মনোরম মিজোরাম
পরাগ ভূষণ ঘোষ
একমাত্র জামাতার বদলির আদেশ গুয়াহাটি থেকে আইজল হওয়ায় মনে বেশ খুশীই হয়েছিলাম। যাক এবার তাহলে নর্থ ইস্টের সেই রাজ্যটি সম্পর্কে অনেক না জানা কথা জানতে পারবো। সে তার বদলির আদেশ মান্য করে আইজল চলে গিয়েছে আগেই। বাড়ি ভাড়া করে সংসার মোটামুটি গুছিয়ে রেখেছে, এই সংবাদ পাওয়ার পর মেয়েকে পৌঁছে দিতে এক সকালের এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে নেতাজি সুভাষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চড়ে বসি। আমাদের ফ্লাইটটি সরাসরি দমদম থেকে লেংপুই (আইজল)। মাঝে মাঝে আগের দিনের একই সময়ে সেই উড়ানটি আবার ভায়া হয়ে উড়ে যায় (ভায়া ইম্ফল বা গুয়াহাটি)।
আইজল বিমানবন্দরটির নাম “লেংপুই এয়ার পোর্ট”। অসামান্য সুন্দর বললেও কম বলা হয়। ছোট্ট ছিমছাম বিমানবন্দরটিকে চারদিকে ঘিরে আছে পাহাড়। টেবিলটপ রানওয়ের পিছনে পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য্য সকলের নজর কেড়ে নিতে বাধ্য। প্রথম দর্শনেই আমি এই বিমানবন্দরের প্রেমে পড়ে গেলাম। এই ভালবাসা আরও গভীর হতে লাগলো যখন বাইরে বেরিয়ে অপেক্ষারত চার চাকার বাহনে চড়ে বসি। দুপাশের নয়নাভিরাম মনভোলানো চিত্রপট মনের গভীরে আঁকা হতে থাকে। চালক নিজেই গাড়ির মালিক। তার আরও তিন চারটে গাড়ি আছে। যে সুইফট ডিজায়ারে আমরা চলেছি সেটি একেবারেই নতুন। ঝাঁ চকচকে রাস্তায় মসৃণভাবে এগিয়ে চললো আমাদের গাড়ি। কথার মাধ্যমে আস্তে আস্তে চালক বা মালিকের সঙ্গে পরিচিত হলাম। নাম হানিফ।
এ রকম মিশুকে মানুষ পাওয়া দুর্লভ। আদতে সে অসমের শিলচরের বাঙ্গালী বাসিন্দা। বর্তমানে দীর্ঘদিন মিজোরামে আছে। মিজো ভাষা এমনিতেই দুর্বোধ্য। দক্ষিণের ভাষাও শুনেছি, প্রাথমিক সমস্যা কাটিয়ে ভাষা বিনিময়ে আর কোনও বাধা হয় নি। কিন্তু এই মিজোবাসীরা ইংরেজি জানলেও বলবে না। ওদের ভাষাতেই কথা বলার চেষ্টা করবে। ফলে ভাষাগত একটা সমস্যা থেকেই যায়। সেই দিক দিয়ে আমি সত্যিই ভাগ্যবান। হানিফ অনর্গলভাবে ছটি ভাষায় কথা বলতে পারে, পড়তে পারে, লিখতেও পারে। বাংলা,অসমীয়া,হিন্দি,মিজো,ইংরেজি ও নেপালি।
আমি যে ঠিকানায় যাচ্ছি সেটি আইজলের একটি মুখ্য স্থান “ট্রেজারী মোড়” এর কাছেই। লেংপুই থেকে পয়ত্রিশ কিমি দূরে। মোটামুটি ঘণ্টা দেড়েক লাগে গাড়িতে। গল্প করতে করতে কিভাবে যে সময় পেরিয়ে গেল টেরই পেলাম না। প্রথম দেখায় ভালোবেসে ছিলাম বিমানবন্দরকে। এবার আইজল শহর দেখে আমি বাকরোহিত হলাম। ভাষা হারিয়ে ফেললাম। একটি আধুনিক শহরের সকল সুবিধা নিয়ে মন,আত্মা,হৃদয়কে প্রশান্তি দেওয়ার জন্য আইজল শহর হাতছানি দিয়ে ডাকছে যেন,চিত্রকরের তুলির টানে তার শোভা ঠিকরে বের হচ্ছে। আইজল শহরে নেই এর তালিকা দীর্ঘ। কিন্তু আছের তালিকা এই নেই এর তালিকাকে বহু ক্রোশ পিছনে ফেলে দিয়েছে।
মনে রাখতে হবে মিজোরামে প্রবেশ করতে হলে ILP (INNER LINE PERMIT) প্রয়োজন,কলকাতার মিজোরাম অফিস থেকে পাওয়া যায় বা বিমানবন্দরে নেমেও করা যায়। আমি দ্বিতীয়টি পছন্দ করি। কারণ দ্বিতীয়টি আমার কাছে অনেক সরল মনে হয়েছে। যতবার গিয়েছি বিমানবন্দরে নেমে মিজো সরকারের কাউন্টার থেকেই ILP করেছি। অনুমতি মেলে সাত দিনের জন্য। তিনশ টাকার বিনিময়ে একটি ফর্ম পাওয়া যায়। সেটি পূরণ করে আধার কার্ডের ফটোকপি জুড়ে দিলেই সাত দিনের অনুমতিপত্র হস্তাগত। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তাক্ষরের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। যিনি ফর্ম দেবেন,তিনিই জমা নেবেন আবার তিনিই অনুমতিপত্রে চূড়ান্ত হস্তাক্ষরটি দেবেন। ILP পাওয়ার সহজতম পন্থা এটাই। (তবে কোভিড পরিস্থিতিতে আরও কিছু অনুমতি প্রয়োজন অনলাইনে। সারা দেশ যখন কোভিড বিধিনিষেধের শৃঙ্খলে আবদ্ধ সেই পরিস্থিতিতেও এই লেখক গিয়েছে সেই ভালোলাগা রাজ্যে)। অনুমতিপত্র সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ান নিশ্চিন্তে। ভিন রাজ্যের সাধারণ কিছু মানুষের জন্য এই ILP র দরকার নেই। অর্থাৎ উনারা সরাসরি মিজোরামে প্রবেশ করতে পারেন,ঘুরে বেড়াতে পারেন,যতদিন ইচ্ছে থাকতে পারেন। এরা হলেন-কেন্দ্রীয় সরকার বা মিজোরাম রাজ্য সরকারের কোনও কর্মী (যে কোনও গ্রেড),তার Spouse,তার মা,(যতটুকু জেনেছি বাবার ছাড় নেই),এগুলো সাধারণের জন্য। ভি.আই.পি দের সর্বত্র ছাড়। ফলে প্রথম যাত্রায় শুধু আমার ILP সংগ্রহ করতে হয়েছিল। তনয়ার যেটি নিষ্প্রয়োজন।
শহরটির মতো এতো নি:শব্দ,চুপচাপ,নিঝুম শহর যে হতে পারে সেটা আমার কল্পনাতীত। সকলেই শৃঙ্খলাপরায়ণ ও অবশ্যই নিয়মানুবর্তি। আমি এতোবার গিয়েছি,কিন্তু মনে করতে পারছি না রাস্তায় বা ট্রাফিক মোড়ে কোনও চারচাকা বা দুচাকা গাড়ির হর্ন শুনেছি। শব্দ দূষণ কি এরা জানে না। পাহাড়ের কোলে এতো অপূর্ব রাজধানী শহর ভারতের কোথাও আছে কিনা সেটাও অজানা। আর অবশ্যই বিভিন্ন নামী দামী কোম্পানীর দ্বিচক্রযানের সমারোহ। শহরের চড়াই উৎরাই সম্বলিত রাস্তায় এই দ্বিচক্রযানের ছুটোছুটি নজর কাড়ার মতো। স্কুটি,বাইকের বিনা হর্নে আঁকাবাঁকা রাস্তায় অত্যন্ত দ্রুতগতির চলাচল আমাদের মতো যারা জনমুখর রাস্তায় অভ্যস্ত তাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় উর্দ্ধগতিতে ধাবমান সকল যানবাহনের মধ্যে একে ডিঙিয়ে,তাকে ওভারটেক করে প্রথম হওয়ার প্রবণতা এদের নেই। সবাই ছুটছে,বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায়।
মিজোরাম নারী কেন্দ্রিক রাজ্য। নারীদের প্রাধান্য সর্বাগ্রে। শতকরা নব্বই শতাংশ দোকান বা ছোট,বড়,মাঝারী ব্যবসা মহিলা পরিচালিত। তুলনামূলকভাবে পুরুষেরা যতটা ইনডোর সার্ভিসে পারদর্শী,ঘরের বাইরে ততটাই কর্মবিমুখ। বাস্তবিকভাবে এটা সত্যি,কোনও কল কারখানা বা অন্যান্য কর্মসংস্থান নেই এই রাজ্যে। কৃষিকাজ উপযোগী জমি যেহেতু পাহাড়ী অঞ্চলে অপ্রতুল,ফলে চাষবাস নেই। তবে ইদানিং পাহাড়ের জঙ্গল পুড়িয়ে ফাঁকা জমিতে ঝুম পদ্ধতিতে আদা,কলা ইত্যাদি চাষ হচ্ছে। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল বাঁশ উৎপাদনে অগ্রণীর ভূমিকা নিয়েছে,এটা সকলেরই জানা। যদিও অসম এব্যাপারে সর্বাগ্রে,তবু মিজোরাম রাজ্যের ভৌগলিক এলাকার শতকরা ৫৭ থেকে ৬০ শতাংশ জুড়ে আছে বাঁশ,যেটা এই রাজ্যের অর্থনৈতিক কাঠামোকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রিত করে। গ্রামের মহিলাদের বাঁশ নির্মিত হস্তশিল্প নজর কেড়ে নেয়। এদের খাদ্যাভাসেও বাঁশ লক্ষ্য করা যায়। আমরা যে পদ্ধতিতে কলা গাছের ভিতরের অংশকে (যাকে অনেকে থোড় বলেন) খাবার রূপে গ্রহণ করেছি,মিজোবাসীরাও তেমনিই কচি বাঁশের অংশকে সেই ভাবেই বরণ করেছে। এ ছাড়াও ওদের দৈনন্দিন আহারের সময় নির্ঘন্ট একটু বৈচিত্র্যময়,ব্রেকফাস্ট বা জলখাবার বলে কিছু নেই। সকালেই লাঞ্চ। সারাদিন টুকটাক চলতেই থাকে। দিবাকর অস্তমিত হওয়ার পর পরই ডিনার। বিভিন্ন হোটেল,লজ বা কটেজে রাত্রিবাস করেও একই রকম রুটিন লক্ষ্য করেছি। রিশেপসানে বোর্ড ঝুলতে দেখেছি যাতে স্পষ্টাক্ষরে মিজো ও ইংরেজিতে লেখা লাঞ্চ ও ডিনারের সময়টুকু ৷
ভ্রমণের বিবরণে যাওয়ার আগে আর একটি কথা না বললে ফাঁক থেকে যাবে ৷ সন্ধ্যের পর সব বাড়ির সমস্ত বৈদ্যুতিক আলো জ্বালানো হয়,যেগুলো সারারাত অন থাকে। রাতে অবশ্য বেডরুমের আলো জ্বলে কিনা দেখার অবকাশ হয় নি। কিন্তু বাড়ির বাইরের দিকের আলো,যেমন ব্যালকনি,বাউন্ডারি প্রাচীর, বাইরের বারান্দা,লন এই সকল আলো জ্বালিয়ে ওরা রাত্রিযাপন করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল মিজোরা ভূতে হয়ত বিশ্বাস করে না,তবে ওরা “ডেভিল”এর ভয়ে সব বাতি জ্বালিয়ে রাখে।
ভারতের উত্তর পূর্বের একটি ছোটো অঙ্গরাজ্য “মিজোরাম”। ১৯৭২ এর আগে এটি আসামের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ১৯৭২ এ কেন্দ্রশাসিত হয়। পরে ১৯৮৭ র ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের সংবিধানের ৫৩তম সংশোধনের ফলে ২৩ তম রাজ্য হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর পূর্ব ও দক্ষিণে মায়ানমার (পূর্বতন বার্মা),পশ্চিমে বাংলাদেশ, উত্তর-পূর্বে ত্রিপুরা,উত্তরে আসাম,উত্তর-পশ্চিমে মণিপুর। জনসংখ্যা ১১-১২ লাখ। গড় উচ্চতা আনু ৩৫০০ ফুট। শিক্ষার হার ৯৮%। শতকরা ৮0 শতাংশের অধিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। চার্চের উপদেশ ও আদেশ অনুযায়ী এই রাজ্য তথা রাজ্যবাসী সমস্ত গঠনমূলক, সামাজিক,অর্থনৈতিক কাজ করে। দেশের বা রাজ্যের সাধারণ নির্বাচনেও গির্জার প্রভাব প্রকট।
আইজল থেকে ৫০ কিমি দক্ষিণে মুইফাঙ্গ (HMUIFUNG),অসাধারণ এক নৈসর্গিক পট। যেন শিল্পীর তুলির ছোঁয়ায় অপরূপা হাতছানি দিচ্ছে। নিশ্চুপ,শুধু পাখির কলতান,দুপুরে পৌঁছেও অনুভব করি পাখিরা আহ্বান করছে। উচ্চতা প্রায় ৫৫০০ ফুট। আমাদের গাড়ির চালক হানিফ ভাই এর পরিচয় আগেই দিয়েছি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের তিন তারিখ সকাল ৯ টা নাগাদ তার সুইফট ডিজায়ার নিয়ে হাজির। মুইফাঙ্গ এ আগে থেকেই কটেজ বুক করা ছিল। বহু হিল স্টেশন,টুরিস্ট স্পট প্রত্যক্ষ করেছি অতীতে,কিন্তু বলতে কুন্ঠিত হব না যে এতো সুন্দর জায়গা আমি আর দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না। বিরাট এলাকা জুড়ে কটেজগুলো ছাড়িয়ে রয়েছে। একটির সঙ্গে অপরটির দূরত্ব দেড়শ থেকে তিনশ ফিট। ফরেস্টের কোলে,এই ধরনের অপরূপ সৌন্দর্য্যময় কটেজে রাত কাটিয়েছি মিজোরামের আর এক স্পট রেইক এ (Reiek) ২০১৯ এর এপ্রিলে,সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। যে মূল রাস্তা বরাবর আমরা মুইফাঙ্গ পৌঁছলাম,তার বাঁদিকে উঁচু টিলার মতো অনেকটা জায়গায় ছবির মতো সাজানো সবুজের গালিচা দেখে মন ভরে গেল। হানিফ বললো,“আমরা এসে গেছি মুইফাঙ্গ। এই উঁচু মাঠের মতো জায়গাটার পিছনেই পরপর কটেজ। কোনও টুরিস্ট তো আসেই না। এরাও আরামেই দিন কাটায়। সরকারি কটেজের জন্য অনুদান পায়। টাকাগুলো কোথায় যায় কে জানে! বসে বসে মাইনে পাচ্ছে ৷” মিজোরাম সরকারের ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টের এইসব কটেজ বা বনবাংলো পর্যটকবিহীন অবস্থায় পরে আছে।
হানিফ একেবারে নির্ভেজাল সত্যি কথাটাই বলেছে সেটা আগেও মালুম হয়েছিল মিজোরামে এসে,এখন নিশ্চিত হওয়া গেল। রিশেপশন কাউন্টার ও বনবাংলোগুলো দেখে চরম তৃপ্তি পেলাম। এতো পরিষ্কার,ঝাঁ চকচকে। কিন্তু শ্মশানের নীরবতা। কোনও পর্যটক নেই। ওদেরও কোনও আগ্রহ নেই। অথচ পর্যটক আকর্ষণ করার সমস্ত উপকরণ নিয়ে বসে আছে। সারদিনই এতো নিস্তব্ধতা যে আমাদের শ্রবনেন্দ্রীয়র পক্ষে পীড়াদায়ক।
রাতে মুইফাঙ্গ এ তাপমাত্রা ৩-৫ ডিগ্রি । কনকনে ঠান্ডা। আমি আর হানিফ এক ঘরে। ঘরে আধুনিক জীবনের বিলাসিতার সমস্ত জিনিসই নজরে পড়ে। এখানে বলা দরকার যে মিজোরাম DRY STATE,অ্যালকোহল পছন্দকারীরা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
মুইফাঙ্গ থেকে আরো ৩৫ কিমি। দক্ষিণে থেনজল (THENJAWL),চব্বিশ ঘণ্টা মুইফাঙ্গ এ কাটিয়ে এই স্থানে এসে প্রথমেই মনে হলো সাহিত্য সম্রাটের ভাষায় “আহা! কি দেখিলাম জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না”।
প্রকৃতি উদারহস্তে রূপ ঢেলে দিয়েছেন। স্বর্গ কি জানি না,তবে নৈসর্গিক বোধ হয় একেই বলে। একটি Sunset point আছে,নাম শিয়ালসুক (SIELSUK)। ভানুবাবু প্রাত্যহিক কাজকর্ম শেষ করে বিশ্রামে চলার পথে অস্তাচলে যে মনোহর দৃশ্য আমাদের জন্য উপহার দিয়েছেন,সেটা আমার সারা জীবনের সুখসঙ্গী হয়ে থাকলো। শব্দসংখ্যার বেড়াজালে আটকে যাওয়ায় রেইক ও টামডিল লেকের বিবরণ উহ্য রাখতে হলো। পরবর্তীর জন্য তোলা থাক।
শেষে একটি কথা বলতেই হচ্ছে মিজোরামের পাহাড়,জঙ্গল,ফরেস্ট এখনো তাদের শুদ্ধতা,শুচিতা,ধরে রাখার একমাত্র কারণ বহিরাগত লোক সমাগম প্রায় নেই। আমি নিশ্চিত,এই রূপের খনি যদি অন্য রাজ্যে পাওয়া যেত তাহলে বলিউড তাদের ক্যামেরা,তল্পিতল্পাসহ হাজির হতো। হয়ত কথায় কথায় সুইজারল্যান্ড যেতে হতো না ৷
সঙ্গে অবশ্যই শীত বস্ত্র নেবেন। শীতকালে ভারী শীতপোশাক,এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর হালকা শীতবস্ত্র। যতটা সম্ভব প্রয়োজনীয় ঔষধ সঙ্গে নিয়ে যাবেন। যেহেতু মায়ানমার কাছেই,সে কারণে জাল ঔষধের রমরমা কারবার ঐ চত্বরে। খাওয়া দাওয়ার একটু সমস্যা হতে পারে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা বর্তমানে ভালো,তবে চিরাচরিত পথটিও জানালাম। তেমন ভালো নয়। ট্রেনে কলকাতা থেকে গুয়াহাটি। তারপর আঠারো ঘণ্টা থেকে বাইশ ঘণ্টা বাস জার্নি। বাসের টিকিট সর্বদা অনলাইনে। লেংপুই এয়ারপোর্ট ভারতের সুন্দরতম বিমানবন্দর যেটি তার বাণিজ্যিক কাজ শুরু করে কুড়ি বাইশ বছর আগে। সরাসরি বিমান এই দুর্গম স্থানকে নিকট করেছে।
**************************************************
পরাগ ভূষণ ঘোষ পরিচিতিঃ
পরাগবাবুর জন্ম দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি শহরে ৷ এরপর পিতার চাকুরীক্ষেত্রে বদলির সূত্র ধরে প্রথমে নকশালবাড়ি ও পরে মুর্শিদাবাদে আসা এবং বসবাস ৷ শৈশব থেকে পরিবারের সাহিত্য পরিমণ্ডল তাঁকে সাহিত্যের প্রতি করেছে আগ্রহান্বিত ৷ পরিবারে লেখার ঐতিহ্য বহুদিন ধরেই যা বর্তমান প্রজন্ম পর্যন্ত অব্যাহত।
অসাধারন সুন্দর একটা ভ্রমনকাহিনি আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য লেখক পরাগবাবু কে ধন্যবাদ।কুলায় ফেরা টীম এর কাছে আরো এইরকম লেখা পাওয়ার আশায় থাকলাম।