হারানো দিনের গল্প
চন্দ্রকান্তি দত্ত
হারানো দিনের একটা গল্প বলি। গল্পের সময়কাল গত শতকের ছয় ও সাতের দশক। গল্পটা বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই সময়টাতে।
বীরভূমের আহমেদপুর থেকে বর্ধমানের কাটোয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ন্যারোগেজ বা ছোট লাইনের একটা রেলপথ। মাত্র বাহান্ন কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথটা চালু হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ১৯১৭ সালে। বৃটিশ শাসনাধীন ভারতে লন্ডনের ম্যাকলিয়ড রাসেল এন্ড কোম্পানি সেসময় বাংলায় মোট চারটে ছোট ছোট রেলপথ বানিয়েছিল। এই আহমেদপুর-কাটোয়া রেলপথ তারই মধ্যে একটা।
ছোট লাইন,ছোট গাড়ি। গতিও তার তেমনই। মাত্র ১২ কিলোমিটার তার সর্বোচ্চ গতি। তবে ট্রেন কখনও তার সর্বোচ্চ গতিতে ছুটেছে,একথা অতিবড় নিন্দুকেও বলতে পারবে না। এ সম্পর্কে একটা মজার গল্প আছে। বছর দশ-বারোর একটা ছেলে ট্রেনে চৌহাট্টা থেকে গোপালপুরে তার স্কুলে যাচ্ছে। জানালা দিয়ে দেখে,পাশের রাস্তা ধরে একজন বয়স্কা মহিলা সবজি ভর্তি ঝুড়ি নিয়ে প্রায় দৌড়ে একই দিকে চলেছে। ছেলেটা জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বলল,”ও বুড়িমা,কোথায় যাবে গো?”
বুড়িমা দৌড়তে দৌড়তেই জবাব দিল,”গোপালপুরের হাটে বাবা।”
শুনে ছেলেটা বলল,”ট্রেনটা তো গোপালপুরের হাটের পাশ দিয়েই যাবে। দৌড়োচ্ছ কেন? উঠে এসো।”
বুড়িমা বেশ রাগত স্বরে জবাব দিল,”না বাবা। আমার তাড়া আছে। তোদের টেরেনে চাপলে আমার আর সবজি বেচা হবে নি। বেলা বয়ে যাবে।”
তা ট্রেন যেমনই হোক,বীরভূমের মাটির ট্রেন। প্রায় অর্ধ-শতাব্দী প্রাচীন এই ট্রেনকে চলমান সময়ের সাথে সাথে বীরভূমের মানুষ নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে নিয়েছে। একই সাথে গরুরগাড়ি ও ন্যারোগেজ ট্রেনের এরকম শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বড়ই নয়নমুগ্ধকর। এই দুটো ভিন্ন জাতীয় বাহনকে আপন করে নিতে কোন দ্বিধা হয়নি বীরভূমবাসী মানুষের।
কলকাতা থেকে ফেরার সময় অখিলেশ আহমেদপুরে নেমে এই ট্রেন ধরেই দাশকলগ্রামে পৌঁছন। অখিলেশের বাড়ি দাশকলগ্রাম থেকে মাইল চারেক পশ্চিমে। প্রতি শনিবার তাঁকে নেওয়ার জন্য দাশকলগ্রাম স্টেশনে রহমত মিঞা গরুরগাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করে। উচ্চশিক্ষা ও তারপর চাকরীসুত্রে অখিলেশ গ্রাম ছাড়ার পর থেকে গত কয়েক বছরে অসুখ-বিসুখ ও ছুটি-ছাটা ছাড়া এই ব্যবস্থার কোন অন্যথা দেখা যায় নি।
আজ শনিবার। সেই একপথে,একইভাবে অখিলেশ বাড়ি ফিরছেন। তবে আজ কখন বাড়িতে ঢুকতে পারবেন,সে বিষয়ে কিছু সংশয় আছে। গত রাত্রি থেকে আবহাওয়া খুবই খারাপ। থেকে থেকে মুষলধারে বৃষ্টি নামছে। এবার আষাঢ় মাসে বৃষ্টির তেমন দেখা পাওয়া যায় নি। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে বীরভূমের লাল মাটি ও বৃষ্টি নির্ভর চাষের মাঠ – তেতেপুড়ে আগুন হয়ে উঠেছিল। বর্ষার প্রথম মাসে তার উপর শীতলতার প্রলেপ খুব একটা পড়ে নি। বীরভূমের মানুষ ধরে নিয়েছিল,এবারও অনাবৃষ্টিতে চাষবাস হবে না। কিন্তু শ্রাবণের সাত-আট তারিখের মাথায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। একটানা আকাশভাঙা বৃষ্টিতে আষাঢ়ের অভাব পূরণ করে শ্রাবণের বরাদ্দকেও ছাপিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মাঠে জল দাঁড়িয়েছে। শুকনো মুখগুলোতে আবার হাসি ফিরে এসেছে। চাষীরা নতুন উদ্যমে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে চাষের কাজে।
অখিলেশের কিন্তু মনে হচ্ছে আজ দুর্ভোগের দিন। বৃষ্টি যত বাড়ছে,ধীর গতির ট্রেনের বেগ ততই কমছে। এখন মনে হয় ঘন্টায় তিন- সাড়ে তিন কিলোমিটার গতিতে চলছে। এভাবে চললে দাশকলগ্রাম পৌঁছতে অন্ততঃ দশটা বেজে যাবে। এই দুর্যোগে রহমত মিঞা কি আসতে পারবে?
কামরা প্রায় ফাঁকা। যাত্রী নেই বললেই চলে। অখিলেশের কাছাকাছি তো কেউই নেই। অন্যদিক থেকে অবশ্য মাঝেমধ্যে মৃদু কথাবার্তা কানে আসছে। মনে হচ্ছে আরও তিন-চারজন আছেন যাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। বাস বা ট্রেন যাত্রায় অখিলেশ পারতপক্ষে কারও সাথে আলাপচারিতা করেন না। পরিবর্তে বইপড়া তাঁর নিত্যকার অভ্যেস। এমনকি, অন্যসময় দিনান্তে বৌবাজারের মেসে যখন তাস-পাশা ও চায়ের আড্ডা বসে,তখনও অখিলেশ অন্যঘরে পড়া বা লেখায় নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। আজ কিন্তু বেশীক্ষণ বই পড়তে পারলেন না। মেঘ-বৃষ্টির কারণে অসময়ে সন্ধ্যা নেমেছে। কামরায় একটা মাত্র আলো টিমটিম করে জ্বলছে। অখিলেশ বই বন্ধ করে জানালার কাঁচে চোখ রেখে প্রায়ান্ধকারেই বৃষ্টি দেখতে লাগলেন। না,কিছুই দেখা যাচ্ছে না। অখিলেশ চোখ বন্ধ করলেন। তাঁর মধ্যে বিমর্ষতার ভাব দেখা দিল। বাড়ি পৌঁছতে কত দেরী হবে বোঝা যাচ্ছে না। দেরী হলে ওদিকে মায়ের উদ্বেগ বাড়বে। মনোরমা সপ্তাহান্তে মাত্র একদিনের জন্য ছেলেকে কাছে পান। তাই শনিবার দেরী হলে কাতর হয়ে পড়েন। অসুস্থ শরীরে বাবাও উদ্বেগে থাকেন। মুখে প্রকাশ না করলেও মনে মনে অধীর হয়ে ওঠেন। অখিলেশ চোখ বন্ধ করেই ছিলেন। কারও পায়ের শব্দে তাকালেন। দেখলেন, একজন প্রৌঢ় ভদ্রলোক দুটি অল্পবয়সী ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে অখিলেশের উল্টোদিকে বসলেন। ছেলেটি মোটামুটি সদ্যযুবক,কিন্তু মেয়েটিকে তো কিশোরীই বলা চলে। এঁরাই হয়ত কামরার অন্যদিকে ছিলেন। এখন যে কোন কারণেই হোক,একা থাকতে চাইছেন না। অখিলেশ একটু অবাক হলেন। এইপথে,এইসময় কোন কিশোরীকে নিয়ে যাতায়াত করাটা অস্বাভাবিক। ট্রেনে বিশেষ কোন বিপদ নেই। কিন্তু দূরে দূরে ছড়িয়ে থাকা বীরভুমের গ্রামগুলোতে যাওয়ার রাস্তাঘাট একেবারেই নিরাপদ নয়। ডাকাতের উপদ্রব আছে। এঁরা কি নতুন আসছেন? হবে হয়ত। অখিলেশ আবার চোখ বুজলেন। বৃষ্টি কিছুটা ধরে আসায় গাড়ি দাশকলগ্রামে পৌঁছল ন-টার কিছু আগেই। অখিলেশ নামলে অন্য তিনজনও নামলেন। স্টেশনে বিশ্বস্ত রহমত মিঞার গাড়ি ছাড়া আর কোন গাড়ি নেই। অখিলেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। কিন্তু গাড়িতে ওঠার মুহূর্তে চোখে পড়ল,অন্য তিনজন যাত্রী অসহায় অবস্থায় এদিক ওদিক দেখছেন। ওঁদের অবস্থা বুঝে অখিলেশ এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলেন,”আপনারা কোথায় যাবেন?”
ভদ্রলোক কিছুটা ইতস্ততঃ করে অথবা অখিলেশকে খানিক মেপে নিয়ে বললেন,”আমরা বীজপুর যাব। কিন্তু কোন গাড়ি দেখছি না।”
-“আপনাদের জন্য কি কোন গাড়ি আসার কথা আছে?”
-“না। সেরকম কিছু নেই। আসলে খবর দেওয়া হয়ে ওঠে নি।”
-“আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমার গাড়িতে আসতে পারেন। আমি মাচানডাঙ্গা যাব। বীজপুর মাচানডাঙ্গা থেকে মাইল খানেক দূরে। গাড়োয়ান আপনাদের পৌঁছে দেবে।”
ভদ্রলোক যেন হাতে চাঁদ পেলেন। রহমত মিঞার গাড়ি গন্তব্যের দিকে যাত্রা করল।
সকালে যখন ঘুম ভাঙল,তখন যথেষ্ট বেলা হয়েছে। জানালা পথে মেঘশূন্য আকাশ থেকে সূর্যের ঝলমলে আলো চতুর্দ্দিক উদ্ভাসিত করে অখিলেশের হৃদয়ে খুশীর ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছে। অখিলেশ তাড়াতাড়ি উঠে হাত-মুখ ধুয়ে বারান্দায় এলেন। বেতের আরাম কেদারায় বসে বাবা গীতা পড়ছেন। গতরাত্রে ফেরা অবধি বাবার সাথে কথা হয় নি। বছর দেড়েক আগে শরীর খারাপ হওয়ার পর থেকে ডাক্তারের পরামর্শ মতো বাবা ওষুধ খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েন। অখিলেশকে দেখে বই বন্ধ করলেন। বললেন,”কিরে,ঘুম হল? তোর মা বলছিলেন কাল নাকি প্রায় শেষ রাতে শুতে গেছিস? আয়,আমার পাশে বোস।”
-“তোমার শরীর ভাল আছে বাবা? ওষুধগুলো নিয়ম করে খাচ্ছ তো?”
-“হ্যাঁ রে বাবা,হ্যাঁ। তোর মায়ের শাসনে অসুখ-বিসুখের থাকার জো আছে?”
মনোরমা চা দিয়ে গেলেন। চায়ে শব্দ করে একটা চুমুক দিয়ে অতীন্দ্র বললেন,”হ্যাঁরে গেনু! বয়সটা তো থেমে থাকছে না। এবার তোর বিয়ের ব্যবস্থাটা করি?”
একথার কোন জবাব হয় না। অখিলেশ চুপ করে চায়ে চুমুক দিলেন।
অতীন্দ্রই আবার মুখ খুললেন,”আউসগ্রামের ক্ষেত্রমোহনবাবুর মেয়েকে আজ দেখতে যাব ভাবছি। তুই যাবি সাথে?”
-“না বাবা। আমি আর কি করতে যাব? তোমরা দেখলেই হবে। কিন্তু বাবা—-।”
-“আবার কিন্তু কেন?”
-“বলছিলাম,তোমার শরীরের এই অবস্থায় এতটা পথ যাওয়া কি ঠিক হবে?”
-“আরে,তার ব্যবস্থা আছে। আমার সাথে তোর মা ছাড়াও বিলাস আর জামাইও যাবে। জামাই একটা মোটর কিনেছে, জানিস তো। সেটা নিয়েই আমরা যাব।”
-“তবু সাবধানে যেও। রাস্তার অবস্থা তো ভাল নয়।”
ফিরতে যথেষ্ট রাত হল। অতীন্দ্রকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। বললেন,”আমি আর কিছু খাব না। ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ওষুধ খেয়ে শুতে যাব। তোর মা আর বিলাসের কাছে সব শুনে নিস।”
মনোরমা অল্প দুধ ও ওষুধ খাইয়ে অতীন্দ্রর শোওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন।
বাবার শারীরিক অবস্থা নিয়ে অখিলেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। রাত্রে খাওয়ার আগে একবার সন্তর্পণে দেখে এলেন। উদ্বেগের কিছু নেই। অতীন্দ্র বেশ প্রশান্তির ঘুমে নিমজ্জিত।
বিলাসিনী ধৈর্য্য রাখতে পারছিলেন না। মাকে ঠেলা দিয়ে বললেন,”মা! গেনুকে বলো কি হল আজকে।”
মনোরমা মৃদু হেসে বললেন,”তোর বিয়েটা পাকা করে ফেললাম রে গেনু।”
অখিলেশ খাওয়া শুরু করেই থমকে গেলেন,”বিয়েটা পাকা হয়ে গেল? একবার গিয়েই?”
-“কেন বাবা! তাতে ক্ষতি তো কিছু দেখছি নে। ওরা পাল্টি ঘর। মেয়েটিকেও আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। দেখতে বড্ডো ভাল। সরল,হাসিখুসি মুখখানা। তাছাড়া,লেখাপড়াতেও ভাল। এবার ফার্স্ট ডিভিসনে হায়ার সেকেন্ডারী পাশ করে কলেজে ভর্ত্তি হয়েছে।”
বিলাসিনী হেসে উঠে বললেন,”সাবজেক্টেও মিল আছে। ফিলসফি মেয়ের ধ্যান-জ্ঞান।”
মনোরমা আবার বললেন,”আগামী ১৮ই অঘ্রান তারিখ ঠিক হয়েছে। অবশ্য তোর কলেজের ছুটি যদি না পাস তখন তারিখ বদলানো যেতে পারে।”
অখিলেশের কাছে কথাগুলো এতটাই অপ্রত্যাশিত যে মুখ দিয়ে একটা কথাও বেরলো না। নিঃশব্দে খাওয়া চলতে লাগল। মনোরমা তাঁর গম্ভীর প্রকৃতির সন্তানটিকে ভাল চেনেন। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ভাবতে সময় দিলেন।
তখন প্রায় শেষ রাত। বিগত কয়েক ঘন্টার মানসিক অস্থিরতা কাটিয়ে অখিলেশ সবে ঘুমিয়েছেন। দরজায় কেউ জোরে জোরে কড়া নাড়ছে। অখিলেশ তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুললেন। জামাইবাবু ৷ বললেন,”এক্ষুনি এসো।”
বাবার ঘরে গিয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন অখিলেশ। বাবা একই ভাবে শুয়ে আছেন। শুধু তাঁর প্রশান্তির নিদ্রা বদলে গেছে অনন্ত নিদ্রায়।
অখিলেশের বিয়ে ভেঙে গেল। ভেঙে না গিয়ে পিছিয়ে যাওয়াটাই দস্তুর ছিল। কিন্তু,বীরভুমের তথা বাংলার আর পাঁচটা প্রত্যন্ত গ্রামের মত এখানেও শিক্ষার তুলনায় গ্রাম্য সংস্কারের দাপট অনেকটাই বেশী। তাই কোন অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা ছাড়াই কনেকে ‘অপয়া’ চিহ্নিত করে বাতিল ঘোষণা করা হল। এই একতরফা বিচারে অখিলেশের মতামত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাটুকুও কেউ অনুভব করল না। অখিলেশ তখন বাবার পারলৌকিক কাজে ব্যস্ত।
ক্রিয়াকর্ম সম্পন্ন হলে অখিলেশ কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। যাওয়ার আগে কথা প্রসঙ্গে জানিয়ে দিয়ে গেলেন, কন্যাপক্ষ যদি অপেক্ষা করতে রাজি থাকেন,তাহলে অতীন্দ্রর বাৎসরিক ক্রিয়াকর্মের পরে বিয়ের তারিখটা স্থির হতে পারে। ওদের সুস্পষ্ট মতামত না জেনে অন্যত্র পাত্রী না দেখাই বাঞ্ছনীয়।
মনোরমা ছেলের কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। প্রত্যুত্তরে কিছু বলতে গিয়েও বললেন না। অধ্যাপক সন্তানের গাম্ভীর্যের কাছে তাঁকে হার মানতে হল। কিন্তু বাড়ি ভর্ত্তি আত্মীয়-স্বজনের সামনে ছেলের এই একটিমাত্র কথা,যা কিনা আদেশের সামিল,মনোরমার অত্যন্ত অপমানজনক ঠেকল। তিনি নিজের মধ্যে জ্বলে-পুড়ে খাক হতে লাগলেন।
অখিলেশ ও অন্যান্য আত্মীয় চলে গেলে ফাঁকা ঘরের প্রত্যেকটা কোণে তাঁর মানসিক যন্ত্রণা গুঞ্জরিত হতে লাগল। ক্রমশঃ সেই যন্ত্রণা সঞ্চারিত হল মনোরমার শরীরে।
ছোট লাইনের ট্রেন ধরে অখিলেশের সপ্তাহান্তিক যাতায়াত আগের মতই চলতে লাগল। বাবার মৃত্যুর পরে মায়ের এই বিমর্ষভাব তাঁর স্বাভাবিক শোক বলেই মনে হল। একমাত্র পুত্র হওয়া সত্ত্বেও মায়ের বিমর্ষতার প্রকৃত কারণ তিনি অনুধাবন করতে পারলেন না। মনোরমাও নিজেকে ভাঙলেন না। সূক্ষ্ম অনুভূতি নামের সে আধিভৌতিক গুণ মানুষের মধ্যে দেখা যায়,অখিলেশের মধ্যে সেই গুণটির অভাব ছিল বলেই মনে হয়। নইলে,সংসারের লক্ষ্যণীয় ছন্দপতন তিনি প্রাথমিক অবস্থাতেই উপলব্ধি করতে পারতেন। কিন্তু অখিলেশ পারেন নি। অবশেষে মনোরমা যখন প্রায় স্হায়ীভাবে শয্যা নিলেন,সেই চরম পর্যায়ে এসে তাঁর বোধোদয় হল। সিদ্ধান্ত নিলেন,মনোরমাকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করবেন। কিন্তু মনোরমাকে নড়ানো গেল না। একরকম বিনা চিকিৎসাতেই,অতীন্দ্রর মৃত্যুর মাত্র সাত মাসের মাথায়,এক বুক অভিমান ও যন্ত্রণা নিয়ে,মনোরমা স্বামীকে অনুসরণ করলেন।
অখিলেশের সপ্তাহান্তিক যাতায়াত কমতে কমতে প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। কলকাতায় তিনি নিজেকে আরও বেশী বইপত্রের জগতে ডুবিয়ে দিলেন। বিগত সাত-আট মাসে বাড়ির পরিস্থিতির দ্রুত অবনতির কারণে আউসগ্রামের ক্ষেত্রমোহনবাবুদের প্রসঙ্গ একবারও উত্থাপিত হল না। ওদের মতামতও অখিলেশ জানতে পারলেন না। বিষয়টা ক্রমশঃ অন্তরালে চলে গেল।
দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। অন্ততঃ ছয়-সাত বছর তো বটেই। মায়ের মৃত্যুর কিছুদিন পর থেকেই অখিলেশ পুরোপুরি কলকাতাবাসী। মাচানডাঙায় আর আসা হয় নি। কোন পিছুটানও অনুভব করেন নি। দেশের বাড়ির সাথে,তাঁর আবাল্যের লালমাটির সাথে সম্পর্ক ক্রমশঃ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে হতে একসময় ইতিহাস হয়ে গেছে।
আশ্বিন মাসের রোদ ঝলমলে সকাল। অখিলেশ কব্জিতে বাঁধা ঘড়িটা দেখলেন। ট্রেন প্রায় চল্লিশ মিনিট দেরীতে দাশকলগ্রাম পৌঁছল। বাইরে রোদের তেজ প্রখর। স্টেশনে নেমে অখিলেশ কিছুটা হতাশ হলেন। এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও দাশকলগ্রাম স্টেশনের কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয় নি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অন্ততঃ কিছু পরিবর্তন যেখানে অবশ্যম্ভাবী,সেখানে এই স্টেশনটা যেন ব্যতিক্রম। দেখে মনে হয়,প্রাগৈতিহাসিক সময়ে পড়ে থাকার শপথ নিয়েই এর জন্ম ও পথচলা।
জামাইবাবু গাড়ি পাঠাবেন। এখনও আসে নি। অখিলেশ একটা পুরণো অশ্বত্থ গাছের ছায়ায় এসে দাঁড়ালেন। রহমত মিঞার কথা মনে পড়ছে। কেমন আছে রহমতভাই? দিদিকে বলেছিলেন ধানজমির কিছুটা রহমত মিঞাকে দিতে। দিদি দিয়েছিল কি? খবর নেওয়া হয় নি।
একটু আনমনা হয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ তাঁর পায়ে হাত দিয়ে কেউ প্রণাম করল। ঘটনার আকস্মিকতায় ক্ষণিকের জন্য অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। সামলাতে অবশ্য সময় লাগল না। চিনতে পারলেন। গতবছর ইউনিভার্সিটি থেকে দর্শনে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া একমাত্র ছাত্রী। কিন্তু এই মুহূর্তে নামটা মনে করতে পারছেন না। শিক্ষকের বিহ্বল অবস্থাটা ছাত্রী বুঝতে পারল। তাই নিজেই শিক্ষককে উদ্ধার করল,”আমাকে চিনতে পারলেন না স্যার? আমি পারমিতা চক্রবর্তী।”
-“হ্যাঁ,হ্যাঁ। এবার মনে পড়েছে। ফিলসফিতে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া ছাত্রীকে কখনও ভোলা যায়!”
-“কি যে বলেন স্যার! আপনি ওভাবে সাহায্য না করলে এরকম নাম্বার আসতো না।”
-“না না। তুমি যা করেছ,নিজের যোগ্যতাতেই করেছ। আমি তো অনুঘটকের কাজ করেছি মাত্র। যাক গে সে সব কথা। এখন কি করছ?”
-“কলকাতা আর দুর্গাপুরে দুটো কলেজে অ্যাপ্লাই করেছি। এখনও ইন্টারভিউ হয় নি।”
-“তোমার হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি এখানে কেন? কোথায় যাবে?”
-“আমি বীজপুর যাব স্যার।”
-“বীজপুর? ওই গ্রামের প্রায় সবাইকে আমি চিনি। তুমি কার বাড়ি যাবে?”
-“আমার জ্যাঠামশাইএর বাড়ি। শ্রীঅমিয়কুমার চক্রবর্তী আমার জ্যাঠামশাই।”
-“মানে আমাদের হেডস্যার? তুমি হেডস্যারের ভাইঝি? তোমাকে স্যারের বাড়িতে কখনও দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না!”
-“আমি আপনাকে দেখেছি। জ্যাঠামশাইএর কাছে মাঝে মাঝে ইংরাজী পড়তে আসতেন। আমার সাথেও কথা বলতেন। মনে নেই হয়ত,আপনি আমাকে ‘পরী’ বলে ডাকতেন। আপনি এলে কুয়ো থেকে ঠাণ্ডা জল এনে দিতে বলতেন।”
-“অথচ পরে তোমাকে আমি চিনতেই পারলাম না। আশ্চর্য ! তুমিও আমাকে একবারও মনে করাও নি।”
-“ইউনিভার্সিটিতে আপনি যেরকম গম্ভীর থাকেন স্যার,পড়ার বাইরে কিছু বলার সাহসই হয় নি কোনদিন।”
অখিলেশ আবার হাসলেন। তবে হাসিটা এবার নিঃশব্দ নয়। কিছুটা উচ্চকিত। বললেন,”বীজপুর যাবে কিভাবে? গরুরগাড়ি তো একটাও দেখছি না।”
-“আপনি মনে হয় অনেকদিন এদিকে আসেন নি। গরুরগাড়ি বছর কয়েক আগে উঠে গেছে। একটু এগিয়ে বাঁদিকের মোড়ে সাইকেল রিক্সা পাওয়া যায়। কিন্তু ওরা অতটা রাস্তা যায় না। ওদের পথ চড়কতলার আগে শেষ। চড়কতলাটা হেঁটে পেরিয়ে ওদিকে আবার রিক্সা পাওয়া যায়। ওরা বীজপুর পর্যন্ত যায়। আমি ওইভাবেই যাই স্যার।”
-“সে তুমি অন্যদিন যেও। আমাকে নিতে ওই যে গাড়িটা আসছে,ওটাতে আজকে তুমি আমার সাথে যাবে। আমি তোমাকে বীজপুরে নামিয়ে স্যারকে একটা প্রণাম করে বাড়ি যাব।
-“মনে পড়ে স্যার,আগেও একবার আমাদের পৌঁছে দিয়েছিলেন? আমার সাথে আমার বাবা আর দাদাও ছিলেন।”
-“তাই নাকি? কবে বলতো?”
-“হ্যাঁ স্যার। আমি যে বছর হায়ার সেকেন্ডারী পাশ করি,সে বছর এক শনিবার প্রবল বৃষ্টির দিনে আপনার জন্য আসা গরুরগাড়িতে আমাদের বীজপুরে পৌঁছে দিয়েছিলেন। সেদিনও আপনি পরীকে চিনতে পারেন নি।”
অখিলেশ কোন উত্তর দিলেন না। মনটা হঠাৎ বিষন্নতায় পূর্ণ হয়ে গেল। একটা দুর্যোগের দিন। আপাতদৃষ্টিতে প্রচুর বৃষ্টিপাতের একটা দিন। কিন্তু শুধুই কি বৃষ্টি,শুধুই কি দুর্যোগ? না কি কোন অশনিসংকেত? অখিলেশের বাবা,মা,দেশ, গ্রাম সবই তছনছ হয়ে গেছে পরপর ঘটে যাওয়া কয়েকটা ঘটনায়। এমন কি,তাঁর নিজের বিয়ের একটা সম্বন্ধও স্থির হয়ে কোন এক বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছে। এগুলো সবই যেন একসুত্রে গাঁথা।
অখিলেশ একসাথে বিস্মিত ও লজ্জিত। কি হচ্ছে আজ? কই,এতকাল তো তিনি এভাবে ভাবেন নি! তবে আজ এমন হচ্ছে কেন! এ কি কোন মানসিক আবেগের বহিঃপ্রকাশ না কি স্বাভাবিক চিন্তাধারা।
বৈঠকখানাতেই বসে ছিলেন শীর্ণকায় সত্তর ছুঁই ছুঁই এক বৃদ্ধ। মাঝে মধ্যে অল্প কাশছেন। হাতে তালপাতার একটা পাখা। এক একবার বাতাস খাচ্ছেন। বীজপুর হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্রীঅমিয়কুমার চক্রবর্তী পায়ের শব্দে মুখ তুলে তাকালেন।
স্যারের পায়ের ধুলো মাথায় নিয়ে অখিলেশ নিজের পরিচয় দিলেন। স্যার অখিলেশের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। কিন্তু ততক্ষণাৎ চিনতে পারলেন বলে মনে হল না।
কয়েক মুহূর্ত সময় লাগল। অখিলেশ লক্ষ্য করলেন,স্যারের মুখে লেগে থাকা হাসির আভা দ্রুত অন্তর্হিত হয়ে সেখানে সুস্পষ্ট বিষন্নতা ফুটে উঠছে। বললেন,”ও! অখিলেশ! বোসো বাবা বোসো। তা এতকাল পরে কোন ক্ষতে মলম দিতে এলে বাবা?”
আশীর্বাদের পরেই এরকম কঠিন বাক্যবানে অখিলেশ হোঁচট খেলেন। তিনি ভাবতে চেষ্টা করলেন,স্যার ঠিক কি বলতে চাইছেন। ক্ষত অথবা মলম-কথাদুটোর কোনটার সাথেই তিনি নিজের যোগসূত্র খুঁজে পেলেন না। তাহলে কি স্যার এখনও তাঁকে চিনতে পারেন নি? বললেন, “স্যার! আপনি হয়ত আমাকে চিনতে পারেন নি। আমি মাচানডাঙার অখিলেশ। সাতষট্টির ব্যাচ।”
-“হ্যাঁ বাবা,হ্যাঁ। এতবড় একটা কান্ডের পরেও তোমাকে না চেনার তো কোন কারন নেই।”
অখিলেশ দেখলেন,কাঁসার ছোট একটা রেকাবিতে দুটো লবঙ্গলতিকা ও কয়েকটা নারকেল নাড়ু সাজিয়ে নিয়ে মাসিমা এঘরে এলেন। অখিলেশ উঠে প্রণাম করলেন। মাসিমার মুখেও হাসি দেখা গেল না। পা দুটো খানিক সরিয়ে নিয়ে,বিরস বদনে বললেন,”থাক বাবা,থাক। আর প্রণাম করতে হবে না।”
রেকাবিটা যেভাবে অখিলেশের সামনে নামানো হল তাতেও ভালবাসার পরিবর্তে অনৈচ্ছিক লৌকিকতা বেশী প্রকাশ পেল। রেকাবিতে সাজিয়ে আনা সামগ্রীরা নিমেষে অগোছাল হয়ে মিশে গেল। পরী ঢাকা দেওয়া জলের গেলাসটা সাবধানে নামিয়ে রেকাবিটা সাজিয়ে দিল। তার জেঠিমা ততক্ষণে পর্দার আড়ালে অন্তর্হিতা হয়েছেন। ঘরে ঢোকা অবধি ঘটনা পরম্পরায় অখিলেশ হতচকিত। তাঁর অবস্থা প্রায় অথৈ জলে পড়ার মতো। তিনি কি এবাড়িতে অনাহুত? এমন আতান্তরে অখিলেশ অনেক দিন পড়েন নি। অবশেষে এ অবস্থা থেকে তাঁকে উদ্ধার করল তাঁরই ছাত্রী পারমিতা। অখিলেশকে কিছু না বলে নিজের জ্যাঠামশাইকে বলল,”জেঠু! ওঠো। অনেক বেলা হয়েছে। উঠোনে বাটিতে তেল আর বালতিতে জল রেখে এসেছি। তাড়াতাড়ি স্নানটা সেরে নাও। ওঠো, ওঠো।”
-“সেই ভাল। তুমি বোস বাবা অখিলেশ। আমি চানটা সেরে আসি।”
“আমি ততক্ষণ স্যারের সাথে কথা বলছি”,পরীর তৈরী জবাব।
কিছুক্ষণ পরে মাস্টারমশাই-এর বৈঠকখানা থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন অখিলেশ। সঙ্গে শুধু তাঁর ছাত্রী। এবার যেতে হবে।
যাওয়ার আগে অখিলেশ ঘুরে তাকালেন পরীর দিকে। বললেন,”তোমার সাথে যে ব্যবহারটা করা হয়েছে সেটা মধ্যযুগীয় বর্বরতা। অন্যায়টা আমার অজ্ঞাতে হলেও এর দায়ভার আমি অস্বীকার করতে পারি না। কারণ,আমিও ওবাড়ির অংশ। তাছাড়া,পরের সময়টাতে আমিও কম অপরাধ করিনি। বিষয়টা নিয়ে কোন খোঁজখবর না করে ক্রমশঃ বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যেতে দিয়েছি। আজ সব জেনে আমি নিজের কাছেও অপরাধী।”
পরী বাধা দিল,”ওভাবে বলবেন না স্যার। আমার কষ্ট হবে।”
-“না পরী,না। সত্য যত কঠোরই হোক,তবু সে সত্য। তাকে অস্বীকার করি কিভাবে?”
একটু থেমে আবার বললেন,”এই মানুষটাকে একটু সময় দাও পরী!”
পথে নেমে হাঁটতে লাগলেন অখিলেশ। পিছনে পড়ে রইল একদৃষ্টে চেয়ে থাকা অশ্রুসজল দুটো চোখ। গাড়িটা ছেড়ে দিলেন। অখিলেশের হাঁটার ভঙ্গিটা ঠিক নুয়ে পড়া নয়। আবার ততটা দৃপ্তও নয়। স্পষ্টতই বিড়ম্বিত,কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
প্রখর রোদে হাঁটছেন অখিলেশ। সর্বাঙ্গ ঘামে ভেজা। কিন্তু কোন হেলদোল নেই। হাঁটতে হাঁটতে ক্রমশঃ শিরদাঁড়া টানটান হয়ে এল। ঝুলে পড়া চোয়াল আবার শক্ত হয়ে উঠল। কর্তব্য স্থির করে ফেলেছেন অখিলেশ। ফিরবেন সুনির্দিষ্ট সেই কক্ষপথে,ঘটনাচক্রে যা থেকে বিচ্যুত হয়েছিলেন একদিন।
অখিলেশ মাচানডাঙার পথ এড়িয়ে চড়কতলা পেরিয়ে সোজা দাশকলগ্রাম স্টেশনে প্রবেশ করলেন। শরীরে পথশ্রমের ক্লান্তি, কিন্তু মনে গভীর প্রশান্তির ছায়া।
সত্যনিষ্ঠ দার্শনিক সত্যভ্রষ্ট হতে পারেন না।
– শেষ –
***************************************************
চন্দ্রকান্তি দত্ত পরিচিতিঃ
ভারতীয় জীবন বীমা নিগমের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। জন্ম মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনা শহরে ১৯৫৯ সালে। স্কুল শিক্ষার শুরুটা পুরুলিয়ায় হলেও, প্রায় পুরোটাই হয়েছে দুর্গাপুরে। উচ্চ শিক্ষাও সেখানেই। নিজেকে লেখক না বলে গল্পকার বলতেই বেশী ভালবাসেন। লেখার শুরু গত শতকের নয়ের দশকের শেষ দিকে, তাও একজন সিনিয়র সহকর্মীর উৎসাহ ও চাপে। সেই থেকে টুকটাক লিখলেও, শারীরিক অসুস্হতার কারণে লেখাতে ছেদ পড়েছে অনেকবার। এখন, চাকরী থেকে অবসরের পরে, প্রায় নিয়মিত লেখেন। গল্প ছাড়াও কয়েকটি কবিতাও লিখেছেন-বাংলা ও হিন্দিতে।
বেশ ভালো লেখা হয়েছে। যত গল্প এগিয়েছে, ততই বাঁধন জোরালো হয়েছে। শেষটুকু ভারি সুন্দর ভাবে শেষ করেছেন। এগিয়ে চলুন।
চঞ্চলদা।
Pore khub bhalo laglo go.. Suru theke ses porjonto ekta sundar chobi.. R o golpoer opekkai thaklam sejomama.
গল্পের বাঁধুনি টা গল্প টা কে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলতে খুবই সাহায্য করেছে। পড়তে পড়তে কখন যে যবনিকাপাত ঘটলো বোঝা গেলো না।