পুণ্য হল অঙ্গ মম, ধন্য হল অন্তর,
                            সুন্দর হে সুন্দর।।
                       আলোকে মোর চক্ষু দুটি
                          মুগ্ধ হয়ে উঠল ফুটি,
            হৃদগগনে পবন হল সৌরভেতে মন্থর,
                              সুন্দর হে সুন্দর।।
        এই তোমারি পরশরাগে চিত্ত হল রঞ্জিত
        এই তোমারি মিলনসুধা রইল প্রাণে সঞ্চিত।
                   তোমার মাঝে এমনি ক’রে
                    নবীন করে লও যে মোরে,
         এই জনমে ঘটালে মোর জন্ম-জনমান্তর,
                               সুন্দর হে সুন্দর।।
সকাল বেলায় ঘাসের উপর তখনো শিশির লেগে আছে। পূব দিকের পাহাড়ের উপর থেকে সূর্যের আলো এসে পড়ে রৌদ্র-ছায়ায় লুকোচুরি খেলছে পাতায় পাতায়। প্রকৃতির সেই প্রফুল্লতা, গানের কথা, গানের সুর– সব মিলে একটি অপরূপ রস সৃষ্টি করল। শুনতে শুনতে অতুলপ্রসাদ অভিভূত হয়ে পড়লেন, রবীন্দ্রনাথকে গানটি বারবার গাইতে বললেন। যতবার গাওয়া হয়,তার কিছুতেই তৃপ্তি হয় না, আর একবার শোনবার জন্যে আকুল হয়ে পড়েন।
রবীন্দ্রনাথ প্রতিদিন নতুন গান রচনা করতে লাগলেন আর সমবেত সকলে “হৈমন্তী”র বাগানে গুহার প্রান্তে আখরোট গাছের তলায় সেই গানের রস আস্বাদন করে মুগ্ধতায় অবগাহন করে ধন্য হয়ে উঠতেন। ঘরের বাইরে উন্মুক্ত আকাশের নীচে বসে তিনি গাইতেন, তার গানে গাছপালা পাহাড় যেন কেঁপে উঠত। অতুলপ্রসাদের গলা যেমন মিষ্টি ছিল, গাইবার ধরনও ছিল ভারি সুন্দর। যে আন্তরিকতার সঙ্গে ভাবে বিভোর হয়ে তিনি গান করতেন তা সকলকে মুগ্ধ করতো। রবীন্দ্রনাথ আর অতুলপ্রসাদ দুজনেই যখন শ্রান্ত হয়ে পড়তেন, তখন দিনেন্দ্রনাথের পালা হত শুরু। দিনের পর দিন এই রকম উৎসবের আবহাওয়া চলত সারা সকালবেলা।
পাঠককুলের অবগতির জন্য জানাই যে, এই পর্যন্ত যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকথা অবলম্বনেই রচিত। কিন্তু কবি অতুলপ্রসাদ সেনের রচনাতেও তাঁর রামগড় বাসের সুখস্মৃতি ও দুর্লভ রবীন্দ্রসান্নিধ্য লাভের সুমধুর বর্ণনা পাওয়া যায়। কবি অতুলপ্রসাদের অতুলনীয় ভাষায় রচিত সেই স্মৃতিকথার কিছু অংশ আমি নীচে নিবেদন করছি যার থেকে নবীন পাঠকেরা শুধুমাত্র নতুন তথ্যেই সম্বৃদ্ধ হবেন তা নয়, পরিচিত হবেন দুই কবির চরিত্রের বিভিন্ন বিশিষ্ট গুণাবলি ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও স্নেহের বন্ধনের সাথে।
অতুলপ্রসাদ লিখেছেন, “প্রায় বিশ বৎসর পূর্বে রবীন্দ্রনাথ একবার কুমায়ুন প্রদেশের রামগড় পর্বতের উচ্চদেশে একটি বাড়ী ক্রয় করিয়া কয়েকমাস সেখানে থাকেন। আমাকে তিনি কয়েকদিন তাঁহার সঙ্গে রামগড়ে থাকিতে নিমন্ত্রণ করিলেন। আমি লখনৌ হইতে রামগড় ছুটিলাম। একদিন বৈকালে প্রবলবেগে বর্ষা নামিল এবং অনেক রাত্রি পর্যন্ত অবিরাম বৃষ্টি হইল। সেদিন আমাদের বর্ষার আসর বসিল। বৈকাল হইতে আরম্ভ করিয়া রাত্রি প্রায় দশটা পর্যন্ত কবি একাধারে বর্ষার কবিতা পাঠ করিলেন আর বর্ষার গান গাহিলেন। সে দিনটি আমি কখনই ভুলিবনা। রাত্রি আটটার সময় খাবার প্রস্তুত। কবির কন্যা ও পুত্রবধূ দ্বারে দাঁড়াইয়া আমাদের প্রতীক্ষা করিতেছেন। কবির কিংবা আমাদের কাহারও ভ্রুক্ষেপ নাই। বর্ষাগীতির মাদকতা আমাদের বাহ্যজ্ঞান রহিত করিয়াছে, ক্ষুৎপিপাসা তিরোহিত হইয়াছে, মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় কবির বর্ষার গান ও বর্ষার কবিতা শুনিতেছি। অফুরন্ত তাঁহার বর্ষার ভাণ্ডার। আকাশ অবিশ্রান্ত বারি বর্ষন করিতেছে– আর কবি অবিশ্রান্ত সুধাবর্ষন করিতেছেন। এ প্রসঙ্গে একটি হাসির কথা মনে হইতেছে। সে আসরে একবার রবীন্দ্রনাথ আমাকে আদেশ করিলেন– ‘অতুল, তোমাদের দেশের একটি হিন্দি গান গাও তো হে’। আমি গাহিলাম- “মহারাজা, কেওরিয়া খোলো, রস কি বুঁদ পড়ে” । সময়োপযোগী বলিয়া সকলের সে গানটি ভালো লাগিল। কবি সে গানটি আমার সাথে গাহিতে লাগিলেন। আমাদের সকলকেই বর্ষার মোহ আচ্ছন্ন করিয়াছে। এমনকি সঙ্গীতে অজ্ঞ রেভারেন্ড অ্যানড্রুজ সাহেবকেও এই গানের ছোঁয়াচে ধরিল, তিনি আমাদের সাথে অদ্ভুত উচ্চারণ করিয়া গাহিতে লাগিলেন, মহারাজা, কেওরিয়া খোলো ….। তাঁহার সঙ্গীতের আকস্মিক উচ্ছ্বাস রোধ করা দুষ্কর দেখিয়া আমরা তাঁহাকে বাধা দিবার ব্যর্থ প্রয়াস করিলাম না।”
“সেবারে কবির গান রচনার একটি স্বর্গীয় দৃশ্য দেখিলাম। তিনি যে ঘরে শুইতেন, আমার শয্যা সেই ঘরেই ছিল। আমি লক্ষ্য করিতাম, তিনি প্রত্যহ ভোর না হইতেই জাগিতেন এবং সূর্যোদয়ের পূর্বেই তিনি বাটির বাহির হইয়া যাইতেন। একদিন আমার কৌতূহল হইল। আমিও তাঁহার অলক্ষিতে তাঁহার পিছু পিছু গেলাম। আমি একটি বিরাট প্রস্তরের অন্তরালে নিজেকে লুকাইয়া তাঁহাকে দেখিতে লাগিলাম। দেখিলাম তিনি একটি সমতল শিলার উপর উপবেশন করিলেন। যেখানে বসিলেন তাহার দু দিকে প্রস্ফুটিত সুন্দর শৈলকুসুম। তাঁহার সন্মুখে অনন্ত আকাশ এবং হিমালয়ের তুঙ্গ গিরিশ্রেণী। তুষারমালা বালরবি-কিরণে লোহিতাভ। কবি আকাশ ও হিমগিরি পানে তাকাইয়া আছেন। তাঁহার প্রশান্ত মুখমন্ডল ঊষার মৃদু আভায় শান্তোজ্জ্বল। তিনি গুনগুন করিয়া তন্ময়চিত্তে গান রচনা করিতেছেন– ‘এই লভিনু সঙ্গ তব, সুন্দর হে সুন্দর’। আমি সে স্বর্গীয় দৃশ্য মুগ্ধ নয়নে দেখিতে লাগিলাম এবং তাঁহার সেই অনুপম গানটির সদ্যরচনা ও সুরবিন্যাস শুনিতে লাগিলাম। অনেকক্ষন তাহা দেখিলাম ও শুনিলাম এবং তিনি নামিয়া আসিবার পূর্বেই পালাইয়া আসিলাম। আর একদিন প্রাতে শুনিলাম তিনি তেমনি করিয়া গান রচনা করিতেছেন–“ফুল ফুটেছে মোর ডাইনে বাঁয়ে, পূজার ছায়ে” **। এ রকম করিয়া প্রায় প্রতি প্রাতে লুকাইয়া তাঁহার গান রচনা শুনিতাম আর বাণীর বরপুত্রের সেই দেবমূর্তি হিমালয়ের কোলে উপবিষ্ট দেখিতাম। একদিন ধরা পড়িয়া গেলাম। পালাইয়া আসিবার সময় তিনি আমাকে দেখিয়া ফেলিলেন। আমি দেখিলাম ধরা পড়িয়াছি। আর উপায় নাই, বলিলাম– ‘লুকিয়ে আপনার গান শুনছিলাম।’ তার দু’ তিন দিন পরে তিনি যখন আমাদের শুনাইলেন–‘এই লভিনু সঙ্গ তব সুন্দর হে সুন্দর’— আমি বলিলাম–‘ওই গানটি আমি পূর্বেও শুনেছি।’ তিনি বলিলেন–‘পূর্বে কি করে শুনলে? আমি ত মাত্র দু’ তিন দিন হল ওই গানটি রচনা করেছি।’ আমি বলিলাম–‘রচনা করবার সময়ই শুনেছিলাম।’ কবি বলিলেন–‘তুমি ত ভারি দুষ্টু, এই রকম করে রোজ শুনতে বুঝি?’ আমরা সকলেই খুব হাসিলাম।”
“রবীন্দ্রনাথের হৃদয়ের আবেগ অন্তঃসলিলা। বাহিরে সচরাচর প্রকাশ হয় না। সে কয়দিন রামগড়ে তাঁহার অন্তর্নিহিত আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখিয়া চমৎকৃত হইয়াছিলাম। তাঁহার শিশুর মতো হাসি, দ্রুতগতি ও আনন্দোচ্ছ্বাস বড়ই মনোরম বোধ হইতেছিল। একদিন বৈকালে বাহিরে বসিয়া আমরা চা ও গৃহজাত নানা প্রকার সুখাদ্যের সম্ভোগে ব্যস্ত ছিলাম, কবি হঠাৎ পিছন হইতে আসিয়া ‘অতুল এস’ বলিয়া সঙ্গে লইয়া চলিলেন। তাঁহার কন্যা ও পুত্রবধূ বলিয়া উঠিলেন–‘বাবা ও কি! অতুলবাবুর যে খাওয়া এখনো শেষ হয়নি!’ “তা হবে এখন” বলিয়া সঙ্গে লইয়া চলিলেন। তাঁহার বালকের মতো উৎসাহ আমার বড় মধুর লাগিল। আমি আগ্রহে সঙ্গে চলিলাম। তিনি অনতিদুরে লইয়া গিয়া পরম রমণীয় পত্রপুষ্প-শোভিত একটি সুন্দর নির্জন স্থান আমাকে দেখাইলেন। সত্যই মুগ্ধ হইবার মত সে স্থান। তিনি বলিলেন,—‘আমি রোজ এখানে আসি, এখানে বসি, গান গাই ও গান রচনাও করি।’ আমি অনুরোধ করিবামাত্র কয়েকটি গান সেখানে বসিয়া আমাকে শুনাইলেন। কি যে ভাল লাগিয়াছিল বলিতে পারি না। ফিরিয়া আসিলে কবির কন্যা বলিলেন,—‘বাবা, তোমার যে কান্ড, অতুলবাবুকে না খাইয়ে কোথায় এতক্ষণ ধরে রেখেছিলে?’ তিনি বলিলেন,—‘অতুলকে জিজ্ঞাসা কর্।’ আমি বলিলাম, ‘আমি সেখানে খুব ভাল জিনিস খেয়ে এসেছি।’ কথাটা প্রকাশ হওয়ায় সকলে খুব হাসিলেন।
কবির অন্তরে এক নৃত্যশীল শিশু আছে, সে ভিতরেই নৃত্য করে। তাঁহার গীতিকবিতা বোধ হয় সেই নৃত্যেরই বিকাশ। জননী প্রকৃতি বোধহয় সেই গীতনৃত্যশীল শিশুকেই সস্নেহে ডাকিয়াছিলেন। তাই সে বাহির হইয়া আমাদের শৈলমন্দিরের অঙ্গনে দেখা দিল। রামগড়ের সে দশদিনের অবিরাম আনন্দ ও গীতোৎসব কখনও ভুলিবনা।”
শৈলমন্দির “রামগড়ে”র আর “হৈমন্তী”র স্বর্ণোজ্জ্বল দিনগুলির কথা শেষের পথে চলে এসেছে। নটেগাছটি মুড়োবার আগে জানাই যে রবীন্দ্র- বিশেষজ্ঞদের জন্য এ লেখাটি নয়। এ লেখাটি সেই নবীন পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত, যাঁরা দৈনিক কাজের অবসরের মাঝে রবীন্দ্রচর্চা করে থাকেন ও কবির ঘটনা বহুল মহাজীবনের অজানা দিকগুলি জানতে আগ্রহী। আশা করবো এই লেখাটি পাঠককুলের সেই আশা যৎসামান্য হলেও পূরণ করবে।
পরিশেষে একটি প্রশ্ন আমি সকল পাঠকের কাছে রাখছি। রবীন্দ্রনাথের  কবিতা, গল্প বা উপন্যাসে রামগড়ের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় কি?
আবার বলছি, এ প্রশ্ন সাধারণ পাঠকের কাছে রেখেছি, তাই চকিতে সঠিক জবাবের আশা না রেখে, আসুন আমি জানিয়েই দিই এর উত্তর কোথায় আছে।
উত্তর খুঁজতে খুলতে হবে “শেষের কবিতা”র শেষ পাতা, লাবণ্যের শেষ চিঠি অমিতের কাছে! যে চিঠির এক পাতায় আছে লাবণ্যের বিবাহ সংবাদ মোহনলালের সাথে। বিবাহ হবে রামগড় পর্বত শিখরে! আর চিঠির অন্য পাতায় সেই বিখ্যাত কবিতা “কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও..।”
আশা করি পাঠকেরা মেনে নেবেন যে “শেষের কবিতা”র নায়িকা লাবণ্যের বিবাহস্থল চয়ন রবীন্দ্রনাথ যোগ্য স্থানেই করেছিলেন!
রচনাসুত্র:
১. “পিতৃস্মৃতি”– শ্রী রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২. “অতুলপ্রসাদ সমগ্র”– শ্রী সুনীলময় ঘোষ।
* “আমার অন্তিম বার্তালাপ” তারিখ ২৯.০৮.২০২০ — প্রফেসর বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, উপাচার্য্য বিশ্বভারতী 
** “ফুল ফুটেছে মোর ডাইনে বাঁয়ে, পূজার ছায়ে” গানটি কোন অজ্ঞাত কারণে “গীতবিতান” অন্তর্ভুক্ত নয়।
—————————————————————-

অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য্য পরিচিতিঃ
জন্ম, স্কুল, কলেজ সবই কলকাতা। কর্মজীবন কেটেছে অবশ্য বিশাখাপত্তনম, অন্ধ্র প্রদেশে। সঙ্গীত প্রিয় ও রবীন্দ্রানুরাগী!

31 Comments

  • বিজিত কুমার রায়

    খুবই গবেষণাধর্মী লেখা । ভালো লাগলো পড়ে । রবীন্দ্রনাথ এর কিশোর বয়সের এই ভ্রমণ নিয়ে আরো কটি লেখা কিছুদিন আগেই পড়েছি । পাহাড়ের সৌন্দর্যের আর মানসিক অভিব্যক্তির সুন্দর বর্ণনা । অগ্নিমিত্র বাবুকে ধন্যবাদ এই লেখাটির জন্য ।

    • অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য

      বিজিত্দা, এটা কিন্তু রবীন্দ্রনাথের কিশোর বয়সের ভ্রমণ বৃত্তান্ত নয় ।কবির জ্যেষ্ঠপুত্র রথীন্দ্রনাথের ভ্রমণ কাহিনী দিয়ে রচনাটি শুরু। রবীন্দ্রনাথ তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে কিশোর বয়সে হিমালয় ভ্রমণ করেছিলেন।
      লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম।

      • Debabrata Bhaumik

        অজানা তথ্যসমৃদ্ধ এই লেখা খুব ভাল লাগল। আশা করি লেখক এমন আরো অনেক লিখবেন আর আমার মত অজ্ঞকে আলোকিত করবেন।
        রামগড়ে যাবার পরিকল্পনা শুরু করলাম।

    • Anup Mukherjee

      পড়তে পড়তে কখন যেন মন আমার সেই সূদূরে রামগড়ে -আমি যাব মেঘ বালিকার দেশে,প্রিয়ার কাছে বৃষ্টি হয়ে।

      • শান্তা গুপ্ত

        লেখক কে অসংখ্য ধন্যবাদ এতো সুন্দর তথ্য সমৃদ্ধ লেখার জন্য ।এই জাতীয় লেখা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকলাম ।

  • Amitava Roy

    এক নিমিষে পৌঁছে গেলাম রামগড় পাহাড়ের সেই অঙ্গনে, ঈশ্বর স্বয়ং যেখানে গান শুনতে এসেছিলেন।ধন্য হলো অন্তর।

  • Tapati Sinha

    কিছু জানা কিছু অজানা তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটি পরিবেশনার গুণে পুরাতন হওয়া সত্বেও নবীনের আগ্রহ নিয়ে এক নিঃশ্বাসে শেষ করলাম। রামগড়ের সেই তীর্থক্ষেত্রে কোনোদিনও যাওয়া হবে কিনা জানিনা-তবু স্বপ্নটুকু জিয়ানো রইলো।

  • Paramita Goswami

    এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। গবেষণাধর্মী লেখা সমৃদ্ধ করলো আমাকে। রামগড় পর্বতের সেই নৈসর্গিক পরিবেশে দুই কবির মিলনে কি সুন্দর মুহূর্তের সৃষ্টি হয়েছিল ভাবলেই শিহরণ জাগে।

  • RANA BHATTACHARYYA

    খুবই সুন্দর লেখা। অনেক তথ্য সমৃদ্ধ। সুন্দর প্রতিস্থাপনা। ঐ পরিবেশে বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় শাখার পত্তন হতে চলেছে এটা জেনে আরও ভাল লাগছে।

  • Bidyut Chakrabarty

    অগ্নি আমার কলেজের খুব কাছের বন্ধু। ওকে আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি। ওর যে গভীরে গিয়ে এখন সাহিত্য চর্চা করছে সেটা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
    কি সুন্দর রামগড় এর ছবি তুই এঁকেছিস। আহা, মনেহচ্ছে ওখানে পৌঁছেগেছি।
    আরো লেখ। অপেক্ষাতে রইলাম। ভালো থাকিস।

  • Aha porte porte chole gelam mahakaler ek svargiya muhurte Himalayer kole jekhane surer agun legechilo kono ek barsanmukhar rate Rabindranath Atulprasad Dinu Thakur Andrews saheb er sammilane. Sampurna ajana tathya janiye achenar ananda jagiye debar jonno lekhak ke asangkhya dhanyabad o anurodh tini jeno erakombhabe pathakkulke pray i anandita Karen.

  • অসাধারন প্রতিবেদন । পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল – সেই মুহূর্তে সেই যুগে পৌঁছে গেছি । অনেক কিছু জানলাম । ধন্যবাদ ।

  • Bhaskar Chakraborty, Tushar Kanti Chakraborty, Shankari Chakraborty

    Feel nostalgic despite not having witnessed that era. Very evocative and enriching.
    Simply loved it!

  • বন্দনা মিত্র

    অপূর্ব । প্রকৃতি, ইতিহাস, সংগীত -সব মিলে মিশে একটি অপরূপ কোলাজ তৈরী করেছে। তথ্যগুলো হয়তো অজানা নয় কিন্তু লেখক দক্ষ সূত্রধরের মত তাদের সাহায্যে একটির পর একটি পটচিত্র রচনা করে ফেলে আসা সময়কে জীবন্ত তুলে এনেছেন বর্তমান দর্শক /পাঠকের সামনে। রবীন্দ্রনাথ প্রাণের মানুষ না হলে এমন দরদী লেখা কলমে আসে মা। ঋদ্ধ হলাম।

  • শুভদীপ ভট্টাচার্য্য

    দারুণ লাগলো…. এইরকম অনেক অজানা ঘটনা জানতে পেরে মনে বেশ একটা ভালোলাগা জন্মায়…

  • Krishna Naha

    অনবদ্য একটি রচনা পড়লাম। লেখকের বর্ননার গুনে রামগড় পাহাড়ের ‘হৈমন্তী’ যেন চলচ্চিত্রের মত চোখের সামনে দেখা দিল। অনেক অজানা তথ্য জানা গেল। জানি না কোনও দিন ‘হৈমন্তী’ দর্শনের সৌভাগ্য হবে কি না, তবে এই লেখাটির মাধ্যমে যে অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করলাম তা আজীবন মনে থেকে যাবে। অনেক ধন্যবাদ লেখক কে।

  • Brati Ghosh

    অসম্ভব ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে। চোখের সামনে যেন দেখতে পেলাম সব কিছু। সত্যিই অজানা ছিল এতো কিছু। লেখক কে অসংখ্য ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে রামগড় এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব আমাদের কাছে নিয়ে আসার জন্য।আরো এরকম লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

  • প্রেমাংশু

    বেলুড়মঠের সন্যাসীর নাম এবং সালটা জানা থাকলে এই রচনার আর একটা দিক উন্মোচিত হতে পারত। বাঙালীর হৃদয়ের কাছের দুই সমসাময়িক মানুষের মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল তা নিয়ে খুব অস্পষ্ট ধারণার বাইরে আমাদের অন্য কিছু জানা নেই। নিবেদিতা নিশ্চয়ই রবিঠাকুরের কাছের লোক, কিন্ত বেলুড়মঠ বা তাদের সন্যাসী বা মঠের কাজকর্ম নিয়ে তিনি কি ভাবতেন হয়তোবা তার ইঙ্গিত মিলত যদি সেই সন্যাসীর নামটা জানা যেত। সালটাও গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে, বিবেকানন্দের মৃত্যুর ঠিক কতদিন পর নিজের কিশোর সন্তানকে একজন সন্যাসীর হাতে ছাড়তে রবীন্দ্রনাথ ভরসা পেয়েছিলেন, যদিও তার শ্রদ্ধার পাত্রী নিবেদিতাও সেই পাহাড় সফরে ছিলেন। যেটা নেই সেটা অন্য কথা, যা আছে তা অবশ্যই উপভোগ্য

  • অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য

    প্রেমাংশু দা, আপনার অনুসন্ধিষ্ট মন যে তথ্য খুঁজেছে তা এই লেখায় নেই। রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর যতটুকু তাঁর “পিতৃস্মৃতি ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন তাই তুলে ধরেছি। তবে এই প্রসঙ্গে জানাই, রথীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেন 1888 সালের 27 শে নভেম্বর আর শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রমের স্থাপন হয় 22 শে ডিসেম্বর 1901 সালে। সুতরাং আমার লেখায় বর্ণিত সময় যে 1901 এর 22শে ডিসেম্বরের আগে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে স্বামী বিবেকানন্দর তিরোধান হয় 1902 সালের 4ঠা জুলাই। অর্থাৎ, স্বামীজির বর্তমানেই যে রবীন্দ্রনাথ ভগিনী নিবেদিতার সাথে সম্পর্কিত ছিলেন এবং তাঁর ভরসাতেই বেলুড়মঠের সন্ন্যাসীর হাতে নিজের পুত্রকে নির্দ্বিধায় সমর্পণ করতে পেরেছিলেন, এটা প্রমানের অপেক্ষা রাখে না। স্বামীজির সাথে কবির যে মতানৈক্য বা নীতিগত ঠান্ডা বিরোধের কথা লোকমুখে ফেরে, তা খণ্ডন করতেও আশাকরি উপরের বিশ্লেষণ সহায়ক হবে।
    আর একটি কথা, ওই ভ্রমণপথে ভগিনী নিবেদিতা সঙ্গে ছিলেন না।

  • স্নেহাশিস দন্ড

    বক্তব্য প্রকাশের সঠিক শব্দচয়ন করা কঠিন হয়ে পরেছে । কতোটা ভালো লেগেছে , তা প্রকাশ করতে কয়েক বার লিখেও মুছে ফেলতে হলো । বারবার‌ই অনুভব করছি,এটা ভালো লাগার সমমান শব্দ হলো না । অনেকটাই কম হয়ে গেল । তাই মন্তব্যে শুধু মাত্র……

    “অপূর্ব !!!!”

  • প্রেমাংশু

    ধন্যবাদ অগ্নি, আমার কৌতুহলের উপর আলোকপাত করার জন্য। আমার তোলা প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক ছিল, তা জেনেও আমি উঠিয়েছিলাম এই ভরসায় যে এক একটা গবেষণা অন্য আর এক গবেষণার দরজা যে খুলে দেয় তা তুমি অন্তত বুঝবে। বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে অনেকের মতো আমারও ব্যাপক কৌতুহল রয়েছে। তোমার লেখা পড়তে পড়তে সেই কৌতুহল নিরসনের জন্য সামান্য হলেও একটা ইঙ্গিত পাবার কারণেই আমার প্রশ্ন। তোমার উত্তর কাজে লাগবে প্রাসঙ্গিক আলোচনায়।তবে এইসব অহেতুক প্রশ্ন ছাড়াও তোমার লেখা যে নিজ গুনে উপভোগ্য তা আগেই লিখেছি।লেখা চালিয়ে যাও, ছেড়না ,

  • সোনালী গুহ

    অনবদ্য লেখা!!! রামগড় শিখরের মহিমা কবি জীবনে অপরিসীম।কবি পুত্রের স্মৃতিকথায় তার কথা পাই।এই লেখাটিও অসাধারণ !!

  • অনিন্দ্য

    তোমার লেখার স্টাইলটা পুরনো দিনের দালান বাড়ির মতো, যাকে টানবে, ধরে রাখবে। আকর্ষণীয় তথ্য আর কবিমনের স্ফূর্তি সুন্দর মিলিয়েছ। দুটো ঘটনা না বলে পারছি না, এক, রবীন্দ্রনাথ রামগড়ে স্হানীয়দের কাছে ডাক্তার হিসেবে পরিচিত ছিলেন, কারণ উনি কাউকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে সারিয়ে তুলেছিলেন। দুই, রবীন্দ্রনাথ সেবার ফেরার পথে ১৬ মাইল রাস্তা হেঁটে ফিরেছিলেন ডাণ্ডিতে উঠবেন না বলে। আর রবীন্দ্রনাথ নিজেও ওখানে একটা ব্র হ্মচর্য স্কুল খোলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

  • Sunanda

    ঝরঝরে লেখা। সুন্দর বর্ণনা। পড়লে মনের গহন কোনে পৌঁছে যায় সে আপন মনে । এই লভিনু সঙ্গ তবে গানটির জন্মস্থানের বিষয়ে জেনে আরও ভালো লাগলো ।

  • আশিস কুমার সরকার

    অগ্নিদাঃ
    প্রথমেই এই সম্বোধন নিয়ে মার্জনা চেয়ে একটু কৈফিয়ত। সুলেখকের সাথে অনুরাগী পাঠকের একটা সৌহার্দ্য গড়ে ওঠে আপনা থেকেই, অজান্তেই। সেই সুবাদেই…. !!
    আমার বছর হয়, ১৮ মাসের জায়গায়, ৩৬ মাসে 😊 ! “রামগড় পর্বত শিখরে” নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক সুধী পাঠক /পাঠিকারা তাঁদের সুচিন্তিত মন্তব্য লিখে আমার কথা দিয়েছেন ফুরিয়ে। শুধু বলবো, রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সাহচর্য-ধন্য গুণীজনদের নিয়ে আপনার এই তৃতীয় পর্যায়ের লেখাটি আবারও অপরিসীম মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিল। বাড়িয়ে দিল তৃষ্ণাও। ভবিষ্যতে আরও পাবার অপেক্ষায় রইলাম।
    একটু অনুযোগ। শেষের দিকে, রবীন্দ্রসাহিত্যে “রামগড়” নিয়ে যে প্রশ্নটি রেখেছিলেন, তার উত্তরটি আপনি না দিয়ে সাধারণ পাঠক-পাঠিকার ওপর ছেড়ে দিলেই তো বেশ হ’ত !!!
    পরিশেষে, “শেষের কবিতা” নিয়ে আমার একটি মজার অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে “কুলায় ফেরা” র অনুরাগীদের সাথে ভাগ করে নেবার ইচ্ছে রইল। – আশিস

  • অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য

    আশিস বাবু,
    আপনার অভিমত পড়ে খুবই ভালো লাগলো। সত্যি কথা বলতে কি, যখন শেষের কবিতা পড়েছি, কৈশোর আর তরুন বয়সের সন্ধিক্ষণে, তখন অমিত লাবণ্যের রোমান্টিজম দিয়েই মনকে কেবলমাত্র পূর্ণ করে ফেলেছিলাম। পরে বয়সের সাথে সাথে কবিকে বুঝতে ও একটু একটু করে চিনতে শিখে , শিলংপাহাড়, ব্যালাব্রুয়ি(ব্যাঙ্গালোর), রামগড় এর প্রেক্ষিতে আবার নতুনভাবে রবীন্দ্রনাথ ,নিবারণ চক্রবর্তী ও অমিত-লাবণ্যকে অনুভব করতে শুরু করলাম আর শেষের কবিতা ধরা দিল এক অসামান্য আঙ্গিকে। শেষের কবিতায় রবীন্দ্রনাথ নিজে এবং কল্পচরিত্রগুলি একে অন্যের পরিপূরক হিসাবে উপস্থিত থেকে কাহিনীকে নিয়ে গেছে এক স্বর্গীয় মাত্রায়! তাই লেখা শেষ করার সময় লাবণ্যের বিবাহের সেই স্বর্গীয় স্থল নিয়ে পাঠককুলকে প্রশ্নোত্তরের মুখে না ফেলে, মুগ্ধতার মোড়কে ধরে রাখার প্রচেষ্টাই করেছি মাত্র।
    শেষের কবিতা নিয়ে আপনার লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

  • Srutiduttaroy

    Khub e bhalo laglo.anek ajana katha jante parlam.bornonar gune jano ramgar ke chokher samne dekhte pelam…

  • Santanu Bhattacharyya

    অসীম মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন। সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মগ্ন ঐ প্রতিভাগুলির সমাবেশ এবং তাঁদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সৌহার্দ্য আমাদের আবেগে আপ্লুত করে দেয়। অনেক ধন্যবাদ। আরও লেখা চাই।

Comments are closed.

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!