“ফেরত”
️কলমে – অঙ্কন দন্ড
রাগে, দুঃখে, অভিমানে নিজের ফোনটা মাটিতে আছাড় মারল অর্ঘ্য। বুকের মধ্যে ফুটছে হতাশার বুদবুদ আর তার গালকে উপত্যকা করে বয়ে চলেছে অশ্রু। বুকের মধ্যে হেরে যাওয়া তীব্র যন্ত্রণা দুমড়ে-মুচড়ে মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে নিঃশব্দে। তার নিজের পৃথিবীতে জলভাগের সমান যাকে স্থান দিয়েছিল সেই তিথি তার জীবনকে মরুভূমি করে দিয়ে চলে গেছে। নিজেকে নিঃস্ব, ভিখিরি মনে হল অর্ঘ্যর। সে ভাবল কী লাভ এই জীবন রেখে? আঘাতে মতিভ্রষ্ট হয়ে উঠে দাঁড়াল সে। অবিবেচকের মতো ঘর থেকে বেরিয়ে গেল আত্মবলিদানে।
চোখের জল কে নিয়ন্ত্রণ করে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে অর্ঘ্য। চেপে রাখা কান্না ভারী করে তুলেছে তার কণ্ঠ। কান্না চেপে রাখলে হয়তো সেই অবদমিত তরল নাসারন্ধ্র দিয়ে নির্গত হয়। তাই না চাইলেও বারবার মুছতে হচ্ছে নাক। হঠাৎ সে দেখল ফুটপাতের পাশেই বসে কাঁদছে বছর চারেকের একটি ছোট্ট শিশু। অর্ঘ্য সে সব এড়িয়ে এগিয়ে যেতে চাইলেও ফিরে এলো বাচ্চাটির কাছে। হয়তো কষ্টে ভরা একটি প্রাণ অপর একটি প্রাণের আর্তিতে সমব্যথী হয়ে ওঠে। শিশুটির পোশাক দেখে তাকে বেশ ভদ্র ঘরের সন্তান বলেই ঠাহর হলো। ক্রন্দনরত শিশুটির থেকে বেশ কষ্টে জানা গেল তার কান্নার কারণ। সে হারিয়ে ফেলেছে তার বাবা-মাকে। বাচ্চাটির জন্য মন কেঁদে উঠলো অর্ঘ্যর। সে সাত–পাঁচ না ভেবে বাচ্চাটিকে নিয়ে চলে যায় সামনের পুলিশ স্টেশনে। পুলিশের হাতে বাচ্চাটিকে তুলে দিয়ে তাকে তার বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করে পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে বিমর্ষ চিত্তে হাঁটা লাগায় আত্মবিসর্জনের উদ্দেশ্য।
হঠাৎ সে শুনতে পায় একজন তার নাম ধরে ডাকছে, “অর্ঘ্য! এই অর্ঘ্য।“ অর্ঘ্য ফিরে চাইতে দেখে তার কলেজের বন্ধু সৌরভ। তার হাতে বেলচা, সামনে বালি-সিমেন্টের স্তুপ।
– কী রে অর্ঘ্য? কেমন আছিস? এমন মুখ ভার করে কোথায় চললি?
– এই এমনি একটু হাঁটতে বেরিয়েছি রে। তুই এসব কী করছিস? সিমেন্ট মাখছিস কেন?
– কী আর বলি ভাই! বাবার খুব শরীর খারাপ, মা তো লোকের ঘরে কাজ করে। তাই পেটের দায়ে আমাকেও কাজে নামতে হয়েছে। দুবেলা দু’মুঠো ভাত জোগাড় করতে ঘাম-রক্ত এক হয়ে যায়। উপর থেকে কলেজের খরচ। আর তোকে এসব কেন বলছি, ছাড় বাদ দে। তুই বললি না কেমন আছিস?
হঠাৎ এক মুহূর্তে অনেক কিছু ভাবনা বয়ে গেল অর্ঘ্যর মধ্য দিয়ে। সে ভাবল,“আমার মা-বাবা আছে। আমি চারবেলা ভালো মন্দ খেতে পাই। এত ভাল ভাল বন্ধু আছে। জীবনধারণের কষ্ট নেই। আর আমি কিনা একটা মেয়ের জন্য আমার মূল্যবান জীবন বিসর্জন দিতে যাচ্ছিলাম!”
– কী রে? কোন চিন্তায় হারালি ভাই?
– ও কিছু না। আমি ভালোই আছি রে। এই আমি আসি, পরে তোর সাথে কথা হবে।
এই বলে হনহনিয়ে সে ফিরল নিজের বাড়ি। সে উপলব্ধি করলো তার জীবনের মূল্য। ঈশ্বর তাকে পৃথিবীতে অকালে মরে যেতে পাঠাননি। সেই বাচ্চাটি আর সৌরভ বুঝিয়ে দিল অর্ঘ্যর কাছে তার নিজর মূল্য। সে প্রতিজ্ঞা করল সে বাঁচবে, হাজারবার বাঁচবে, মানুষের জন্য বাঁচবে, মানুষের সেবায় বাঁচবে। একটি তাজা প্রাণের নতুন জন্ম হলো।
***********************************************************
অঙ্কন দণ্ড :- লেখক পরিচিতি
জন্ম ২০০৩ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী। বাসস্থান পুরুলিয়া জেলার আদ্রায়। মাতার নাম বনশ্রী দণ্ড, পিতার নাম স্নেহাশিস দণ্ড। অঙ্কনের লেখালেখির পথ চলা কবিতা দিয়ে। আনন্দবাজার পত্রিকার জেলার পাতা ” ছোটদের পাতা ” শীর্ষক – এ তার স্বরচিত কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হত। স্থানীয় পত্রিকা ” ঊষশী” তেও স্থান পেয়েছে তার কবিতা। এছাড়া নানান গল্প ও প্রবন্ধ লিখে স্থানীয় স্তরে অনেক শুভেচ্ছালাভ করেছে সে। লেখালেখির পাশাপাশি ছবি আঁকাতেও সমান পারদর্শী অঙ্কন। অঙ্কনের রয়েছে ক্রিকেট ও গান এর প্রতি অসীম আগ্রহ।