পাত্র পাত্রী চাই
দিওতিমা আচার্য্য
যুগ যুগ ধরে মানুষের অগ্রগতির সঙ্গে পরিবারগুলির মধ্যে একটি দৃঢ় বদ্ধমূল ধারনা ও বিশ্বাস তৈরী হয়েছে যে, ‘বিয়ে’ হচ্ছে একটি পবিত্র সামাজিক গঠনমূলক বন্ধন যার মাধ্যমে পরিবার ও বংশ এগিয়ে চলে। পথ চলার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাচ্ছে ‘বিয়ে’ নামক সামাজিক বন্ধন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছে এবং আজ এই বন্ধন একটি সামাজিক মর্যাদার চিহ্নে পরিণত হয়েছে।
আজ সকালের সংবাদপত্রটি পড়তে পড়তে হঠাৎ এই প্রথম ‘পাত্র পাত্রী চাই’ বিভাগে চোখ পড়ল। বিভাগটিতে দুটি উজ্জ্বল রং দেখতে পেলাম। নীল রং পাত্র আর গোলাপী পাত্রী। এটা অত্যন্ত হাস্যকর যে, আমরা যখন নারী–পুরুষ বিভেদের বিপক্ষে সোচ্চার, সমানান্তরে তখন কাগজে লিঙ্গ বিভেদ জাজ্জ্বল্যমান! শুধু তাই নয়, বিভেদকে আরও প্রকট করা হয়েছে জাতি, ধর্ম এবং পেশায়। বিভাগটিতে মনোনিবেশ করলে বোঝা যায়, পাত্রীদের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তার একটিও পাত্রীর স্বয়ং রচিত বর্ণনা নয়। সমস্ত পাত্রীদের বর্ণনা প্রায় একইরকম,“পাত্রী লম্বা, তন্বী, শ্যামবর্ণা বা ফরসা, রুচিসম্পন্না, শিক্ষিতা বা উচ্চশিক্ষিতা, পেশায় সফল, স্বাবলম্বীভাবে বিদেশে কর্মরতা (কিন্তু হাস্যকরভাবে তাদেরই বিয়ের প্রয়োজন বেশী) ইত্যাদি”। বিভাগটি পড়ে আমার এই ধারনাই হল যে অভিভাবকেরা কন্যার বিবাহের জন্য মরিয়া হয়ে যা নয় তাই উল্লেখ করছেন।
আমি মনে করি ‘বিয়ে’ একটি মানুষ কে ভালোবাসার অনুভূতির সুযোগ দেয়, শারীরিক প্রয়োজনীয়তা মেটায়, সুরক্ষা দেয় এবং পরিবার গঠন করতে সাহায্য করে। আমরা যদি একটু চিন্তা করে দেখি, বুঝতে অসুবিধে হবে না যে এই সবকিছুই বিয়ে না করেও পাওয়া যেতে পারে। একটি মেয়ে, বিয়ে না করেও নিজের পছন্দমত পুরুষকে ভালোবাসতে পারে, তাকে সঙ্গী করতে পারে। যদি পরিবার গঠনের ভাবনা থাকে তো অভিভাবকহীন/গৃহহীন শিশুকে গ্রহণ করে তার লালন পালন করতে পারে এবং স্বাধীনভাবে নিজের পেশায় থাকতে পারে। পেশায় নিজের মতো করে মনোনিবেশ করে বাধাহীন স্থায়ী উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে। যুক্তিসঙ্গত ভাবে দেখতে গেলে, বিয়ের কি খুব প্রয়োজন আছে , শুধুমাত্র সামাজিক সুরক্ষার জন্য? তর্কের খাতিরে, বিয়ে করা যদি স্থায়ী সম্পর্ক স্থাপন করা হয় তাহলে আজ বিবাহবিচ্ছেদ এরকমভাবে সমাজে প্রকট কেনো? তার চেয়ে সম্পূর্ন স্বাধীন সত্বা নিয়ে নিজের পছন্দমত জীবন কাটাক! তাহলে একটি মেয়েকে বা একটি ছেলেকে জোর করে বিয়ে করতে বাধ্য করা কেন?
আজও আমাদের সমাজ মেয়েকে পণ্যের মত, তার রূপের ব্যাখ্যা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অন্যান্য গুণাবলীর বর্ণনা দিয়ে বিবাহযোগ্যা সুপাত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। একটি মেয়ে, সে যেমন, তার পরিচয় ঠিক তেমনভাবেই দেওয়া হয় না ,বরং প্রথাগত ভাবে এটাই প্রতিষ্ঠা করা হয় যে সে একটি মেয়ে, তার নিয়তি বিবাহ এবং স্বামী নির্ভরশীল হয়ে থাকা।।
***************************************************
দিওতিমা আচার্য্য
জন্ম পশ্চিমবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র কলকাতায় । শিক্ষা শুরু কলকাতার রামমোহন মিশন থেকে। পরে বাবার কর্মসুত্রে বিশাখাপত্তনমে আসা। স্কুলের পড়াশোনা বিশাখাপত্তনম শেষ করে চেন্নাই এর এক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে স্নাতক। বর্তমানে বেঙ্গালুরুতে ইংরেজীতে স্নাতকোত্তর বিভাগে পাঠরতা । দিওতিমা প্রবাসে শিক্ষা লাভ করলেও বাংলা ভাষার প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা। বাংলায় নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে ভালবাসে। দিওতিমা তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে নৃত্যকলায়। বাংলা সাহিত্যে রুচি, বাংলা সংস্কৃতি পছন্দ করার মধ্যে দিয়ে আবেগপ্রবন বাঙালি হওয়ার গর্ব বোধ করে।
অন্য চিন্তাধারা।পড়ে ভালো লাগলো
Probase theke o bangla ke bhalobasai ato sundor likheche khub bhalo laglo .
বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানকে মর্যাদা দেবার জন্য মেয়েদের পণ্য হিসাবে উপস্থাপিত করার যে চিন্তাধারা তার পরিবর্তন সত্যিই প্রয়োজন। অবশ্যএই সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত ৷ বর্তমান গ্রজন্মের বিবাহ সম্পর্কে যে চিন্তা ভাবনা তার বেশ সুন্দর প্রকাশ ঘটেছে আপনার লেখায়।
একেবারে তরুণ প্রজন্মের ঝাঁচকচকে জীবন দর্শন.. খুব সুন্দর, ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ.. অনেক অভিনন্দন রইল দিওতিমা তোমাকে এত বলিষ্ঠ মতামত এত সুন্দর করে প্রকাশ করার জন্য🌹