‘বারে বারে কে যেন ডাকে আমারে? কার ছোঁয়া লাগে যেন মনোবীণা তারে?’
স্মরণে বরণে কিংবদন্তী সুরকার ও শিল্পী শৈলেন মুখোপাধ্যায়
শৈলেন মুখোপাধ্যায় (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৩১ — মৃত্যু: ৮ নভেম্বর, ১৯৭৮) ছিলেন বিশ শতকের পাঁচের দশকের শেষার্ধ থেকে সাতের দশক পর্যন্ত সময়কালে বাংলা স্বর্ণযুগের গানের জগতের এক অগ্রগণ্য সুরস্রষ্টা ও শিল্পী। সুদর্শন, সৌম্যকান্তি, সদাশয় ও মিষ্টভাষী এই মানুষটি ছিলেন একাধারে গায়ক, সুরকার এবং সংগীত শিক্ষক। মাত্র সাতচল্লিশ বছরের স্বল্প আয়ুষ্কালে এমন সব কালোত্তীর্ণ গান সৃষ্টি করেছিলেন যে, আজও সেই গানগুলি সংগীতপ্রেমী বাঙালিদের বিমোহিত করে। এছাড়া তাঁর সুমধুর ও অনিন্দ্যসুন্দর রোম্যান্টিক আবেশে পরিপূর্ণ দরদি কণ্ঠের গানগুলিও বাংলা গানের চিরায়ত সম্পদ।
১৯৫৭ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে জীবনের প্রথম রেকর্ডেই তাঁর কণ্ঠে ‘স্বপ্ন আমার ওগো সপ্তরঙের প্রজাপতির পাখা’ এবং ‘স্বাতী তারা ডুবে গেল’ গান দু’টি সুপারহিট হয়েছিল। এই গান দু’টির গীতিকার ছিলেন বটকৃষ্ণ দে, সুর দিয়েছিলেন শিল্পী নিজেই। সপ্তরঙের সুরের সৌভিক শৈলেন মুখোপাধ্যায় তাঁর নিজের সুরে আরও বেশ কিছু বেসিক বাংলা আধুনিক গান গেয়ে রেকর্ড করেছিলেন, যেগুলির মধ্যে সংগীতানুরাগী বাঙালি শ্রোতাদের অকুণ্ঠ প্রশংসায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল — পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ‘এত যে শোনাই গান’, ‘কী তুমি দেখো বলো আমার চোখে’, ‘অনেক দিনের ওগো অনেক কথা’, ‘শ্যামল মাটির চোখ জুড়ে আজ’, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় ‘এ মন আমার যেন ভ্রমরের সুর হয়ে’ ও ‘তোমায় দেখেছি কত রূপে কতবার’, ভাস্কর বসুর কথায় ‘তুমি কাঁকন কখন বাজিয়ে গেলে’ ও ‘নগরে বন্দরে নিথই প্রান্তরে,’ অনল চট্টোপাধ্যায়ের কথায় ‘বনময়ূরী ডাকা ওই আকাশে তারা ভাসে’ ইত্যাদি গানগুলি।
নিজের সুর ছাড়াও জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, রতু মুখোপাধ্যায়, প্রবীর মজুমদার, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুধীন দাশগুপ্ত, ভূপেন হাজারিকা, সুবীর সেন থেকে অসীমা ভট্টাচার্য, রবীন্দ্র প্রশান্ত প্রমুখ সেকালের প্রথিতযশা সব সুরকারদের সুরে তিনি গান গেয়েছেন। সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরে ও পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ‘মোর গান এ কী সুর পেলো রে’, রতু মুখোপাধ্যায়ের সুরে ও পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ‘দোলনচাঁপা অঙ্গ দোলে কার’, ‘তোমার মনের এই প্রান্তে’, রতু মুখোপাধ্যায়ের সুরে ও শ্যামল গুপ্তের কথায় ‘আকাশ নদীর বুকে নেমে এসেছে’, প্রবীর মজুমদারের কথায়-সুরে ‘রাত নিঝুম তারাও নিঝুম’, ‘ঝিনুক ঝিনুক ঝিনুক তুলে আঁচল ভরে নাও’, ‘স্বপ্ন সায়রে ঢেউ জাগানো’, প্রবোধ ঘোষের কথায় ও প্রবীর মজুমদারের সুরে ‘গোলাপের পাপড়ি ঝরা তোমার হাসি’, সুধীন দাশগুপ্তের সুরে ও পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ‘চাঁদের আলোয় রাতের পাখি কী সুর শিখেছে’, সুধীন দাশগুপ্তের কথায়-সুরে ‘সহেলী, রূপ দেখালি যতন করে মন দেখালি না’, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে ও আনন্দ মুখোপাধ্যায়ের কথায় ‘সাগরের দুটি ঢেউ দুটি কূলে এসে’, প্রবীর মজুমদারের কথায় ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে ‘ওগো লজ্জাবতী’, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়-সুরে ‘প্রিয় বান্ধবী এই চিঠিতে’, ‘তোমার ভালো হোক আমি চলে যাবো’, ভূপেন হাজারিকার সুরে ও পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ‘দাঁড় ছপ্ছপ্ কোন্ তরী বেয়ে চলেছি ’, ‘তুমি আমার মিলনতিথির চাঁদনি’, পবিত্র মিত্রের কথায় ও সুবীর সেনের সুরে ‘এই সুর হৃদয়ে ছড়ালো’, মিল্টু ঘোষের কথায় ও অসীমা ভট্টাচার্যের সুরে ‘চলে গেছে অনেক সময়’, ‘তোমাকে ভেবেছি আমি’, রবীন্দ্র প্রশান্তের সুরে ও ভবেশ গুপ্তের কথায় ‘চলে যেতে যেতে কিছু বলা হল না’, সুবীর হাজরার কথায় ও রবীন্দ্র প্রশান্তের সুরে ‘তুমি আবার এসো ফিরে’ ইত্যাদি আরো অনেক অবিস্মরণীয় গান গেয়ে এই মধুরকন্ঠী শিল্পী শ্রোতাদের মনপ্রাণ ভরিয়ে দিয়েছেন।
১৯৬৫ সালে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘ছন্দের জাদুকর’ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের বিখ্যাত কবিতার গীতিরূপ ‘ঝরনা ঝরনা সুন্দরী ঝরনা’ এক অনবদ্য সৃজন। তাঁর কণ্ঠে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কথায় আরেকটি গানও শ্রোতাদের মন জয় করে নেয়। গানটি ছিল ‘তার জলছুরিটির স্বপন দেখে’। ১৯৬৫ সালেই কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের আরও দুটি কবিতায় অপূর্ব সুন্দর সুর দিয়ে গীতিরূপান্তর করে ‘পিয়ানোর গান’ ও ‘চামেলি তুই বল’ শিরোনামে তিনি শ্যামল মিত্রকে দিয়ে গাইয়েছিলেন।
শোনা যায়, মৃদুভাষী ও শান্তশিষ্ট প্রকৃতির এই মানুষটির শৈশব কেটেছে দুষ্টুমি ও দস্যিপনায়। বাড়িতে সাংগীতিক পরিমণ্ডল থাকায় গানবাজনার প্রতি প্রবল টান ও ভালোবাসা ছিল খুব অল্প বয়স থেকেই। ধ্রুপদী সংগীত থেকে আধুনিক গান ও চিত্রগীতি জগতের প্রবাদপ্রতিম গায়ক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক অপরেশ লাহিড়ীর (১৯২৪ — ১৯৯৮) কাছে তাঁর সংগীত শিক্ষার শুরু। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, অপরেশ লাহিড়ী ছিলেন বিখ্যাত গায়িকা বাঁশরী লাহিড়ীর জীবনসাথী এবং জনপ্রিয় সুরকার ও গায়ক বাপ্পী লাহিড়ীর বাবা। শৈলেন মুখোপাধ্যায় রাগসংগীতের তালিম নিয়েছিলেন সংগীতগুরু কুমারেশ ঘোষের কাছে। পরে আরো এক কিংবদন্তী সংগীত সাধক অখিলবন্ধু ঘোষ (১৯২০ — ১৯৮৮)-এর কাছেও তিনি গান শেখেন।
প্রথম জীবনে ১৯৫৫ সালে মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে এইচএমভি গ্রামোফোন কোম্পানিতে শিল্পীদের সংগীত প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর উদাত্ত ও সুললিত কণ্ঠে গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন এইচএমভি কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরা। তাই তাঁদের আন্তরিক অনুরাগ ও আত্যন্তিক অনুরোধেই গানের ট্রেনার থেকে হয়ে গেছিলেন গায়ক ও সুরকার। বেসিক আধুনিক গান থেকে রবীন্দ্রসংগীত — সবেতেই তিনি ছিলেন সমান কুশলতায় পারদর্শী। তাঁর একক কণ্ঠে গাওয়া ‘বসন্তে বসন্তে তোমার কবিরে দাও ডাক’, ‘ওই আকাশপরে সুধায় ভরে’, ‘এ পথ গেছে কোনখানে গো’, ‘দূরের বন্ধু সুরের দু’তীরে’, ‘বিরস দিন বিরল কাজ’ কিংবা বাসবী নন্দীর সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে গাওয়া ‘আজি যত তারা তব আকাশে’, ‘নয় নয় এ মধুর খেলা’ ইত্যাদি রবীন্দ্রসংগীতে তিনি স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। ১৯৬০ সালে নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বৈতকন্ঠে গাওয়া দু’টি রজনীকান্তের রঙ্গগীতি তাঁর গায়নশৈলীর বৈচিত্র্যময়তার অসামান্য নিদর্শন। রজনীকান্ত সেনের সেই গান দু’টি ছিল ‘চাহিয়া দেখ এনেছি আজ’ এবং ‘যদি কুমড়োর মত চালে ধ’রে রত’।
প্রতি বছর মহালয়ার ভোরে আকাশবাণীর কলকাতা কেন্দ্র থেকে পঙ্কজকুমার মল্লিকের সংগীত পরিচালনায় বাণীকুমার (আসল নাম বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য) রচিত ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটি যে-সময় (১৯৩২ সাল ১৯৭২ সালে স্থায়ী রেকর্ডিংয়ের আগে অবধি) সরাসরি সম্প্রচার হত, সে-সময় পঙ্কজ মল্লিক, অনিল দাস, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শৈল দেবী, ইলা ঘোষ, সুপ্রভা ঘোষ (সরকার), কল্পনা হাজরা, জগন্ময় মিত্র, রাধারানী দেবী, সাবিত্রী ঘোষ, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, পান্নালাল ভট্টাচার্য, শচীন গুপ্ত, বাঁশরী লাহিড়ী, কল্যাণী মজুমদার, অখিলবন্ধু ঘোষ প্রমুখ আরো অনেক নক্ষত্র সমাবেশে যে নামটি জুড়ে ছিল, তিনি শৈলেন মুখোপাধ্যায়। আকাশবাণীর সেই লাইভ অনুষ্ঠানে তিনি গান গেয়েছেন। রেকর্ডিং পরবর্তীকালে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’তে পঙ্কজকুমার মল্লিক ছাড়া এঁদের কারোর গান আর শোনা যায়নি। (তথ্যসূত্র: তপন মল্লিক চৌধুরীর লেখা নিবন্ধ ‘আগে কী নামে সম্প্রচারিত হত প্রভাতী মহিষাসুরমর্দিনী?’ সৌজন্য: ‘ডেইলি-ও ডট ইন’)
“রেডিওর গানের অনুষ্ঠানের কথা বলতেই মনে পড়ে আর একটি অসামান্য অনুষ্ঠানের কথা, রম্যগীতি। একসময় রম্যগীতির সঙ্গে বাংলার শ্রোতাদের ছিল অন্তরের নিবিড় যোগ। এই অনুষ্ঠান শুরুর একটা ইতিহাস আছে। পঞ্চাশের দশকের সূচনায় কেন্দ্রীয় তথ্য ও বেতারমন্ত্রী হয়ে এলেন বি. ভি. কেশকর। কেশকর মশায়ের মাথা থেকে বেরিয়েছিল যে, ‘ফিল্মি গানা’র আগ্রাসন আটকাতে আকাশবাণীর নিজস্ব খরচে নানান ভারতীয় ভাষায় আধুনিক গানও তৈরি করা দরকার। এই লক্ষ্য নিয়ে তিনি প্রায় প্রতিটি আকাশবাণী কেন্দ্রে সরকারী খরচে আধুনিক গান তৈরির বিভাগ খোলেন। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রে তার নাম দেওয়া হল ‘রম্যগীতি।’ কলকাতার রম্যগীতি বিভাগে প্রথম প্রযোজকের দায়িত্ব নিলেন সঙ্গীতাচার্য জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ। ক্রমশ পঞ্চাশের দশকে আকাশবাণী কলকাতার রম্যগীতি বিভাগটি হয়ে উঠতে লাগল অসামান্য সুরসমৃদ্ধ বেশ কিছু আধুনিক বাংলা গানের জন্মভূমি। আকাশবাণীতে কত যে বরণীয় গীতিকার, সুরকারের সৃষ্টি অসাধারণ সব শিল্পীর কণ্ঠে মানুষের মন ভরিয়েছে, তার শেষ নেই।” (কেয়া মুখোপাধ্যায়ের নিবন্ধ ‘সোনা ঝরা শোনার দিন’ থেকে উদ্ধৃত, ‘ঐহিক ডট ইন’ ওয়েব পত্রিকায় প্রকাশিত) এই রম্যগীতির অনুষ্ঠানে নিয়মিত গান গেয়েছেন শৈলেন মুখোপাধ্যায়। ‘রম্যগীতি’ অনুষ্ঠানের জন্যেই সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’-এর দু’টি ছড়া — ‘রোদে রাঙা ইটের পাঁজা তার ওপরে বসল রাজা’ (‘নেড়া বেলতলায় যায় ক’বার’) এবং ‘সিংহাসনে বসল রাজা বাজল কাঁসর ঘণ্টা’ (‘গন্ধবিচার’) সুর দিয়ে গানে বেঁধেছিলেন সংগীতাচার্য জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ। তারপরে শৈলেন মুখোপাধ্যায়, আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ — এই ত্রয়ীর কণ্ঠে সেই গান দু’টি তো এক ইতিহাস।
কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংগীত নির্দেশনায় এইচএমভি গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত রবীন্দ্র-গীতিনাট্য ‘তাসের দেশ’-এর রেকর্ডের গানে ‘রাজপুত্র’ শ্যামল মিত্রের সাথে ‘সওদাগর পুত্র’-এ তাঁর সুমিষ্ট কণ্ঠের যুগলবন্দি কি ভোলা যায়? এর আগে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আরতি বসুর যুগ্মভাবে সংগীত পরিচালনায় ‘কালমৃগয়া’-র রেকর্ডটি বেরোয়। ‘কালমৃগয়া’তে ‘বিদূষক’-এর ভূমিকায় তিনি গীতি-অভিনয় করেছিলেন। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় আরো একটি রবীন্দ্র-গীতিনাট্য ‘মায়ার খেলা’-তেও গান গেয়েছিলেন। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহকারী সংগীত পরিচালক হয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্যে গানের প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছিলেন।
‘বাণীচক্র’ সংগীত সংস্থাতে গান শেখাতেন তিনি। শিক্ষাগুরু হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পরম শ্রদ্ধেয় ও অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। তাঁর সুরসিক মেজাজ নিয়ে বেশ কিছু গল্প জানা যায়। শৈশবের সেই দুষ্টুমির আভাস মেলে পরিণত বয়সে তাঁর ছেলেমানুষি রঙ্গ-কৌতুকে। এমনই একটা নিছক মস্করার গল্প বলি। ‘বাণীচক্র’ সংগীত সংস্থার মুখ্যাধিকারিক ছিলেন রবি দাশ। তাঁর সঙ্গে নিবিড় সৌহার্দ্যের সম্পর্ক ছিল। হঠাৎ একদিন ছুটি পাওয়ার জন্যে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে রটিয়ে দিলেন যে, আজ রবিবাবুর জন্মদিন। সবাই ফুল-মিষ্টি নিয়ে রবিবাবুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তিনি তো রীতিমতো হতভম্ব ও বিব্রত। আরেকদিন রবিবাবুকে বললেন যে, আকাশবাণী থেকে ডাক এসেছে, সে-বছর বেতারে ‘বাণীচক্র’-এর ছাত্রছাত্রীরা ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করবে। শিগগির গিয়ে তিনি যেন আকাশবাণী ভবনের দপ্তরে দেখা করেন। তড়িঘড়ি রবিবাবু ছুটলেন আকাশবাণীতে। সেখানে গিয়ে তাঁর কী করুণ অবস্থা হয়েছিল, তা বলাই বাহুল্য। বন্ধুসুলভ এই ঠাট্টাতামাশায় রবিবাবু চূড়ান্ত অপ্রস্তুত হলেও অপ্রসন্ন হননি কখনো।
আদ্যন্ত খাঁটি বাঙালিয়ানার মানুষ ছিলেন তিনি। খুব প্রয়োজন না হলে ইংরেজি বলতেন না। একবার এক ডাক্তারের সঙ্গে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলার সময় পিন্টু ভট্টাচার্যকে বিস্মিত হতে দেখে তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ রসিকতার সুরে বলেছিলেন, ‘ভাবছিস না রে, রক্তের সাথে কতগুলো ইংরিজি শব্দ বাঁচিয়ে রেখেছিলাম, তাও বেরিয়ে যাচ্ছে।’
উত্তম কুমারের সাথে শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব ছিল। তাঁর গানের অনুরাগী ছিলেন মহানায়ক। শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হলেই আবদার করতেন রতু মুখোপাধ্যায়ের সুরে তাঁর ‘আকাশ নদীর বুকে নেমে এসেছে’ গানটি গাইতে। সুপ্রসিদ্ধ গায়ক ও সুরকার মৃণাল চক্রবর্তী তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘এত ভালো মেজাজের ছেলে গান-বাজনার জগতে খুব কমই দেখেছি। খানিকটা যেন শান্ত অধ্যাপকের চলাফেরা, কথাবার্তা।’ শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে মৃণাল চক্রবর্তীর কণ্ঠে ‘ভুলে থাকার কথা ছিল তোমারই, আমার তো নয়’ গানটি পাঁচ দশক পেরিয়ে আজও সমান জনপ্রিয়। ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত ওই রেকর্ডের উল্টোদিকে ছিল, ‘দু’হাতে আর এনো না, কনকচাঁপার ফুল তুলি’। দুটি গানেরই গীতিকার ছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
লতা মঙ্গেশকর, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, ইলা বসু, গায়ত্রী বসু, নির্মলা মিশ্র, বাণী ঘোষাল, বাসবী নন্দী, আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লা, সুজাতা চক্রবর্তী, অসীমা ভট্টাচার্য, সুমিত্রা সেন, কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়, বিটু সমাজপতি, মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রভাতী মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মৃণাল চক্রবর্তী, শ্যামল মিত্র, পিন্টু ভট্টাচার্য, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর সেন, প্রশান্ত ভট্টাচার্য, সুধীন সরকার, মলয় মুখোপাধ্যায়, সুদাম বন্দ্যোপাধ্যায়, অমল মুখোপাধ্যায়, নায়ক-গায়ক বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ বিখ্যাত শিল্পীরা ছাড়াও সেকালের আরো অনেক স্বনামধন্য গায়ক-গায়িকারা শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে জনপ্রিয় আধুনিক ও ছায়াছবির গান গেয়েছেন। যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আলো রায়, ইরা মজুমদার, শ্রীলা সেন, লীনা ঘটক, প্রতিমা মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণা রায় (মুখোপাধ্যায়), আব্দুল জব্বর, উদয়বরণ প্রমুখ।
পিন্টু ভট্টাচার্যের প্রথম গানের রেকর্ড শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে। গান দু’টি ছিল — মিল্টু ঘোষের কথায় ‘যে গান শোনাতে আমি চেয়েছি তোমায় চিরদিন’ এবং ‘আহা কী নীল নীল মেঘের আলপনা’। ১৯৫৭ সালে তাঁর সুরেই নির্মলা মিশ্রের জীবনের প্রথম বেসিক আধুনিক গান রেকর্ড করা হয়। বটকৃষ্ণ দে’র কথায় গানটি ছিল ‘ধূসর গোধূলি আলপনা গেল এঁকে’। ১৯৫৯ সালে আরতি মুখোপাধ্যায়ের সংগীত জীবনের গোড়ার দিকে তাঁকে দিয়ে পবিত্র মিত্রের কথায় ওঁর সুরে বেসিক আধুনিক গান রেকর্ড করিয়েছিলেন। রেকর্ডের এক পিঠে ছিল ‘আকাশ অনেক দূর তা জানি’, আর উল্টো পিঠে ছিল, ‘কত ছন্দ ঝরা, কত গন্ধ ভরা’ গান দু’টি। বাণী ঘোষালের সঙ্গে শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের পারিবারিক সূত্রে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। যেদিন ওঁর সুরে বাণী ঘোষালের প্রথম আধুনিক গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়, সারা বাড়িতে সেদিন আনন্দের সুরধারা বয়ে গেছিল। সালটা ছিল ১৯৫৬। গান দু’টি ছিল — শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ‘ও মেঘলা বরণ মেয়ে’ এবং প্রবোধ ঘোষের কথায় ‘যে ফুল বিদায়পথে নীরবে ঝরিয়া যায়’। এছাড়া শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে ১৯৬০ সালে বেরোয় বাণী ঘোষালের আরো দু’টি জনপ্রিয় গান। সেই রেকর্ডের গান দু’টি ছিল — মিল্টু ঘোষের কথায় ‘ও জোনাকি তুমি এসেছিলে কি?’ এবং পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ‘আহা নামহারা কোন ফোটা ফুল’। ছয়ের দশকে এক তরুণ প্রতিভাবান শিল্পী তাঁর প্রথম পুজোর গানের রেকর্ডেই মন্ত্রমুগ্ধ করেছিলেন বাঙালি শ্রোতাদের। তাঁর নাম মলয় মুখোপাধ্যায়। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত মলয় মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে সেই জনপ্রিয় গান দু’টি ছিল ‘শ্রীমতী যে কাঁদে’ এবং ‘কিছু নেই তবু দিতে চাই’। মিন্টু ঘোষের কথায় গান দু’টির সুরকার ছিলেন শৈলেন মুখোপাধ্যায়। এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অকাল জীবনাবসানে মলয় মুখোপাধ্যায়কে আমরা চিরতরে হারিয়েছিলাম। বাংলা গানের এ এক অপূরণীয় ক্ষতি।
১৯৫৯ সালে খ্যাতনামা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সুমিত্রা সেনকে দিয়ে তাঁর জীবনের প্রথম বেসিক আধুনিক গান গাইয়ে রেকর্ড করিয়েছিলেন তিনি। গান দু’টি ছিল — ‘সাদা মেঘ ভেসে যায়’ এবং ‘যদিও ক্লান্ত নয়নে ঘুম’। শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে গীতিকার ছিলেন কবি সরল গুহ। অতুলপ্রসাদী, রজনীকান্তের গান ও দ্বিজেন্দ্রগীতির সুখ্যাত শিল্পী কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ও শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরেই বেসিক আধুনিক গান গেয়েছিলেন। আনন্দ মুখোপাধ্যায়ের কথায় সেই গান দু’টি ছিল — ‘ও পারেতে কালো রঙ’ এবং ‘সুয্যিমামা নামল পাটে’।
সাতের দশকের গোড়ায় আধুনিক বাংলা গানের জগতে হৈমন্তী শুক্লার উজ্জ্বল আত্মপ্রকাশ শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরেই। ১৯৭২ সালে শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে তেইশ বছর বয়সে হৈমন্তী শুক্লার জীবনের প্রথম গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘এতো কান্না নয় আমার, এ যে চোখের জলের মুক্তোহার’। এক অন্তরঙ্গ স্মৃতিচারণায় হৈমন্তী শুক্লা বলেছিলেন, “সেই কবেকার কথা। ১৯৭০ সাল। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ও শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরের ছড়ার গান ঠাঁই পেয়ে গেল শারদ অর্ঘ্যে। আমার প্রথম পা রাখা।… … বাবা হরিহরণ শুক্লা সেই যে ছোটবেলায় নানা স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়েছিলেন মনের মধ্যে, তারই পূর্ণাঙ্গ রূপ পেল ১৯৭২ সালে। ‘এ তো কান্না নয়, আমার চোখের জলের’ গানটি লিখলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় আর সুর দিয়েছিলেন শৈলেন মুখোপাধ্যায়। প্রতি বছর পুজোর গানের তালিকায় পাকাপাকি জায়গা হয়ে গেল। সেই সময়ে ‘পুজোর’ গানের শিল্পী এই তকমা পাওয়া যেন ভাগ্যের ব্যাপার ছিল। আর তাই পুরোপুরি প্রকৃত শিল্পী হয়ে গেলাম। যেখানেই যাই সেখানেই শুনি — ‘আপনার পুজোর গান খুব ভাল লেগেছে’।” শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের কাছে সংগীত শিক্ষা প্রসঙ্গে হৈমন্তী শুক্লা আরো বলেছিলেন, “… আমি যে কত বকা খেয়েছি অভিজিৎদা ও শৈলেনদার কাছে তা গুনে বলতে পারব না। কখনও রাগ বা অভিমান হত না। কারণ ওঁরা তো শিক্ষকের মতো শাসন করছেন, করবেনও। বকা খাওয়ার পর সেই কাজ যে এত নিখুঁত ও মনের মতো হবে ভাবলেই এখন কেমন আনন্দ হয়। গর্ব হয়।” (সূত্র: বিশেষ রচনা: ‘ফিরে আসুক পুজোর গানের সেই নস্টালজিয়া’ — হৈমন্তী শুক্লা। অনুলিখন: বিপ্লবকুমার ঘোষ। সৌজন্যে: দ্য ওয়াল ডট ইন, পুজো ম্যাগাজিন ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।) শৈলেন মুখোপাধ্যায়ই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সে-যুগের সুরের আকাশের শাশ্বত শুকতারা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে, যার পর থেকেই হেমন্ত-সান্নিধ্যে হৈমন্তীর সংগীত জীবনের ধারাবাহিক উত্তরণের সূচনা। এই প্রসঙ্গে হৈমন্তী শুক্লা ‘আজকাল’ পত্রিকায় লিখেছিলেন, “সেটা ১৯৭২ সাল। তখন বিভিন্ন ফাংশানে গাইছি। বেশিরভাগই হিন্দি গান। কিছুদিন আগেই শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে একটি গান রেকর্ড করেছি। ‘এতো কান্না নয় আমার’। সেই শৈলেন মুখোপাধ্যায়ই একদিন আমাকে বললেন, ‘চল, হেমন্তদা তোর গান শুনতে চেয়েছেন।’ আমাকে একটা ফাংশানে নিয়ে গেলেন উনি। তখনও হেমন্তদার সঙ্গে পরিচয় হয়নি আমার। মঞ্চে গাইলাম হেমন্তদার সুরে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া হিট গানগুলো। গান গাওয়ার পর যখন নেমে এলাম, তখন শৈলেন মুখোপাধ্যায় আমাকে নিয়ে গেলেন হেমন্তদার কাছে। পরিচয় করিয়ে দিলেন হরিহরণ শুক্লার মেয়ে বলে। হেমন্তদা বললেন, ‘তোমার কণ্ঠটি খুব সুন্দর। তুমি আমার সঙ্গে দেখা করবে।’ বলে নিজের হাতেই লিখে দিলেন তাঁর ঠিকানা আর বাড়ির নম্বর। সেই প্রথম হেমন্তদার সান্নিধ্যে আসা। কিছুদিন পরে ওঁর সুরেই এইচএমভি থেকে রেকর্ড করলাম ‘ও বৃষ্টি আমার চোখের পাতায়’। হেমন্তদার সুরে আমার প্রথম গান সেটাই এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় গান।” (সূত্র: ‘হেমন্তদার ছবি পুজো করি’ — হৈমন্তী শুক্লা। ‘আজকাল’ সংবাদপত্র, ২২ জুন, ২০১৯)
১৯৭১ সাল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। মুক্তিযুদ্ধের সেনানীদের অকাতর আত্মবলিদানে প্রাণিত হয়ে বাঙালি জাতিসত্তার আদর্শে ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় আপামর বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করতে শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় সুর দিয়ে গান বাঁধলেন শৈলেন মুখোপাধ্যায় — ‘আর কোথা নয় মা, আর নয় কোনোখানে, বারে বারে আমি আসি ফিরে যেন এই বাংলার নীড়ে’। গানটি গেয়ে রেকর্ড করলেন বাংলাদেশের লোকপ্রিয় শিল্পী আব্দুল জব্বর। ওপার-এপার দুই বাংলায় সাড়া ফেলে দিল গানটি। সে-সময় বাঙালিদের মুখে মুখে ফিরত এই ঐতিহাসিক গান।
শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরারোপিত অনন্য সুন্দর গানগুলি আজও আমাদের নস্ট্যালজিক করে তোলে। তাঁর কম্পোজ করা গানে সুরের বৈচিত্র্য ও অভিনবত্ব ছিল অভাবনীয়। গান জনপ্রিয়করণে তিনি ছিলেন অসাধারণ দক্ষতায় সিদ্ধহস্ত। শৈলেন মুখোপাধ্যায় প্রসঙ্গে সমকালের আরেক যশস্বী সুরকার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি বলতেন যে, হারমোনিয়ামের যে রিডে ওঁর হাত পড়ে সেখান থেকেই সুর বের হয়। গানের কথা ও সুরের সার্থক মেলবন্ধন যেমন ঘটাতে পারতেন, তেমনই স্নিগ্ধ কোমল মেলোডির সৃজনে তিনি ছিলেন অতুলনীয় স্বাতন্ত্র্যে অত্যুজ্জ্বল। রাগাশ্রয়ী গানের কম্পোজিশনে সুরের চলনেও সহজ, স্বচ্ছন্দ গতি এবং তাঁর পরিমিতি বোধ মুগ্ধ করে। গানের কথার সাথে সংগতি রেখে সুরের কাঠামো এত নিপুণভাবে গড়ে তুলতেন যে বিস্মিত হতে হয়। গানের তাল-ছন্দ-লয় নিয়েও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। প্রসঙ্গত, শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের একটা বহুশ্রুত ও বিপুল জনপ্রিয় রাগাশ্রিত গানের উদাহরণ দিই। খাম্বাজ রাগের উপর এই কম্পোজিশনটা শুনুন। পবিত্র মিত্রের কথায় মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘বারে বারে কে যেন ডাকে আমারে’ (১৯৫৮ সালে প্রকাশিত)। বহতা নদীর মতো তরতর করে সুরের চলন। কী সহজ, সরল ও সাবলীল উপস্থাপনা আর তবলার দুর্দান্ত সঙ্গত গানটাকে ‘ক্লাসিক’ করে তুলেছে। এটাই শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরের জাদু। ১৯৬৬ সালে ‘দোলগোবিন্দের কড়চা’ ছায়াছবিতে ‘না না না বোলো না সহেলী’ গানটির মনমাতানো সুরেও রাগসংগীতের অনুপম প্রয়োগ শ্রোতাদের বিমুগ্ধ করে। সুনীলবরণের কথায় গানটি দ্বৈতকণ্ঠে গেয়েছিলেন আরতি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রখ্যাত খেয়াল ও ঠুমরী গায়িকা প্রভাতী মুখোপাধ্যায়। ১৯৫৮ সালে বটকৃষ্ণ দে’র কথায় শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে মানবেন্দ্র’র কণ্ঠে ‘তুমি থাকো আমি যাই’ গানটিও সুরের মাধুরী ও ললিত লাবণ্যে স্মৃতিপটে উদ্ভাসিত হয়। ১৯৬১-তে প্রকাশিত মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের আরেকটি কালজয়ী গান, ‘মালতীরে শুনে যেতে হয়েছে’, যার রোম্যান্টিক মেলোডি আজও আমাদের অন্তরকে আলোড়িত করে, তার সুর সংযোজনাও শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের। মলয় মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে ‘শ্রীমতী যে কাঁদে’ গানটি শুনলে বিস্ময়াভিভূত হতে হয়। কী অসাধারণ সুরের রেঞ্জে গানটি বাঁধা! সি-শার্পে তারসপ্তকে ধৈবত পর্যন্ত যায় গানের প্রথম বিস্তারটি। রাগাশ্রয়ী লঘুসংগীত সৃজনে তাঁর মুনশিয়ানা অবিসংবাদিত। কিন্তু লঘু সুরের অবয়ব নির্মাণে ধ্রুপদী সংগীতের অপরিমেয় ব্যবহার তিনি কখনোই করেননি। রাগ সংগীতের অত্যধিক করতবের প্রয়োগ যাতে গানের চলনের সহজ স্বাচ্ছন্দ্য ও শ্রুতিমধুরতা ক্ষুণ্ণ না করে, সে বিষয়ে তিনি অত্যন্ত সচেতন ও সতর্ক ছিলেন।
প্রিল্যুড ও ইন্টারল্যুডে যথাযথ পরিমিত সুর রেখে গানে যন্ত্রানুষঙ্গ ব্যবহারেও তাঁর কুশলতা ও যত্নশীলতা অনস্বীকার্য। তাঁর অর্কেস্ট্রেশনের অভিনব ভাবনার একটা সার্থক উদাহরণ হল, কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা সুরে বেঁধে ‘তুলতুল টুপটুপ, টুপটুপ তুলতুল কোন্ ফুল তার তুল’ গানটি। গেয়েছিলেন শ্যামল মিত্র। এই গানে পিয়ানো বাদনের প্রয়োগ ‘ছন্দের জাদুকর’ কবির কবিতার ছন্দের ইন্দ্রজালের অপূর্ব সুন্দর পরিস্ফুরণ ঘটায়। গানটি ‘পিয়ানোর গান’ শিরোনামেই প্রচারিত হয়। আবার কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের আরেক কবিতার গীতিরূপ শ্যামলেরই কণ্ঠে ‘চামেলি তুই বল’ গানটিতে পিয়ানোকে ব্যবহার করেছেন সম্পূর্ণ এক ভিন্ন আঙ্গিকে ও প্রকরণে। ইলা বসুর কণ্ঠে শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ‘কত রাজপথ জনপথ ঘুরেছি’ (১৯৬২) গানটির আশ্চর্য সুন্দর অর্কেস্ট্রশনের কথাই মনে করুন, প্রিল্যুড এবং ইন্টারল্যুডও আমাদের মনে গানের সাথেই অনুরণিত হয়। তাঁর নিজের কণ্ঠে ভাস্কর বসুর কথায় ‘নগরে বন্দরে নিথই প্রান্তরে’ গানটিতে হারমোনিকা (মাউথ অর্গানের) এবং পিয়ানো অ্যাকোর্ডিয়ানের অসামান্য ব্যবহারের কথাই বা ভুলি কী করে? এমন অনেক স্মরণীয় অর্কেস্ট্রশনের কথা মনে পড়ে যায়। তাঁর গানে সুরের বৈচিত্র্য যে কী ব্যাপ্ত পরিধিতে ছিল, তার জন্যে তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে সুনীলবরণের কথায় শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে ‘যাক যাক দিন যাক’ (১৯৬৫) গানটির উদাহরণই যথেষ্ট। রাগসংগীত থেকে পশ্চিমী রক-অ্যান্ড-রোলের দুনিয়াতে এমনই ছিল তাঁর অবাধ, স্বচ্ছন্দ ও অনায়াস বিচরণ।
ছোটোদের জন্যে ছড়ার গান সৃজনেও শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব অতুলনীয়। আনন্দ মুখোপাধ্যায়ের কথায় শ্রীলা সেনের কণ্ঠে ‘সোনার চোখে ঘুম দিতে আজ ঘুমের পরী আয়’, ‘ওই শোলক পড়ে নোলক পরা শালিক পাখির ঝাঁক’, কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘সু্য্যিমামা নামল পাটে নিভল দিনের আলো’, ‘ও পারেতে কালো রঙ বৃষ্টি পড়ে ঝম্ঝম্’, ভাস্কর বসুর কথায় মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘হলুদ বনে বনে আমার নাকছাবিটি হারিয়ে গেছে’, ‘শুভ জন্মদিন, ইত্যাদি গানগুলি অপরূপ মাধুর্যে মনোমুগ্ধকর। দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদারের ‘ঠাকুরমার ঝুলি’র গল্প অবলম্বনে তাঁর সংগীত পরিচালনায় শিশুগীতিনাট্য ‘এক যে ছিল শেয়াল’ এক অনন্য সৃষ্টি। ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত এই গীতিনাট্যে গান গেয়েছিলেন তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, পিন্টু ভট্টাচার্য, শৈলেন মুখোপাধ্যায়, প্রভাতী মুখোপাধ্যায়, চিত্তপ্রিয় মুখোপাধ্যায়, শৈবাল মজুমদার, ইন্দ্রাণী সেন, রীনা সেনগুপ্ত, প্রিন্স সেনগুপ্ত, অনিতা মজুমদার, ডলি ঘোষ এবং শিশুশিল্পীরা।’ঠাকুরমার ঝুলি’র ‘বুদ্ধু ভুতুম’ ও ‘লালকমল নীলকমল’ — এই দু’টি রূপকথার গল্প অবলম্বনে ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয় ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ শীর্ষক গীতিনাট্য। ভাস্কর বসুর রচনায় এবং নচিকেতা ঘোষের সুরে ও সংগীত পরিচালনায় এই গীতিনাট্যটিতে সেকালের খ্যাতনামা সব শিল্পীদের সঙ্গে শৈলেন মুখোপাধ্যায়ও গান গেয়েছিলেন। ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ রচিত ‘আলিবাবা’র গীতিনাট্যরূপ দিয়েছিলেন গীতিকার প্রণব রায়। ভি বালসারার সংগীত নির্দেশনায় ১৯৭৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ‘আলিবাবা’ প্রকাশিত হয়। এই গীতিনাট্যেও শৈলেন মুখোপাধ্যায় গানে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের অনেক গুণগ্রাহী এবং সংগীত গবেষক মহলের একাংশের মতে, তাঁর স্বকণ্ঠে গীত এবং সুরারোপিত অন্যান্য শিল্পীদের কণ্ঠে রেকর্ড করা গানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চারশো। তাঁর সব গানের পূর্ণাঙ্গ ডিস্কোগ্রাফি করা আশু প্রয়োজন। এই শুভ উদ্যোগ গ্রহণের জন্যে সংগীত গবেষক ও গ্রামোফোন রেকর্ড সংগ্রাহকদের কাছে আন্তরিক আবেদন জানাই। এই নিবন্ধের শেষে ‘ইউটিউব’ অন্বেষণে আমার সংগৃহীত ও সংকলিত শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের নিজের কণ্ঠে গাওয়া এবং তাঁর সুরসৃজনে অন্যান্য শিল্পীদের গাওয়া ১৩১টি গানের তালিকা সংযোজন করলাম।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, এত বিরল প্রতিভাধর সুরস্রষ্টা ও কণ্ঠশিল্পী হয়েও সে-যুগে তিনি কিন্তু তেমনভাবে প্রচারের আলো পেয়ে জনপ্রিয়তার প্রথম সারিতে উঠে আসতে পারেননি। তাই বাংলা ছায়াছবির গানের প্লে-ব্যাকেও তাঁকে আমরা গায়ক ও সুরকার রূপে পরিপূর্ণভাবে পাইনি। তাঁর সময়কালে বাংলা চলচ্চিত্রের গানে ছিল রবীন চট্টোপাধ্যায়, নচিকেতা ঘোষ, পবিত্র চট্টোপাধ্যায়, অজয় দাশ থেকে শুরু করে সুধীন দাশগুপ্ত, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রমুখদের রাজপাট। সেই সাম্রাজ্যে অধিষ্ঠিত হওয়ার মতো সম্পূর্ণ যোগ্যতা ও বিপুল জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তিনি কেন এতটা উপেক্ষিত ও ‘ব্রাত্য’ থেকে গেলেন, কেন তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতি ও যথাযোগ্য মর্যাদা পেলেন না, তার সদুত্তর আমার জানা নেই। শুধু বলতে পারি, এ এক নিদারুণ অপ্রাপ্তি। জীবনভর প্রভূত যশ-খ্যাতি ও প্রশস্তি পেয়েও তাঁর এতটা অবজ্ঞাত ও অবহেলিত হয়ে থাকার কথা ভাবলে হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
লিখিত তথ্য-প্রমাণ না থাকলেও আরো একটি বেদনাদায়ক সত্যকে অস্বীকার করার উপায় নেই। পারিবারিক সূত্রে এবং গানের জগতে গড়ে ওঠা সম্পর্কের সূত্রে শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থাকা অনেকের কাছেই শোনা যায় যে, এমন কিছু বাংলা জনপ্রিয় গান আছে যার সুর দিলেও রেকর্ড লেবেলে ওঁর নামের পরিবর্তে সুরকার হিসেবে অন্যজনের নাম রয়েছে। যেমন, ১৯৬৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বিখ্যাত বাংলা ছবিতে উত্তমকুমারের লিপে মান্না দে’র কণ্ঠে একটা জনপ্রিয় গানের সুর দিয়েছিলেন। ওই একই ছবিতে বিশ্বজিৎ-এর লিপে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের একটি সুপারহিট গানেরও সুরস্রষ্টা ছিলেন তিনি। ছবির টাইটেল কার্ডে এবং রেকর্ড লেবেলে কিন্তু তাঁর নাম বাদ দিয়ে সুরকার হিসেবে এক সুপরিচিত গায়িকা ও সংগীত পরিচালিকার নাম রয়েছে। জনশ্রুতিতে আরো জানা যায় যে, তিনি ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আরেকটি জনপ্রিয় সংগীতমুখর ছবির গানে সুর দিলে সেখানেও ছবির ক্রেডিট টাইটেল কার্ডে তাঁর নামের বদলে আরেকজন সুরকারের নাম দেওয়া হয়। উত্তমকুমার ও অপর্ণা সেন অভিনীত এই ছবিতে লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, মীনা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ শিল্পীরা গান গেয়েছিলেন। এই ছলনা, এই প্রতারণা তাঁকে মানসিকভাবে তীব্র আঘাত দিয়েছিল। এ ঘটনার বিষয়ে সত্যাসত্য উদ্ঘাটন করতে পূর্ণাঙ্গ তত্ত্বতালাশ করা অত্যাবশ্যক। এ তো শিল্পীর সাথে মর্মান্তিক প্রবঞ্চনা! ১৯৫৭ থেকে ১৯৭৮ — মাত্র ২১ বছরের তাঁর রেকর্ডের গানের সৃষ্টিশীল কর্মজীবন। এতটুকু সময়ের মধ্যে এত বিশাল পরিধিতে এবং এত বর্ণময় বৈচিত্র্যে ক’জন সুরস্রষ্টা ও গায়ক কাজ করতে পেরেছেন? তাঁর প্রতি এত বড়ো অবিচার ও অবহেলা মেনে নেওয়া যায় না।
তাঁর সংগীত পরিচালনায় মুক্তিপ্রাপ্ত ছায়াছবির সংখ্যা খুব সামান্য হলেও, তিনি কিন্তু চলচ্চিত্রের গানের সুরে তাঁর অপ্রতিম প্রতিভার স্বর্ণস্বাক্ষর ও সফলতার প্রমাণ রেখে গেছেন। যেমন, ১৯৬৫-তে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দোলনা’ ছায়াছবিতে সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে তিনি সাফল্য লাভ করেন। অসীমা ভট্টাচার্যের প্রযোজনায় পার্থপ্রতিম চৌধুরী নির্দেশিত এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তনুজা, নির্মল কুমার, অনুপ কুমার, পাহাড়ী সান্যাল, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, মঞ্জু দে, মলিনা দেবী প্রমুখ। ‘দোলনা’ ছবিতে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে ‘আমার কথা শিশির ধোয়া হাসনুহানার কলি’ গানটির সাথে শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের স্বকণ্ঠে পবিত্র মিত্রের লেখা ‘ব্যথা যদি পাও’ গানটিও জনপ্রিয় হয়েছিল। ছবির আরো দু’টি গান ছিল — শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় মান্না দে’র কণ্ঠে ‘মাগো যশোমতী মা’ এবং মিল্টু ঘোষের কথায় অসীমা ভট্টাচার্যের কণ্ঠে ‘পুতুল রাজা পুতুল রানী’। লতার গানটির মিউজিক অ্যারেঞ্জার ছিলেন শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের শ্বশুরালয়ের সম্পর্কে আত্মীয় সুপ্রসিদ্ধ দিলরুবা-বাদক দক্ষিণামোহন ঠাকুর। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই দক্ষিণামোহন ঠাকুর ছিলেন সে-কালের শ্রেষ্ঠ দিলরুবা ও তারসানাইবাদক এবং বিশিষ্ট সংগীত পরিচালক। সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ ছবিতে দুর্গার মৃত্যু সংবাদ হরিহরকে জানাবার পরে সর্বজয়া ও হরিহরের সেই মর্মন্তুদ কান্নার দৃশ্যে আবহসংগীতে তারসানাইয়ের যে করুণ সুর বেজেছিল, সেটি দক্ষিণামোহন বাজিয়েছিলেন। ১৯৬৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল কার্তিক চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত ছায়াছবি ‘গোধূলি’। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, অরুন্ধতী দেবী, নির্মল কুমার, তুলসী চক্রবর্তী, জহর গাঙ্গুলী প্রমুখ। ছবিটির গীতিকার ছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুরকার ও সংগীত পরিচালক শৈলেন মুখোপাধ্যায়। তাঁর সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন ‘ও যদি রাধাই হল, পায়ে কেন পরল না নূপুর’ এবং ‘কিছু কথা ছিল যাবার বেলায়, গানে গানে বলে যাই’ গান দু’টি। এ ছবিতে শৈলেন মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন ‘চলে যায় স্বপ্ন দুলালী’ গানটি। তিনটি গানই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দোলগোবিন্দের কড়চা’ চলচ্চিত্রেও তিনি সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন। চিত্রপরিচালক সারথী নির্দেশিত এই ছায়াছবিতে অভিনয় করেন রবি ঘোষ, তরুণ কুমার, পদ্মা দেবী, সুব্রতা চট্টোপাধ্যায়, সর্বাণী বসু, সতীন্দ্র ভট্টাচার্য প্রমুখ। এই ছবিতে গীতিকার সুনীলবরণের কথায় আরতি মুখোপাধ্যায়ের একক কণ্ঠে গাওয়া ‘যদি কাছে ডাকো কথা দিতে পারি’ এবং প্রভাতী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে গাওয়া ‘না না বোলো না’ গান দু’টিও তাঁর অসামান্য কম্পোজিশনের দীপ্তোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এছাড়াও এ ছবিতে সুনীলবরণের কথায় নির্মলা মিশ্রের কণ্ঠে ‘কী কথা গোপনে এমন লগনে’ এবং গোপাল দাশগুপ্তের কথায় আরতি মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘তোমার গানে ভুবন দোলে’ গান দু’টি উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৭ সালে তাঁর সুরে আবার ছায়াছবির গান গাইলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ছবির নাম ‘প্রতিদান’। অজিত গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশিত এই ছবিটিতে মুখ্য চরিত্রে কুশীলব ছিলেন অনিল চট্টোপাধ্যায়, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুভা গুপ্তা, রুমা গুহঠাকুরতা প্রমুখ। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ও শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় একক কণ্ঠে গেয়েছিলেন ‘স্বপ্নে দেখা সেই দিন’ এবং অসীমা ভট্টাচার্যের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে গেয়েছিলেন ‘আজকে আমার সুরে সুরে ডেকে ডেকে’ গান দু’টি।
মাত্র সাতচল্লিশ বছর বয়সে ১৯৭৮ সালে নভেম্বর মাসের ৮ তারিখে শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের অকাল মৃত্যু হয়। তাঁর জীবনাবসানের পরে একচল্লিশ বছর অতিক্রান্ত। কালের গর্ভে বিস্মরণের অতলে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছেন তিনি। চরম আক্ষেপের বিষয়, এত জনসমাদৃত অজস্র গানের স্রষ্টা ও গায়ক, এত বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন গুণী শিল্পীর সার্থক ও সর্বাঙ্গীণ মূল্যায়ন আজও হল না। জীবনে যাঁর বিজয়মাল্য জোটেনি, মরণে তাঁকে ফুলের অর্ঘ্য আর ক’জনই বা দেবে? তবু তাঁর গুণমুগ্ধদের এবং হারানো দিনের বাংলা গানের শ্রোতাদের অন্তরে তিনি অমর ও অক্ষয় হয়ে রয়েছেন। অনুরাগীদের নিভৃত স্মৃতি-তর্পণে তাই তাঁর চিরঅম্লান গানের ডালি নিয়ে বারে বারে ফিরে ফিরে আসেন শৈলেন মুখোপাধ্যায়। আমাদের ‘মনোবীণা তারে’ তাঁর ‘ছোঁয়া লাগে’!
১২ সেপ্টেম্বর তাঁর উননব্বইতম জন্মবার্ষিকীর শুভ লগ্ন স্মরণে সুমহান এই শিল্পীকে জানাই অন্তরের গভীর অনুরাগে বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য ও প্রণাম।
—————————————————————————–
শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ইউটিউব থেকে সংগৃহীত নির্বাচিত গানের তালিকা:
আধুনিক ও ছায়াছবির গান:
১) এত যে শোনাই গান। কথা: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর: শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
২) মোর গান একী সুর পেল রে (১৯৬০)। কথা: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর: সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
৩) এই সুর হৃদয়ে ছড়ালো (১৯৬৯)। কথা: পবিত্র মিত্র। সুর: সুবীর সেন।
৪) স্বপ্ন আমার ওগো সপ্তরঙের প্রজাপতির পাখা (১৯৫৭)। কথা: বটকৃষ্ণ দে। সুর: শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
৫) তুমি কাঁকন কখন বাজিয়ে গেলে। কথা ভাস্কর বসু। সুর: শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
৬) তার জলছুরিটির স্বপন দেখে (১৯৬৫)। কথা: কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। সুর: অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
৭) ঝরনা ঝরনা সুন্দরী ঝরনা (১৯৬৫)। কথা: কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। সুর: অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
৮) ঝিনুক ঝিনুক ঝিনুক তুলে আঁচল ভরে নাও। কথা ও সুর প্রবীর মজুমদার।
৯) দোলনচাঁপা অঙ্গ দোলে কার। কথা: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর: রতু মুখোপাধ্যায়।
১০) নগরে বন্দরে নিথই প্রান্তরে। কথা: ভাস্কর বসু। সুর: শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
১১) দাঁড় ছপছপ কোন তরী বেয়ে চলেছি। কথা: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর: ভূপেন হাজারিকা।
১২) রাত নিঝুম তারাও নিঝুম (১৯৫৮)। কথা ও সুর: প্রবীর মজুমদার।
১৩) চাঁদের আলোয় রাতের পাখি (১৯৬৩)। কথা: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর: সুধীন দাশগুপ্ত।
১৪) স্বাতী তারা ডুবে গেল (১৯৫৭)। কথা: বটকৃষ্ণ দে। সুর: শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
১৫) আকাশ নদীর বুকে নেমে এসেছে (১৯৬০)। কথা: শ্যামল গুপ্ত। সুর: রতু মুখোপাধ্যায়।
১৬) সাগরের দু’টি ঢেউ দু’টি কূলে এসে। কথা: আনন্দ মুখোপাধ্যায়। সুর: অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৭) বনময়ূরী ডাকা ওই আকাশে তারা ভাসে। কথা: অনল চট্টোপাধ্যায়। সুর: শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
১৮) গোলাপের পাপড়ি ঝরা তোমার হাসি। কথা: প্রবোধ ঘোষ। সুর: প্রবীর মজুমদার।
১৯) ওগো লজ্জাবতী। কথা: প্রবীর মজুমদার। সুর: অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০) এ মন আমার যেন ভ্রমরের সুর হয়ে। কথা: গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর: শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
২১) তোমার মনের এই প্রান্তে। কথা: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর: রতু মুখোপাধ্যায়।
২২) প্রিয় বান্ধবী। কথা ও সুর: অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
২৩) কী তুমি দেখো বলো আমার চোখে। কথা: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর: শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
২৪) চলে যেতে যেতে কিছু বলা হ’ল না (১৯৬৮)। কথা: ভবেশ গুপ্ত। সুর: রবীন্দ্র প্রশান্ত।
২৫) অনেক দিনের ওগো অনেক কথা। কথা: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর: শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
২৬) চলে গেছে অনেক সময় (১৯৭০)। কথা: মিল্টু ঘোষ। সুর: অসীমা ভট্টাচার্য।
২৭) তোমাকে ভেবেছি আমি (১৯৭০)। কথা: মিন্টু ঘোষ। সুর: অসীমা ভট্টাচার্য।
২৮) তুমি আমার মিলনতিথির চাঁদনি। কথা: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর: ভূপেন হাজারিকা।
২৯) তুমি আবার এসো ফিরে (১৯৬৮)। কথা: সুবীর হাজরা। সুর: রবীন্দ্র প্রশান্ত।
৩০) তোমার ভালো হোক আমি চলে যাবো। কথা ও সুর: অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
৩১) সহেলী, রূপ দেখালি যতন করে, মন দেখালি না। কথা ও সুর: সুধীন দাশগুপ্ত।
৩২) শ্যামল মাটির চোখ জুড়ে আজ (১৯৫৮)। কথা: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর: শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
৩৩) স্বপ্ন সায়রে ঢেউ জাগানো (১৯৫৮)। কথা: অনল চট্টোপাধ্যায়। সুর: প্রবীর মজুমদার।
৩৪) তোমায় দেখেছি কত রূপে কতবার (১৯৫৭)। কথা: গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর: শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
৩৫) চলে যায় স্বপ্ন দুলালী (চিত্রগীতি, ছবি: ‘গোধূলি’, ১৯৬৫) কথা: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর: শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
৩৬) ব্যথা যদি পাও (চিত্রগীতি, ছবি: ‘দোলনা’, ১৯৬৫) কথা: পবিত্র মিত্র। সুর: শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
রবীন্দ্রসংগীত:
৩৭) বসন্তে বসন্তে তোমার কবিরে দাও ডাক।
৩৮) দূরের বন্ধু সুরের দু’তীরে।
৩৯) ওই আকাশপরে সুধায় ভরে।
৪০) এ পথ গেছে কোনখানে গো।
৪১) বিরস দিন বিরল কাজ।
৪২) নয় নয় নয় এ মধুর খেলা (১৯৬২)। বাসবী নন্দীর সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে।
৪৩) আজি যত তারা তব আকাশে (১৯৬১)। বাসবী নন্দীর সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে।
রজনীকান্তের গান:
৪৪) চাহিয়া দেখ এনেছি গো (১৯৬০)। নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে।
৪৫) যদি কুমড়োর মত চালে ধরে র’ত (১৯৬০)। নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে।
রম্যগীতি:
৪৬) রোদে রাঙা ইটের পাঁজা তার ওপরে বসল রাজা। কথা: কবি সুকুমার রায়। সুর: জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ। শিল্পী: শৈলেন মুখোপাধ্যায়, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ ও আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৪৭) সিংহাসনে বসল রাজা বাজল কাঁসর ঘণ্টা (গন্ধবিচার)। কথা: কবি সুকুমার রায়। সুর: জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ। শিল্পী: শৈলেন মুখোপাধ্যায়, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ ও আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৪৮) আসুক তুফান আমি র’বো। গীতিকার ও সুরকার: অনুল্লেখিত।
৪৯) একটি দু’টি মনভোলানো কথা। গীতিকার ও সুরকার: অনুল্লেখিত।
✅ আগ্রহী শ্রোতাবন্ধুরা শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে উপরিল্লিখিত গানগুলি ক্রমাঙ্ক অনুসারে ইউটিউবে শুনতে পাবেন। বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল থেকে আমার সংগৃহীত ও সংকলিত এই ৪৯টি গানের ইউটিউব প্লে-লিস্টের লিংক নীচে: —
https://www.youtube.com/playlist?list=PLudtX9FXqO3KcQhBzNvP3nL_xrSLYu4ps
শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে নির্বাচিত গানের তালিকা (ইউটিউব থেকে সংগৃহীত):
১) বারে বারে কে যেন ডাকে আমারে (১৯৫৮)। শিল্পী: মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: পবিত্র মিত্র।
২) তুমি থাকো আমি যাই (১৯৫৮)। শিল্পী: মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: বটকৃষ্ণ দে।
৩) মালতীরে শুনে যেতে হয়েছে (১৯৬১)। শিল্পী: মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: অনুল্লেখিত।
৪) ভুলে থাকার কথা ছিল(১৯৬৩)। শিল্পী: মৃণাল চক্রবর্তী। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
৫) ওগো মরমী শোনো মরমী। শিল্পী: মৃণাল চক্রবর্তী। গীতিকার: মিল্টু ঘোষ।
৬) দু’হাতে আর এনো না কনকচাঁপার ফুল তুলি (১৯৬৩)। শিল্পী: মৃণাল চক্রবর্তী। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
৭) ও রঙ্গিলা পাখি (১৯৬৬)। শিল্পী: মৃণাল চক্রবর্তী। গীতিকার: মিল্টু ঘোষ।
৮) পিয়ানোর গান (‘তুলতুল টুপটুপ’, ১৯৬৫)। শিল্পী: শ্যামল মিত্র। গীতিকার: কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।
৯) চামেলী তুই বল (১৯৬৫)। শিল্পী: শ্যামল মিত্র। গীতিকার: কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।
১০) যে গান শোনাতে আমি চেয়েছি তোমায় চিরদিন। শিল্পী: পিন্টু ভট্টাচার্য। গীতিকার: মিল্টু ঘোষ।
১১) আহা কী নীল নীল মেঘের আলপনা। শিল্পী: পিন্টু ভট্টাচার্য। গীতিকার: মিল্টু ঘোষ।
১২) সাঁঝবেলাতে সাজলে তুমি। শিল্পী: পিন্টু ভট্টাচার্য। গীতিকার: মিল্টু ঘোষ।
১৩) অনেক পাওয়ার মাঝে (রম্যগীতি)। শিল্পী: পিন্টু ভট্টাচার্য। গীতিকার: দিলীপকুমার বিশ্বাস।
১৪) যাক যাক দিন যাক, রাত চলে যাক (১৯৬৫)। শিল্পী: তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। গীতিকার: সুনীলবরণ।
১৫) একলা পথ চলি সঙ্গীহীন (১৯৬০) শিল্পী: তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৬) ও যদি রাধাই হল, পায়ে কেন পরল না নূপুর (চিত্রগীতি, ছবি:’গোধূলি’, ১৯৬৫)। শিল্পী: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৭) কিছু কথা ছিল যাবার বেলায় গানে গানে বলে যাই (চিত্রগীতি, ছবি:’গোধূলি’, ১৯৬৫)। শিল্পী: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৮) আজকে আমার সুরে সুরে ডেকে ডেকে (চিত্রগীতি ছবি: ‘প্রতিদান’, ১৯৬৭)। দ্বৈত কণ্ঠশিল্পী: হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও অসীমা ভট্টাচার্য। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯) স্বপ্নে দেখা সেই দিন (চিত্রগীতি ছবি: ‘প্রতিদান’, ১৯৬৭)। শিল্পী: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০) মাগো যশোমতী মা (চিত্রগীতি, ছবি: ‘দোলনা’, ১৯৬৫)। শিল্পী: মান্না দে। গীতিকার: শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
২১) তোমায় পেয়েছি আমি আমার মনের এই গহনে। শিল্পী: সুবীর সেন। গীতিকার: ইন্দ্রজিৎ।
২২) আমার ভুবনে এত আলো। শিল্পী: বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। গীতিকার: পবিত্র মিত্র।
২৩) কাজলরেখা যেন মোছে না আঁখিনীরে। শিল্পী: বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। গীতিকার: পবিত্র মিত্র।
২৪) ওই যে দূরে যেখানে ঝাউবন দোলে। শিল্পী: সুধীন সরকার। গীতিকার: অরুণ ইন্দু।
২৫) আমি সাগর খুঁজে পাগল হলাম। শিল্পী: প্রশান্ত ভট্টাচার্য। গীতিকার: দীপক ভট্টাচার্য।
২৬) আজও সে ঝড় কেন এলো না। শিল্পী: প্রশান্ত ভট্টাচার্য। গীতিকার: দীপক ভট্টাচার্য।
২৭) ঝুমকো লতার দোলনা দিলাম। শিল্পী: সুদাম বন্দ্যোপাধ্যায়। গীতিকার: শ্যামল ঘোষ।
২৮) তুমি ডাকবে কি ডাকবে না। শিল্পী: সুদাম বন্দ্যোপাধ্যায়। গীতিকার: বাবু গুহঠাকুরতা।
২৯) কিছু নেই তবু দিতে চাই। (১৯৬৭)। শিল্পী: মলয় মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: মিল্টু ঘোষ।
৩০) শ্রীমতী যে কাঁদে (১৯৬৭)। শিল্পী: মলয় মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: মিল্টু ঘোষ।
৩১) ওই দু’টি নীল চোখ। শিল্পী: উদয়বরণ। গীতিকার আনন্দ মুখোপাধ্যায়।
৩২) আর কোথা নয় মা, আর নয় কোনোখানে (১৯৭১)। শিল্পী: আব্দুল জব্বর। গীতিকার: শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
৩৩) কত রাজপথ জনপথ ঘুরেছি (১৯৬২)। শিল্পী: ইলা বসু। গীতিকার: শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
৩৪) রাখালিয়া সুর আনে (১৯৫৮)। শিল্পী: ইলা চক্রবর্তী (বসু)। গীতিকার: শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
৩৫) কলকাতা কলকাতা কলকাতা কিছু গান কিছু কথা (১৯৬৪)। শিল্পী: ইলা বসু। গীতিকার: শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
৩৬) তোমার ঐ আমলকী বন একতারাতে আজ সারা বেলা (১৯৫৮)। শিল্পী: ইলা বসু। গীতিকার: গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার।
৩৭) বলে যা যা যা কোকিলা। শিল্পী: ইলা বসু। গীতিকার: আনন্দ মুখোপাধ্যায়।
৩৮) মধুর মুরলী কেন আর সুর তোলে না (১৯৬১)। শিল্পী: ইলা বসু। গীতিকার: মিল্টু ঘোষ।
৩৯) বেলোয়ারি কাঁচের চুড়ি (১৯৬১)। শিল্পী: ইলা বসু। গীতিকার: মিল্টু ঘোষ।
৪০) আবদাল্লা, ও আবদাল্লা। শিল্পী: ইলা বসু। গীতিকার: আনন্দ মুখোপাধ্যায়।
৪১) স্বপ্ন ভরা এই বনতল (১৯৫৯)। শিল্পী: গায়ত্রী বসু। গীতিকার: শ্যামল গুপ্ত।
৪২) আজ মালঞ্চে মৌসুমী হাওয়া লাগল (১৯৫৯)। শিল্পী: গায়ত্রী বসু। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
৪৩) তুমি দিয়েছো যত আমি তারও যে অনেক বেশি পেয়েছি। শিল্পী: গায়ত্রী বসু। গীতিকার: পবিত্র মিত্র।
৪৪) ও মেঘলা বরণ মেয়ে (১৯৫৬)। শিল্পী: বাণী ঘোষাল। গীতিকার: শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
৪৫) যে ফুল বিদাযপথে নীরবে ঝরিয়া যায় (১৯৫৬)। শিল্পী: বাণী ঘোষাল। গীতিকার: প্রবোধ ঘোষ।
৪৬) ও জোনাকি, তুমি এসেছিলে কি (১৯৬০)। শিল্পী: বাণী ঘোষাল। গীতিকার: মিল্টু ঘোষ।
৪৭) আহা নামহারা কোন ফোটা ফুল (১৯৬০)। শিল্পী: বাণী ঘোষাল। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
৪৮) আকাশ অনেক দূর তা জানি (১৯৫৯)। শিল্পী: আরতি মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: পবিত্র মিত্র।
৪৯) যদি কাছে ডাকো কথা দিতে পারি (চিত্রগীতি, ছবি: ‘দোলগোবিন্দের কড়চা’, ১৯৬৬)। শিল্পী: আরতি মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: সুনীলবরণ।
৫০) তোমার গানে ভুবন দোলে (চিত্রগীতি, ছবি: ‘দোলগোবিন্দের কড়চা’, ১৯৬৬)। শিল্পী: আরতি মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: গোপাল দাশগুপ্ত।
৫১) কত ছন্দ ঝরা কত গন্ধ ভরা (১৯৫৯)। শিল্পী: আরতি মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: পবিত্র মিত্র।
৫২) না না বোলো না সহেলী (চিত্রগীতি, ছবি: ‘দোলগোবিন্দের কড়চা’, ১৯৬৬)। দ্বৈত কণ্ঠশিল্পী: আরতি মুখোপাধ্যায় ও প্রভাতী মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: সুনীলবরণ।
৫৩) এই সুর ঝরা খেলাতে ফাগুনের বেলাতে (১৯৬৬)। শিল্পী: প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। গীতিকার: আনন্দ মুখোপাধ্যায়।
৫৪) তোমার দীপের আলোতে নয়। শিল্পী: প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
৫৫) ধূসর গোধূলি আলপনা গেল এঁকে (১৯৫৭)। শিল্পী: নির্মলা মিশ্র। গীতিকার: বটকৃষ্ণ দে।
৫৬) কী কথা গোপনে এমন লগনে (চিত্রগীতি, ছবি: ‘দোলগোবিন্দের কড়চা’, ১৯৬৬)। শিল্পী: নির্মলা মিশ্র। গীতিকার: সুনীলবরণ।
৫৭) আঁকা চোখের বাঁকা চিঠি। শিল্পী: বাসবী নন্দী গীতিকার: শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
৫৮) সঙ্গীতা, না ডেকো না। শিল্পী: বাসবী নন্দী। গীতিকার: শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
৫৯) কেন দু’টি মন দু’টি ছোট্ট ফুলের মতো হয় না। শিল্পী: বাসবী নন্দী। গীতিকার: আনন্দ মুখোপাধ্যায়।
৬০) আমার কথা শিশির ধোয়া হাসনুহানার কলি (চিত্রগীতি, ‘দোলনা’, ১৯৬৫)। শিল্পী: লতা মঙ্গেশকর। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
৬১) পুতুল রাজা পুতুল রানী (চিত্রগীতি, ‘দোলনা’, ১৯৬৫)। শিল্পী: অসীমা ভট্টাচার্য। গীতিকার: মিল্টু ঘোষ।
৬২) এত মঞ্জরী কেন আজ ফুটেছে (১৯৫৯)। শিল্পী: আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
৬৩) এ তো কান্না নয় আমার (১৯৭২)। শিল্পী: হৈমন্তী শুক্লা। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
৬৪) অঞ্চলে রঙ লাগেনি তো। শিল্পী: হৈমন্তী শুক্লা। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
৬৫) সাদা মেঘ ভেসে যায় (১৯৫৯)। শিল্পী; সুমিত্রা সেন। গীতিকার: সরল গুহ।
৬৬) যদিও ক্লান্ত নয়নে ঘুম (১৯৫৯)। শিল্পী; সুমিত্রা সেন। গীতিকার: সরল গুহ।
৬৭) ও পারেতে কালো রঙ। শিল্পী: কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়। গীতিকার: আনন্দ মুখোপাধ্যায়।
৬৮) সুয্যিমামা নামল পাটে। শিল্পী: কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়। গীতিকার: আনন্দ মুখোপাধ্যায়।
৬৯) নিজেরে হারাই আমি। শিল্পী: বিটু সমাজপতি। গীতিকার: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
৭০) হলুদ বনে বনে আমার নাকছাবিটি হারিয়ে গেছে (১৯৬৯)। শিল্পী: মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়। গীতিকার: ভাস্কর বসু।
৭১) শুভ জন্মদিন (১৯৬৯)। শিল্পী: মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়। গীতিকার: ভাস্কর বসু।
৭২) কবরী বেঁধেছি সেজেছি ফুল সাজে (১৯৭০)। শিল্পী: লীনা ঘটক। গীতিকার: আশিস চট্টোপাধ্যায়।
৭৩) অপরূপা না না না, হতে চাই মণিদীপা (১৯৭০)। শিল্পী: লীনা ঘটক। গীতিকার: বীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।
৭৪) রূপালী জোছনায় ঘুম ভেঙে যায়। শিল্পী: ইরা মজুমদার। গীতিকার: শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
৭৫) দোলে মন দোলে রে। শিল্পী: ইরা মজুমদার। গীতিকার: শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
৭৬) সোনার চোখে ঘুম দিতে আজ ঘুমের পরী আয়। শিল্পী: শ্রীলা সেন। গীতিকার আনন্দ মুখোপাধ্যায়।
৭৭) ওই শোলক পড়ে নোলক পরা। শিল্পী: শ্রীলা সেন। গীতিকার আনন্দ মুখোপাধ্যায়।
৭৮) যাবো না একেলা সখী। শিল্পী: কৃষ্ণা রায় (মুখোপাধ্যায়)। গীতিকার: আনন্দ মুখোপাধ্যায়।
৭৯) প্রথম আলোর মতো এসেছিলে তুমি। শিল্পী: আলো রায়। গীতিকার: পবিত্র মিত্র।
৮০) যে কথা মনের মাঝে। শিল্পী: আলো রায়। গীতিকার: পবিত্র মিত্র।
৮১) কনক কাঁকনের ছন্দে ছন্দে (১৯৬৩)। শিল্পী: প্রতিমা মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: মিল্টু ঘোষ।
৮২) কে যেন চেনা চেনা নামেতে ডেকেছে আমারে (১৯৬৩)। শিল্পী: প্রতিমা মুখোপাধ্যায়। গীতিকার: মিল্টু ঘোষ।
✅ আগ্রহী শ্রোতাবন্ধুরা শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে বিভিন্ন শিল্পীদের কণ্ঠে উপরিল্লিখিত গানগুলি ক্রমাঙ্ক অনুসারে ইউটিউবে শুনতে পাবেন। বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল থেকে আমার সংগৃহীত ও সংকলিত এই ৮২টি গানের ইউটিউব প্লে-লিস্টের লিংক নীচে: —https://www.youtube.com/playlist?list=PLudtX9FXqO3L5MH7AuuHY7m7d587HAcr5
সাহায্যসূত্র:
১) ‘ভুলে থাকার কথা ছিল’ — লেখক: সোমনাথ শর্মা। ‘বঙ্গদর্শন’ বাংলা ওয়েব পত্রিকা’। লিঙ্ক: https://www.bongodorshon.com
প্রকাশকাল: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭।
২) ‘সোনা ঝরা শোনার দিন’ — লেখক: কেয়া মুখোপাধ্যায়। ‘ঐহিক’ বাংলা ওয়েব পত্রিকা। লিঙ্ক: http://www.aihik.in/aihik/
৩) ‘আগে কী নামে সম্প্রচারিত হত প্রভাতী মহিষাসুরমর্দিনী?’ — লেখক: তপন মল্লিক চৌধুরী। লিঙ্ক: https://www.dailyo.in/bangla/ প্রকাশকাল: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।
৪) ‘ফিরে আসুক পুজোর গানের সেই নস্টালজিয়া’ — হৈমন্তী শুক্লা। অনুলিখন: বিপ্লবকুমার ঘোষ। ‘দ্য ওয়াল ডট ইন’, পুজো ম্যাগাজিন ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। লিঙ্ক: http://www.thewall.in/pujomagazine2019/
৫) ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’।
৬) ‘আজকাল’ পত্রিকা।
৭) ‘ইউটিউব’-এ সরোজ সান্যাল, পূজনকুমার দরিপা, চঞ্চল চক্রবর্তী, আলম সফিকুল, ড: কামরুল ইসলাম, এলা দে, সপ্তর্ষি ঘটক, শৌনক প্রমুখ সংগীত সংগ্রাহকদের চ্যানেল এবং ‘এম এইচ মিউজিক আর্কাইভ — ইন্ডিয়ান লিজেন্ড’ ও ‘গানের ডালি’ শীর্ষক চ্যানেল। এছাড়া অন্যান্য ইন্টারনেট সূত্র।
ঋণস্বীকার: দেবকুমার মুখোপাধ্যায় ও সৌভিক চট্টোপাধ্যায়।
ছবি গুলি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
**************************************************
রাজেশ দত্ত পরিচিতি
রাজেশ দত্ত একজন প্রাবন্ধিক কবি গীতিকার ও সুরকার সর্বোপরি একজন আপোসহীন যুক্তিবাদী। বর্তমানে চন্দননগরস্থিত বিজ্ঞান ও মানবাধিকার সংস্থা ‘ভারতের মানবতাবাদী সমিতি’র সম্পাদক। ২০০৫ সালের কলকাতা বইমেলায় র্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন প্রকাশনার উদ্যোগে রাজেশের প্রথম গানের সংকলন গ্রন্থ- ‘মানবতার গান’ প্রকাশিত হয়। উৎস মানুষ, অনীক, টপ কোয়ার্ক, আকিঞ্চন, হেতুবাদী সাময়িকী’, ‘বন্দীবার্তা’, ‘প্রসঙ্গ সমকাল’, ‘বিরুদ্ধতা’, ‘অন্যদিগন্ত’, ‘আবাদভূমি’, ‘সাগ্নিক’ ইত্যাদি বেশ কিছু লিটল ম্যাগাজিনে ওনার গানের কথা ও স্বরলিপি প্রকাশিত হয়েছে। স্বরলিপি করেছেন অগ্রজা সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা বইমেলায় সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্ঠে রাজেশের কথায় সুরে প্রথম গানের অডিও সিডি ও ক্যাসেট ‘পাল্টা স্রোতের গান’ বের হয়। অডিও সিডিটি ছিল সম্পূর্ণ যন্ত্রানুষঙ্গ বর্জিত একটি ব্যতিক্রমী প্রয়াস। রাজেশের গানের বিষয়বৈচিত্র্য, উজ্জ্বল স্বাতন্ত্র্য, কথা ও সুরের আশ্চর্য মেলবন্ধন শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে।
নিখুঁত এবং পুংখানুপুংখ তথ্য সম্বৃদ্ধ একটি রচনা যা শুধুমাত্র শৈলেন মুখোপাধ্যায়কে নয়, সে সময়ের বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে ও হারিয়ে যাওয়া আরও অনেক বাংলা গানের শিল্পী,গীতিকার,সুরকারের ইতিহাসকে পুনরায় তুলে এনেছে! লেখকের বিস্ময়কর প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই।
শ্রদ্ধাভাজনেষু, আপনার মতামত আমার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। প্রাণিত করলেন। আপনাকে আমার অজস্র ধন্যবাদ, শ্রদ্ধা ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
অসাধারণ শ্রদ্ধাঞ্জলি!!!অনবদ্য তথ্য নির্ভর স্মৃতিচারণ!!🙏🏻🙏🏻
সুজনেষু, আপনাদের ভালো লাগা আমার পরম প্রাপ্তি ও প্রেরণা। আপনাকে জানাই আন্তরিক প্রীতি ও সশ্রদ্ধ শুভ কামনায় অশেষ ধন্যবাদ।
কালের অতলে হারিয়ে যাওয়া এই অসাধারণ শিল্পীকে সঠিক মর্যাদা দিয়ে আমাদের চিনিয়ে দেবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ওনাকে নামে চিনতাম কিন্তু উনি যে এতো কাজ করে গেছেন তা সত্যিই অজানা ছিল। ওনাকে আমার প্রণাম জানাই 🙏🙏🙏🙏
আপনাকে অশেয ধন্যবাদ। আপনাকে আমার প্রীতি, শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানাই।
খুব ভালো লাগলো, সঙ্গীতজগতের অনেক অজানা কথা জানলাম
সুজনেষু, আপনাকে আমার আন্তরিক প্রীতি ও শুভ কামনায় অজস্র ধন্যবাদ জানাই।
বহু শ্রুত কিন্তু বিনা চর্চিত এমন এক কিংবদন্তী শিল্পী স্রষ্টাকে তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। খুব মনোগ্রাহী এ রচনা এবং যথার্থ শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সুজনেষু, অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনাকে আমার আন্তরিক প্রীতি ও সশ্রদ্ধ শুভেচ্ছা জানাই।
অসাধারণ রাজেশ দা, এত সুন্দর একটি লেখা উপহার দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা….💐
অজস্র ধন্যবাদ ভাই দিব্যেন্দু। অফুরন্ত ভালোবাসায় প্রাণভরা শুভেচ্ছায়… রাজেশদা
অসাধারণ স্মৃতি চরনা।একটা কালজয়ী বাংলাগানের স্বর্ণ যুগের চিত্র নাট্য।50/60এর দশকেই আমাদের কৈশোর যৌবন কেটেছে।বাংলা গান বাদ দিয়ে সেই সোনাঝড়া দিনগুলি বাঙ্গালির জীবনে আর কি অবশিষট থাকে।তার লেখা এই আশি উত্তর জীবনে প্রাণস্পর্শি হ হয়ে উঠল।তুমি আরো লেখ।ভাল থেকো।
শ্রদ্ধেয় মাধবদা, আপনার মতামত আমার কাছে সব সময়ই খুবই মূল্যবান। আমার এই প্রয়াস আপনার ভালো লেগেছে জেনে অত্যন্ত প্রীত ও অনুপ্রাণিত হলাম। আপনার প্রেরণা আমার।আজ ও আগামীর পাথেয়। ভালো থাকবেন দাদা। নিছক সৌজন্যমূলক ‘ধন্যবাদ’ নয়, আপনাকে জানাই আমার অন্তরের অন্তঃস্থলের নিবিড় ভালোবাসায় অশেষ শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা। — রাজেশ।