জীবনধারা
শুভজিৎ বসু
পুত্র হরেকৃষ্ণকে নিয়ে ওর মা পঞ্চাশ সালে সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিম দিনাজপুরের হিলি থেকে পঁচিশ কিলোমিটার দূরের এক অখ্যাত গ্রামে বসবাস শুরু করেন। দেশভাগের আগে থেকেই ওদের বেশিরভাগ জমি এদিকে ছিল। যার ফলে বসতবাড়ি ও সামান্য জমি ত্যাগ করে ওদের এখানে আসতে হয়,সব হারিয়ে নয়। মাটির দেওয়ালের দুটি ঘর,মাথায় টিন। বাবা এই মর্মান্তিক দেশভাগের অনেক আগেই মারা যান। এখানে মোট পাঁচ বিঘে জমিই হল ওদের উদরপূর্তির উৎস। মার পক্ষে সব গৃহস্থালি কাজ করা খুব কষ্টকর হওয়ায় বাড়িতে বৌ আনার কথা ভাবনাতে আসে। খুঁজে পেতে হরেকৃষ্ণকে পাশের পাড়ার মেয়ে সবিতার সঙ্গে মা বিয়ে দেন। দুজনের কেউই পড়াশুনা বেশিদূর করে নি। সবিতার কোন ব্যাপারেই রা নেই। বাড়ির যত কাজই থাক না কেন সবিতা নিজের হাতে আনন্দের সাথেই তা করে ।
দুঃখ কষ্ট নিত্যসঙ্গী হলেও তারা তিনজনে মানিয়ে নিয়ে দিনাতিপাত করে। ওদের এক কন্যা হয় আটান্ন সালে। সবাই বলত নাকি ওই বয়সেই রূপ উপচে পড়ছে। নাম রাখে রূপসী। বছর তিনেক পরে দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেয়। পুত্র সন্তান। নাম দেয় রবি। গ্রামের গরীব বাড়িতে এই পুত্র সন্তান তখন ছিল এক অভাবনীয় উপহার। বাষট্টি সালের চীন ভারত যুদ্ধের সময় হরেকৃষ্ণর মা কালাজ্বরে মারা যান। এক অপূরণীয় ক্ষতি হয় তাদের। মাথার উপর যে একটা বড় ছাতা ছিল তাও সরে গেল। এবার কষ্টটা তীব্র হল। দুটি বাচ্চা কে নিয়ে সবিতা জেরবার হয়ে যাচ্ছে। স্বামীকেও তো দেখতে হয়। দুটি বলদ,তাদের জন্য বিচালি কাটা,ঘাস সংগ্রহ করা এ রকম হাজার রকমের কাজ করতে হয়। ষাটের দশকের বীভৎস খাদ্যের আকাল,তারপর চৌষট্টিতে পাকিস্তান থেকে লাখ লাখ শরণার্থীর আগমনে দেশ ও মানুষ দিশেহারা। হরেকৃষ্ণ নিজের জমির কাজ ছাড়াও চারটে পেটের অন্নের সংস্থা করতে অন্য কাজও করত। এক ফসলি জমি। খরা বন্যা না হলে ভাতের সংস্থানটা হয়ে যায়। ধান উঠলে ডাল,সরষে,তিল জমিতে ছিটিয়ে দিয়ে ডাল ও তেলের ব্যবস্থা হয়ে যেত। সবিতা বাপের বাড়ি কিছুটা সচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনে এটা ওটা সাহায্য পেত।
মেয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। পড়াশুনা সেভাবে হয় না। সময়টাই তো নেই। মার পরিশ্রম লাঘব করার জন্যে ঘরের অনেক কাজ এই বয়সেই করতে হয়। ভাই ছোট। তাকেও দেখতে হয়। শুধু দেখা কেন,খুনসুটি করা তো লেগেই রয়েছে। এটা আছে বলেই হয়ত জীবনটা এগিয়ে যাচ্ছে । ভালোবাসা,স্নেহ,টান এগুলো তো এমনি এমনি আসে না,ছোটখাট ঝগড়া,খুনসুটি এগুলো তো উপাদান। এমনিতে কাঁচা রাস্তা,তদুপরি বৃষ্টি এলে এত কাদা হয় যে চলাচলের যথেষ্ট অনুপযুক্ত হয়। জীবন তাতে কিন্তু থেমে থাকে না। দেহ,মন উপায় না পেয়ে ওই অবস্থার সাথে আপোষ করে নেয়। হেমন্তের শেষে দেখা যায় ধান বোঝাই করা গরুর গাড়ির সারি সারি চলন। ধুলোয় ধুসরিত পথে ছোট্ট রবি দৌড়তে দৌড়তে গরুর গাড়ির পিছনে ঝুলতে থাকে। দিদি গিয়ে সামাল দিলেও কৈশোরের উন্মাদনা থেকে ওই বা বঞ্চিত হবে কেন? তাই একটু ঝুলে পড়ে নিজেও মজা করতে চায়। গাড়োয়ান চিৎকার করলে ভাইবোন দৌড়ে পালায়। কিশোর,তরুণরা যা করতে পারে,কিশোরী বা তরুণীর তা করাতে সমাজে রয়েছে মানুষের তৈরি অনেক বাধানিষেধ। স্বতঃস্ফূর্ততায় সে বাধা অনেক সময় লঙ্ঘিত হয়, যেমনটি এখানে হল। ভাই বোন ধুলোমেখে ঘরে ফিরলে যা হওয়ার তাই হল। দিদি মেয়ে বলে তার গালমন্দ বেশি হজম করতে হল। দুজনের তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই।
তাদের প্রিয় মামার আসার কথা। এসেও গেল। মামার হাতে,কাঁধে,মাথায় সর্বত্র দুজনের অবাধ বিচরণে মামা বেচারা দিশেহারা। আবার আনন্দও পাচ্ছে বৈকি। ভাগ্নে, ভাগ্নীর জন্যে কী সুন্দরই না জামা,প্যান্ট আর ফ্রক মামা নিয়ে এসেছে। আনন্দ একেবারে মাথায় উঠেছে। মামা আসায় মা হরেকৃষ্ণকে বলে রুইমাছ,এঁচোড়,দুধ আরো কিছু বাজার থেকে আনিয়েছে । সবিতা তার দাদার জন্যে লাল পায়েস বানিয়েছে। মামা খুব ভালবাসে। মহা আনন্দে দুপুরের ভোজ। খেতে বসে মামা তার বোনকে বলে,“আমি ওদের দুজনকে কয়েক দিনের জন্যে আমার ওখানে নিয়ে গেলে তোদের কী কোন অসুবিধা হবে?”কথা শেষ হতে না হতেই দুজন খাওয়া ছেড়ে লাফিয়ে ওঠে। এতে কে আপত্তি করবে?
মামা বাড়িতে যাবার পর ওদের একদিন ওখানকার বড় শহর হিলিতে নিয়ে যায়। ‘পথের পাঁচালী’ ছবিটা এক সিনেমা হলে চলছে। ওদের দেখাতে নিয়ে যায়। সিনেমা যে কি এই জ্ঞানটাই এদের নেই। কাশফুল এরা দেখেছে,কিন্তু কয়লায় ইঞ্জিনে চালানো রেলগাড়ি সে তো ওদের কাছে এক বিরাট আশ্চর্য। ‘কু ঝিক ঝিক‘ করে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে রেলগাড়ি চলে আর আস্তে আস্তে কোথায় মিলিয়ে যায়। জীবনের মতো। অপার বিস্ময় চোখে লেগে রইল। ঘোর কাটল। ঠাণ্ডা লেগে দিদি দুর্গা মারা যেতে ভাই অপুর তীব্র মনোবেদনায় রবি রূপসীকে ‘দিদি দিদি‘ বলে জাপটে ধরে। ছাড়তে চায় না। দুজনেই মূক আপাতত। ‘ভাই ছাড়, লাগছে‘ বলায় রবির সম্বিত ফেরে।
গাঁয়ে ফিরতেই বাবা ওকে দিদির স্কুলের নার্সারি শ্রেণীতে ভর্তি করে দেয়। একসঙ্গে ওরা দুজন যায়। দিদির ক্লাস পরে শেষ হওয়াতে ভাই আরো কয়েকজনের সাথে মাঠে খেলে। শেষে একসাথে ফেরে। প্রতিদিন যাওয়া আসায় দশ কিলোমিটার পথ ওদের হাঁটতে হয়। তারপর মাঝেমধ্যেই বাবাকে দুপুরের খাবার দূরের মাঠে পৌঁছে দিতে হয়। দিদির ক্লাস শেষ হওয়াতে বাইরে বেরিয়ে দেখে ভাই অঝোরে কাঁদছে। ভাইয়ের চটি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খুঁজেও না পাওয়ায়,আর ভাইয়ের কান্না থামানোর জন্যে অন্যের এক চটি ভাইকে পরিয়ে নিয়ে বাড়ি ফেরে। এক রকম চুরিই হল। প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরে দিদি বাবার বকুনি খায় আর পরের দিন চটি ফিরিয়ে দিয়ে আসে। জানিনা অন্যায় প্রশমিত হল কিনা। তীব্র ভালোবাসা ও আবেগের টানে ছোট্ট ছেলেমেয়েরা এ রকম করে ফেলে। উপরন্তু অতশত সহবত গাঁয়ের দুস্থ ছেলেমেয়েদের আসে না।
সন্ধ্যাবেলায় বাবা দাওয়ায় বসে সবিতার তামাক সেজে দেওয়া কল্কেতে টান দিচ্ছে আর চোখটা অপার নেশায় ছোট হয়ে আসছে। এটুকুই নেশা বলতে। এই অজ গাঁয়ে কী বিজলী থাকে? থাকে না। থাকলেও এদের পয়সায় কুলোতো না। হ্যারিকেনের দু প্রান্তে বসে দু ভাই বোন বই পড়ছে। দিদি বলে,অত জোরে পড়িস কেন,আমার অসুবিধা হচ্ছে।‘ ভাই প্রত্যুত্তরে বলে ‘তুইও তো পড়ছিস।‘ কথা কাটাকাটি। প্রকৃতিতে পুরুষের অহংবোধ হয়ত বেশি। দিদির চুল ধরে হিড় হিড় করে টেনে দু তিনটে ঘা বসিয়ে দেয়। দিদি কাঁদতে শুরু করে। বাবা হরেকৃষ্ণ ঘটনা সব দেখে। আদরের মেয়ের কান্না শুনে স্থির থাকতে না পেরে রবিকে বাবা উত্তম মধ্যম প্রহার করে। ঘটনার আকস্মিকতায় দিদি ভয়ে জড়সড়। ভাবে,না কাঁদলে ভালো হত,তাহলে ভাই মার খেত না। এই হল দিদি। ভারতীয় গ্রাম্য সমাজের এই অভিব্যক্তিই সব সময় অনুরণিত হয়। মা রান্না ঘর থেকে ছুটে এসে ঠেকায়। বাবা পরে কষ্টে ছেলের দিকে তাকাতে পারে না। ঘটনার সমাপ্তি হল বটে কিন্তু ভাই বোনের কথা বন্ধ। রাত আটটায় না খেয়ে শুয়ে পড়েছে। সারা রাত দুজনে ঘুমোতে পারে নি। সকালে উঠে এ ওর দিকে আর ও এর দিকে আড় চোখে তাকায়। কথা হয় না। লজ্জায় বা অভিমানে কেউ আগে কথা বলতে পারছে না। মাটির ঘর, তদুপরি চারপাশে আগাছা। ভাই মেঝেতে বসে। দিদি দেখে এক কাঁকড়া বিছে ল্যাজ খাঁড়া করে ভাইয়ের পিঠে উঠছে। মারাত্মক বিষাক্ত। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে মুহূর্তের মধ্যে দিদি লাফ দিয়ে এসে হাতের এক ঝাপটায় বিছেকে দূরে ফেলে দেয় আর তাল সামলাতে না পেরে ভাইয়ের ঘাড়ের ওপর পড়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় ভাই হতভম্ব। আবার ওদের কথা শুরু হয়।
দেখতে দেখতে ওরা বড় হয়ে চলেছে। দিদির এগারো পেরিয়ে গেল বলে। বাড়ির ছাগল খুঁজতে নদীর পারে দুজনেই এসেছে। ভাই এখন হাতে গুলতি রাখে। দিদি বা ও নিজে বিপদে পড়লে ওটাই হয়ত রক্ষা করবে। এক নৌকা ঘাটে বাঁধা। লোকজন কেউ নেই। দুজনেই মজা করতে নৌকায় ওঠে। জল টলটল করে বইছে। রবি এখনও সাঁতার শেখে নি। তাই রূপসী ওকে নৌকার ধারে যেতে না করে। ভাই থোড়াই কেয়ার করে। হাত দিয়ে নদীর জল ছুঁচ্ছে । নৌকার দোলানিতে ভাই অকস্মাৎ জলে পড়ে যায় । সাঁতার জানে না। স্রোতে হাবুডুবু খেতে খেতে ভেসে যাচ্ছে। সর্বনাশ, মৃত্যু সুনিশ্চিত। ঠাকুরকে ডেকে ‘ভাই‘ বলে উচ্চস্বরে চিৎকার করে দিদি জলে লাফিয়ে পড়ে। “রাখে হরি মারে কে?” চুল ধরে টেনে পারে নিয়ে আসে। পেটে চাপ দিয়ে জল বের করলে ভাই ঠিক হতে থাকে। গুলতি এখন নদীর কোন এক তলদেশে অবস্থান করছে। আস্তে আস্তে ভাইকে এক গরুর গাড়িতে উঠিয়ে বাড়ি ফেরে।
গাঁয়ের সব থেকে বড় উৎসব দোল উপলক্ষ্যে তিন দিনের মেলা। মানুষের ঢল নামে। সারা বছর অনেকেই পয়সা জমিয়ে এই দিনগুলোতে খরচ করে। মানুষে মানুষে বন্ধন এইসব মেলায় মানুষ আসে বলেই দৃঢ় হয়। এটা যুগ যুগান্ত চলছে। সবিতার জন্যে আলতা,সংসারের জন্যে চাকি বেলুন,রূপসীর জন্যে চুলের ক্লিপ আর রবির জন্যে প্লাস্টিকের ছোট গদা বাবা কিনল। কলকাতা থেকে বড় পুতুলনাচ পার্টি এসেছে। আজকের পালা ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’। সবাই টিকিট কেটে ঢুকল। দিদির বয়সের উত্তরণ হচ্ছে। একটু গম্ভীর হচ্ছে। সুতো দিয়ে পুতুলকে বেঁধে উপর থেকে আখ্যান অনুযায়ী নাচানো হয়। মনে হয় যেন বাস্তব ঘটনা দেখছি। গ্রাম বাংলায় এই পুতুলনাচ বেশ জনপ্রিয়। আগ্রহ সহকারে মানুষ এই লোক শিল্প আস্বাদন করে।
ঋষি বিশ্বামিত্রের অভিশাপে পরাক্রমশালী ক্ষত্রিয় রাজা হরিশ্চন্দ্র সমস্ত সম্পত্তি,এমনকি স্ত্রী,পুত্রকে ত্যাগ করে কাশীর শ্মশান ঘাটে এক চণ্ডালের অধীনে কাজ করে। পুত্রও সর্পাঘাতে মারা যায়। ছেলেকে কোলে করে তাঁর ত্যাজ্য স্ত্রী হরিশ্চন্দ্রের কাছে দাহ করাতে এসেছেন। এই সকরুণ দৃশ্য দেখে বাবা,মা,দিদি এমনকি রবিরও চোখে বাঁধভাঙা জল। ভাগ্যিস ধর্ম এসে সব বুঝতে পেরে ভিখিরিসম হরিশ্চন্দ্র কে স্বর্গে নিয়ে যান। কান্নার রোল ও থামে।
পড়াশুনা নানা কারণেই রূপসীর হচ্ছে না। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি কাজের মধ্যেই থাকতে হয়। দ্বিতীয় বারেও ক্লাস সেভেন পেরোতে পারল না। শরীরটা কয়েক মাস ধরে ভালো যাচ্ছে না। মা একদিন ডেকে শুধোয়,”মা তোর কী হয়েছে?” মেয়ে লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না। শেষে কেঁদে ফেলল। মা বুঝল, রূপসী দেহমনে এখন সত্যিই বড় হয়ে গেছে। প্রকৃতি বা ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ উপহার মা বোনেরা এই সময়েই পায়। সৃষ্টির উৎস হাতে আসায় জীব জগতে শান্তি, স্বাভাবিকতা ও ভারসাম্য আনার মহান ব্রত পালন করার ক্ষমতা জন্মায়।
পনের বছর হতে আর বেশি দেরি নেই। স্কুলে পড়া বাড়ি থেকে বন্ধ করে দিল। অনেক কিছু কাজ রূপসী জানে। মা উলের গোলা কিনে এনে উলবোনার কাজ শিখতে বলে। দিদি খুশি হয়। দিদি ভাইয়ের জন্যে প্রথমে সোয়েটার বুনতে চায়। ভাই ভাবে দিদির আজ কেন এত পরিবর্তন। তাদের দূরত্ব কেন বাড়ছে? মহিলাদের একটা সময় পরে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। তখন থেকেই সামাজিক পরিমণ্ডলে থেকে তারা যে রসদ পায়,তাতে করে তাদের সাধারণ উপলব্ধি আসে যে সে এই জায়গার নয়,অন্য কোন জায়গা তার অপেক্ষায় আছে। “হেথা নয়,অন্য কোথা,অন্য কোথা,অন্য কোনখানে।” আজ বা কাল তার সেখানেই যেতে হবে। তাই,এই চিন্তা আসাতে সবার সঙ্গে সদ্ভাব থাকলেও পরবর্তী অজানা জীবনের কথা ভাবনাতে আসায় স্বাভাবিক ভাবেই এতদিনের চিন্তা ভাবনায় কিছু ছন্দপতন ঘটে। পুরুষদের চিন্তাটা এ ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত কম থাকে কেননা তারা সাধারণত স্থানুই থাকে। এত সব ভাবার বয়স ভাইয়ের এখনও হয় নি।
একদিন মামা এসে সবিতাকে বলে তার এক চেনাজানা ছেলে আসামের তিনসুকিয়ায় চা বাগানে কাজ করে। হ্যাঁ,ওর সঙ্গেই রূপসীর বিয়ে ঠিক হয়। জায়গাটা বহু দূর। বিয়ের দুদিন আগে সোয়েটার বোনা শেষ হয়ে যায়। ভাইকে ডেকে পরিয়ে দেয়। ভাই তো আনন্দে গদগদ। কন্যার প্রথম শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার আগে নাকি কন্যার ঋণ শোধ করতে হয়। দেখা গেল উল্টোটাই সত্য। এই পনের বছর ধরে রূপসীর কাছে পরিবারের যে ঋণ হয়েছে তা কোনদিন পরিশোধযোগ্য নয়। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার দিন যা হয়,কান্নার রোল পড়ে গেছে। বাবা তো কন্যা ছাড়া থাকতে হবে ভেবে বোবা হয়ে গেছে। তার এক মা আগেই চলে গেছেন,অপর মা আজ চলে যাচ্ছে শ্বশুরবাড়ি। ভাই কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে পাওয়া যায়। গোপনে গোপনে কেঁদে চোখ লাল করেছে। দিদি জড়িয়ে ধরে। “ভাই চলি,তুই আসবি কিন্তু। আর গুলতি ফুলতি বানাস নে।“
****************************************************
লেখক পরিচিতি
শুভজিৎ বসু এম এস সি (এজি) পাশ করে ব্যাঙ্কের অফিসার পদে চাকরি জীবন ১৯৮৩ সালে শুরু করেন। গত ২০১৯ সালে ব্যাঙ্কের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পদ থেকে অবসর নেন। দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর চাকরিতে থাকাকালীন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। অবসর গ্রহণের পর থেকেই তিনি বস্তুত লেখালেখিতে মন দেন।