স্মৃতিরা ফুরিয়ে এলে
শাশ্বতী হোসেন
প্রথম কবিতা কবে লিখেছিলাম?
যেদিন শালকুঁড়ির ফাঁকে ফাঁকে রোদ আল্পনা এঁকেছিল?
ঝরনা পাথরের আমোদি পথে তুই যেদিন প্রথম
সিগারেট খেয়েছিলি?
মনে পড়ছে না।
ননীবালা গার্লস স্কুলের প্রেয়ার লাইনে তাপ্তী
হঠাৎ সেই গানটি গেয়ে উঠেছিল–
“তখন তোমার একুশ বছর বোধ হয় / আমি তখন অষ্টাদশীর ছোঁয়ায়–”
হেড বড়দি তাপ্তীকে শাস্তি দিয়েছিলেন।
নাকি যেদিন চশমা পরা অনামিকাকে দেখে অমিত বলেছিল,
“আজি বিশ্বময় ব্যপ্ত গেছো প্রিয়ে / তোমারে দেখিতে পাই সর্বত্র চাহিয়ে…”
নাহ, কিছুতেই মনে পড়ছে না।
অঙ্কের খাতায় নাকি ভূগোলের মানচিত্রে ভাঁজে….
কোথায় যেন লিখেছিলাম!
তারাফেনীর নদীর বিকেলে সুর্য যখন ডুবছিল,
আকাশ থেকে আবির ঝরে পড়ছিল।
চারপাশ বসন্তবর্ণ ঝিরঝিরে বাতাসের কোরাস–
কোকিলের ডানার ঝাপটানি।
তুই পাথরের ওপর দু-হাত মেলে গলা খুলে বলেছিলি,
দাও খুলে দাও, খুলে দাও, খুলে দাও সুর, মেলে দাও গান…
সেদিন কী লিখেছিলাম প্রথম কবিতা?
নাহ্, মনে নেই।
মায়ের তোরঙ্গ খুলে সুগন্ধি কৌটা পেয়েছিলাম।
খুলে দেখেছিলাম একটি নববধূর সোনালি
লতাপাতায় জড়ানো লাল ওড়নায় ঢাকা মুখ
তার হলুদ বেনারসীর পাড়ে নীলরঙা দিঘি।
সেদিন ?
ঝিরঝিরে বৃষ্টি মাথায় করে ছাতু কুড়োতে এসে
মহুলবনির রাখাল নিষ্পলক তাকিয়েছিল আমার দিকে।
সেদিন কী লিখেছিলাম রঙিন অক্ষরে আঁকাবাকা কবিতা?
উঁঁহু, কিছুতেই মনে আসছে না সেদিনটার কথা।
এখন যা লিখি সেসব কাগুজে আড়ালে
ঘুলঘুলি বাসার পায়রা-নিঃশ্বাস।
একচিলতে জীবনে সেই কবিতাটিকে খুব মনে পড়ে।
নিভন্ত পাতার মতো সেও হয়ত থুত্থুরে হয়ে গেছে।
অক্ষরে পলি জমেছে, জমুক। প্রাকৃত আদিমতায় বুনো হয়েছে, হোক।
উৎরাই ভেঙে নেমে আসতে আসতে দেখি
আবছা চরাচরে সেই কবিতা দাঁড়িয়ে আছে হংসমিথুনের
অবভাস হয়ে।
*******************************************
শাশ্বতী হোসেন পরিচিতি
হবি-লেখা। বিভিন্ন বাণিজ্যিক, (দেশ তথ্যকেন্দ্র) ওয়েব ম্যাগ, প্রচুর পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশিত। জঙ্গলমহলের আঞ্চলিক মানুষের জীবনচর্চা ওদের মুখের ভাষা নিয়ে কবিতার চর্চা। জন্মসাল – ১৯৬৪।
অসম্ভব ভালো লাগলো ৷ শেষ লাইনটি মনে গেঁথে গেল।