সিপাহী বিদ্রোহ এবং চার কলোনি
সুলগ্না চক্রবর্তী
১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহের কথা কে না জানে ? এই প্রবন্ধ এই ক্রান্তিকাল কে ঘিরেই তৈরি হয়েছে। স্থান হলো হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে অব্রিটিশ কলোনি গুলো। আর পাত্ররা হলো ব্যান্ডেলের পর্তুগিজ, চন্দননগরের ফরাসি, শ্রীরামপুরের ডেনিস ও হাওড়ার ব্রিটিশ নয় এমন শ্বেতাঙ্গরা ও মেটে ফিরিঙ্গিরা। তারা এই বিদ্রোহকে কী চোখে দেখেছিলো , তাদের অবস্থান কী ছিলো এবং তাদের আশা-নিরাশা কীভাবে বিবর্তিত হয়েছিলো – এইসব সাতপাঁচ নিয়েই এই লেখা। প্রথমেই বলে রাখা ভাল এই লেখা পণ্ডিতদের জন্য নয়।
হুগলী – ব্যান্ডেল :
============
১৮৫৭ র মহাবিদ্রোহের সময় হুগলি ও ব্যান্ডেল থেকে অনেক পর্তুগিজ ব্যক্তিরা ইংরেজদের বাহিনীতে যোগ দেয়। তাদের গোলন্দাজ ও অফিসারদের পোস্টও দেওয়া হয় ।তারা আশা করেছিল এর ফলে তাদের সামাজিক সম্মান বাড়বে ও শাহজাহানের দেওয়া ৭৭৭ বিঘা জমি ফেরত পাবে। ব্যান্ডেল চার্চের ভিতরে শাহজাহান প্রদত্ত ৭৭৭ বিঘা জমির পরোয়ানা রাখা ছিলো যত্নে। কিন্তু মহাবিদ্রোহের পর যখন ভারত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অধীনে চলে যায় তখন পর্তুগীজদের এই ৭৭৭ বিঘা জমি ফেরত পাওয়ার ব্যাপারটা প্রথম থেকেই নেতিবাচক আবহাওয়াতে শুরু হয়। আশ্চর্যের কথা এই যে এতদিনের সযত্নে রক্ষিত ৭৭৭ বিঘা জমির পরোয়ানাও পর্তুগিজরা দেখাতে পারেনা। এটা নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা চললেও কাজের কাজ কিছুই হয়না। এরই মধ্যে অনেক পর্তুগিজ যারা অনেক আশা নিয়ে ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগদান করেছিলো তারা কাজ হারায় নিজেদের গুণে ও আর এক কারণে । লেজিসলেটিভ কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া ১৮৫৭ এ আঠাশে নিয়ম চালু করে। এই নিয়ম অনুযায়ী অনুমতি ছাড়া আগ্নেয় অস্ত্র কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া। ইংরেজ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করা লোকজনদের ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীদের এই নিয়ম থেকে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু এটার সুযোগ নিয়ে ব্যান্ডেলের পর্তুগিজরা ইংরেজদের নাম ধুলোতে লুটাতে থাকে বেশ কিছু জায়গাতে।১৮৫৭ র মহাবিদ্রোহের পরপরই অধুনা বাংলাদেশের বাকেরগঞ্জের কৃষকরা জমিদার রাজা রাজবল্লভকে খাজনা দিতে অস্বীকার করে। রাজা রাজবল্লভ ইংরেজদের সাথে কথা বলে কিছু পর্তুগিজ স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে আসে ব্যান্ডেল থেকে। এরা শক্ত হাতে কৃষক বিদ্রোহ দমন করার পর সাধারণ লোকদের ওপর বিনা কারণে হয়রানি শুরু করে। এদের অত্যাচারের কথা এখনো বরিশাল জেলার পুরনো নথিতে পাওয়া যায়। শেষ অবধি ইংরেজ সরকার বিরক্ত হয়ে তাদের ফেরত পাঠায় কাজ থেকে । এদের মধ্যে অনেকেই হোটেলে খাবার তৈরি ও আনন্দ দেবার কাজে যোগদান করে। চন্দননগর ও শ্রীরামপুরে মানে ফরাসি ও ডেনিস অঞ্চলে “white Slave” দের অস্তিত্বের কথা ঐতিহাসিক ইন্দ্রাণী রায়ের লেখাতে পাওয়া যায়। চন্দননগরে পর্তুগীজদের আলাদা চার্চ ছিলো এবং তারা সাদা সমাজে সম্মান পেতো না। পর্তুগিজরা আশা করেছিলো মহাবিদ্রোহের পর সামাজিক ও ভূমির অধিকার ফেরত পাবে । কিন্তু মহাবিদ্রোহ ঘিরে নতুন প্রচেষ্টা ছিল ভস্মে ঘি ঢালার সমান। হুগলী ও ব্যান্ডেলে পর্তুগীজদের উপস্থিতি এরপর কমতে থাকে উল্লেখযোগ্য ভাবে। অনেকে কলকাতাতে চলে যায়।
চুঁচুড়া:
======
মঙ্গল পান্ডের ফেটে পড়া তো প্রায় সকলেরই জানা। যদিও সেটা হয়েছিল ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্টে। ব্যারাকপুরের ওপর খবরদারি করার জন্য বার্মা থেকে ৮৪ নম্বর ইউরোপিয়ান রেজিমেন্ট আসার কথা লোকেরা শুনলো। কিন্তু তারা আসার আগে যে চুঁচুড়ার হাইল্যান্ডাররা পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলো তা লোকেরা দ্রুত ভুলে গেলো।
কিন্তু কথা হচ্ছে ভুলেই বা তারা গেলো কেন যখন মে মাসেই তাদের চুঁচুড়ার দিকে তাকাতে হলো। বিদ্রোহ তখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে আর ৮৪ নম্বর বার্মার ইউরোপিয়ান রেজিমেন্ট চলে গেছে উত্তরের দিকে। মে মাসে সূর্য যতটা আগুন ঝরাচ্ছে তার থেকে বেশি ঝরাচ্ছে কলকাতার অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। গুজব রটে গেলো নেটিভ সৈন্যরা আক্রমণ করতে আসছে। এর মধ্যেই জুন মাসে শ্বেতাঙ্গরা দলে দলে নিজেদের বাড়ি খালি করে পালাতে লাগলো সংঘবদ্ধভাবে থাকার জন্য। চুঁচুড়া থেকে হাইলান্ডার তলব করা হলো ব্যারাকপুরে আসার জন্য যাতে নেটিভ সৈন্যদের সামলাতে পারে তারা। শেষ পর্যন্ত কিছুই হয় না এবং হাইল্যান্ডাররা ফেরত চলে এলো চুঁচুড়াতে। এরা বেশির ভাগ ছিল স্কটল্যান্ডের, তাই এদের হাইল্যান্ডার বলা হতো। এর পরে এদের অযোধ্যাতে পাঠানো হয়। কিছু যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামেও। ইতিহাস চুঁচুড়ার এই ৭৮ নম্বর রেজিমেন্টের হাইল্যান্ডারদের বেনারসের কাজকর্ম নিয়ে যতটা সরব তার একাংশও ঢাকা – চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে নয়।
অক্ষয় আঢ্য মহাশয় চুঁচুড়ার ব্যারাকে থাকা সৈন্যদের বাজে ব্যবহারের চিত্র খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। স্থানীয় লোকেরা যে সম্মিলিতভাবে এদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলো তাও তিনি লিখেছেন। তাদের মাতাল হয়ে গালিগালাজ করার কথা অক্ষয় আঢ্য মহাশয় লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় ফতেপুর এবং ফতেগড়ে এই হাইল্যান্ডাররা অকথ্য অত্যাচার চালায়। বিনা বিচারে লোকেদের প্রাণদন্ড দেয়, একসাথে অনেক বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেয়, একসাথে ১৮ জনকে বেঁধে তোপ দিয়ে উড়িয়ে দেয়। মেয়েদের ওপর বলাৎকার ও মানুষদের রোদে দাঁড় করিয়ে মেরে ফেলার উদাহরণ তো ছিলোই । ৭৮ রেজিমেন্টের হাইল্যান্ডারদের উত্তর ভারতের কাজকর্ম ইতিহাসে যা পাওয়া যায় তাতে তাদের নরকের জীব বললেও কম বলা হয়। ভাবলে অবাক লাগে অক্ষয় আঢ্য ছাড়া চুঁচুড়ার ৭৮ নম্বর হাইল্যান্ডারদের নিয়ে কেউই তেমন কিছু লেখেননি। এটা কি আমাদের পক্ষে উৎসাহহীনতা নাকি ব্রিটিশদের সেনসার করে ব্যাপারটাকে চেপে দেওয়ার চেষ্টা তা পরিষ্কার নয় এখনো। মহাবিদ্রোহের সময় “মহরমের বদমাশদের” আটকে রাখার নথি এখনো আছে পুরানো পত্রপত্রিকাতে।
চন্দননগর :-
========
জুল ভার্ন – এর দুই একটা লেখাও পড়েনি এমন বইপ্রেমী লোক বিরল। তাঁর “লে মাইসন এ ভেপারী” লেখাতে এসেছে চন্দননগরের নাম। এই লেখার প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে কানপুরে সিপাহী বিদ্রোহের নায়ক নানা সাহেবের আত্মগোপন করা নিয়ে। ব্রিটিশরা তাকে খুঁজে দেওয়ার জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করলেও কোন ফল হচ্ছে না। সিপাহী বিদ্রোহের শেষের দিকে অযোধ্যার নেত্রী বেগম হযরত মহল আশ্রয় পেয়েছিলেন নেপালে কানপুরের নেতা নানা সাহেবের সাথে — এমন মনে করা হয়। কিন্তু নানা সাহেবের নেপালে আশ্রয় পাওয়া নিয়ে তেমন কোনো প্রমাণ নেই। কোথায় ছিলেন নানাসাহেব? চন্দননগরের সাথে নানা সাহেবের সম্পর্কই বা কী?
এই নিয়ে উত্তর দিতে গেলে ছোট্ট করে ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের সম্পর্ক নিয়ে বলতে হবে। চন্দননগরকে ঘিরে ব্রিটিশ ও ফরাসিদের সম্পর্ক ছিল তিতো। ব্রিটিশরা চন্দনগর দখল করেছিলো ও ফরাসি লোকেদের সাথে বাজে ব্যবহার করেছিলো। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্তরেও সম্পর্ক ভালো ছিলোনা। হয়তো এই কারণেই ১৮৫৮ এর প্রথমভাগে নানা সাহেবের প্রধানমন্ত্রী ” নেপোলিয়ান বাহাদুরকে” চিঠি দিয়ে জানায় ব্রিটিশরা কিভাবে ভারতবাসীদের অত্যাচার করছে। চন্দননগরে এই চিঠি আসে ও এই চিঠি চন্দননগর থেকে প্যারিসে যায়। আর একটা চিঠিতে চন্দননগরে আশ্রয়ের জন্য প্রার্থনা করা হয়। এই দুটি চিঠি নিয়ে যারা জানতে চান তারা এস চাঁদের লেখা হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া-র দ্বিতীয় খন্ড পড়ে দেখতে পারেন। এই বই ভারতের কেন্দ্র সরকার দ্বারা প্রকাশিত। লেখক প্যারিসের সংরক্ষণাগারে এই চিঠি দুটি আবিষ্কার করেছিলেন। সেই সময় চন্দননগরে প্রশাসক ছিলেন মঁসিয়ে ক্ল্যাপারনন সাহেব। তিনি নানা সাহেবের আশ্রয় প্রার্থনা পত্রের কি জবাব দিয়েছিলেন বা জবাব আদৌ দিয়েছিলেন কিনা তা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে।তবে পুরনো ফরাসি নথি থেকে জানা যায় পন্ডিচেরি থেকে সমস্ত ফরাসি কলোনির বেস শক্ত করার নির্দেশ এসেছিলো। কিছু ফরাসিরা ভারতের সিপাহীদের প্রশিক্ষণ দিতে উৎসাহ দেখিয়েছিলেন।
কিন্তু প্রশ্ন জাগে আমার মনে ২৪ শে এপ্রিল ১৮৫৮ এর স্টাম্প যুক্ত চিঠির উত্তর গিয়েছিলো কি ? নানা সাহেবের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় (কেউ বলে এজেন্ট) দুর্গাপ্রসাদ ও ভগবান প্রসাদ এই চিঠি পাঠিয়েছিলেন। “Les Actes d” injustice et de perjune du geunt Anglois….. কত কত ইংরেজদের অবিচারের কথা লেখা ছিলো তাতে!!!
চন্দননগরের ফরাসিরা নানা সাহেবের প্রার্থনাপত্র প্যারিসে পাঠায় কিন্তু প্যারিস থেকে কী উত্তর এসেছিলো তা সময়ের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে ইংরেজদের কাছে খবর যায় কলকাতার কসাইতলা, চুনোগলি, চৌরঙ্গির কিছু ইংরেজ ও ভারতীয় খ্রিস্টান প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করেছে চন্দননগর থেকে। চন্দননগর যেহেতু ফরাসি ভূমি ছিলো তারা সরাসরি আগ্নেয়াস্ত্র আনতে পারতো। পরবর্তীকালেও বহু বিপ্লবী আধুনিক রাইফেল সংগ্রহ করতো চন্দননগর থেকে। সাঁপুই পদবীধারী এক বাঙালী ফ্রান্স থেকে ত্রিশের বেশী রাইফেল এনেছিলো এবং বিক্রি করেছিলো বিপ্লবীদের। এমনকি ফরাসি অফিসাররাও এর সাথে যুক্ত ছিলো। চন্দননগরের মেয়র তর্নিভালকে মারার প্রচেষ্টার ভিতর এটা একটা কারণ ছিলো বলে মনে করেন প্রাক্তন অধ্যাপক ও লেখক শ্রী শুভেন্দু মজুমদার। এরপর চন্দননগরের ফরাসীদের ওপর চাপ সৃষ্টি শুরু হয়ে যায় কিন্তু নানা ছলেবলে ফ্রান্স থেকে অস্ত্র আনার ব্যাপাটা চলতেই থাকে।
শ্রীরামপুর :-
========
শ্রীরামপুরের আগে ডেনিসদের কুঠি ছিলো চন্দননগরের গোন্দলপাড়াতে। তারা বেশ কিছুদিন গোন্দলপাড়া থেকে ব্যবসা বাণিজ্য চালাতে থাকে কিন্তু তেমন লাভ হচ্ছে না দেখে সবকিছু গুটিয়ে দক্ষিণ ভারতে চলে যায়। এরপর ১৭৫৫ সাল নাগাদ তারা শ্রীরামপুর জমির অধিকার পেয়ে ব্যবসা শুরু করে এবং ১৮৪৫ সালে তারা এই শহর ছেড়ে চলে যায়। যতদিন ডেনিসরা এই শহরে ছিলো ততদিন এই শহরের নাম ছিল ফ্রেডরিকনগর। ১৮৪৫ এর ১১ ই অক্টোবর ইংরেজরা এর পুরাতন নাম ফিরিয়ে আনে এবং শ্রীরামপুর নামে অফিশিয়ালি পরিচিত হতে শুরু করে। এর বারো বছর পরই শুরু হয় সিপাহী বিদ্রোহ।
বলা বাহুল্য সিপাহী বিদ্রোহের সময়ও কিছু ডেনিস শ্রীরামপুরে থাকতো। সেই সময়ের কলকাতার সাহেবী কেক পেস্ট্রির ইত্যাদি শ্রীরামপুর থেকে যেতো ভালোই । এছাড়া অনেক ডেনিসরা অসৎ ইংরেজ অফিসারদের টাকা বিশেষ কায়দা করে ইংল্যান্ডে পাঠাতো । এর ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীতে কাজ করা অসৎ অফিসাররা যেমন অধরা থেকে যেতো তেমন ডেনিস মিডলম্যানদের হাতেও কিছু আসতো।
সিপাহী বিদ্রোহের সময় এইসব ডেনিসরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করে। তারা ইংরেজদের চিঠি লেখে যে রথের সময় তাদের শহরে “অনেক রকম” সিপাহী ঢুকে গিয়ে হানাহানি করতে পারে। এইজন্য ডেনিসরা থাকে এমন অঞ্চলে “সাদা চামড়ার প্রহরী” নিয়োগ করা হোক। অনেকে এও প্রার্থনা করে তাদের পিস্তল রাখা ও বিপদের সময় সেগুলো কাজে লাগানোর অনুমতি দেওয়া হোক। ব্রিটিশ সরকার শ্রীরামপুর অঞ্চলে সাদা চামড়ার প্রহরী নিযুক্ত করে। শ্রীরামপুরের প্রেসে তখন বিভিন্ন ধরনের বই ছাপানো হতো এবং শিক্ষার ওপর খুব গুরুত্ব দেওয়া হতো। এই সব বই এর বেশিরভাগই ইংরেজ শাসনের গুণগান গাইতো ও সিপাহীরা যে বিদ্রোহ করে ভুল করেছে তা যুক্তি সহকারে জানানো হতো। কলকাতার বাবু সমাজ সিপাহী বিদ্রোহ সমর্থন করেনি । শ্রীরামপুরে ছাপা সেই সব “চাপবই” সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো। বলাবাহুল্য শ্রীরামপুরের প্রতিবেশী উত্তরপাড়ার প্যারীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিপাহীদের দমনের কাহিনীযুক্ত “চাপবই”এ বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো। তিনি এলাহাবাদ কিভাবে জমিদারদের সাহায্যে নিয়ে সৈন্য গঠন করলেন, দুর্দান্ত বিদ্রোহী ধাকল সিংকে দমন করলেন তা পড়ে কলকাতার বাবুরা গর্ববোধ করতো।
ব্রিটিশ সরকার চাপা দিতে পেরেছিলো বারাসাত, বহরমপুর, যশোর, ঢাকা, চট্টগ্রামের কথা। ব্যারাকপুরের মঙ্গল পান্ডে ছিলো ইতিহাসে একটা ফুলকির মতো ব্যাপার। ১৮৫৭ এ ২৬ শে মে এর “সংবাদ প্রভাকর” পত্রিকার কথা বেশ কিছু লোক জানে। রাজা রাধাকান্ত দেব, রাজা কমল কৃষ্ণ বাহাদুর, কালীপ্রসন্ন সিংহের মত ব্যক্তিত্বদের ইংরেজ পক্ষ সমর্থনের ব্যাপারটা আমরা বেশি জানি। তাই না?
অথচ জুল ভার্নের “20,000 Leagues under the sea ” র চরিত্র ক্যাপ্টেন নিমো ছিলেন বুন্দেলখন্ডের সিপাহী বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে, হাহাকার বুকে নিয়ে চলা ব্যক্তিত্ব। বিদেশি পাঠকরা এটা জানে। তারা এও জানে জুল ভার্নের Le Maison A’ Vapeur লেখাতে চন্দননগরের আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত হওয়ার কথা অন্য কিছু বলতে ব্যবহৃত হয়েছে।
কলকাতা ঘিরে ইতিহাস চিরকালই লোক জেনেছে অথচ কলকাতা থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত অঞ্চলের ইতিহাস থেকে গেছে প্রদীপের তলায় অন্ধকার হয়ে । আধুনিক ইতিহাস মানে কি ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসই? প্রান্তিক ইতিহাস আর কতোদিন অবহেলিত থাকবে যাদের অবহেলিত করার জন্য মূল ইতিহাস অপূর্ণ আজো!!!
সূত্র
@ Internet এ পাওয়া অনেক তথ্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পত্র কাজে লাগানো হয়েছে।
- History of India /Part-II/Chand/GOI
- Europe and Hooghly / Das & Chatterjee / KPBC
- Themes in Indian History / III / NCERT.
- Sepoy Revolt & Low-Europeans / Vasudevan/ Madras Journal – 2013
- সিপাহী বিদ্রোহ এবং অবিচার / ঢাকা – 2017 / হোসেন মঞ্জু ।
******************************************
সুলগ্না চক্রবর্তী পরিচিতিঃ
সুলগ্না চক্রবর্তী বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে মাষ্টার করলেও ভালোবাসার জায়গা হলো সাহিত্য ও ইতিহাস।বিভিন্ন পত্রপত্রিকা , রেডিওতে সুলগ্না চক্রবর্তীর প্রবন্ধ , গল্প , কবিতা এসেছে। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের প্রজেক্টেও কাজের অভিজ্ঞতা আছে।