বুদ্ধদেব গুহঃ একটি বর্ণময় জীবনের কথা (১৯৩৬-২০২১)
প্র ত্যু ষ সে ন গু প্ত
উল্ ঝি সুল্ ঝি রহনে দেও
কিঁউ শর পর আফৎ লাতি হো ?
দিল্ কা ধড়কন বাহ্ড়তি হ্যায় …
যব বালোঁ কো সুল্ ঝাতি হো”…..
যব বালোঁ কো সুল্ ঝাতি হো”…..
তুমি উসকোখুসকো ই থেকো। সেজেগুজে,পরিপটি চুলে আমার মাথায় নতুন বিপদ ডেকে এনো না। তুমি কি জানো না,তুমি সুন্দর করে সাজলে আমার বুকের ধুকপুকুনি টা বেড়ে যায়?
এই হলেন বুদ্ধদেব গুহ। চির রোমান্টিক, চির প্রেমিক। হলুদ বসন্ত উপন্যাসে সুসজ্জিতা নয়নাকে দেখে ঋজুর মনে এই শায়েরীটাই যে মনে হলো। ওঁর চোখে দীর্ঘ কেশরাশি কে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতন মনে হতো। বাতিঘরের সেই দক্ষিণী তরুণী উপম্মা,অথবা বাতিঘরের তলে ইঞ্জীনিয়ার জয় চ্যাটার্জির অনুভবে তামিল তরুণীর স্পর্শ নিয়ে রোমশ কাঠবিড়ালির তুলনা? অসাধারণ। কলেজ জীবনে ওঁর লেখায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছি কতবার!চির প্রেমিক, অসাধারণ টপ্পা গায়ক,অঙ্কণ শিল্পী, স্বর্ণকলমের লেখক, শিকারী, বন্ধু মহলের লালা,সুরা,সুন্দরী ও অরণ্য প্রেমিক “ঋজুদা” কোয়েলের কাছে চির বিশ্রামে চলে গেলেন। চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের পেশায় শুরু করা জীবনের ডেবিট ও ক্রেডিট কে নিঁখুত ভারসাম্যে ব্যালান্সশীটে বেঁধে দিয়ে চলে গেলেন জীবন সঙ্গিনী ঋতুর কাছে।চির শান্তির দেশে।ওঁর লেখাতেই জেনেছি পয়েন্ট ফোর এইট জিরো ছাড়া হাতি শিকার বিপদজনক।ওর লেখাতেই জেনেছি ড্রাই মার্টিনি কীভাবে চাখতে হয়।তরমুজের মধ্যে বঙ্গবারি মিশিয়ে কুয়োয় ফেলে,তার পর তার সঙ্গে চিনিপোড়া মিশিয়ে পান করলে কতটা ‘কিক্”,অথবা ভদকা,টোম্যাটো জুস্ আর কিছু স্পাইসেস মিশিয়ে তৈরি সুরার নাম ব্লাডিমেরী আর সেটা নাকি ব্রিটিশরা উৎসর্গ করেছিলো কুইন মেরীকে?ওঁর পছন্দ ছিলো শিভার্স রিগ্যাল,জনি ওয়াকার।বিভিন্ন লেখায় এদুটি অনেকবার ফিরে এসেছে।যেমন ওঁর বিশেষ পছন্দ ছিলো হলুদ রঙ। কপালের টিপ থেকে হলুদবসন্ত পাখি বা স্বর্ণ ঝুড়ির মাদকতা।
একসময়ের শান্তিনিকেতনের সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ ভি ভি ওয়ালঝারের সঙ্গীত তাঁর খুব প্রিয় ছিলো। একবার কোনও এক সাক্ষাৎকারে তিনি আক্ষেপ করেছিলেন ওয়ালঝারের কোনও রেকর্ড তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। না বাড়ি বা না বিপণীতে। আমার এক বন্ধু শুভ্রকান্তি মজুমদার,আমাদের প্রিয় মিঠু র শখ সব দুষ্প্রাপ্য সঙ্গীতের রেকর্ড জমানো। ওর সংগ্রহে ওয়ালঝার ছিলেন।মিঠু চটজলদি ওঁর ফোন নম্বর সংগ্রহ করে ঠিকানা জেনে নেয়,ক্যুরিয়র করে রেকর্ডটি ওঁকে পাঠিয়ে দেয়।আজ প্রায় পঁচিশ ত্রিশ বছর আগের কথা।এত ব্যস্ততার মধ্যেও ঋজুদা বছর চারেক আগে পর্যন্ত মিঠুর সঙ্গে ব্যারিটোনে ফোনালাপ করেছেন। তিন চার বছর আগে থেকেই তাঁর শারীরিক অসুস্থতা শুরু। হাঁটাচলার শক্তি এবং দৃষ্টি, দুটোই যেন মঙ্গলগ্রহের আবহাওয়ার মতন উবে যায়।আর ফেরেনি।শেষ দিকে তিনি মুখ দিয়ে লিখতেন।তিনি বলে যেতেন,একজন লিখতেন। কী প্রাণশক্তি আর হার না মানার আত্মবিশ্বাস। ওঁর এক সহকর্মী এক সাক্ষাতে বললেন,পেশাকালের প্রথম দিকে উনি আজ দিল্লি, কাল মুম্বাই, পরশু চেন্নাই করেছেন।ক্লাবের হাজিরায় তাতে ভাটা পড়েনি।অরণ্য
পাগল বুদ্ধদেবের মাধুকরী তে শুনিয়েছেন অর্জুন গাছের পাতার শব্দের সুর।মাধুকরী বা কোজাগরে অরণ্য এসেছে।মাধুকরীর অরণ্যপ্রেমী পৃথু ঘোষকে গড়েছেন নিজের আদলে।পালামৌয়ের ওঁরাওদের দুঃখ কষ্টের জীবন নিয়ে লেখা কোজাগর শব্দটা এসেছে ওঁদের ভাষায় কঃ জাগর থেকে,যার অর্থ হলো “কে জেগে আছো।” টপ্পা ঠুমরী তে অসম্ভব দখলের অধিকারী।
বুদ্ধদেবের সঙ্গে ঋতু গুহঠাকুরতার পরিচয় ঘটে দেশপ্রিয় পার্কের কাছে গানের স্কুল দক্ষিণীতে।সেখানেই প্রেম, তারপর বিয়ে।ঋতু কলকাতার বিখ্যাত সাঙ্গীতিক পরিবার গুহঠাকুরতা ঘরের মেয়ে।বুদ্ধদেব প্রায়ই বলতেন,ঋতুদের বাড়ির বাসনপত্তর
ও নাকি সুরে বাজে!দক্ষিণীর সেই ভালোবাসা নিয়েই লেখা খেলা যখন।এর রাজা আর বুলবুলি হলো বুদ্ধদেব আর ঋতু।ভীষণ ভালো বাসতেন ঋতুকে।তাই ওঁর প্রচুর লেখায় ঋতুর ঋ’কার এসেছে।যেমন,ঋজু,ঋভু,ঋতব্রত, রূষা ইত্যাদি। ২০১১সালে ঋতু গুহ অকালে চলে যাবার পর থেকে মুষড়ে পড়েছিলেন।
ওঁর জীবনের প্রথম উপন্যাস “হলুদ বসন্ত”।আত্মজীবনীমূলক ঋভু কাহিনীতে তিনি লিখেছেন আনন্দবাজার রবিবাসরীয় সম্পাদক রমাপদ চৌধুরী ওঁকে শিকারভিত্তিক লেখা থেকে মুক্ত করে “Proper” সাহিত্যতে অনুমতি দেবার তিনি লিখলেন হলুদ বসন্ত।আনন্দবাজারের বার্ষিক দোল সংখ্যায় এটি প্রকাশিত হয়েছিলো। ওঁর বহু পুস্তকের প্রচ্ছদ উনি নিজেই এঁকেছেন।
জন্ম ২৯ জুন,১৯৩৬,কলকাতায়।পড়াশোনা সেন্ট জেভিয়ার্সে।চূনী গোস্বামীর সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছেন। টেনিসেও দক্ষ।লং ড্রাইভ পছন্দ করতেন।ওঁর সম্পর্কে একটি লেখায় সব বলা খুব মুস্কিল।পেশা অ্যাকাউন্টেন্সির সঙ্গে শখ লেখা,গান গাওয়া,ছবি আঁকা এবং নিষিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত শিকার ছিলো নেশার মতন।এর সঙ্গে সামলেছেন আকাশবাণীর অডিশন বোর্ড,ফিল্ম সেন্সর বোর্ড, রাজ্য বন্যপ্রাণী,নন্দন,রাজ্য পর্যটন,কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব ও রাজ্যের আয়কর বিভাগের উপদেষ্টার মতন দায়িত্ব। এরকম বিরল সম্মানের অধিকারী দেশের আর কেউ আছেন কিনা জানিনা।ওঁর বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে পড়ে হলুদ বসন্ত,খেলা যখন,ওয়াইকিকি,বাতিঘর,কোয়েলের কাছে,কোজাগর,মাধুকরী, চরৈবেতি,রুআহা,কাঙ্গপোকপি,টাঁড়বাঘোয়া।আত্মজীবনী মূলক আরেকটি হলো বন জ্যোৎস্নায়,সবুজ অন্ধকারে। পঁচাশি বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন সবুজ অন্ধকারের ছায়ায়।বন জ্যোৎস্না মেখে এবার তিনি চিরশান্তিতে ঘুমাবেন।।
——————————————————————++
প্র ত্যু ষ সে ন গু প্ত পরিচিতিঃ
সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে নানা রকম চাকরী করে এখন বেলাশেষে কলম ধরেছেন। প্রথম চাকরী এক ওষুধ কোম্পানীতে। তারপর চা বাগানে। এরপর দু’দুটি খবরের কাগজে সাব এডিটর। শেষ পর্বে গোপনীয়তায় ভরা সরকারী চাকরী। দীর্ঘ চাকরী জীবনে কাজ করেছেন পশ্চিম বঙ্গের অধিকাংশ জেলায়! অভিজ্ঞতা হয়েছে প্রচুর। এই শেষ বেলায় ওই অভিজ্ঞতায় নির্ভর করে দক্ষিণীর এই প্রাক্তনী আবার কলম ধরেছেন।
——————————————————————++
প্র ত্যু ষ সে ন গু প্ত পরিচিতিঃ
সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে নানা রকম চাকরী করে এখন বেলাশেষে কলম ধরেছেন। প্রথম চাকরী এক ওষুধ কোম্পানীতে। তারপর চা বাগানে। এরপর দু’দুটি খবরের কাগজে সাব এডিটর। শেষ পর্বে গোপনীয়তায় ভরা সরকারী চাকরী। দীর্ঘ চাকরী জীবনে কাজ করেছেন পশ্চিম বঙ্গের অধিকাংশ জেলায়! অভিজ্ঞতা হয়েছে প্রচুর। এই শেষ বেলায় ওই অভিজ্ঞতায় নির্ভর করে দক্ষিণীর এই প্রাক্তনী আবার কলম ধরেছেন।