কবির বিস্মরণ ?
অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য্য
রবীন্দ্রসঙ্গীতে নিবেদিতপ্রাণ, সঙ্গীতসাধক শ্রী শৈলজারঞ্জন মজুমদার মহাশয় তাঁর অসামান্য স্মৃতিকথা “যাত্রাপথের আনন্দগান” গ্রন্থে তাঁর জীবনে রবীন্দ্র সান্নিধ্যের বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। সকল ঘটনাই যদিও বহুপঠিত,তবু বার বার ,বিশেষ বিশেষ কিছু ঘটনার কথা পড়লে শৈলজাবাবু ও রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ট ও সহজ সম্পর্কের মধুর ছবি মনে ভেসে ওঠে। সেই সব অনুপম মুহুর্তের ঘটনাবলীর মধ্যে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক হল শান্তিনিকেতনে ১৯৩৯ সালের বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠানের জন্য কবির কাছ থেকে শৈলজাবাবুর পছন্দের ও ফরমায়েশের একাধারে পনেরটি গান সুকৌশলে আদায় করে নেবার কাহিনী! সেই বহুপঠিত পনেরটি গান রচনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনার মধ্যে না গিয়ে, আমি আজ কেবল একটি মাত্র গান রচনার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবো , তার প্রেক্ষিতে আমার ব্যক্তিগত অভিমত ব্যক্ত করবো এবং পরিশেষে পাঠককুলের নিরপেক্ষ মতামত আশা করবো। হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই সেই মতামতগুলি আমার অভিমতের ব্যতিক্রমী হতে পারে। লেখাটির খেই ধরে রাখতে খুব ছোট করে জানিয়ে রাখি, ১৯৩৯ সালের বর্ষাকালে, শৈলজারঞ্জনবাবু আশ্রমের ছাত্রদের তরফ থেকে বর্ষামঙ্গলের জন্য নতুন গানের দাবী নিয়ে রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে একে একে নিজের ফরমায়েশী সুর, রাগ, তানে তেরটি বর্ষার গান করে নিয়েও সন্তুষ্ট না হয়ে, আবার কবির কাছে গিয়ে হাজির “বাগেশ্রী” রাগে বর্ষার গান রচনার অনুরোধ নিয়ে।
পরবর্তি বিবরণ শৈলজারঞ্জনের লেখনীতে;
“এরপরে আবার গানের অনুরোধ করে সেই একই উপায়ে কাগজে “বাগেশ্রী” কথাটি লিখে রেখে এলাম। এটি দেখে গুরুদেব আশ্চর্য হয়ে বলেছিলেন,বাগেশ্রীতে বর্ষার গান লিখতে বলেছ তুমি! বাগেশ্রীতে বর্ষার গান হয় কি? আমায় বলেছ ভাল,দেখো,আর কেউ যেন এটা না শোনে।
আমি বলেছিলাম,আপনার কাছে এ নিয়মটা একেবারে খাটে না। অসম্ভবও সম্ভব হয়ে যায় আপনার ছোঁয়ায়। আমার মনে পড়ে গীতবিতানের ভূমিকার “প্রথম যুগের উদয়দিগঙ্গনে” কবিতাটি আমি বলামাত্র আপনি তখনই তো সুর দিয়ে দিয়েছিলেন। আমার তো মনে হয় ‘আনন্দবাজার’-এর সম্পাদকীয় স্তম্ভটিও আপনার হাতে দিয়ে সুর তুলে দিতে বললে তারও দেরি হবে না। আর ঝড়ের রাত্রির গান ‘বাগেশ্রী’তে আপনি তো আগেই লিখেছেন। এই বলাতেও তিনি আপত্তি জানালেন।
বলে উঠলেন,কক্ষনও না!
আমি তখন শেল্ফ থেকে গীতবিতান বইটি এনে তাঁকে খুলে দেখিয়ে দিলাম এবং গেয়ে শোনালাম। গানটি—“যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে”। কী আশ্চর্য। প্রায় সবটা গানই গুরুদেব কান পেতে শুনলেন।
পরদিন পেলাম বাগেশ্রীতে “সঘন গহন রাত্রি ঝরিছে শ্রাবণ ধারা।…”
এই ছিল ১৯৩৯ সালের বর্ষামঙ্গল উপলক্ষ্যে শৈলজারঞ্জনের আগ্রহে ও ফরমায়েসে কবির রচিত চতুর্দশতম নতুন গান রচনার ইতিবৃত্ত।
প্রিয় পাঠকের কাছে আমার প্রশ্ন রইলো তবে কি আটাত্তর বর্ষীয় কবি তাঁর ১৯১৪ সালে অর্থাৎ ২৫ বছর পূর্বে রচিত অতি বিখ্যাত ও বহুপ্রচলিত “যে রাতে মোর দুয়ারগুলি”গানটি ও তার সুর বিস্মৃত হয়েছিলেন? আমার ব্যক্তিগত অভিমত কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে,যদিও তা আমার অনুমান মাত্র! যাই হোক,আমার বক্তব্যের আগে আসুন “যে রাতে মোর দুয়ারগুলি” গানটির কথার দিকে সামান্য লক্ষ্য করা যাক। পূজা পর্যায়ের,দুঃখ উপ-পর্যায়ের এই গানটিতে রাত, দুয়ার,ঝড়,অন্ধকার এই সব শব্দগুলি রূপক অর্থে প্রয়োগ করা এবং আদৌ প্রাকৃতিক বা শারীরিক অর্থে ব্যবহৃত নয়। এই সবকটি শব্দই কবির মানসিক স্থিতির প্রতীকী রূপ মাত্র!
আমার অভিমত এই যে,সেই কারণেই গানটি কবির মননে,চিন্তণে ও স্মৃতিতে বর্ষার গান হিসাবে স্থানই পায় নি কারণ গানটি তিনি বর্ষার প্রেক্ষিতে সৃষ্টি করেন নি। তাই পঁচিশ বছর আগে,তিনি গানটিকে সঙ্গত কারণেই প্রকৃতি পর্যায়ে নয়,পূজা পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। শৈলজাবাবু যখন কবির কাছে গানটিকে বাগেশ্রীতে ঝড়ের রাতের গান হিসাবে উল্লেখ করেন এবং গেয়ে শোনান,আটাত্তর বছরের কবি সামান্য হতাশ বোধ করেছিলেন কিনা সেটা জানবার উপায় নেই। জীবন সায়াহ্নে,সেই শৈলজারঞ্জনের সঙ্গে বিতর্কে না গিয়ে,তাঁর সহজাত প্রতিভাবলে,বাগেশ্রীতে রচনা করলেন
“সঘন গহন রাত্রি ..” গানটি।
হিন্দুস্থানি সঙ্গীতে,বিরহিণী নারীর দয়িতের সঙ্গে মিলিত হবার প্রতীক্ষার বেদনার প্রকাশ হয় বাগেশ্রী রাগের মাধ্যমে। এটি একটি মধ্যরাতের রাগিণী। রাগ-সিদ্ধ রবীন্দ্রনাথ তাই ঝড়ের রাতে,মনের দুয়ার ভেঙ্গে তাঁর দয়িত জীবনদেবতার আগমনের ছবি এঁকেছিলেন বিরহের রাগিণী বাগেশ্রীতে! শৈলজাবাবুর অনুরোধে বাগেশ্রীতে রচিত “সঘন গহন রাত্রি..” গানটিতেও বর্ষার শ্রাবণধারার সাথেও বিরহিণীর অশ্রুজল তাই মিলে মিশে একাকার হয়ে বেদনার রসে ভরিয়ে তুলেছে নিশীথ রাতের অনিদ্রাকে।
তাই আমার দৃঢ় ধারণা,”সঘন গহন রাত্রি ঝরিছে শ্রাবণধারা” গানটিই রবীন্দ্রনাথ রচিত বাগেশ্রী রাগের বর্ষার একমাত্র গান।
পাঠককুলের মতামতের অপেক্ষায় থাকলাম।
****************************************************
অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য্য পরিচিতিঃ
জন্ম, স্কুল, কলেজ সবই কলকাতা। কর্মজীবন কেটেছে অবশ্য বিশাখাপত্তনম, অন্ধ্র প্রদেশে। সঙ্গীত প্রিয় ও রবীন্দ্রানুরাগী!
গানগুলি অত্যন্ত প্রিয় এবং বারে বারে শুনি। বিশ্লেষণটি পড়ে এটাই সত্যি ও স্বাভাবিক বলে মনে হয়। তবে এ ব্যাপারে আমার কোন বুৎপত্তি নেই। যুক্তি ও পরিবেশনা অসাধারণ। নতুন ভাবে ভাবার খোরাক পাওয়া গেল।
বিশ্লেষণ যুক্তিসঙ্গত এবং তর্কাতীত বলেই আমার মনে হয়েছে। লেখক ধন্যবাদার্হ। তাঁকে সাধুবাদ জানাই।
রানা, তুই খুব ভালো ভাবেই জানিস যে সঙ্গীত যদিও আমার একমাত্র ভালোবাসা কিন্তু সঙ্গীতশাস্ত্র সম্বন্ধীয় প্রাথমিক জ্ঞানটুকুও আমার নেই। এই লেখাটিতে আমি আমার মূর্খতা ও ধৃষ্টতাকে একসাথে প্রকাশ করেছি বলেই আমার ধারনা। তবু তোর মন্তব্যে মনে একটু বল পেলাম। ধন্যবাদ জানাই।
Boro bhalo laglo..rabindranath ke nie nana lekha bibhinno jaygay pori ..kintu ei lekhati sompurno bhinnodhormi..mon bhorie tole..aro porbar asha roilo..
লেখকের সঙ্গে আমি একমত ।বর্ষার গান বাগেশ্রী রাগে রবীন্দ্রনাথ একটি ই লিখেছেন ,আর সেটা লিখেছেন শৈলজারঞ্জনের ফরমায়েশ এ।
কবির বিস্মরণ নয়।কবি অবাক হয়েছিলেন শৈলজারঞ্জন ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি’ গানটির অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পারেন নি এই ভেবে। কবির নীরবতা তাঁর বিস্ময়ের প্রকাশ।
কবি নিজেই বলেছেন ‘যে তারে দিতে পারে মান’ তার জন্য ই তাঁর গান।মান দেওয়া অর্থ হল কবির গানের মূল ভাব অনুভব করা।
অগ্নিমিত্র কবি র গান কে মান দিয়েছেন। তিনি সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন তাঁর বক্তব্য।
মূল্যবান লেখাটি পড়ে আমি অনুরোধ রাখবলেখকের কাছে তিনিযেন এরকম সুচিন্তিত আলোচনা করে আমাদের চেতনা কে সমৃদ্ধ করেন বারেবারে।
আবারও মুগ্ধ হ’লাম, ঋদ্ধ হ’লাম ! … শ্রী রানা ভট্টাচার্য এবং শ্রী দেবব্রত ভৌমিকের সাথে একমত। একমত অন্যান্য পাঠক/পাঠিকাদের সাথেও !! ধন্যবাদ অগ্নিমিত্র বাবুকে, কবিগুরু ও তাঁর সাহচর্যধন্য ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে একের পর এক এইসব প্রায়-অজানা তথ্যবহুল রচনাগুলির মাধ্যমে আমাদের, অর্থাৎ “কুলায় ফেরা”-র পাঠক /পাঠিকাদের সমৃদ্ধ করার জন্য 🙏🙏 !
ধন্যবাদ আশিস বাবু আপনার সুচিন্তিত অভিমতের জন্য। একটা কথা না বলে পারছি না যে আমি কিন্তু কোন অজানা তথ্য নিয়ে পাঠকের দরবারে উপস্থাপনা করছি না বরং বহুপঠিত রচনাগুলির মধ্য থেকেই কোন অব্যক্ত,অনুচ্চারিত বা অলিখিত ঘটনার কথা যা হয়তো অতি তুচ্ছ বলেই সাধারণের চোখে ধরা পড়েনি সেটা সকলের সামনে আলোচনার বিষয় হিসাবে তুলে ধরবার চেষ্টা করছি মাত্র।
লেখকের মতো আমার রবীন্দ্রসংগীতে তেমন বুৎপত্তি নেই , তবে তাঁর চিন্তাধারা একটু আলাদা এবং পাঠকদের বোঝাতে চেয়েছেন যে কোনো গানের ভাবটা অন্যভাবে করা হয়েই থাকতে পারে সে বিষয়ে আমাদের ভাবা উচিৎ l ওনার এই সুচিন্তিত মতামতের মূল্য রবীন্দ্র ভক্তদের কাছে অপরিসীম ۔۔
আগে কখনো এভাবে ভাবিনিরে। কজনা ভেবেছেন,সেব্যাপারেও আমার সন্দেহ আছে। তোর এই ভাবনা আর বিশ্লেষণ দেখে আমি অভিভূত। আরও এই ধরণর লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ বৌদি! মনে সাহস পাচ্ছি। অত বড় ব্যক্তিত্বের সম্বন্ধে এটুকু বলতে গিয়েও কেমন যেন বাধোবাধো ঠেকছিল। আপনাদের লেখা পড়ে মনে হচ্ছে হয়তো আমার আনুমান ভুল নয়!
অসামান্য বিশ্লেষণ !! সম্বৃদ্ধ হলাম ৷
অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ বিশ্লেষন। লেখাটি নূতন ভাবে বিষয়টি চিন্তা করতে অনুপ্রানিত করে।
কবির বিস্মরণ শীর্ষক অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্যের রচনাটি এককথায় অসাধারণ। তথ্যমূলক,বিশ্লেষণ ধর্মী এধরণের রচনা যে কোনও পত্র পত্রিকা ও তার পাঠককূলকে সম্বৃদ্ধ করে।একথা একদম ঠিক যে”সঘন গহন রাত্রি ..” বাদে আর কোনও বর্ষা প্রকৃতির গান রবি রচনায় খুঁজে পাওয়া যায়না।গীতকার,সুরকার,রূপকার,বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বাঙালি রবীন্দ্রনাথের জীবনে ছড়িয়ে আছে অগুণ্তি সব মণিমুক্ত ঘটনা,গল্পগাথা।রবীন্দ্র অনুরাগী অমল হোম,চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়,প্রমথনাথ বিশীরা তাঁদের স্মৃতিকথায় শ্রেষ্ঠ বাঙালি রূপকারের বিভিন্ন সঙ্গীত রচনার নেপথ্য কাহিনী বর্ণনা করেছেন। অনেক কথা যাওগো বলে,গানে গানে তব, কাঁদালে তুমি মোরে ইত্যাদি তার নিদর্শন।শিলাইদহে জলযানের ছাদ থেকে ইন্দিরা দেবীকে লেখা তাঁর “ঝর ঝর বরিষে বারিধারা ” অথবা মৃত্যুর বছর দুয়েক আগে শান্তি নিকেতনে সে যুগের ছাত্রী রমা দেবীকে (চক্রবর্তী) “যদি হায়,জীবন পূরণ নাই হলো..” গানটি রচনা করে শেখানোর কথা রমাদেবী তাঁর স্মৃতি চারণে লিখে গেছেন।অগ্নিমিত্রবাবু বা পাঠক মহলের কেউ যদি একটি বিষয়ে আলোকপাত করেন তো ভালো হয়। ১৯১৫ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারিতে কবির ৫৪বছরে লিখিত প্রকৃতি/বসন্ত পর্বে ভৈরবী রাগে নিবদ্ধ “এত দিন যে বসে ছিলাম” কি নেতাজি সুভাষচন্দ্র কে উদ্দেশ্য করে রচিত?কেউ কি জানাবেন?
দীপঙ্কর বাবু, আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনার অবগতির জন্য জানাই, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম 1897 সালের জানুয়ারিতে আর “এতদিন যে বসেছিলেম …” গানটি রচনা হয়েছিল 1915 সালের ফেব্রুয়ারিতে, তখন সুভাষচন্দ্র মাত্র 18 বছরের, অর্থাৎ তখনও ” নেতাজি” হয়ে ওঠেন নি।
আরো একটি তথ্য এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য। 1928 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ব্রাহ্ম সমাজ পরিচালিত সিটি কলেজে সরস্বতী পুজো করা নিয়ে হিন্দু ছাত্রদের সাথে, ব্রাহ্ম পরিচালক মণ্ডলীর তীব্র বিবাদ সংঘটিত হয়। সুভাষচন্দ্র ছিলেন হিন্দু ছাত্রদের নেতা আর রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিনিধি। তাই রবীন্দ্রনাথ ও সুভাষের সাথে মতবিরোধ ও তিক্ত সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।
অনেক পরে, ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে নিবিড় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। রবীন্দ্রনাথ তাঁর রচিত “তাসের দেশ ” নৃত্যনাট্য সুভাষচন্দ্রকে উৎসর্গ করেন 1933 সালে। তখন তিনি প্রকৃতপক্ষেই “নেতাজি” বলে পরিচিত ।
আশা করি বুঝতে পারছেন যে “এতদিন যে বসেছিলেম .. ” গানটি প্রকৃতি পর্যায়ের বসন্ত ঋতুরই গান।
শ্রদ্ধেয় অগ্নিমিত্রবাবুকে ব্যস্ততার মধ্যেও আমার লেখার জবাব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।আমার মনেহয়,লেখাটি ঠিক মতন পাঠ করা হয়নি।আমার লেখায় উল্লিখিত গানটির রচনাকাল,তখন কবির বয়স,গানটি কোন পর্যায়ের ইত্যাদির উল্লেখ রয়েছে।শুধু নেতাজীর বয়সকালের উল্লেখ করিনি! স্বাধীনতা দিবসের তারিখ,রবীন্দ্রনাথ, নেতাজী সুভাষ,স্বামী বিবেকানন্দ,মহাত্মাদের জন্মতারিখ সকলের জানা থাকবে এটা ভেবে নতুন করে আর লিখিনি।আর এই লেখার সময়
সুভাষ নেতাজী হয়ে হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন বলে ওই নামের আগে নেতাজী লিখে ফেলেছি।কিশোর বা সদ্যযুবা সুভাষ লেখা উচিৎ ছিলো। প্রশ্নটা হলো,এই গানটি কি কবিগুরু লিখেছিলেন সুভাষের উদ্দেশ্যে?
কবির মনের নাগাল সম্পূর্ণ ভাবে কেই বা কবে পেয়েছে! তাই তো মৃত্যুর আশি বছর পরেও গবেষকরা বিভিন্ন আঙ্গিকে তাঁকে খুঁজে দেখার চেষ্টা করছেন এবং আমাদের ঋদ্ধ করে চলেছেন। শ্রী অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য এমনই একটি কাজ করলেন। ওনার কাছে আরও এমন কিছু জানার অপেক্ষায় রইলাম।
দীপঙ্কর বাবু, আপনি বোধ হয় আমার লেখার অর্থ হৃদয়ঙ্গম করতে পরেন নি! 54 বছর বয়সের কবি কি কারণে 18 বছর বয়সের এক অখ্যাত যুবকের উদ্দেশ্যে ওই গানটি রচনা করবেন তার কোন যুক্তিযুক্ত কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঋতু পর্যায়ে বসন্তের গান হিসাবেই সেটি রচিত।
একদম সঠিক এবং স্বাভাবিক বিশ্লেষণ। এবং এটা খুবই অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার যে শৈলজারঞ্জনের মত একজন বিদগ্ধ মানুষ এইটা কেন ধরতে পারলেন না।
অগ্নিমিত্রকে আমার অন্তরের অভিনন্দন
” যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ” গানটি আমি চিরকাল ভেবেছি…. ঈশ্বরের প্রতি আত্মিক টান
শৈলজাবাবু এভাবে ভাবেননি……ভাবতে অবাকই লাগে
হয়তো তার মনের কথা আমাদের অজানাই থেকে গেল
তাতে প্রাপ্তি আমাদেরই…..আমরা পেলাম “সঘন গহন রাত্রির ” মত সৃষ্টিকে
রানা ভট্টাচার্য, সুমিতা ভাদুড়ী, দেবব্রত ভৌমিক ও তপতী সিনহা – এঁদের বক্তব্যের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত! অগ্নিকে চিরকাল এমন একনিষ্ঠ রবীন্দ্রপ্রেমী হিসেবেই দেখে আসছি! অনেক বহুলশ্রুত রবীন্দ্রাকাব্য বা রবীন্দ্রসংগীতের সম্পর্কে প্রাণের আবেগে ও যখন ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করে যায়, অবাক হয়ে অনেক সময়ই ভাবি, ‘ সত্যিই তো! এতবার শোনা গান – কিন্তু এমন ভাবে ভাবিনি তো ! ‘ আসলে, আমি নিশ্চয়ই এত তীব্র ভাবে রবি ঠাকুরকে ভালোবাসতে পারিনি ! ওর প্রাণের ঠাকুর হলেন রবি ঠাকুর ! তাই , ওঁর যে কোনো বক্তব্য তাই ও নিজের প্রাণের ভেতরে অনুভব করে!
ধন্যবাদ আমজাদ ( শান্তনু)। পায়েসটা সুস্বাদু হয়েছে ঠিকই, তবে মিষ্টির পরিমাণটা আর একটু কম হলেও চলতো!
কী দারুণ করে যুক্তির নিক্তিতে ফেলে এঁকে দিলেন কবি চিত্তের সঙ্গোপনকে। হয়ত তাই! আদৌ তো গানটি প্রকৃতির ঝড়ের রাতের জন্য নয়, হৃদয়রাজ্যের ঝড়, মানবজীবনের কাহন। তাইতো সেটি পূজা পর্যায়ের গান। খুব সমৃদ্ধ হলাম আপনার লেখাটি পড়ে।