শাওন গগনে তৃতীয় পর্ব
কুলায় ফেরা আন্তর্জালিক পত্রিকার বর্ষাবরণের তৃতীয় পর্বের সরাসরি সম্প্রচার হলো গত রবিবার,আঠারো জুলাই সন্ধ্যায়।”শাওন গগনে” নামে এই অনুষ্ঠান মূলতঃ বিষয় নির্বাচন এবং উপস্থাপনার গুণে আপামর দর্শককে আকৃষ্ট করে রেখেছিল একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।! প্রথম নিবেদন বিশাখাপত্তনমের শিশুশিল্পী সমৃদ্ধি চন্দ্র তার নাচে বাদল বাউলের বাজানো একতারার যে ছন্দ নিয়ে এলো তা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত অটুট ভাবেই ধরা ছিলো। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর এই শিশু নিজ সপ্রতিভতায় সকলের মনে স্থান করে নিল শুরুতেই।
কলকাতার বাচিক শিল্পী মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম নিবেদন রবিঠাকুরের কড়ি ও কোমল থেকে নেওয়া বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুরের প্রথম দুই ছত্রের ও পরে ক্ষণিকা থেকে আষাঢ় কবিতার”নীল নবঘনে..। উচ্চারণের স্নিগ্ধতা, স্পষ্টতা এবং টোনাল মড্যুলেশনে পেশাদারীত্বের চিহ্ন রেখে যান তিনি তাঁর পরিবেশনায়।
কলকাতার অমৃতা লাহিড়ীর নিবেদন প্রকৃতি পর্যায়ের বর্ষা উপপর্বের মেঘমল্লার রাগে সৃষ্ট রবীন্দ্র গীতি ” নীল অঞ্জন ঘন পুঞ্জ ছায়ায় সম্বৃত অম্বর “সু-নিবেদিত।
শান্তিনিকেতনের নন্দিনী সরকার লালন সাঁইয়ের গানে অত্যন্ত আন্তরিক এবং তাঁর নিষ্ঠাভরা নিবেদন মুগ্ধকর। তাঁর কন্ঠে “অমৃত মেঘের বারি”যেন দর্শকদের উপরেও বারিপাত বর্ষিত করছিলো।
বজবজের বাচিক শিল্পী গৌতম অধিকারীর নিবেদন “কিনু গোয়ালার গলি” অসম্ভব সুন্দর। নেপথ্য বাদন অর্গানে তাঁর কন্যা মণিমালার সংযোজন পাঠের মুড সৃষ্টিতে অনবদ্য রূপ নেয়। তাঁর কণ্ঠস্বরের মাদকতা মূহুর্তে অনুষ্ঠানের আবহ বদল করে দেয়।
কলকাতার শিল্পী ব্রতী ঘোষের রবীন্দ্রনাথের গানের পরিবেশনা ছিল অত্যন্ত সাবলীল। তাঁর এদিনের পরিবেশনা গুরুদেবের বর্ষার গান গৌড় রাগে তিন তালে নিবদ্ধ “মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো… ” যেন এক নির্মল নিবেদন।
বহরমপুরের বাচিক শিল্পী মণিমালা চক্রবর্তী এক গুচ্ছ কবিতার মালা গাঁথলেন তাঁর নিবেদনে। কণ্ঠমাধুর্যে ছবি এঁকে দিলেন যেন সকলের মনের মাঝে এক বর্ষণস্নাত সন্ধ্যায়। ভারি মধুর ছিল তার পরিবেশনা।
অন্যদিকে আর এক মণিমালা,কলকাতার মণিমালা অধিকারীর সঙ্গীত পরিবেশনা ‘নচিকেতা চক্রবর্তী’র শ্রাবণ ঘনায় দু নয়নে’ যথেষ্ট প্রশংসার দাবী রাখে। শিল্পীর শিক্ষিত পরিশীলিত কণ্ঠস্বরে নিজস্বতার ছাপ সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিভাত হয়।
শিল্পী কঙ্কণা সেনের স্বরচিত কবিতার নিবেদন ছিল যথাযত। কাব্যিক এবং সুষমাময়।
অনুষ্ঠান শেষ হয় আসানসোলের অত্যন্ত গুণী শিল্পী শঙ্খদীপ সেনগুপ্তের বেহালায় মল্লারের নিবেদনে।বেহালার চারটি তারের দ্বিতীয় “এ” এবং চতুর্থ তার”জি” তারদ্বয় তার সপ্তকের মূর্ছনা এনে দেয়। অত্যন্ত শ্রুতিমধুর এই হাই পিচের তারের ঝঙ্কার শ্রোতাদের শ্রবণে সম্পূর্ণ ভাবে পৌঁছে দিতে পারা যায়নি শ্রীযুক্ত ইন্টারনেট মহাশয়ের জন্য। তবলাশিল্পী শ্রী গণেশ দাসের বোল শুদ্ধ ভাবে শোনার জন্য,উভয়ের ঝালার কারিকুরি নিপুণতার সঙ্গে মনে বসাতে হলে কুলায়ফেরার ইউ টিউব চ্যানেলের লিঙ্কে একবার অবশ্যই উঁকি দেবার জন্য অনুরোধ রইল শ্রোতাদের কাছে।
‘কুলায়ফেরা’র সার্বিক অধীক্ষক,বহরমপুরের শ্রী প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতের ছোঁয়ায় গ্রন্থণা হয়ে ওঠে বর্ণময়,তার স্বাক্ষর শাওন গগনের প্রথম পর্বেই পাওয়া গিয়েছিল,ধারাবাহিকতা বজায় রইলো শেষ পর্বেও। তাঁর উপস্থাপনা ছিলো অকপট,গিমিক হীন এবং নিষ্ঠাবান। বিশাখাপত্তনম থেকে দেবলীনা সরকার পরিচালনায় ছিলেন যথেষ্ট সজাগ এবং আন্তরিক। যান্ত্রিকতা বাদে এবারের এই তৃতীয় পর্ব ছিল সর্বাঙ্গীন সফল।।
প্রতিবেদক মধুমিতা মিত্র
২০.০৭.২০২১