দুটি অণুগল্প
রথীন পার্থ মণ্ডল
১. মহান
বজ্রপাতে ছোটভাই হঠাৎ চলে গেল। বড়দা শিবনাথ শোকে আচ্ছন্ন, বাড়ির সকলেও। বৌমা-ভাইপো-ভাইঝির চোখের জল থামছে না। এদিকে বড় বৌ অঝোরে কেঁদেই চলেছে। দুই ছেলে বিছানা নিয়েছে শোকে।
আবার বিপদ–। বোন চন্দনা তার দুই মেয়েকে নিয়ে বিধবার বেশে হাজির। কান্না বিজড়িত স্বরে সে বলল-“তিন দিন আগে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় তোমার জামাই বিদায় নিয়েছে। তোমাদের শোক চলছে তাই জানাইনি। এখন থেকে এখানেই আমরা থাকব। বল দাদা–কি করব? আজ তাকে ফুল-জল নিবেদন করে -এখানেই চলে এলাম- আর উপায় নেই!”
শিবনাথের চোখে জল-“হ্যাঁ, তোরা সবাই এখানেই থাক। ঈশ্বরের দয়ায় সকলে সুখে-দুঃখে একসাথে থাকব।”
২. সারমেয় কথা
আবার গেলাম রতনদের বাড়ি। দরজা পেরিয়ে উঠোনে ঢুকলাম। রতনের মা যেন দেখেও দেখল না। দূর দূর করে তাড়িয়েও দিল না। আর কেনই বা দেবে? তাড়িয়ে দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। আমিও আর এঁটো থালাতে মুখ দিলাম না। আর দরকারও হবে না। তাই চলে এলাম। ঐ তো সেই ছেলেটা, যে রোজ আমাকে পাথর ছুঁড়ত। যাক বাবা, আজ বোধহয় আমাকে দেখতে পায়নি। কোনোরকমে সাবধানে চলে এলাম মিষ্টির দোকানটাতে। কত যে গরম জল, গরম তেলের ছ্যাঁকা খেয়েছি ,তার কোনো ইয়ত্তা নেই। আজ তারাও কিছু করল না। বোধ হয়, আমার ওপর ‘দয়া’ হয়েছে!
ওই তো চারমাথার মোড়। কিন্তু আমি কোথায় গেলাম? ওই তো পেয়েছি। ওহ, বাবা রে! দশ চাকার লরী, তাও আবার মাল বোঝাই। আর বাঁচি! পুরো পিষে দিয়ে চলে গেছে। নাহ, আর বসে থাকলে হবে না, অনেকটা পথ যেতে হবে এখনও। ভগবান তোমার কাছে আমার শুধু একটাই প্রার্থনা- “পরজন্মে আর যাই কোরো, মানুষ কোরো না।”
************************
রথীন পার্থ মণ্ডল
ঠিকানা:- শশীভূষণ বোস রোড, রাধানগর পাড়া,পূর্ব বর্ধমান