Shadow

অভিশপ্ত রাগিনী (দ্বিতীয় পর্ব​) – রামানুজ দাশগুপ্ত



অভিশপ্ত রাগিনী

 রামানুজ দাশগুপ্ত
 (দ্বিতীয় পর্ব)

দিব্যর বড় দাদা একদিন তাকে ডেকে বাবার উইল দেখালো। বাবা বাড়ির একখানা ঘরও তার নামে নাকি লিখে দিয়ে যাননি। বড়দা বলে,” শোন, শুধু তো গান বাজনা নিয়েই পড়ে রইলি। তিন পুরুষের ব্যবসা, কটা দিনই বা ব্যবসার কাজে মাথা ঘামিয়েছিস? বাবা-ই ঠিক করে গেছেন সব”। দিব্য ভাবে, এটা কি করে সম্ভব! বাবার প্রেরণা আর  উৎসাহতেই গান বাজনার জগতে আসা। বাবা-ই তো একদিন বলেছেন ব্যবসা দেখার জন্য তো ওরা আছে তুই তোর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা কর। আমি তো আছি মাথার ওপর। বাবা তাকে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়িও কিনে দিয়েছিল। সেই বাবা তাকে একখানা ঘরও দিয়ে যাননি, এটা কি করে সম্ভব ! দিব্য চুপ করে বসে থাকে। বড়দা বলেন, “শুনছি তো বেশ নামডাক হচ্ছে। পয়সাও নিশ্চয়ই ভালো কামাস।কটা পয়সা সংসারে দিয়েছিস ? যাক,একটা কথা শুনে রাখ, ছয় মাস সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে বাড়ির একটা সামান্য অংশ যদি কিনে নিতে পারিস তো ভালো হয় । নয়তো অন্য রাস্তা দেখে নিতে হবে তোকে।
– অন্য রাস্তা মানে বুঝলাম না ।
একটু গলার স্বরটাকে উঁচু করে চিবিয়ে চিবিয়ে বড়দা বলে, “এ বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও উঠতে হবে”।
– বাবা আমাকে একদম বঞ্চিত করে যাবেন এ কথা আমি বিশ্বাস করি না তাছাড়া বাবা থাকাকালীন তো এসব কথা হয়নি !
– তাহলে কি বলতে চাস আমরা মিথ্যেবাদী ? ঠিক আছে, আইন-আদালতের পথ খোলা আছে , সেখানে যেতে পারিস।
দিব্য কিছু বলে না, মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে বুঝতে পারে দাদা বৌদিরা বাবার দলিল নিয়ে জালিয়াতি করছে। আদালতের দরজার কড়া নাড়া তার পক্ষে সম্ভবপর নয়। কিছুক্ষন মাটির দিকে তাকিয়ে রইল, বুঝতে পারল একেই বলে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাওয়া। আত্মীয়স্বজন কেউ এই অবস্থায় তার পাশে এসে দাঁড়াবে না।কারণ, তার অপরাধ সে ব্যবসা না দেখে গান-বাজনা নিয়ে পড়ে আছে এবং সে ভাবে এখনো সাফল্য লাভ করতে পারেনি। বন্ধু বলতে দুজন তার মধ্যে রঙ্গনাথের কোন খবর নেই, অনিরুদ্ধর অবস্থাও তথৈবচ। তার পরদিন সকালে উঠে ও অনিরুদ্ধর বাড়িতে গেল। অনিরুদ্ধ বলছিল বটে, সে একজন প্রডিউসার পেয়েছে যে তাদের হয়ত একটা কাজ দিতে পারে।
অনিরুদ্ধ গান লেখে তাছাড়া একটা প্রাইভেট স্কুলে বাংলা পড়িয়ে আর গুটিকয় টিউশনি করে মোটামুটি চলে যায় । বেলেঘাটার কাছে একটা ভাড়ার ফ্ল্যাটে থাকে। বছরখানেক আগে ভালোবেসে সুন্দরী স্বাতীকে বিয়ে করেছে । কয়েকটা মাস ভালোই চলছিলো । কিন্তু তারপরই স্বাতীর নানা রকমের চশিদা বাড়তে শুরু করলো। অনিরুদ্ধ আর পেরে ওঠে না। এর মধ্যে ঘটনার সূত্রে মিস্টার ভিমানি নামে একজন বড় ব্যবসায়ী, যে ইদানিং ফিল্মের জগতে টাকা ঢালতে শুরু করেছে, তার সাথে অনিরুদ্ধর আলাপ হয়। ভিমানি একটু আশা দিয়েছিল অনিরুদ্ধকে যে সে তাকে কাজে লাগাতে পারে। এই কথা সে বন্ধু দিব্য কে বলেছিল । দিব্য সকালে এসে অনিরুদ্ধর বাড়ি হাজির হয়ে সব কথা বলে দুজনে মিলে ভিমানির কাছে ঘোরাফেরা শুরু করে। ভিমানি শেষ পর্যন্ত তাদের কাজটা দেয়, অনিরুদ্ধ তখনো জানতে পারেনা এই কাজটা পাবার পেছনে কী রহস্য কাজ করছে ……  ক্রমশঃ

অভিশপ্ত রাগিনী(প্রথম পর্ব​)

***********************************************

রামানুজ দাশগুপ্ত পরিচিতিঃ
শ্রী রামানুজ দাশগুপ্ত একজন বিশিষ্ট গায়ক,সুরকার বহুমুখী সঙ্গীত প্রতিভার অধিকারী শাস্ত্রীয় সংগীত, ভজন, গজলরবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি, শ্যামা সংগীত থেকে আধুনিক গানের  মাধ্যমে তাঁর প্রতিভা প্রকাশিত হয় তিনি দীর্ঘদিন মুম্বাইতে প্রবাসী ছিলেনদূরদর্শন কলকাতায় মিউজিক ডাইরেক্টরের পদ সামলেছেন। পরবর্তীকালে মুম্বাইয়ের ফিল্ম ডিভিশন অফ ইন্ডিয়ার সাথে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও প্রখ্যাত মিউজিক ডাইরেক্টর আর ডি বর্মনস্বপন চক্রবর্ত্তী ,শ্রীধর ফার্কে, রঘুনাথ শেঠ এর পরিচালনায় গান গেয়েছেন রামানুজ মহাশয় এর সংগীত পরিচালনায় মহম্মদ রফি সাহেবহৈমন্তী শুক্লাসন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, অনুপ  জালোটা, অনুরাধা পড়োয়াল, সুরেশ ওয়াডকর, রুনা লায়লা, কবিতা কৃষ্ণমূর্তির মতো স্বনামধন্য গায়কগায়িকারা গান গেয়েছেন আমেরিকার নিউ জার্সির মেয়র শ্রী দাসগুপ্তকে ২০০০ সালে  ” THE CITATION ” উপাধিতে ভূষিত করেন এবং ২০১৫ সালে নজরুল একাডেমী তাঁকেনজরুল পুরস্কারপ্রদান করে

2 Comments

Comments are closed.

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!