কিছু স্মৃতি কিছু কথা
ডঃ গৌতম সরকার
পয়লা বৈশাখ কেটে গেলে আমাদের অপেক্ষা শুরু হতো জ্যৈষ্ঠ মাসে জামাই ষষ্ঠীর সময় দুই রাত্রি ব্যাপী যাত্রাপালা অনুষ্ঠানের জন্য৷ একদমই অ্যামেচার,পাড়ার দাদা-কাকারাই অভিনয় করত৷ খুব ছোটবেলায় দেখতাম ছেলেরাই মেয়েদের পার্ট করত,একটু বড় হবার পর দেখেছি ফিমেল (তখন মহিলা শিল্পীদের এই নামেই ডাকা হত) ভাড়া করা হতো৷ কয়েকমাস আগে থেকেই সন্ধ্যের পর ক্লাব প্রাঙ্গণে নাটকের মহড়া শুরু হতো, সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসে পড়া থামিয়ে কান একটু খাড়া করলে রিহার্সালের আওয়াজ শুনতে পেতাম; আর বাড়ির প্রয়োজনে সন্ধ্যাবেলা দোকান থেকে কিছু আনতে হলে সানন্দে রাজী হতাম-কারণ তাহলে পড়া থেকে কিছুক্ষণের ছুটি যেমন মিলত, তেমনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ রিহার্সাল শোনার সৌভাগ্য হতো৷ আমাদের সার্ব্বজনীন বেচাদা হ্যারিকেনের আলোয় প্রম্পট করত আর বাকিরা পার্ট বলে যেত৷ তখনো গ্রামে ইলেকট্রিসিটি আসেনি, সম্ভবত আমি যখন ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি তখন আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ আসে৷ তখনও গরমকাল আসতো, কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকলেও ছোটোবেলায় গরম কখনো অসহ্য হয়ে উঠত না ; কি জানি হয়তো গ্লোবাল ওয়ার্মিং তখনও এতটা মাথাচাড়া দেয়নি ! এই সময়টা আমার সবচেয়ে যেটা আকর্ষণের ছিল সেটা হল-একমাস যাবৎ সকালবেলা স্কুল৷ গরমের কারণে এই সময় এক মাস আমাদের সকালবেলায় স্কুল বসত৷ ভোরবেলায় ওঠার কষ্টটা বাদ দিলে টোটাল ব্যাপারটা আমার খুব পছন্দের ছিল৷ ঘুম থেকে উঠেই তড়িঘড়ি বেরিয়ে ঘুম চোখে সবাই ক্লাসে গিয়ে বসতাম,মাস্টারমশাইরাও আসতেন ফোলা ফোলা চোখ নিয়ে, আর ওই সকালে তথাকথিত রাগী স্যারেদের চোখে-মুখেও রাগের প্রকাশ কম থাকতো; বুঝতাম সূর্যের তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ব্রহ্মতেজ বাড়তে থাকে৷ সকালবেলায় সেই সম্ভাবনা কম থাকায় আমরাও নিশ্চিন্তে একটু ফাঁকি দিতে আর ছোটোখাটো বদমায়েশি করতে পারতাম৷ সবচেয়ে প্রিয় ব্যাপারটা ছিল, এইসময় প্রতিটি ক্লাসের সময়সীমা কমে যেত আর স্কুলের সময়ও ছিল কম৷ অর্থাৎ তাড়াতাড়ি ছুটি পেতাম, দুপুরের অনেক আগেই বাড়ি ফিরে আসতাম৷ বাড়ি ফিরে তো আরোও মজা, এসেই বেরিয়ে পড়তাম একটা গামছা নিয়ে (বাড়ির লোক জানত পুকুরে স্নান করতে গেছি)৷ আমরা বন্ধুবান্ধবরা কিন্তু বেরোতাম অন্য সন্ধানে৷ আমাদের পাড়ায় দুটো কুলগাছ ছিল,একটা আমাদের এক জ্যাঠতুতো দাদার ব্যক্তিগত আর একটা সরকারি, অর্থাৎ সবাইয়ের৷ দ্বিতীয়টার ব্যাপারে কোনো অসুবিধা ছিলনা-যখন খুশি উঠে পড়া যায়,তাই নজর থাকতো প্রথম গাছটার ওপর৷ মালিকপক্ষের নজর এড়িয়ে দু চারটি ঢিল-পাটকেল ছোঁড়া হতো, দুয়েকটা কুল কপালে হয়ত জুটত, তারপর অবধারিতভাবেই চিৎকার ভেসে আসত “কে র্যা! গাছে ঢিল ছুঁড়ছিস?” সঙ্গে সঙ্গে দুদ্দাড় করে এদিকসেদিক পলায়ন৷ অসাধারণ স্বাদ ছিল এই গাছের কুলের, আমরা বলতাম ‘নারকেলে কুল’৷ তবে পাকা অবস্থায় ভালো লাগত, কাঁচা তেতো তেতো লাগত৷ কিছুক্ষণ পর ভালো ছেলের মতো মুখ করে ওদেরই বাড়ির পাশের সরকারি গাছে গিয়ে চড়তাম৷ এই গাছের কুল আবার কাঁচা অবস্থাতেই অসম্ভব ভালো খেতে আর পাকা হলে তো কথাই নেই৷ কুল খেতে খেতে যখন দাঁতের সার চলে যেত তখন গাছ থেকে নামতাম, দাঁতগুলো এতো টক হয়ে যেত যে ভাত খেতেও অসুবিধা হতো, দাঁত প্রচন্ড শিরশির করত৷ তারপর ওখান থেকে গিয়ে পড়তাম পুকুরে, আমাদের অনেকগুলো বড় বড় পুকুর ছিল যেগুলোকে অনায়াসেই দীঘি বলা চলত৷ সেই দীঘিসম পুকুরে গিয়ে শুরু হতো লাফানো-ঝাঁপানো,কতবার যে অত বড় পুকুর পারাপার করতাম তার হিসেব ছিলনা৷ সময় বয়ে যেত, ওঠার নামগন্ধ করতাম না৷ গায়ের চামড়া সাদা আর নরম হয়ে উঠত, বাড়ি থেকে বারবার ডাক আসা সত্ত্বেও পাত্তা দিতাম না৷ অনেক পরে বাবা,কাকা বা দাদা স্থানীয় কেউ এসে প্রচন্ড ধমক দিয়ে জল থেকে তুলত৷ তবে এই সব বাড়াবাড়ি আনন্দের স্থায়িত্ব ছিল ওই একমাস আর গরমের ছুটির একমাস৷ তাই এই সময়টা আমাদের ছিল ‘পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা’,তাই আমরাও মজা আর আনন্দ ষোলআনার ওপরে আঠারো আনা তোলার চেষ্টা করতাম৷
এবার আসি যাত্রার কথায়-সাধারণ ভাবে জামাইষষ্ঠীর দিন একটা আর আগের বা পরের দিন আরেকটা অভিনয় হতো৷ একটা একটা করে দিন যেত আর আমাদের বহুকাঙ্খিত সেই দিন দুটো ক্রমশঃ এগিয়ে আসত৷ তবে যেটা আমাদের কাছে আতঙ্কের ছিল সেটা হল কালবৈশাখী ঝড় আর বৃষ্টি, ছোটবেলায় কতবার যে আমাদের কাতর প্রার্থনায় কর্ণপাত না করে ওই ভয়ংকর কালবৈশাখী সারাবছরের প্রতীক্ষার আনন্দকে গলা টিপে মেরেছে তার ইয়ত্তা নেই৷ তাই অপেক্ষার দিন কমে আসার সাথে সাথে প্রকৃতি এবছর কী লীলাখেলা দেখায় সেই ভয়টাও ক্রমশঃ বাড়তে থাকত৷ অবশেষে একসময় সত্যি সত্যি প্রতীক্ষার অবসান হত, আর যাত্রাশুরুর প্রথম সকালটা অকাল বসন্তের কোকিলের ডাকে শুরু হতো৷ বৃষ্টি না হওয়ার প্রার্থনায় সকালবেলা বেলগাছ পূজো করা হতো, আমাদের নিত্য নারায়ণ পূজার পূজারি ক্লাব ও স্টেজ সংলগ্ন একটা বেলগাছ নিষ্ঠা সহকারে পূজো করতেন৷ ওই বয়সে বেলগাছ পূজোর যৌক্তিকতা বুঝতামনা কিন্তু আমরা ছোটোরা ভক্তিভরে ঠাকুরকে প্রণাম করে একই প্রার্থনা জানিয়ে প্রসাদ মুখে দিতাম৷ কিন্তু এত কিছুর পরও ঠাকুর সবসময় আমাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করতেন না৷
সারাদিন ঝকঝকে রোদ,সেই উজ্জ্বল রোদের প্রতিফলন ছোটো-বড় সবার মুখের চওড়া হাসিতে৷ স্টেজ প্রস্তুত, ডেকোরেশন যেটুকু সবই সারা, ক্লাব ঘরে ব্যস্ততা তুঙ্গে, আমরা ছোটোরা মঞ্চকে কেন্দ্র করে বাঁদর নাচ নেচে যাচ্ছি, অর্থাৎ পারিপার্শ্বিক আবহ পুরোপুরি প্রস্তুত আগামী উৎসব সন্ধ্যাকে বরণ করার জন্য৷ তখন আমরা সবাই অধীর কখন দুপুর, বিকেল ফুরিয়ে সন্ধ্যা নামবে৷ অবশেষে সময়ের নিয়মেই সময় কেটে যায়, দুপুর পেরিয়ে বিকেল আসে৷ বিকেলের অন্তরায় হঠাৎ করে পশ্চিম আকাশে এক খন্ড কালো মেঘের আবির্ভাব ঘটে,তবে আমাদের আকাশছোঁয়া উচ্ছ্বাসের কাছে ওইটুকু মেঘ পাত্তা পায় না; কিন্তু কখন যেন অজান্তে মেঘটি আড়েবহরে বাড়তে থাকে৷ কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়ে ওইটুকু মেঘ বাড়তে বাড়তে সারা আকাশ ছেয়ে ফেলে৷ কিন্তু হঠাৎ করে আচমকা হাওয়া বইতে শুরু করে, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমবেত আনন্দ চিৎকার,”হাওয়া দিচ্ছে,হাওয়া দিচ্ছে,মেঘ উড়ে যাবে,বৃষ্টি হবেনা৷” কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের সেই সব উচ্ছ্বাসে প্রকৃতি সত্যিকারের গ্যালন গ্যালন জল ঢালতে শুরু করলো,আর সেই বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের মতো ছোটোদের ( হয়তো বড়দেরও ) চোখের জল বৃষ্টির সাথে কখন ধুয়ে যেত কেউ টেরও পেতনা৷ বৃষ্টি শেষে ব্যর্থ মনোরথে বাড়ি ফিরে অনেকসময় কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়তাম৷ কোনো কোনো বছর বৃষ্টির কারণে পরপর দুদিনই যাত্রানুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যেত৷ আমাদের সারা বছরের অপেক্ষা মাঠে মারা যেত, অন্যদের কথা জানিনা, আমরা ছোটোরা খুব কষ্ট পেতাম৷ আসলে তখন আনন্দের উৎসবগুলো হাতে গোনা ছিল,তার মধ্যে থেকে একটা হারিয়ে গেলে বেশ হতাশ হতাম।
তবে প্রতিবছরই তো আর স্বপ্নভঙ্গ হতোনা, যে বছরগুলো প্রকৃতি আমাদের সাথ দিত সেই বছরগুলোয় আমাদের আনন্দের সীমা-পরিসীমা থাকতো না৷ আমাদের এই যাত্রানুষ্ঠান শুধু আমাদের গ্রামেরই নয়, এর জন্য আরো পাঁচ-সাতটা গ্রামের মানুষ উদগ্রীব অপেক্ষা করত৷ একটা মজার ব্যাপার ঘটতো,যাত্রা শুরুর দুদিন আগে মঞ্চ তৈরি হয়ে গেলেই সবাই মঞ্চের আশেপাশে বসার জায়গা রাখার জন্য প্রতিযোগিতায় মেতে উঠত- চ্যাটা, মাদুর, থলে, সতরঞ্চি বিছিয়ে দিত৷ এই প্রতিযোগিতা কোনো অংশেই যেকোনো ফার্স্টক্লাস স্পোর্টস প্রতিযোগিতার চেয়ে কম ছিলনা;এই জায়গা রাখা নিয়ে বহু ঝগড়া,তর্ক-বিতর্ক,চিৎকার চেঁচামেচির সাক্ষী আমাদের শৈশব৷ তবে আমরা সরকার বাড়ির লোকেরা কিন্তু মঞ্চের একদম গায়ে জায়গা রাখতাম না,খুব বেশি দূরে নয় কিন্তু বেশ আরামদায়ক অবস্হানে আর অবশ্যই আমাদের চৌহদ্দির ধার ঘেঁষে৷ রাত্রে যাত্রা শুরুর আগে আমাদের বাড়ি থেকে পুরনো সেগুন কাঠের তৈরি বেশ ভারী একটা বেঞ্চ আনা হতো,তাতে পাড়ার বিশিষ্ট লোকজন বসতেন। আমাদের বাড়ির কেউই জায়গা পেতনা,গণ্যমান্য ব্যক্তি আর অতিথিরাই বেঞ্চে বসার সুযোগ পেতেন৷ তবে সন্ধ্যেবেলা থেকে কোথায় বসব সেটা নয় আমাদের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকতো ফিমেলরা। তাঁরা সন্ধ্যের পর কখন আসতেন জানতে পারতাম না,একটু রাতের দিকে ওঁনারা গ্রীনরুমে মেকাপে বসতেন,আর আমরা তাঁদের দেখার জন্য আশপাশে ঘুরঘুর করতাম। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই পাত্তা করতে পারতাম না৷ বড়দের সতর্ক ঘেরাটোপ পেরিয়ে কোনোসময়ই গ্রীনরুম পর্যন্ত পৌঁছতে পারতামনা ৷ আমার আসলে কৌতূহল ছিল অন্য জায়গায়, এই সমস্ত অচেনা মহিলারা যারা কেউ রাণী,কেউ দাসী, কেউ আমার দাদার বৌ বা কাকার মেয়ে হয়ে মঞ্চে আসবে তাদের মঞ্চের বাইরে কেমন দেখতে, সেটা জানার বড় আগ্রহ ছিল৷ সাধারণ অবস্থায় তাঁরা কিভাবে কথা বলেন ! কিভাবে হাসেন ! সাধারণ বেশে তাঁদের কেমন দেখতে ! এসব ব্যাপারে আমার ওই বয়সেই ছিল অপার কৌতূহল৷
সন্ধ্যেবেলা থেকেই আমরা সবচেয়ে ভালো জামাপ্যান্ট পরে অকুস্থলে উপস্থিত হতাম৷ আস্তে আস্তে গোটা জায়গাটা পাড়া-বেপাড়ার দর্শকে ভরে উঠত৷ মঞ্চের সামনে রানাদের রকে হারু ময়রা আর তার দাদা ছোলা আর মটর কড়াই ভাজতো৷ মন মজানো, নোলায় জল আনা এক সুগন্ধ ঘুরে বেড়াতো গোটা অঞ্চল জুড়ে৷ মনে পড়েনা দুয়েকবারের বেশি সেই কড়াইভাজার অপরূপ স্বাদ দাঁত আর জিহ্বায় নিতে নিতে যাত্রা দেখেছি বলে, কারণ তখন আমরা পকেটমানি কাকে বলে জানতামনা৷ যাত্রা শুরু হতো তুষ্টুদার নাচ দিয়ে,অসম্ভব ভালো লাগতো সেই নাচ,সেই উচ্চকিয় পারফরমান্স গোটা অনুষ্ঠানের মুখরা তৈরী করে দিত৷ আমরা সোজা হয়ে বসতাম৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রা শুরু হতো, অনতিবিলম্বেই আমার বহু কাঙ্ক্ষিত ফিমেলরা মঞ্চে আসতে শুরু করতেন৷ অসাধারণ অভিনয় করতেন ওনারা,তাঁরা প্রত্যেকেই প্রফেশনাল ছিলেন৷ একটা ব্যাপার আমার খুব মজার লাগতো৷ আমাদের দাদা-কাকারা অনেকেই খুব ভালো অভিনয় করতেন,কিন্তু অনেক সময়ই মহিলা শিল্পীদের সাথে পেরে উঠতেন না বা ওরা কেউ অনেস্টলি টক্কর নেবার চেষ্টাই করতেন না বা আদৌ ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতেনও না৷ একটা মজার ঘটনা শেয়ার করি–ধরা যাক আমরা নাটকের খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে এসে উপস্থিত হয়েছি, আমার কোনো এক দাদা বড়লোকের কোনো এক মেয়ের সাথে প্রেম করে ধাক্কা খেয়েছে,মেয়েটির বড়লোক বাবা তার চেয়েও বড়লোক কোনো ব্যবসায়ীর ছেলের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করেছে; বিয়ের দিন মেয়েটি বহু কষ্টে ছেলেটির (আমার দাদা ) সাথে দেখা করতে এসেছে৷ আমার দাদা তার যা ডায়ালগ (আবেগমথিত) ছিল বলে মঞ্চের এক প্রান্তে গিয়ে খুব নির্লিপ্তভাবে দাঁতে নখ কাটতে লাগলো (কারণ তার তো ডায়ালগ বলা হয়ে গেছে,এই দৃশ্যে তার আর কোনো দায় নেই);ইতিমধ্যে সেই ‘হতে পারতো বৌদি’ আমার দাদার কাছে তার নিজ দোষ স্খালন করে চলেছে৷ সে হয়তো প্রচন্ড আবেগ নিয়ে আমার দাদার সারা শরীর ঝাঁকিয়ে বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করছে সে নির্দোষ৷ কিন্তু আমার দাদার কোনো হেলদোল নেই,সে কাঠের পুতুলের মতো হাত পা দুলিয়ে নড়ে যাচ্ছে (কোনো দায়বোধ নেই, এই দৃশ্যে তার হিসেবের পার্ট হয়ে গেছে) আর তখনো অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁতে নখ কেটে চলেছে৷ ওই বয়সেই আমি এই দ্বৈতাভিনয় দেখে মজা পেতাম৷ কিন্তু অধিকাংশ রাত্রেই কোন কালঘুম এসে আমাদের মতো ছোটোদের পেড়ে ফেলতো;সারাবছরের অপেক্ষা, এতো এনার্জি, উৎসাহ, উদ্দীপনা আর উদযাপন পেরিয়ে আমরা উঠতাম পরেরদিন সকালে নিজ নিজ বাড়ির বিছানায়৷
******************************************************************
গৌতম সরকার পরিচিতি :
জন্ম পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার পিয়াসাড়া গ্রামে ৷ উচ্চশিক্ষা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷ অর্থনীতি বিষয় হিসাবে বেছে নিলেও সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা শৈশব থেকে ৷ যেকোনো মননশীল রচনার একনিষ্ঠ পাঠক ৷ তবে লেখার ব্যাপারে চুড়ান্ত আলস্য বোধ করেন ৷ ফেসবুকের বাইরে লেখা শুরু করোনাকালীন ঘরবদ্ধ সময়ে৷ পছন্দের বিষয়: ভ্রমণ কাহিনী,বিশ্ব অর্থনীতি এবং রাজনীতি বিষয়ক প্রবন্ধ, রম্য রচনা,গল্প,এবং দৈবাৎ কবিতা, যা বিভিন্ন পত্রিকা এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে ৷ দেশ-বিদেশ ভ্রমণ এবং সাহিত্যচর্চা প্রধান বিনোদন ৷
দারুণ লেখা। ছোটো শহরে আমার মতো যারা মানুষ তাদের অভিজ্ঞতাও অনেকটা এরকমই।