প্রতারণা
অঙ্কন দন্ড
খড়গপুর স্টেশনে নামতেই জয়কে ফোন করল শ্রী। জয়ের ফোন বন্ধ। আরও কয়েকবার জয়কে ফোনে পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ শ্রী। অবশেষে ক্লান্ত শরীরটাকে রাখলো স্টেশনের একটি বেঞ্চে। শ্রী–কে স্টেশন থেকে নিতে আসার কথা ছিল জয়ের, কিন্তু সে এখনও এসে পৌঁছয়নি ।
একটু ভালোবাসার সন্ধানে নিজের স্বামী ধ্রুব ও বছর ১৩ এর মেয়ে রিম্পাকে ছেড়ে সে ছুটে এসেছে জয়ের কাছে,ঝাড়গ্রাম থেকে খড়গপুর, কাউকে না জানিয়েই। আসার আগে টেবিলে রেখে এসেছিল একটা চিঠি। যেখানে লেখা ছিল,”ধ্রুব,আমার পক্ষে এই তিক্ত জীবন কাটানো আর সম্ভব নয় । ১৫ বছর ধরে সংসার করছি তোমার সাথে। জানি, তোমার প্রাইভেট জব। তাই বলে কি তোমার থেকে একটুও সময় পেতে পারি না আমি? আমারও কিছু চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে। রিম্পা আসার পর থেকে একা হাতেই মানুষ করতে শুরু করেছি ওকে। আর না,এবার ওকে তুমিই দেখো।জানি, তোমার জীবনে আমি গুরুত্বহীন। তুমি মত্ত থাকো তোমার কাজ নিয়ে। আমি মুখ ফুটে আরেকটু বেশি সময় চাইতে পারিনি তোমার থেকে, এটা আমার দোষ।কিন্তু আর নয়।আমি চললাম। জানাবো না কোথায় যাচ্ছি।তবে এখানে আর ফিরব না। রিম্পাটাকে মানুষ করো। এতদিন আমার ভরণ পোষণের জন্যে ধন্যবাদ।“
ফেসবুকে জয়ের সাথে পরিচয় শ্রী–এর। সেখান থেকেই মেলামেশা। একটু একটু করে ভালো লাগা সৃষ্টি। স্বামীর অল্প সময় ও ভালোবাসায় অতৃপ্ত উচ্চাকাঙ্খী শ্রী ভালোবেসে ফেলে জয়কে। জয় অর্কেস্টায় গান করে। শ্রী – ও ছেলেবেলা থেকে রীতিমত সঙ্গীতচর্চা করেছে। কিন্তু হঠাৎ বাবা–মা এর চাপে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ধুলোচাপা পড়ে তার প্রতিভা। চোখে একরাশ নতুন স্বপ্ন নিয়ে সব ফেলে খড়গপুর ছুটে এসেছে শ্রী। স্বপ্ন, জয়ের সাথে সংসার বাঁধার। স্বপ্ন,জয়ের সাথে গান করে নিজের প্রতিভাকে সকলের কাছে মেলে ধরার। স্বপ্ন ,নিজের মতো করে বাঁচার।
কিন্তু জয়ের কোনো খবর নেই।সেই দুপুরে ট্রেন থেকে নেমেছে শ্রী। আকাশ লাল হয়ে আঁধার হল, কিন্তু জয় বেপাত্তা। প্রায় ১০০ বার ফোন করেও যোগাযোগ করতে পারেনি তার সাথে। জয়ের ঠিকানাও জানে না শ্রী সঠিকভাবে। হঠাৎ সে শোনে পাশে বসে থাকা এক ভদ্রলোক সকালের বাসি পেপার হাতে নিয়ে আরেক ভদ্রলোককে বলছেন,”এই ধরনের লোকগুলোকে তো ফাঁসি দেওয়া উচিত। শয়তানের হাড্ডি!”
অপরজন “কে কী করলো?”
– “দেখুন দাদা, দেখুন এই শালা একটা অর্কেস্ট্রা সিঙ্গার, বিভিন্ন মেয়েকে তার প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে, রঙিন রঙিন স্বপ্ন দেখিয়ে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে। তারপর ব্ল্যাকমেল। সারমেয়োর ব্যাটা সব! কিন্তু এক মহিলা প্রমাণ সহ পুলিশে অভিযোগ করেছে।হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শয়তানকে।”
– বেশ হয়েছে। ১০ ডান্ডা মারলেই পথে চলে আসবে। তাতেও কাজ হবে না এই আহামক্কের।
কথাগুলো কানে আসতেই বিচলিত হয়ে উঠলো শ্রী। ভদ্রলোকের কাছ থেকে পেপারটা চেয়ে নিয়ে তাতে চোখ রাখতেই দেখে, যে আশঙ্কা তার মনে হইয়েছিল, সেটাই। এই শয়তান মিস্টার জয় চক্রবর্তী ছাড়া কেউ নয়। শ্রী চেঁচিয়ে উঠলো, “না!!! এ হতে পারে না। এমনটা করতে পারো না তুমি জয়!” পাশে বসা ভদ্রলোকটি বললো, ” কী হলো ম্যাডাম? এমন কেন করছেন? আপনি চেনেন এনাকে?” বাকরুদ্ধ শ্রী।কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে সে। সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে, নিজেই নিজের পায়ের তলার মাটি কেড়ে নিয়েছে আজ। নিজের মানুষগুলোকে ছেড়ে আসার, তাদের সাথে প্রতারণা করার, তার স্বার্থপরতার পাপ তাকে তিলে তিলে আহত করছে। আজ সে দু–কূল হারিয়ে ফেলেছে। নিজেকে সামলাতে না পেরে বেঞ্চেই ঢলে পড়ল সে।
যখন চোখ খুলল তখন দেখে যে সে হাসপাতালের বেডে শয্যাশায়ী। পাশে বসে আছে তার স্বামী, ধ্রুব ।।
অঙ্কন দণ্ড, জন্ম ২০০৩ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী। বাসস্থান পুরুলিয়া জেলার আদ্রায়। মাতার নাম বনশ্রী দণ্ড, পিতার নাম স্নেহাশিস দণ্ড। অঙ্কনের লেখালেখির পথ চলা কবিতা দিয়ে। আনন্দবাজার পত্রিকার জেলার পাতা ” ছোটদের পাতা ” শীর্ষক – এ তার স্বরচিত কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হত। স্থানীয় পত্রিকা ” ঊষশী” তেও স্থান পেয়েছে তার কবিতা। এছাড়া নানান গল্প ও প্রবন্ধ লিখে স্থানীয় স্তরে অনেক শুভেচ্ছালাভ করেছে সে। লেখালেখির পাশাপাশি ছবি আঁকাতেও সমান পারদর্শী অঙ্কন। অঙ্কনের রয়েছে ক্রিকেট ও গান এর প্রতি অসীম আগ্রহ।